গোপেশ দে
বুকপকেটে জোনাকিপোকা
রাতের আকাশের দিকে তাকাই
গ্রীল ধরে ঠেস দিয়ে আছি।
বাদামী পাতার
মত গোল ফুটবল
নিঝুম প্রকৃতি সেজে আলো দিয়ে ছড়াচ্ছে অমোঘ
নেশা।
গোল সেই ফুটবলটি কাউকে হাসাচ্ছে কাউকে
কাঁদাচ্ছে।
আমার বুকের ভেতরে ভিজে মাটির সোঁদাগন্ধ
ভেসে আসছে সহস্রযুগের হয়ে।
টিকটিক করে হৃদপিন্ডে কিছু পুরোনো ব্যাথা
পড়ন্ত বিকেলের লাল আকাশের মত জেগে উঠে,
রংধনুর স্মৃতির মলাট সাদাকালো ভেসে উঠে।
নিঝুম এই রাত্রিতে একটি দোকান চোখে পড়ে।
মনজিতের চায়ের দোকেনের পেছনে বসে
গাঁজাখোর দিচ্ছে শুকনো গাছের গড়্গড় টান।
কুকুরগুলো লেজ বাঁকিয়ে লকলকে জিভ দিয়ে
রুপোলি রাত্রিতে করছে স্নান বিস্কুটের আশায়।
আর আমি দাঁড়িয়ে দেখছি একা একা।
একা থাকা বেশ ভাল লাগে এই সময়
পাঞ্জাবীর গুটানো আস্তিনে হাতের
আঙ্গুলগুলো
কিছু পাওয়ার আশায় থাকে
ধরতে মন চায় নরম শরীরের ভালবাসা।
এই ভালবাসা চলছে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে
পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়ছে
নরম হাতগুলো উষ্ণ হচ্ছে বেশ
উষ্ণ হোক আমি উষ্ণ করি আমার মনখানা
হৃদপিন্ডের ভেতরে জমা কালো তুষারের দিনলিপি
চাঁদের সাথে শেয়ার করি
চাঁদের সাথে হোক আড়ি।
সপ্তর্ষিরা সাজিয়ে রাখুক পৃথিবী মহাকাল
ধরে
মহাকাল ধরে এই রাত নেমে আসুক,
কেউ একজন গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থাকুক
আমার মত পাঞ্জাবীর বুকপকেটে জোনাকি
পোকা নিয়ে।
কবিতাপরী
হুট করে এনে দিলে একরাশ সুবাতাস
ধমনীতে কবিতার ছটা
ছবিটা চোখের 'পরে ভাসে
দূরাভাষে আবহাওয়া শোনা
চোখে খরা,বৃষ্টিভেজা
খুঁজে নেওয়া
ভাসে যেন কাগজের নৌকা
একটু দূরের পানে যেতেই
ভিজে চুপচাপ
ডুবে যাবে মখমল যান
আর তুমি একটু দূরে সরে গেলে
আমার ভেতরে ককপিট
ভালোবাসা ভেজালকে দেয় প্রশ্রয়
তবুও কবিতাপরী তোমার দুয়ার
হোক আদিগন্ত কবিতাময়।
অনিষিক্ত কথা
আমি ধ্বংসস্তুপের মুখোমুখি
সামনে সুতোর মত নদী তার মাতৃগর্ভটা ভরাট।
ওপারেতে আদিগন্ত চরের মৌসুমে
খোঁচা খোঁচা মৃত কাশফুলের বাগানে তলার মাটি কেঁদে যায়।
একটা ভগ্ন নৌকোর গলুইয়ে এলিয়ে শরীর
চিন্তায় ডুবে থেকে
ভাঙনের রোদ মেখে
প্যাডের কাগজে সুঁই ফুটাই।
তার থেকে রক্ত ঝরে জন্ম নেয় কষ্টের শিশুটি,
তার ডিএনএ আমার মস্তিষ্কে,
আর কিছুটা ধ্বংসস্তূপের কাছে।
কেননা তার কাছ থেকে পুরোটাইই ধার।
এখানে ভাঙনের বেগ বয়ে বয়ে চলে প্রতিবার
মাটিকে চুম্বিত করে কেঁদে যায় উলঙ্গ কংকাল শিশুগুলি
খড়কুটো জমাতে জমাতে।
মধ্যরাতে চাদের আলো বিছিয়ে রাখে ডিম্বাণু
শুক্রাণুর খোঁজে।
ডিম আর ফোটা হয়না
স্বপ্ন আর বোনা হয়না।
অনুরণন
উদ্ভ্রান্ত মস্তকে স্মৃতির অনুরণন
সন্ধ্যায় ভূতভবিষ্যৎ
দাঁড়িয়ে থাকে উদাসীন চোখে
আমার স্বচক্ষে ইকোলোকেশনে পথ হাঁটা
বাধা তবু সম্মুখের রাজা
চারপাশ ঘিরে....
স্মৃতির গলিত চর্বিতচর্বণ
জাবরকাটা পশুর মতন
তুমি আমি আমি তুমি একদা অরণ্যে
পারমুটেশন আর কম্বিনেশন
আর কুয়াশা ধাক্কা মারে আজ
মগ্ন চৈতন্যে নিউরনে অনুরণন।
শব্দমালা
শব্দের চাষ হচ্ছে বেশ
মাতাল বড্ড মস্তিষ্কের
নিউরন।
ফসিল পুরোনো কিছু শব্দের
হারিয়ে যাওয়া
কোনো এক হারানো পৃথিবীর
ঘরে
লুকোচুরি স্বপ্নে আমার
হচ্ছে বৈকি
খুঁটিপোতা হবে লুপ্ত
শব্দের
দায়সারা নয়!
নতুন ভাবনায় শব্দের এলিয়েন
নামবে তিরিং বিরিং!
নামবেনা কেন?
সহস্র যুগ ধরেই প্রজনন।
শব্দের সাথে মুখের
খৈনী সমাচার!
মুখে পুরে থাক
মাঝে মাঝে বেরুবে।
শব্দের ফসিল স্বপ্নের
মধ্যে করে
লুকোচুরি গল্পের মতন।