বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

সম্পাদকীয়



মুখের ভাষা আর মননের ভাষা নিয়েই মানুষের ভাষা! মুখের ভাষা হল কাজের ভাষা! প্রয়োজনের ভাষা! বেঁচে থাকবার ভাষা! আর মননের ভাষা হল সৃষ্টির ভাষা! আয়োজনের ভাষা! বাঁচিয়ে রাখবার ভাষা! মুখের ভাষায় ব্যক্ত করি চিন্তার সূত্রকে! আর তার প্রকৃতিকে! প্রচার করি নিজেকে! আর মননের ভাষায় নির্মাণ করি চিন্তার বোধকে! তার গভীর সৌন্দর্য্যকে! এবং আবিষ্কার করি নিজেকে! অর্থাৎ মুখের ভাষায় আত্মপ্রচার আর মননের ভাষায় আত্মপ্রকাশ! প্রয়োজনের সীমায়িত বলয়ে মুখের ভাষার চলাচল! আর জীবনবোধের অসীম বিস্তারে মননের ভাষার কলকল্লোল! মুখের ভাষায় প্রকাশ পায় রোজকার জীবনের চাওয়া-পাওয়া, দেনা-পাওনা, সুখ-দুঃখের গল্প! চেতনার গর্ভে বোধের যে দীপ্তি থাকে প্রচ্ছন্ন, মননের ভাষায় তারই প্রকাশ ঘটে শিল্প- সাহিত্য- সঙ্গীতে! তাই তো কবিতায় কাব্য সাহিত্যে কবিমনের অন্তর্গূঢ় বেদনা সঞ্জাত তাঁর অভিজ্ঞতা আর অনুভূতির প্রকাশ ঘটে ব্যক্তিগত ঘরানা থেকে নৈর্ব্যাক্তিক বিস্তারে! এই যে ব্যক্তিগত ঘরানা থেকে নৈর্ব্যাক্তিক বিস্তারে কবির কাব্য চেতনার মুক্তি, এই মুক্তিই সার্থক কবিতা বা  কাব্য সাহিত্যের প্রধানতম শর্ত! অর্থাৎ কবির সৃষ্টি, প্রকাশের পর শুধুমাত্র তাঁর একান্ত আপন থাকে না আর! তাঁর সৃষ্টি তখন  বহুজনের আপন হয়ে উঠল! উঠতে থাকল! এইখানেই কাব্যের মুক্তি!

তাই কাব্যালোচনার মূল বিষয়টিই হল এই মুক্তিকে কেন্দ্র করে! কবির কাব্য কি তাঁরই নিজস্ব সামগ্রী হয়ে থাকল নাকি তা আরো অনেকের ভালোবাসাকেও প্রতিফলিত করতে পারল! অর্থাৎ কাব্যের মধ্যে পাঠক কি শুধুই কবিকে দেখতে পাচ্ছে, নাকি নিজেকেও আবিষ্কার করতে পারছে নতুন করে! কবির ব্যাক্তিত্বের ছায়া থেকে বেড়িয়ে এসে তাঁর কবিতা যখন নিজস্ব কাব্যশক্তির আলোতে দীপ্যমান হয়ে উঠতে পারে তখনই আপামরের হয়ে ওঠে কবিতা! কারণ শেষ পর্যন্ত কবিতা কখনোই কবির আত্মকথা নয়! কবিতার আবেদন সর্বজনীন! সংবেদনশীল পাঠকের চেতনার আলোয় আলোকিত! ঠিক সেই কারণেই বিখ্যাত ফরাসী কবি পল ভ্যলরী বলেছিলেন, "I  write half the poem; the reader writes the other half"

কবিতাউৎসবের প্রতি সংখ্যার ডালিতেও ভালরী কথিত সেই আশাটুকুই থাকে। কবিতাউৎসবের দায়িত্ব শুধু সেই ডালিটুকুই পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া। সেই ডালিকে কাব্যময় করে তুলে কবিতার নিজস্ব একটি ভুবন গড়ে তোলা পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত অভিযান। পাঠকের সেই যাত্রায় কবিতাউৎসব আয়োজক মাত্র।

কবিতাউৎসব আশ্বিন যুগপৎ হর্ষ ও বিষাদের ডালি নিয়ে উপস্থিত। পাঠকের দরবারে। আগে সুখের কথাই বলে নেওয়া যাক। প্রথম প্রকাশের সাত মাসেই কবিতাউৎসবের মোট পৃষ্ঠাদর্শন পঞ্চাশ হাজার অতিক্রান্ত! এবং কবিতাউৎসব ভাদ্র সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ছাপিয়ে প্রায় তেরো হাজার পৃষ্টাদর্শন অর্জন করেছে। এই হিসাবগুলি আমাদের দেওয়া নয়। এই তথ্যগুলি গুগুলের দেওয়া, কারণ কবিতাউৎসব প্রকাশিত হয় গুগুল ব্লগারের সৌজন্যে। প্রতি মাসের মতোই এই সংখ্যাতেও কবিতাউৎসব হাজির দুই বাংলার শতাধিক কবিতার সম্ভার নিয়েই। বর্তমান অন্তর্জাল কেন্দ্রিক সাহিত্য চর্চার ভুবনের জনপ্রিয় সাহিত্যসেবীদের মধ্যে অনেকের কবিতাই খুঁজে পাবেন এই সংখ্যার পাঠকবৃন্দ। কবিতাউৎসবের পাঠকবৃন্দের চাহিদার কথা স্মরণে রেখেই আমরা প্রত্যেক কবির পাঁচটি করে কবিতাই সাজিয়েছি এই সংখ্যাতেও। যাতে একই কবির একাধিক কবিতার আবহে মনের আনন্দে ডুব দিতে পারবেন পাঠক।

সুখ সংবাদের সাথে জুড়ে রয়েছে দুঃসংবাদও। অনিবার্য কারণ বশত, প্রতি সংখ্যার মতো এই সংখ্যায় আমরা উপহার দিতে পারিনি ‘এ মাসের অতিথি’-কে। কবিতাউৎসবের এই নতুন বিভাগটি আমরা একটি বিশেষ উদ্দেশ্যকেই সামনে রেখে শুরু করেছিলাম। একটি দেশের ভাষা সাহিত্য শিল্পসংস্কৃতির প্রভাব আমাদের মননে ও চেতনায়, আমাদের কর্মে ও সাধনায়, আমাদের বিশ্বাসে ও জীবনে কিরকম করে কেমন প্রভাব ফেলে, কিভাবে গড়ে তোলে আমাদের ব্যক্তিত্বের পরিসর ও প্রতিভাকে; সেই গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি নিয়েই এইসময়ের অনুভবী সমাজসচেতন সৃজনশীল মানুষদের সাথে আলোচনার একটি নান্দনিক পরিবেশ ও পরিসর গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই যাত্রা শুরু হয় এই বিভাগটির। যেখানে ইতিমধ্যেই আমরা পেয়ছি বেশ কজন সৃজনশীল মানুষকে। পরিচিত হয়েছি তাদের চিন্তা ভাবনার নানান দিকের সাথে। সমৃদ্ধ হয়েছি তাদের অন্তর্দীপ্ত চেতনার প্রতিভায়। যে বিষয়গুলি প্রদীপ্ত করে তুলেছে আমাদের নিজস্ব চিন্তা চেতনার সুপ্ত কিংবা ঘুমন্ত দিকগুলিকেওএই যে প্রদীপ্ত করে তোলা, এইখানেই এই ধরণের আলোচনাগুলির সার্থকতা। যার মধ্যে দিয়ে নিজেদের অনুভবে আমরাও ছুঁতে পারি আমার দেশ ও সমাজ ভাষা ও সাহিত্য শিল্প ও সংস্কৃতির বিস্তৃত ভুবনকে।

আর যে মানুষগুলি আমাদেরকে এই ভাবে উদ্দীপ্ত করে তোলেন তাঁদের চিন্তা চেতানার আলোয়, তাঁদেরকেই কবিতাউৎসবের তরফ থেকে ‘এ মাসের অতিথি’-র সম্মাননা দেওয়া হয় স্বশ্রদ্ধ ভালোবাসায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই মাসে আমরা যাঁকে এই সম্মাননায় অভিষিক্ত করতে প্রয়াসী হয়েছিলাম, তিনি শেষ মুহূর্তে এই সাক্ষাৎকারে তাঁর অংশগ্রহণের অপারগতার কথা জানানোয় আমাদের পক্ষে আর সম্ভব হয় নি অন্য কারুর সাক্ষাৎকার গ্রহণের। আমরা তাই ক্ষমা প্রার্থী কবিতাউৎসবের পাঠকদের কাছেই।

সেই সাথে আরও একটি বিষয় সম্বন্ধে সকলকে অবহিত করতে চাই আমরা। অনেকেই মনে করছেন কবিতার আকারে যাই লেখা হয় তাই কবিতা। অনেকেই হয়তো ভাবেন তাঁর পাঠানো লেখাটি কবিতাউৎসবে প্রকাশ না করা অত্যন্ত অবিবেচনার কাজ। কিন্তু আমরা সকলের কাছেই কবিতা পাঠানোর আহ্বান পৌঁছিয়ে দিই বলেই কিন্তু যে কোন লেখাকেই কবিতা বলে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এই কথাটিও অনুধাবনের প্রয়োজন আছে। আমরা নতুন নতুন কবিদের জন্যে কবিতাউৎসবে সাগ্রহে অপেক্ষা করি বলেই যে, যে কোন লেখাই কবিতা হয়ে উঠবে তার কোন মানে নেই।

আবার সেই সাথে আমরা এ কথাও স্বীকার করতে বাধ্য কবিতা উৎসবে প্রকাশিত সকল কবিতাই যে সাহিত্যিক পরিমিতিতে উৎকর্ষ তা নাও হতে পারে। সেরকম কোন দাবি করার মতো স্পর্ধিত অবস্থানেও কবিতাউৎসব নেইবরং এ কথা প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে মাত্র সাত মাস বয়সী একটি পত্রিকার পক্ষে একশ শতাংশ উৎকৃষ্ট কবিতা উপহার দেওয়া সত্যই দুরূহ। তাই কেউ যদি কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতার মান নিয়ে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠেন, তবে তাঁদেরকে অনুরোধ আরও একটু বাস্তব সচেতন হওয়ার। বরং যাঁরা সত্যই ভালো কবিতা লিখছেন, তাঁদেরকে উৎসাহিত করা দরকার আরও ভালো লেখার। আর তাঁদের জন্যে কবিতাউৎসব তো সবসময়েই অঙ্গীকারবদ্ধ তাঁদের পাশে থাকার। আরও বেশি পাঠকের কাছে তাঁদের সৃজনশীল সৃষ্টিসম্ভারকে তুলে ধরার।

কাঁটাতারের দুই প্রান্তের কবিতাপ্রেমী সকল সৃজনশীল বাঙালিকেই কবিতাউৎসবে স্বাগত। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চার প্রয়াসে বঙ্গসংস্কৃতির প্রদীপটুকু উজ্জ্বলতর করার অঙ্গীকারে আসুন সকলে মিলিত হই। সেই মিলনে কবিতাউৎসবও সকলের সহযাত্রী।

কবিতাউৎসবের ফেসবুক পেজ :
https://www.facebook.com/amaderkobitautsov/  কে লাইক করে ফেভারিট করে রাখলে কবিতাউৎসবের যাবতীয় তথ্য ও বিজ্ঞপ্তি সরাসরি আপনার ফেসবুক ওয়ালেই দেখার সুযোগ ঘটবে। এই পেজেই কবিতাউৎসবে প্রকাশিত কবিতাগুলিও নিয়মিত প্রচারিত হয় লিংকসহ।


এবং এরই সাথে কবিতাউৎসবের ফেসবুক গ্রুপ:  https://www.facebook.com/groups/kobitaautsov/#  এ জয়েন রিকোয়েস্ট পাঠালে গ্রুপের সদস্য হিসাবে গ্রুপের ওয়ালে আপনার কবিতা ও কবিতা বিষয়ক মূল্যবান মতামত সরাসরি পোস্ট করে সকল সদস্যদের সাথে শেয়ার করেও নিতে পারবেন। গ্রুপের পিনপোস্টে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলীও দেওয়া আছে।


এছাড়াও কবিতাউৎসব গুগুল কমিউনিটি: https://plus.google.com/u/0/communities/117144176931778027450  তে সরাসরি জয়েন করে একটি সম্পূর্ণ ওয়েবসাইটের মতো সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। এখানে আপানার কবিতা পোস্ট করার সুবিধা ছাড়াও আপনার নিজস্ব সাহিত্য ব্লগের লিংক নিয়মিত ব্যবধানে প্রচারের সুবন্দোবস্ত ও অন্যান্য একাধিক বিভাগে আপনার যোগদানের সুযোগ রয়েছে। রয়েছে সুস্পষ্ট নিয়মাবলীও।


কবিতাউৎসব আপনার সৃষ্টিশীলতার প্রতি ঐকান্তিক শ্রদ্ধাশীল থেকে সবরকমের সহযোগিতার বিষয়ে সাধ্যমত অঙ্গীকারবদ্ধ। কবিতাউৎসবের সাথে থাকুন কবিতাউৎসব আপনার পাশে রয়েছে সবসময়।