মিতুল দত্ত
প্রেম
কে হারায়, কী হারায়
নর্তকীর নীল মুদ্রা, অস্বচ্ছ কাঁচুলি
আর
গৌণ বিভাজিকা?
তবে যে সন্ধ্যায় তুমি
খুলেছিলে পীতাম্বর, জড়–লসংক্রান্ত সেই
সান্দ্র সানুদেশ
তবে যে পিদিম তুমি
করুণাপ্রত্যাশী নও, হলুদের মায়া একা
জ্বেলে রাখো রাতে
আর পতঙ্গজীবিকা
ঘুরে ঘুরে বেড়ানোর ছলে কত কতবার
তোমাকে চেয়েছে
চেয়েছে তোমার রশ্মি
তৃতীয় প্রহর জুড়ে জেগে থাকা বৃথা এই
স্নায়ু-প্রবঞ্চনা
কলঙ্কের দিন আসে
কাজলের দিন যায়, চোখের পরিখা
জুড়ে
আগুন, আগুন
কেরোসিন, উদ্দালক
আবার বিকেলে যাব তোমাদের বাড়ি, তুমি
ভেতরে নেবে না?
আনন্দলহরি
স্নানের ভঙ্গির পাশে আমাদের সসাগরা ক্ষত
থেমে আছে, যেভাবে থেমেছে
ওই বুদ্বুদবাসনা
হে বিনষ্ট ব্যাবিলন, উড়ন্ত বাগানে
কেন
পুতুলের প্রেতচ্ছায়া ভাসে?
বিরহ যে কাকে বলে, কার নাম
আনন্দলহরি!
বাজাও বেদনা, বাজো, বেজে ওঠো স্তব্ধতার গান
বিচ্ছেদবশত জানি রক্তাক্ত নখের মুখে
লেগে থাকা রঞ্জনবিষাদ, জেনেছি যে
পুরুষকারের চেয়ে বড় তুমি ছিলে না কখনও
তবুও রচনা করি শ্যাওলার সাম্রাজ্য জুড়ে মায়াবী ঝরোখা
অদৃশ্য খিলান ভেঙে ছুটে যাওয়া উন্মাদ প্রহরী
আমাদের গল্পে আসে, আমাদের গল্পহীন
রাতে
স্নানের ভঙ্গির মতো অধোমুখ কলহাস্যগুলি
মরে যায়, মরে যেতে থাকে
তীর্থভ্রষ্ট
মৃত্যুই সতীর্থ শুধু সুতীর্থে সবাই কাঁদে তুমি কি কাঁদবে না?
তুমি কি বলবে না ওই জ্যোতির্লিঙ্গ স্থাপনের পিচ্ছিল প্রদেশে
এত আলো, মাত্রাতীত কোন
অচিরাচরিত পথে ভ্রষ্ট হয়ে যায়?
নাবিকজন্মের কালে কেন এত সঙ্ঘদোষ,
কেন তুমি শুক্রবিষ লিখেছ অক্ষরে?
জলের লাবণ্য ভেঙে আমাদের অস্থির শিকারা
মুহুর্মুহু উঠে কেন নেমেছে পাতালপরিখায়?
তোমাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে দিতে মনে হয়
আমাকেও নিয়তি যে কবে নেবে, কীভাবে বা নেবে?
শিশিবোতলের শব্দে ভেঙে গেছে অবিকল্প কথা
শুধু ওই গবাদি-মাঠের দিকে
হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর চলাচল নেই
অলৌকিক দাবাখেলা পড়ে আছে ঈশ্বরের সাথে
সমুদ্রে শোয়ানো ছক, অরক্ষিত পানপাত্র,
রাজাকে বাঁচাবে বলে রোহিণীনক্ষত্র বাজি ধরে
কারা ওই ফিরে যায় নির্বিকল্প সমাধির দেশে
তবু রাজা তো বাঁচে না
আমাকেও নিয়তি যে কবে নেবে, কীভাবে বা নেবে –
তোমাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিতে দিতে মনে হয়
শীতকালের কথা
শীতকালের কথা বলো, অথচ তা কখনও আসে
না
কীভাবে পাল্টাবে তুমি, ওই ভ্রষ্ট মেঘের
দু'চোখে
বৃষ্টির মায়ার মতো অলীক কাজল লেগে আছে
কাজলের কথা বলো, অথচ মৃত্যুর মতো
কালো
চোখের পাতায় মেখে ঘুমিয়ে পড়েছ জাগানিয়া
কৃষকরমণী জাগে, ধর্ষণের চিহ্ন
জাগে রাত
আলু-পটলের দামে বিক্রি হয়ে যাবে এই দেশ
এই ভূমি, পাললিক, আমাদের জাতীয় শ্মশান
অচিরেই হবে, তবু, সিঁড়িতে পায়ের শব্দ কার
মুদির দোকান জানে কতটা হিসেবি ছিলে তুমি
মাছভাতের কথা বলে আমাকে এতটা হাঁটিয়েছ
অথচ তোমার পাখি আজীবন জলে ভয় পেয়ে
ঘুমিয়ে পড়েছে এই শস্যহীন নবান্নের দেশে
কুয়াশা গড়িয়ে আসে, কুয়াশা গড়িয়ে
যায় ফের
শীতকালের কথা হয়, আমাদের হারানো
শীতকাল...
রঙ্গিলা রে
এ হেন রঙ্গিলাজন্মে সেজে উঠে ডুগডুগি হে, বিষাদদর্শন
অকালে ঝড়ের খেয়া সামলাতে পারি না আমি
কী যে মহাবিপদে পড়েছি শূন্যে কাঞ্চন নামের গাছে
ফুল ধরে, কাঞ্চন নামের
ছেলে নাকি লোক
নাকি পাপাইয়ের মামা বাতিস্তম্ভ নাকি ক্রাচ নিয়ে
গনগনে গরমে হাঁটে, এরই নাম
কথাশিল্প নাকি?
বিপন্ন বিস্ময় তবু ফুটে ছিল কাচের পর্দায়
লাবণ্যের সংজ্ঞা নিয়ে ভাবে যারা চিঠির চূড়ান্ত নিয়ে
খেউড়ের গর্ভব্যথা নিয়ে বই লেখে অথচ দক্ষিণপাড়া
কেন সে দক্ষিণপাড়া কাদের দক্ষিণপাড়া
আমাদের উত্তর হল না?
উত্তর খোঁজার ছলে আমিও তো এস্কিমোর দেশে নাক
ঠেকিয়ে রেখেছি তার স্লেজগাড়ি চলে যাওয়া নাকে
মানবজন্মের দিকে তিন পা হেঁটেছি তবু সুজন আমাকে
তেঁতুলপাতায় রেখে বকফুলের দেশে চলে গেল
ডুগডুগি হে, বিষাদদর্শন