রাবেয়া রাহীম
অলিক আত্মা
অবশেষে অপেক্ষার শূন্যতায় ভীষণ নিঃস্ব আমি
ক্ষয়ে যায় প্রাসাদ – কি করে থাকে
প্রাণের মেলা!
তোমাকে ছুঁতে না পারার কষ্টে ভীড় করে বহুবছরের ক্ষোভ,
বিফল হতে চায় সহস্রাব্দ প্রণয়--
মৃত্যুর আলিঙ্গনকেও প্রিয়তর মনে হয়।
প্রাপ্তি-প্রত্যাশা, পাওয়া-হারানোর
হিসেব
কান্নার করুণ সুর, শুনতে পায় কি
কেউ !
বুকের ভেতর অজস্র কবিতা জমে পার হয়ে যায় সময়
নিরব রাতের বুকে সোডিয়াম আলোতে এখনো জেগে থাকি
‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ বারে বার কে যেন বলে যায় !!
ভিজে চুল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল
নরম তোয়ালে জড়ানো আদুরে শরীর!
না স্বপ্ন নয়...সেই অলিক আত্না! বেলা- অবেলায় দেখি যাকে !
স্বমেহন রতিসুখ...
দিন সন মাসের হিসাব থাকেনা,
শুধু মনে পড়ে রোজ, না রোজ নয়
প্রতিক্ষণ প্রতিমুহূর্ত
দেখে যাই তার সম্পূর্ণ নগ্ন রুপ,
হ্যাঁ,অবাক বিস্ময়ে
তাকিয়ে দেখেছি সে মায়াময় রূপ !
কি দুর্লভ ! কি যন্ত্রনা আর সুখানুভূতীর সেই রুপ!
দুচোখ ভরে দেখি তাকে, ভূমিকম্প হয়
সমগ্র আমিতে
বলতে ইচ্ছে করে কত কথা, কিন্ত বলতে পারি
কই !
তাঁর ভেতরেই যে আমি রই!
শুধু দেখে যাই তাকে, সে আমার সত্য আমার
পবিত্রতা..
তাই পাপ বোধ ছিলনা--
দ্রুত বুকের ওঠানামায় লুকানো প্রতীক্ষার অবসান
কোথায় সেই অলিক আত্না! হায় অধরা হয়ে রয়!!
একদিন মুখামুখি দুজন
একদিন মুখোমুখি আমরা দুজন!
লম্বা সফরে আমি কিছুটা ক্লান্ত,
কাছে পাওয়ার তাড়নায় তুমি কি উদ্বেলিত?
আমাদের মাঝে দেয়াল শুধু মৌনতা-
আমি বুক ভরে শ্বাস নেই--লম্বা,
যে হাতটা স্পর্শ করার জন্য অনেকগুলো দিন
নিজের হাত শক্ত মুঠো করে দীর্ঘশ্বাস
ফেলেছি--
আজ মুচকি হেসে বাড়িয়ে সে হাত বললে "হ্যালো"
এতো দিনের হাসি কান্নার ভিড়
ভাবি আহা জীবন কত প্রশান্তির!!
হাজারো দীর্ঘশ্বাস পোড়ানোর পর-
বুকেতে লক্ষ লক্ষ চুম্বনের ইতিহাস লুকানোর পর
অজস্র স্বপ্ন দুমড়ানো মোচড়ানোর পর
আজ কাছাকাছি আমরা দুজন!!
কিছু কথা তোমার, খুব অল্প কথা
আমার
কেবলই ছোট ছোট সহজ আলাপন--
তারপর...আমি নির্বাক--তুমিও কথার খোঁজে,
সময় বয়ে যায়---
অথচ এই সময়ের আগে কত কবিতা,
কত ছন্দ, কত চোখের
জল--প্রতীক্ষায় সারাক্ষণ
আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন খুঁজে ফিরেছে মন !!
সময় ভেসে যাচ্ছিল হাওয়ার মত,
সমুদ্রের ঢেউয়ের মত, ফুলের কুঁড়ির
মত-
আমার ফিরে আসার পালা,
তোমারও ঘরে যাওয়ার তাড়া।
হঠাৎ মনে হলো...
দু'হাত বাড়িয়ে বুকে টেনে
নিতে চেয়েছিলে কি...অনি?
মাকড়শা
ঘরের উঁচু কনক্রিটের কার্নিশ ঘেঁসে বহুদিন হয়ে যায়
একটি কুৎসিত-কদাকার মাকড়শা হেঁটে বেড়ায়---
মোহনীয় আবেশ নিয়ে মাঝ রাতে
প্রিয়তমার সাথে অন্তরঙ্গ সময় পার করার পর,
তুমি যখন যুগলবন্দী হয়ে গভীর ঘুমে ডুবে যেতে
তখন মাকড়শাটি অভিমানী জাল বুনতে শুরু করতো;
একটা নিস্তব্ধ রাত অনেক না পাওয়ার হিসাব কষে-
বৃষ্টিভেজা আবছা কাঁচে ছবি আঁকার মত
করে
সে কখনো মাথা উঁচিয়ে দেখার চেষ্টা করতো তোমাদের ।
তাতে লেগে থাকতো কিছুটা ভয়,
কিছু শঙ্কা আর অনেক চাপা কান্না!
ক্রমাগত জাল বুননের চেষ্টায় সে ক্লান্ত হয়ে
দুর থেকেই ভালবাসার নামে আলতো চুম্বন এঁকে
বোঝাতে চায়, কেউ একজন প্রেম
দিয়েছিলো,
পৃথিবীতে কেউ একজন তোমাকে সত্যি ভালোবেসেছিলো ।।
আহা কী নেশা
থরে থরে বই দিয়ে সাজানো বইয়ের তাক
ভাঁজে ভাঁজে যত্নে তুলে রাখা কাপড়ের আলমারি
পরিপাটি করে সাজানো গৃহের প্রতিটি কোন
ছবির ফ্রেম, আলমারীর কাঁচ
সবই চক চকে
কখনো আপন মনে বলে যাই কখনো বা গুঞ্জরন
সংসারের যৌবনকাল পেরিয়ে-মহাকালের গোধূলি,
কামগন্ধী জ্যোৎস্না, চঞ্চল হাওয়া, মেঘমুক্ত আকাশ
অবিন্যস্ত চুল,চোখের কোনে জল
হাসি কান্নার এ জীবন দর্পন-
এক ফালি চাঁদে ঝুলে থাকে ক্ষীণ দ্যূতি
কিছু কি হারিয়ে ফেলেছি আমি ?
আমার নিঃসঙ্গ বেলার সুর- জোছনার গান
ধূপ শিখার মন্ত্রবানে কেঁপে ওঠা অবচেতন মনের নিঃশব্দ পদচারন..
চক্রবুহ্যের ক্ষীণ আলোর মায়ায় আত্মার মিলন
হাতে হাত গভীর রাত আকন্ঠ আকর্ষণ
কে তুমি, অবিরত করে চলো
এই- আশ্চর্য খেলা !
আহা কী নেশা!!
অপেক্ষায়
ঝিম ধরা সময়ে আটকে আছি পুরনো কস্ট জাপটে ধরে
মুঠি ভরে রাখতে চাই সুখ স্মৃতি, চেয়ে দেখি সবই গত হয়েছে
চলৎশক্তি অসাড় ঠায় দাড়িয়ে ফিরে যাওয়ার আশায়
গতানুগতিক বিষয়ে অভ্যস্ত চোখ নিরাশ হয়নি এখনও ।
প্রকৃতির রঙ বিচিত্রে একঘেয়েমি ধরেছে
পায়ে পায়ে হেঁটে যাই অনেকটা পথ
এ কি সর্বনাশ করলে আমার অনিকেত !!
হারিয়েছি ফাগুন মাস নিস্তব্ধ গহীন অরণ্যে বসত আমার
কত যুগের তৃষ্ণায় কাতর খুঁজে ফিরেছি তোমার মুখ
তুমি আমার ভাগ্য রেখা সকল সাধনার সুখ
প্রখর উত্তাপের পর এক আজলা জলের
অপেক্ষার মত- তোমার অপেক্ষায়-
আসবে কবে ?