মামনি দত্ত
অচিন পৃথিবী
-----------------
ফুল থেকে ঝরে পড়ে মায়াময় হাসি।সে আমি।
গন্ধের প্লাবনে ঘর ভাসতে ভাসতে নৌকা হয়ে যায় আর
ফুলদানির দেখভাল করতে করতে বাবা প্রকৃত মালী...
ভেসে চলা নৌকায় চাঁদ যখন আড়মোড়া ভাঙে
মায়ের সুর থেকে রঙ মুছে নেয় প্রজাপতি...
এমন দৃশ্যায়নে শরতের কাশবন নেই,
নেই কোন রকম আতিথেয়তা।
বাবা ক্রমশঃ পার্থিব জগতের দিক থেকে ফিরে আসেন নিজস্ব পৃথিবী কোণে।
নতুন পৃথিবীর গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে
আরও একবার ঝরে পড়ি আমি...
ফ্রেমবন্দী আমারই পদতলে।
--------
অরণ্যবাস - ৩
-----------------
মৃত্যুর মতন স্বচ্ছ আয়না আর একটিও হয়না...
যার দিক থেকে ফিরে আসতে চাইলেও
এক নির্বিবাদী আকর্ষণ আমাকে তার সামনে দাঁড় করায়।
আমাদের সন্ধিস্থলে খেলা করে মায়াঘেরা অতীত...
ডুবে যাওয়ার আগে তোমায় দু'চোখ ভরে আর দেখা হলোনা অরণ্য!
চোরাকুঠরী তে আমাদের জমিয়ে রাখা
শেষ সঞ্চয় তোমায় দিতে চেয়ে
কত পথঘাট মাখিয়ে নিয়েছি পায়ে পায়ে।
উর্বর মাটির গর্ভাশয় থেকে অসীম শস্য ছড়িয়ে পরেছে
আমার অনাবৃত শরীর সরগমে...
আর আমি ছুটে গেছি পিপাসিনী নারীধর্ম মুঠোয় ভরে...
অরণ্য, শুধু তোমার
নিঃসঙ্গ বুকের গহিন আলপনা খোঁজে।
----------
অরণ্যবাস -৪
----------------
গাছের পাতা পূবের রঙ ধরলে
অরণ্য তুমি কতটা রূপকথা হয়ে যাও সে আমার নির্বাক চোখ জানে।
তোমার রূপকথার প্রতি পৃষ্ঠায় আমি অরণ্যদেবী হতে চেয়ে
ভিক্ষাপাত্র নিয়ে নতজানু আজন্মকাল।
শূণ্যহাতে ফিরে যাওয়ার আগে তোমায় বলি অতীত লিপির মাহাত্ম্যকথা।
অথচ, তুমি আলো নিয়ে খেলতে খেলতে
অগ্নিবলয় হয়ে যাও...
আমার নতজানুর ভঙ্গিমা ভাস্কর্য হয়ে ওঠে
প্রাচীন কোন দেবালয়ে প্রাচীন বৃক্ষের ছত্রছায়ায়।
-----------
পথের শ্রেণিভেদ
------------------
পায়ের ক্ষত গভীর হলে পথের দূরত্ব বোঝা যায়
অনেক অবুঝ মন সবুজ দেখলে ফড়িং ডানা হয়।
আর, শিকারি হাত কম্পনহীন
উল্লাস।
আমরা তবুও চলি।আমাদের চলতে হয়। মাথা নিচু।
পায়ের বিন্দু বিন্দু রক্তে
হারিয়ে যাওয়া সাথী কে শেষবার দেখার ইচ্ছায়
নতজানু হই। চুপ থাকি।
ভেসে আসা উল্লাসের দিকে ঘৃণা ছুঁড়ে আবার জলহীন পথের নৌকো হই।
যার শেষ সীমায় চিরায়ত দাসত্বের সফল প্রতীক্ষা কেবল হাততালি জানে।
উল্লাসিত হাতের কোন ক্ষত হয়না। ইতিহাস সাক্ষী।
-------------
নিস্তরঙ্গ জলহাওয়া
---------------------
বৃষ্টি থেমে গেলে ছাতার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়।
দেওয়ালে হেলান দেওয়া বন্ধ ছাতা থেকে যে জল মাটি ভিজিয়ে দেয়
তার নাম বিচ্ছেদ।
এমন বিচ্ছেদের এক রকম সুখ পাখি থাকে,
সে মাঝে মাঝে ডানা ঝাপটানো তে বুঝিয়ে দেয় শিকলখানিই তার সুখের অণুচ্ছেদ।
আমরা দুঃখ বহনকারী প্রাণিকূল শিকলের ফাঁদে অকারণে হেসে উঠি,
হাততালি দিয়ে পায়রা উড়াই,মোচ্ছব গায়ে মেখে বমি করে স্থির চিত্র হয়ে উঠি।
ড্রয়িংরুম সাজানো চিত্রগুলোতে মেঘেদের টিটকিরি আকাশ থেকে নেমে আসে যখনতখন,
আমরা কোনদিনও বুঝতে চাইনি বৃষ্টিপাত
কতখানি প্রয়োজনীয়
নিঃসঙ্গ ছাতার চোখের জল মোছাতে।