বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অলভ্য ঘোষ



অলভ্য ঘোষ

বোধোদয়
নৈস্বর্গলোক থেকে নেমে আসা
আমি কোন দেব দূত নই সুজাতা!
রক্ত মাংসের মানুষ।
বোধি বৃক্ষ নিচে এই উপল বেদীর আসনে
ভেব না জয় করেছি সব ; কামনা বাসনা,
ক্ষুধা-তৃষ্ণা, রাগ- দ্বেষ - হিংসা মানুষের যতো
জড়তা শরীরে।
ভেব না আমি সমাধি চাইছি। 
মুক্তির পথে সর্বস্ব ত্যাগী। ভিক্ষা পাত্র রেখেছি সাথে।
মানুষের আদিম প্রবৃত্তি গুলো ;
শাসন করে বশ মানাতে চাইছি? -না তাও নয়।
ওভাবে জীর্ণতা বাড়ে।
আমি চাইছি চুম্বন; আমি চাইছি লেহন; 
আমি চইছি মৈথুন চিরন্তন অনন্তের পথে।
ঠিক তোমার ওই সুমিষ্ট সুন্দর পায়েসের মত।
কি যত্নে তুমি শর্করা দুধে গুলে বাসমোতী চাউল
দিলে তাতে ঢেলে। উষ্ণতা দিয়েছ যতটা চেয়েছ তুমি।
দ্রাক্ষা ছড়িয়েছ তাও পর্যাপ্ত পরিমিত। 
স্বচ্ছ মৃন্ময় পাত্রে সেবানিতে সেখালে ভোগান্ন।
আমার এই ক্ষুদার্থ শরীরে সত্যের আত্মা গেছে জেগে।
আমার এই বধির কর্ণকুহরে ; মুক্তির বানী আজ বাজে।
আমার ক্ষিনো দৃষ্টি পেয়েছে দিশা।
মুক মুখমণ্ডলে অনাবিল অমৃতের তৃষ্ণা।
অগ্নির রুঢ় সত্যে গড়ে নিলে অবিকল্প 
সুন্দরে।
বুঝেছি নির্বাণ মানে নিয়ন্ত্রণ তেজস্ক্রিয়তার।
মোক্ষ মানে হেলায় অতিক্রম জরাজীর্ণতা।




সম্পর্ক
যত ঘুড়ি উড়বে আকাশে;ততোই সুতোয় জোটপাকানোর সম্ভাবনা বেশি।
আবার লাটাইয়ে সুত যতক্ষণ গুটানো থাকে লাটাই লাট খেতে পারেনা।
সে ভাবে বিথা জন্ম তার।ঘুড়ি বলে আয় লাটাই তোকে ঘোরাই।কলকাটির
গাঁট ছড়া বেঁধে লাটাই এর সুতোয় ভর করে ঘুড়ি দিব্যি ওড়ে আকাশে।
লাটাই বনবন করে ঘোরে।মাটিতেই তার যত সুখ;আকাশের সাথে থাকে তার
এক সুতোর সম্পর্ক।ঘুড়ি কেটে গেলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। দুলে দুলে পড়া
ঘুড়ি লোটে কোনো বিধাতা পুরুষ।তারপর সে ঘুড়ি ওরে অন্য লাটাই আবার।
ঘুড়ি ফাঁসে গাছে বা বিদ্যুতের তারে পড়ে। অপমৃত্যু ঘটে কত ঘুড়ির।
কিন্তু লাটাই ভাঙ্গে কম।
ঘুড়ি ভাবের ঘোরে ওড়ে।লাটাই বি প্যাকটিকেল।
লাটাই ঘুরছে যার হাতে সেই ঠিক করে পেটকাটি, ময়ূরপঙ্খী, মোমবাতি, 
বগ্গা না চাঁদিয়াল কোন ঘুড়ি উড়বে।ঘুড়ি পাগলামি করলে কার্নিক দেয় সেই।
লাটাই এর কোন সাধ থাকতে নেই।সাধ্যও সীমিত।তার আজো লাভ ম্যরেজ হয়না।
অ্যরেঞ্জ ডিভোর্স! যেটা ভালবাসা বলে মনে করছো লাটাই ঘুড়ির সম্পর্কে;সবটাই বৈষয়িক।
ঘুড়ির চাকচিক্য;ওড়ার বল দেখেই সমাজয়ই নির্ধারণ করেদেয় কোন সম্পর্ক 
টেকানো যায়।চেত্তা খাওয়া গোত খাওয়া ঘুড়ি কেউ চায় না।
ভোকাট্টা!
ঘুড়ি কেটে গেলে লাটাই এর হয় যতো জ্বালা।সুতোর হপ্তা মারার ভয়ে
যত তাড়া তাড়ি সুতো টেনে বিধাতা জটপাকায়।বেশির ভাগ সময় সেই জট
আর ছাড়েনা হৃত্পিণ্ড থেকে সুতো ছিঁড়ে ফেলে দিতে হয়।কেউ ভেবেও দেখে না।
দুটো সম্পর্ক কতবার বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওঠে।
বর্ষা এলে লাটাই ঝোলে দেওয়ালের পেরেকে।লাটাই ভাবে এই বেশ বৈধব্য।
কিন্তু আবার স্বাধীনতা দিবস আসে।বিশ্বকর্মা পূজো এসেপরে
মেঘ মুক্ত আকাশ ডাকে নিষ্ঠুর সময়ের ছলনায়।




ইসলাম
(গুলশানের খুনে জঙ্গিদের উদ্দেশ্যে)
চোদ্দশ বছর ধরে রক্ত স্রোতে কাঁপছে মুসলিম।
আল্লার ইবাদত;নামাজ,জাকাতের ফরজ যারা
পালন করে;সন্ত্রাস ছড়ায় না।
মানুষের খুনে বেহেস্তের দরজা যায়না খুলে।
ইসলামে কোনও ফতোয়া হয় না নেই কোনও
শারিয়া আইন।
শোন মূর্খ সন্ত্রাসী কে দিলো তোকে অধিকার
ইসলামের নাম করতে বরবাদ। নবীর দায়িত্ব
শুধু ঘোষণার;আল্লার দায়িত্ব দুনিয়াময় মানুষের
মনে নিজ সাম্রাজ্য কায়েম। ফরজ ইবাদতের নাম
জোর খাটানো হতে পারেনা। পয়গম্বর তুমি নও 
তুমি খুনি।কোনও ধর্মই মানুষকে শাসন করতে শেখায় না।
উপদেশ দিতে শেখায়; ভ্রাতৃত্ব শেখায়।
ভালবাসতে শেখায়;সহিষ্ণুতা শেখায়;শেখায় সমতা।
পরওয়ারদিগারের সত্য পথে মানুষের শান্তি মঙ্গল ঘটে।
ভ্রষ্টা!বিভ্রান্তিতে রসুলের দায়িত্ব নিস তোরা!
রসুলের দায় বাণী পৌঁছিয়ে দেওয়া।কতল করা নয়।
কর্তব্য প্রচার।ব্যভিচার নয়।যার ইচ্ছে বিশ্বাস করুক;
যার ইচ্ছে নয় অমান্য করুক সত্য তবুও থাকবে অটুট।
ওযে পালন কর্তা থেকে আগত।নবীর কাজ সত্য 
তুলে ধরা ;সত্য প্রত্যাখ্যাতদের সাবধান করা।বাধ্য করা
নয়।পানিতে সাঁতার জানলে মানুষ ভেসে থাকে।না হলে
জোর করে ফেলে দিলে ডুবে মারা যাবে।
আল্লার নামে নিজেদের প্রতিষ্ঠা চাস কাফের
মানুষ আর আল্লার মাঝে নবী কেবল একটি বাঁশের সাঁকো।
মানুষ আল্লার কাছে পৌঁছে গেলে।সাঁকোর গুরুপ্ত থাকেনা।
মানুষকে জোর করে বিশ্বাসী অনুগত করে তুলতে আলাহ 
নবী-রসুলকে পাঠান নি।পাঠিয়েছেন যুক্তিসঙ্গত কথা
সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে মানুষকে সঠিক পথে আনতে।
যারা ধর্মের ব্যাপারী।যারা ধর্মের-নামে মানুষের অমঙ্গল
ডেকে আনে।তারা আর যাই হোক ধার্মিক নয়। ধর্মের
শত্রু।মানবতার শত্রু।পয়গম্বর এর উৎপত্তি পয়গাম অর্থাৎ
সুসংবাদ থেকে।নবী কখনো বলেনি;ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে।
নবী কখনো বলেনি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলাম প্রচার
করতে।যীশু,হজরত,বুদ্ধ,নানক;কেউয়ই রাজা হতে চাননি।




কৈলাসী
আমার বুকের ওপর রাখা আছে তোমার মাথাটা
কৈলাস পর্বতের মত পৃথিবীর  ভার  কেন্দ্র হয়ে।
আমি তিব্বত প্রিয়তমা হয়তো অনাবিষ্কৃত
থেকে যাবে তোমার  প্রেমের রহস্য কৈলাসেরই
মত একধাপ এগিয়ে তোমায় হয়তোবা অক্ষ বা অ্যাক্সিস
ভাববে কেউ কেউ। তোমাকে কেউ জয় করতে পারেনি
পারবেও না। অথচ আমার বুকের ওপর স্তম্ব স্বরূপ প্রিয়তমা;
তুমিত দুর্গম নও। স্ফটিকের মত পদ্মসম্ভব। আটারলি
আনক্লাইম্বেবল।

তোমার পায়ের কাছে আছে মানস সরোবর। রাক্ষসতাল আছে।
গোবৎস কে পেট ভরে  দুধ নাদিয়ে সমস্ত দুধই নিজের জন্য
দোহন করা যে পাপ। তাই আমি মানস সরোবরের মিষ্টি
জলের হৃদে স্নান করে মানুষে মিশে যাব মানসী তোমায় বুকেনিয়ে।
ধ্যানস্থ মহাদেবের মত তবুও আমার  আবাস রবে তুমি।কৈলাসী!





নিরাকারের রূপ
আয়না দেখছে প্রক্ষেপককে?
নাকি প্রক্ষেপক দেখছে আয়নাকে?
প্রক্ষেপক না প্রতিফলন? প্রতিফলক না প্রতিবিম্ব?

কোনটা সত্যি!কোনটার অস্তিত্ব আছে?

প্রক্ষেপক কি দেখতে-পায় নিজেকে;প্রতিফলক ছাড়া।
প্রতিবিম্ব কি ধরে রাখা যায় প্রতিফলকের বুকে
প্রক্ষেপক সড়ে গেলে।

চোখের সামনে থেকেও যখন খুঁজে পাওয়া যায় না;
তখন মন নিমজ্জিত থাকে অন্য কোথাও।
মনের মধ্যে থেকেও যখন তল পাওয়া যায় না;
তখন আত্মা নিমগ্ন-ছিল অসীম রেখায়।
চোখের মধ্যে যেমন মন মিশে-যায়;
মনের মধ্যেও মিশে যায় আত্মা।
অতলে তলিয়ে যেতে যেতে যে চেতনা জন্মনিল
আধ্যাত্মিকতার ভাষায় তাহাই পরমাত্মা।
প্রক্ষেপক,প্রতিফলক,প্রতিফলন না প্রতিবিম্ব কি তার স্বরূপ?
ধরা যায় নাকো কোটি বাক্য ব্যয়ে নিরাকারের রূপ।