হরিৎ
বন্দ্যোপাধ্যায়
ঠিকানা
বকুলগাছ
দুয়ার খুলে
তাকিয়ে দেখি একটি সকাল
সকাল রঙ ছড়িয়ে
আছে উঠোন জুড়ে
কোন কথাতে
বাঁধবো আমি সকাল শরীর
হৃদয় সকাল তুমি
তখন কণ্ঠে চাপো
দুপুর হতেই যখন
নদীর পাড় ভেঙে যায়
তুমি এসে তপ্ত
প্রাণে বাতাস লাগাও
ধূ ধূ মরুভূমি
কণ্ঠ শুকিয়ে কাঠ
তুমি খুলে দাও
কত না সবুজ নদী
পিচ গলা পথে একা
একা হেঁটে যাই
বাঁক ঘুরতেই
পাঁচমাথা মোড়ে তুমি
বাইরে ঘরে
পাখিদল শত শত
উড়িয়ে দিয়েছ
ঠিকানার তরুদল
মাটির বুকেতে
ঘুমিয়ে অযুত বীজ
চোখ মেলে তোমার
হাতছানি আশ্বাসে
হাঁটতে হাঁটতে
ঠিকানা বকুলগাছ
কুড়িয়ে বকুল
কেটে যাবে সারাবেলা ।
***************
কথা
প্রত্যেকেরই
নিজের নিজের কথা থাকে ।
তোমার কথার
রোদ্দুরে
আমার কথার পিঠ
পুড়ে যায়
তোমার কথার
বৃষ্টিতে
আমার কথার সর্দি
লাগে
কথার সঙ্গে কথা
মেলে না কখনও
দুদিকের দুটি
রাস্তা ধরে হেঁটে আসা
দুটি পৃথক
মানুষের দুটি কথা
চৌমাথার মোড়ে
এক লহমার চোখাচোখি হয় মাত্র
প্রত্যেক কথারই
আলাদা আলাদা
আস্ত এক একটা
শরীর ।
*************
পালিয়ে
গিয়ে
পালিয়ে গিয়ে
বাঁচে না কেউ
যারা পালায় তারা
পরেরটুকু না ভেবেই পালায় ।
ছোটা শুরু করলে
তার জীবনের সবকিছু
তার সঙ্গে ছোটা
শুরু করে দেয়
অনেক দূর পালিয়ে
এসেছি ভেবে
যখন সে থামে, তখন তার জীবনের সবটুকু
হুড়মুড়িয়ে তার
ওপর এসে পড়ে
সেখানেই শেষ নয়, শুরু হয় আবার .......
পালিয়ে গিয়ে
বাঁচে না কেউ
যারা পালায় তারা
পালিয়ে গিয়েই মরে ।
****************
চেনা ছকে
একেবারে নিয়মমতো
সোজাসুজি
একটু ডানদিকেও
না, একটু বাঁদিকেও না
দশটা পাঁচটার
যাতায়াত
রাস্তায় কিছু
কিছু জায়গায় প্রয়োজনের দাঁড়ানো
অপ্রিয় কথায়
গালাগাল
প্রিয় কথায় গলে
যাওয়া
রাতে রোজকার
খেলা ------
তারপর বিছানা
আঁকড়ে সেই চেনা ঘুম
এইভাবেই কেটে
গেল এতগুলো বছর
একেবারে নিয়মমতো
সোজাসুজি
একটু ডানদিকেও না, একটু বাঁদিকেও না ।
****************
মুখোমুখি
যখন সন্ধ্যেবেলা
হাত পা ধুয়ে
মায়ের মুখোমুখি
বসার সময় পেলাম
ঠিক তখনই মাকে
বাইরে থেকে কে যেন ডাকলো
আমার হাতে ধরা
মায়ের প্রিয় লেবু লজেন্স
একা একা বসেই
থাকি
জানলা দিয়ে
বাইরে তাকাই
অন্ধকার গভীর
হয়ে আসে
সকলের কতো তাড়া
----- ছুটেই চলেছে
বুঝতেই পারছি
আমার জামা প্যান্টের পকেট
কারা
যেন হাতড়াচ্ছে
আমার হাতে ধরা
মায়ের প্রিয় লেবু লজেন্স ।
****************