শাশ্বতী
সরকার
দেওয়াল
মাঝখানে এক কী
ভীষণ দেওয়াল
দেওয়াল সংকোচের, দেওয়াল নৈঃশব্দ্যের
একপারে এক
উদাসীন বাউল
আর একপারে এক
ঋজু সন্ন্যাসিনী
বাউলটা পারত ওই
সংকোচের দেওয়ালটা ছিন্নভিন্ন করে দিতে
আর সন্ন্যাসিনীও
পারত ওই মেকি দেওয়াল ভেদ করে
বাউলটার বুকে
আছড়ে পড়তে
কিন্তু কিছুই
ঘটল না
শুধু সময় গড়িয়ে
যেতে লাগল
তার নিজস্ব
নিয়মে।
তোষণকাল
এখন সময় হল অসুর
তোষণের
দেবী নির্মাণের
কাজ
এখনও কিছু আছে
বাকী
ততদিন খেয়ে দেয়ে
ফুলে ফেঁপে ওঠো
আত্মপ্রসাদে দিও
দাড়ি-গোঁফে তা
আমিও কেমন দেখ
তারিয়ে তারিয়ে
তোমাদের
লাম্পট্য চেটেপুটে খাই
আমিও কেমন দেখ
গোপনে গোপনে
তাবৎ ক্রোধের
স্তূপে আগুন জমাই।
প্রণামী
আমি তো ‘জল’ মানে জীবন শুধু জানি
তুমি বল, জীবন না ছাই, মরণ মরণ!
দেখো না, সুনামির উগ্র আগ্রাসন
গিলে নিল আস্ত শহর, তপ্ত বেলাভূমি।
আমি তো ‘আলো’ মানে আশার কথাই ভাবি
তুমি বল, আশা না হতাশা, কি যে বল ছাই!
দেখো না, অন্ধকারগুলো কেমন পিছু পিছু ধায়
রঙ্গ দেখে পিত্তি জ্বলে, হেসে হেসে মরি।
আমি তো ‘বায়ু’ মানে প্রাণ মনে করি
তুমি বল, প্রাণ নয়, বিষাক্ত ঘ্রাণ!
চারদিকে টিঁকে থাকার লড়াই আপ্রাণ
তার চেয়ে এসো আমরা অন্য গান ধরি।
সেই থেকে ‘জল’ ‘আলো’ ‘বায়ু’হীন আমি
দূর থেকে দেখে যাই তোমার প্রণামী।
স্পর্শটুকু
ছাড়া
স্পর্শটুকু ছাড়া বাকী সব
দিয়েছ আমায়
উপযুক্ত ভরণ-পোষণ
অতন্দ্র রাত্রি-জাগরণ
ভালবাসার ধমকধামক
শুধু স্পর্শটুকু ছাড়া
বাকী সব আছে ভরা
ভাবটুকু ছাড়া
যেমন গানের চলন।
অচিন
পাখি
কোথা থেকে এক অচিন পাখি উড়ে এসে
ডুব দিলি আমার মন সায়রে
হৃদপদ্মটুকু ঠোঁটে করে নিয়ে
উড়ে গেলি আবার অজানায়
অলক্ষ্যে ছুঁড়ে দেওয়া আমার ব্যর্থ মনোফাঁস
শূন্যে ঝুলে রইলো
অশ্রুকণার আকারে।