জয়দীপ চক্রবর্তী
যেশব্দস্রোতেওনিরুত্তাপ ১৩০
#
এখানে কুসুম সকালে ডুমুরের গাছে বাতাবির গোলাপি
চর্চিত ছায়া...
ওখানে রক্ত সহজ জলে, আকাশ ছুঁয়েছে আগ্রাসী বহুতল!
এখানে ব্যাকুল আলো পথে লজ্জাবতী গারস্থের দাওয়া,
ওখানে সহবাসের নিত্যনৈমিত্তিক ছকে খল আর ছল...
#
এখানে জোছনা কলঙ্ক মেখেছে মেঘ তাড়ানো মেয়ের
সুরমা,ঝলমল খানবাড়ি!
ওখানে ভালোবাসা আশ্চর্য সাপলুডো নিয়তির খেলায়
সিঁড়ি পাই কয়জনে?
এক হাওয়া মেঘরোদ কেউ পায় মাটি কেউ ভীষন আতঙ্কে
বধ্যভূমি।
যদিও যাঁর যতটা অন্ধকার নিঝুম-পুর অন্তরে অন্তরে
বাহির জেনো অলকে...
#
সে নিঝুম কবেকার হেরেও তীব্রতর নিখুঁত,নিপুণ পাকস্টিট রাজপথ।
তবুও অশ্বমেধ এ ধানের শীষে দেখে রক্তের দাগ!
ভীষন কামদুনীর-
নারীকেই বারবার আগুন খেয়েই নিতে হয় বিজয়ের
অনিবার্য শপথ।
এখানে মুক্তি ইতিহাসেই নির্ধারিত একদিন,এই বিশ্বাস সামান্যই কবির...
#
অবিরাম সম্পর্কের নীরব ছিঁড়ে বৃত্ত সরে
আলোঅন্ধকারের নিশান!!
মনখারাপের ছায়াকাব্য অন্তর্গত দর্শন নৈঃশব্দ্যে
ডুবেছে রাষ্ট্র নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ...
*******************************************************************************
যেশব্দস্রোতেওনিরুত্তাপ ১২৯
#
দীর্ঘতর ভ্রমণের অপ্রাপ্তির নীরব সমূহ খড়কুটো
বিপন্নতা।যে গান-
একরাশ অন্ধকার ছিঁড়ে ছিঁড়ে প্রাণের অন্তহীন
অবগাহন!
শ্রাবণের চরাচরে পাখিরাই মানচিত্রে কাঁটাতার
জবাচোখ বিহীন উড়ান।
যেকোনো হিংসার বিরুদ্ধে শোকের আগুনে পোড়ার
দায়বদ্ধতা শুধুমাত্র কি কবিরই পণ?
#
জল,স্থল,আকাশ ভরা বারুদ আর কুচকাওয়াজ,শোন কার-
মা এইমাত্র ছেলে শহিদ জেনে জ্ঞান হারালেন,এমনই প্রতিদিন-
পৃথিবীর কোনও না কোনও মায়ের কাছে পৌঁছায়
সন্তানের লাশ!
ধর্মও নাকি রাষ্ট্রের মদতে বিস্তারের প্রশ্নে
হত্যার লুকোচুরি অনুমোদন দিয়েছে ইদানীং??
#
কতটা বোধের গভীরতা আসলে বোকাকথা,আশ্চর্য ধর্মগ্রন্থ
ঠোঁটস্থ থাকলেই ধমনীতে আশা করা যেতে পারে থাকতে
পারে প্রাণ!!!
আকার কিংবা নিরাকার,এই গ্রহে এঁরা নয় পরস্পর কোনওদিনও বিচ্ছিন্ন!
তবুও এঁদের'কে নিয়ে পৃথিবীটাকে
কয়েকশো বার ধ্বংসের অস্ত্রে মানুষের শান...
#
এক দুই তিন এমনি ছড়ার মতোই কচুকাটার ছেলেখেলায়
পাঁকা হাত
জন্মের থেকেও হাজার বছর এগিয়ে কিংবা পিছিয়েও
অবিসংবাদিত অজুহাত...
****************************************************************************
যেশব্দস্রোতেওনিরুত্তাপ ১২৮
#
দাঁড়ি-কমা হীন জীবনে যে ছোঁয়াতে জাগালো মনপুর,
জন্মক্ষণ অন্তর্গত ভোর আর ঘোরের দাওয়াই নারীর
টানটান রাশচন্দ্রপুর!
কবেকার শৈশব সামাল দে-ছুট মধুর ঝিল-পাড়,স্নানের বেলা...
মন কাগজের নৌকা ভাসমান,ছিপ ফাঁদ জানো?কৈশোরের পড়া পড়া খেলা।
#
প্রাচীন হানাবাড়ির আড়াল,আলোআঁধারি ধুকপুক বেসামাল!
ফুলের কুড়ির মতো লাজুক মেয়েবেলার উথালপাথাল
পরিণাম...
ঝিঙে মাচা ঘেঁষে দোপাটি পাপড়ির পরাগ,পরাগ প্রজাপতির গান।
পশ্চিমের তালপুকুরে বালিগঙ্গার সুদূর নীরবতার
সহজ আহ্বান...
#
চিলেকোঠার জানলা,আমলকি ডালের দোলনায় হলুদ পাখির শাশ্বত ভুল!
আজও ফিরে,ফিরে তুমুল সেইসব রাতভর
জোছনা ভেজা নৈসর্গিক সুর...
ছেঁড়া,ছেঁড়া ধুসর তবুও পারাপার
অন্তরপুর।ধুলোমেঘ সহজ জীবনপুর!
কবেকার ছলছুতো,অজুহাত,ফিসফাস,অভিমান,আবেগ!সম্পর্কের দ্বিধাদ্বন্দ্ব সুদূর বিপুল...
#
শব্দের শান্তনদী ধীর অন্ধকারের,যে জীবন নাক্ষত্রিক চাঁদহীন চন্দ্রবিন্দু'র আকাশ...
কবেকার মনখারাপের শুকনো ফুল ছুঁয়ে আমাকে
জাগায়!আলোলাগা পলাশ,পলাশ বসবাস!
************************************************************************************
যেশব্দস্রোতেওনিরুত্তাপ ১২৭
#
যেকোন শব্দ সফলতায় স্মরণ আঁকড়ে উচ্চস্বর; হে বন্ধু মনে রেখো,
আমাকে জাগাও!যদিও সত্যের সহজিয়া এমনটা নয়,যতটা উপেক্ষা,স্তূপীকৃত-
মনে রাখার বোধে নামিয়ে অহং ধূসর।অতীত মাত্রই
জঞ্জাল কালো!
আলোর স্রোতে মনে,মন ভুলে থাকা, অতীতের মহার্ঘ্য'ই এইসময়ে উচ্ছিষ্ট.....
#
রাতভর জোছনা সাঁতার,অপলক নিদ্রাহীন বন্দর শব্দের ছায়াপথে...
জন্মমৃত্যু লাটাই হীন দু'দুটো মহাযুদ্ধ!! জয় মধ্যবর্তী জীবনের বিপন্নতা-
সহ্যের অধিক।সম্ভাব্যতা আর পারকতার দ্বন্দ্ব
ধারণায় খিদে ও অরূপ সহজে-
আকাশ ছোঁয়া ইচ্ছা পরিপূর্ণতায় চুপ,জীবনভর শব্দের খোঁজ সুরমা কালো আলোলাগা...
#
আসলে যেকোনো স্মরণের সহজ মনে রাখার আহ্বান।
দিঘির কালো জল-
জন্মক্ষণে অমোঘ অন্ধকার কেটে,কেটে আলোর সংসারে তাচ্ছিল্য উৎসের বোধ!
যে কৈশোরক পাপড়ি মন পলাশির শ্রাবণবেলায় বলোনি
ছলছল-
সমুদ্রের স্থির কাঁথির ঠিকানা রোহিত বেওয়ারিশ
যৌবনের দেনা,হতে নেই শোধ...
#
একদিন ঠিকই,একদিন মনে-রেখো ভিতর হতে
ছুঁয়ে দেবো তিন অক্ষরে'র স্বর!
কত বছর পারস্পরিক শুভসকাল,শুভরাত্রির নীরবতায় রোজকার ডেলি-প্যাসেঞ্জার আমারই ঈশ্বর .....
********************************************************************************
অন্ধকারশব্দমালা ১৯
#
আরো কত বলতো হত্যার পরে
থামাবে ধর্মের নামে সহজ
তোমার খুনের অভ্যাস অবশেষে
হত্যার আয়োজন ছাড়াই তোমার রোজ
#
কোন ধর্মগ্রন্থে হত্যার ছাড়পত্র
যা তুমি কান দিয়েই দেখে
হত্যার সওদাগরি উৎসব মেতে যত্রতত্র
মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতম সমারোহে
#
গুলশন কিংবা আবগানিস্থানে রক্তনদী হিংসায়
খাইখাই
যদিও ওঁরা কেউ আমাদের ঘরের মা বোন ভাই নয়
এই আনন্দিত কোথাও কোথাও বেজেছিল সানাই
আত্মঘাতী মানবজীবন ঈশ্বর অথৈ শয়তান বিস্তর
আত্মক্ষয়
#
শব্দের মিছিলে প্রতিবাদ প্রতিরোধে অনেক হয়েছে
পথচলা
এবার শুরু হোক অন্ধত্বের বিরুদ্ধে চেতনায় শানিত
হওয়া
(বি.দ্র.-যতি চিহ্ন নেই ইচ্ছাকৃত)
******************************************************************************
অন্ধকারশব্দমালা ১২
#
আসলে কারোও,কোনও দোষ নেই,সব দোষ ওদেরই জানে গরু ও শুয়োরে!
যদিও ওদের যৌথ জীবনধারায় এতটুকুও নেই দৃশ্যত
দ্বিধাদ্বন্দ কিংবা বিদ্বেষে...
মানুষেরই প্রাত্যহিক লাঞ্চ,ডিনারের টেবিল হয়ে উঠা আশ্চর্য যুদ্ধক্ষেত্রে-
হত্যার শুয়োর,গরু ঝলসে সাজিয়ে,মশগুল ধর্ম না অধর্ম অনর্থ অনন্তে...
#
যদিও যুদ্ধের থমথমে ইঙ্গিত নয়,সময়ের শব্দমালা উজ্জ্বল আজও!
লেখে ভিতর বাহির হৃদয়ডাঙায়, পৃথিবীর নৈসর্গিক ধুলোমেঘ-
দৃশ্যতই রাজপথ থেকে আলপথে,খিদের চেয়ে বড় রুচিবোধ হয়না কখনও।
এইসময়ে পৃথিবীর শরণার্থী শিবিরের খাদ্যাভ্যাসে
অপলক হও হে বিবেক....
#
ইতিহাসেও বাঁকে,বাঁকে অন্ধকার হিন্দু না মুসলিম ধুইয়ে জাগাও অভুক্তি!
জীবনধারণ আশ্চর্য চক্রাকার,পরিণাম শুয়োর না গরু?কাঁচা না ঝলসানো?
সবটাই স্বভাব আর অভাবের দ্বিধাদ্বন্দ্ব!ধর্মও
তুচ্ছ,ক্ষুধাই শ্রেষ্ঠ আসক্তি...
অন্ধত্ব আগলে বাঁচা আসলে যে গমন জেনো মৃত্যুর
ছদ্মনামে অবাঞ্ছিত চমকালো....
#
রিপু নির্দিষ্ট সওদাগরি মানবজমিনের অভিশাপ,পূর্ণচন্দ্র নয় অনন্তেও!
একদিন হিংসা,হত্যার মিছিলে বিন্দুবিন্দু
রক্তের হিসাব বুঝে নেবে প্রকৃতিও...
*******************************************************************************
অন্ধকারশব্দমালা ১১
#
এই বেশ আসাযাওয়া, জলের থেকেও রক্ত সস্তায় সহজ জেনে-
মৃত্যুর বিষয় হিংসা,ক্ষমতার বিস্তারে তুচ্ছ জন্মের সাক্ষাত দর্শন...
বেবাক আস্ফালনে বিপন্ন পৃথিবী। ক্রমান্বয়ে ছোট
হতে হতে-
রক্তের হোলি খেলার মাঠ।কেউই নিরাপদ নয় এমনকী
দর্শক!
#
আজ গুলশন,কাল ফ্রান্স,পরশু আফগানিস্তান চুপ গোনা মুহূর্ত
তোমার আমার ধারণার গভীরতর ক্ষত মধ্যবর্তী শোক,সমূহ থেকেও-
মৃত্যুর সওদাগরের শৈল্পিক মুহুর্মুহু রক্তনদী,গতিবেগটা জমকালো...
শব্দ থেকে শোকার্ত অক্ষরের আলোঅন্ধকার।দোষ ছিল
শিশুরও!!!
#
ঘুম নিঝুম পালক জোছনা তবুও শব্দহীন দুঃস্বপ্ন আর
আতঙ্কের-
অন্তর্গত মনপুর একাকী একাকার অন্তর্ঘাত।বিভাজন
ছয়লাপে-
হিন্দু রক্ত,মুসলিম রক্ত,খ্রিস্টান রক্ত আশ্চর্য রক্ত কি নয় মানুষের?
লক্ষ,কোটি ভুল জন্ম আশ্চর্য
ধার্মিক হয়েছি মানুষ না'হবার অভিশাপে....
#
এ জীবন,এই সময় সহ্যের'ও অধিক হিংসার সমুদ্রে ডুবুডুবু প্রাণ!!
বিপন্নতায় ক্যানেলে দৃশ্যতই দ্বিধাদ্বন্দ্ব,আশঙ্কায় আমার হাউহাউ শব্দহীন ধ্যান...