সুমনা
পাল ভট্টাচার্য্য
অপেক্ষায়
**********
বোধের ঘরে
শূন্যতার খোলা চিঠি-
বর্ণমালার
বিবর্ণতা ফ্যাকাসে কালো শ্লেটে-
মনের দেওয়াল
খুঁজছে রঙ, পুড়ছে তাপে তেতে-
প্রেমের
ডেবিট/ক্রেডিট জমে শ্যাওলা ঘেঁটে ঘেঁটে।
মুঠোয় ভরা সময়
এখন বিষন্নতা চেনে-
হিমেল বরফ গলছে
ঘামে, রক্তভেজা স্বাদে-
ভাঙা ডানায় এখনও
কোথাও উত্তাপ আছে বেঁচে-
এবার শুধু
বৃষ্টি নামুক, মেঘ-মল্লার ছাদে।
কান্নাগুলো
স্ফটিক দানা অস্বচ্ছ ছায়াছবি-
আবেগ যেন উপচে
পড়া সাতরঙ ক্যানভাসে-
আদর বাসর জ্বলছে
এখন দাউদাউ অভিশাপে-
তোমায় আমি হাতড়ে
খুঁজি বুকের আশে-পাশে।
নাম- 'ভালবাসা'
***************
মাঝরাতে....
হঠাৎ ঘুমের আড়মোড়া ভাঙতেই
তোমার বুকের ভেতর কুঁকড়ে গেলাম
তুমি ঘুমের ঘোরে চমকে তাকালে-
জড়িয়ে নিলে তোমার দু-হাতের বাঁধনে
তোমার হৃৎপিন্ডের ছন্দে লাগল ঘোর,
কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম, জানিও না..
ঘুম ভাঙতে দেখি...
ছুটছে শহর, গলেছে রাত, খুলেছে মুঠো
আমার স্বপ্ন-মাখা বালিশ তখনো ভিজে-
আমার লবণাক্ত, ঝাপসা করিকাঠ নিশ্চুপ
বুঝলাম...
আলটুসে আদরে ঝরে গেছে যে 'তারা'
তার নাম 'ভালবাসা'-
স্বপ্নের আনাচ-কানাচ ঘেঁটে বাড়ছিল সে
মৃত্যূকাল স্থির ছিল, তার জন্মের মুহুর্তেই
শুধু রক্ষাকবচ পড়িয়েছিলাম তাকে যত্নে
যার নাম 'বিশ্বাস' আর 'বিশ্বাস'...
আগুন..
গুঁড়ো গুঁড়ো স্যাঁতস্যাঁতে পাঁজরের টুকরোগুলো-
গুছিয়ে জড়ো করে জ্বালালাম 'আগুন'-
আস্তে আস্তে তেতে, পুড়ে, ভেঙে, মুচড়ে
কাঙখিত অবয়ব নিয়ে সামনে দাঁড়ালো সে
জিগ্যেস করলাম কি নাম?
বললে,
নাম - ' ভালবাসা'......
দলিল
******
আজ ভাগাভাগি হয়েই যাক তোমার আমার দেয়া
নেওয়া.....
গোলাপি পালকের অভিমান তোমার জন্য
দুষ্টুমির কাঁচ-বোতাম সে ও তোমার জন্য
আমার পুঁটলি বাঁধা দু:খ সুখ সব তোমার জন্য
সব সব সব তোমারই জন্য...
শুধু তোমার লাল হৃদয়ের সব ক'টা স্পন্দন থাক
আমার জন্য...
তোমার ঠোঁটের সবটুকু উষ্ণ আদর সেও আমারই জন্য-
তোমার চোখের সব মায়াবী ছায়া শুধুই আমার জন্য-
নাও হোলো হিসেব??
এবার আমৃত্যূ এই দলিল গুছিয়ে রাখো..
।।মনের
সিন্দুকে।।
শুধু তুই
-------
ভালবাসার চেয়ে কাঙখিত আর ছিল না কিছুই
তোর আদরের স্পর্শগুলি ভীষণভাবে কোষান্তরে সজীব
পাঁজরের দেওয়ালে হাতুড়ি পেটা তোর গোপন ডাক
আমার ঘুম না আসা রাত জানে তোর বুকেই তার অন্তমিল
জানলায় এখনও একটি ভেজা পালক তিরতির করে কাঁপছে-
এই বর্ষায় তাকে দূত করে পাঠাবো তোর দরজায়
তোর ঠোঁটের আগুনে মাখামাখি হলেই বুঝবি
অভিমানী পালক জুড়ে এক সমুদ্র নুনের স্বাদ
সবটুকু শুধু তোর ঠিকানা চিনেছে
ঢেউ এবার তোর চোখের তীরে আছড়ে পড়ুক
আকাশের পালঙ্কে ছড়ানো রইল আমার মায়া-আঁচল
বড় সাধ, একবার তোর কান্না মোছাবে নি:স্ব হয়ে।।
ভিজিয়ে
যেও
***********
আমার সবথেকে পছন্দের ঋতু বর্ষা
তুমি তো জানো....
ছাতা নিয়ে চলা আমায় মোটেই মানায় না -
তুমি বলতে, আমি নাকি পালকের মত ভিজি
সত্যিই ভিজেছিলাম...
তোমার ঠোঁট থেকে চুঁইয়ে পড়া মদে-
তোমার চোখের টুপটাপ মরশুমি শ্রাবণে-
আমার নূপুর যখন পাড়ার গলির কালো জলে খেলা করত-
তুমি বলতে, জলে আগুন উঠবে এবার!
আমি গালে টোল ফেলে হাসতাম,
আর, তুমি মাতাল হতে....
আজ সকাল থেকে কি বৃষ্টি! কি বৃষ্টি!
আমার মনের ঘর জুড়ে শুধু তুমি-
বৃষ্টির জল পড়তেই....
পিঠের
কালশিটে টা দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো-
শিরশির করে উঠলো শরীরের ছাদ-
কি মনে হল জানো!
তোমার ঠোঁট বুঝি নকশা বুনছে...
এ- ফোঁড় - ও - ফোঁড়
একটু পরে দুপুরের আলসে ঘুমে সবাই যখন চুপ
তখন আমি যাবো অভিসারে-
চিলেকোঠার ঘরে-
তুমি এসো কিন্তু
আকাশ সাজিয়ে
তোমার সবটুকু প্রেম মুঠোয় ভরে
আজ, ভিজবো চুপচুপে এক্কেবারে-
আগামী বর্ষায় যদি ওই কালশিটে টুকু পড়ে থাকে শুধু
তাই.....
এবারটা 'ভিজিয়ে যেও' কেমন!