বিলাপের সুখ
সুমিত রঞ্জন দাশ
১
লিখি ক্ষয়ে আসা বয়সের কথা
লিখি স্তাবক আর কার্নিসে চাঁদ ঝুলে
পরা
যে হাসি বিলোয় ফোকলা বুড়ো
আমার রাত জাগে
রাতভর্তি আপেল গড়ায়
২
গাছে গাছে তখন নিঃশব্দ কুসুম
শিল্পরেখা,
আমার বিস্ময়
পিছনে ফেলে আসা ধবলিমা স্মৃতি
সেই সোনার চাঁদ, গোপন রাত
আমি শুধু হাত ধরে হাঁটি, দুরে
আর কতদুরে
সেই মায়াবতী নগর
৩
আমাকে স্বজন করো, দেখো
আমারও আছে সুপ্রীতি, মানগন্ধী সুখ
আছে অলকানন্দা জল, বানভাসি উপল
রাত শেষে প্রস্ফুটিত জলের বুনন
শুধু আমায় বসতে দিও
তোমার শকুন্ত ছায়ায়
আর দিও মায়া-কায়া-সুখ
ডোগরা মুগ্ধতায় আমিও যে
চন্দ্রকান্তা, প্রাচীন তুষার
৪
অসীমে হেঁটে চলি -
হই নতজানু, রেখে যাই আমুল প্রার্থনা
জমে থাকা হেলেঞ্চার বনে
শতাব্দী প্রাচীন আম্রপালী তৃষ্ণা
কোথায় রাখি ইহজন্মের স্পর্শ
বাঁধি যুগল জন্মের আলোকলতায়
ওহে সখা
এই গাঙে থেকে যাব আরও কিছুদিন।
৫
নিসর্গ জানে অভিমানি চিবুক
চাঁদের পরাগ
জোনাকের জীবনে প্রশান্ত চুমুক
সমুদ্র থেকে শুষে নেয় নিমক মুগ্ধতা
গড়ানো ধূসর থেকে খসে পরে
নিষেকের ঘুম
দাঁড়িয়ে থাকি নিঃসঙ্গ, একা
এসো হে, আমরাও নির্জন হয়ে যাই এবার।
উত্তরপর্ব
সুমিত রঞ্জন দাশ
সম্পর্ক!
আমি তো কেবল জখমে জখম দেখি
হাঁটু ছেঁড়া রাস্তাঘাটে
ভিতরে বাইরে -
গাছের শেকড়ের মতো ছড়িয়ে আছে
নারীর যোনী থেকে যোনীতে,
অ্যাদম-ইভের নাভি থেকে
ক্রমবর্ধমান ঢেউয়ের মতো বৃত্তাকারে
ক্রমশঃ বিলীন হয়ে যায়
দূর থেকে দূরে কায়াহীন শরীরে,
ফিরে আসে না কখনো
মাতৃদুগ্ধ কিম্বা রক্তের টানে;
তবুও একবার চেষ্টা করে দেখি
চার ফ্রেমের গল্পে যদি ধরা পরে
ঘুনপোকায় কাটা মধুমাস, বসন্ত
সিঁড়ি বেয়ে যদি নেমে আসে
সূর্যভেজা ছিটেফোঁটা শিশির
সেদিন নাহয় লিখবো
সম্পর্কের ইতিবৃত্ত।
তারপর, হেঁটে যাব দু'জনে ...
নিষিদ্ধ আবেদন
সুমিত রঞ্জন দাশ
ওরা আসছে, সবাই সার বেঁধে আসছে
ওরা সবাই -
পামেলা নামে, মে ওয়েস্ট, তসলিমা কিম্বা ম্যাডোনা
প্রতিমাও আছে
পোশাকি সঙ্কোচ খুলে
ভেঙ্গে গড়তে চাইছে
স্বৈরিণী সমাজ ... নষ্ট নয়
সমাজ পুরুষ পিতা-পুরুষ শাস্ত্রে বদল
চাইছে,
দোহাই তোমাদের, ওদের রসাতলে পাঠাতে দিও না,
নিন্দায় ধিক্কারে নির্বাসনে ফতোয়ায়
নাহলে
প্রস্তরখন্ডে বিনাশ করো ওদের,
নতজানু হতে শেখাও।
ওরা নিষিদ্ধ, নষ্ট -
পুরুষশাসিত অন্ধকার সমাজের যত আবরণ
ওরা খুলে ফেলতে চায়
আজ নয় কাল আমাদের বাড়ির মেয়েরা -
সে ঝড় আসতে আর বেশী দেরী নেই,
শুনতে পাচ্ছি, হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি
মার্চ করে এগিয়ে আসা সময়ের বেগে
আর দেরী নেই
আটকাও
ওদের আটকাও এখুনি,
চিৎকার করে বল - 'তোরা নিষিদ্ধ, তোরা মুখ খুলিস না';
এক গেলাস জল দেবে, গলাটা বড় শুকিয়ে আসছে ...
হারানো খুঁজি
সুমিত রঞ্জন দাশ
আয়ুরেখা ধরে কিছুটা পথ পিছু হাঁটলেই
সেই পরিচিত গন্ধটা পাই, বেশ মিষ্টি, কড়া -
এখন সিড়ির প্রতিটা ধাপে
সেই গন্ধটা,
পাতা চায়ের ব্লেন্ডিংএর মত;
আমি সন্ধ্যে হলেই বাজারে ঘুরে
পারফিউম খুঁজি
প্রতিদিন নতুন একটা,
বুঝে গেছি বেলফুলের মালার গন্ধে
বেশিদিন কাটানো আর যাবে না;
এই শহরের মুদিখানায় রকমারি স্বাদ
নতুন একটা গন্ধ সবকিছুতেই
মনে করতে পারি না
হলুদ গোলাপ কোথায় দেখেছিলাম
সঙ্গে সেই পরিচিত গন্ধ ...
আচ্ছা, চেনা ফুল শুকিয়ে গেলে
পরিচিত গন্ধ বুঝি অচেনা হয়ে যায় ।
কারেক্ট ডিরেকশন্
সুমিত রঞ্জন দাশ
তেরোর পাতায় সাতান্ন লাইনে
ওখানেই বিছানার চাদরে লেগে আছে
সঙ্গমের ধ্বংসাবশেষ
আর আবছায়া লিপস্টিক,
তোমাকে বুঝে নিতে হবে
অ্যান্টিক ছবির মত অন্তর্বাস শূণ্য;
এবারে এসো প্রতিকী আলোচনায়
এক চুমুকে পান হবে
চাঁদের আলো কোন রকম ফিলটার ছাড়াই
ফুটে উঠবে টুকরো খিদে পুরুষটার
আলো-আঁধারির খেলায় নিতম্ব
বক্ষত্রীড়া
তোমার শরীরী আবেদন,
ব্যস, ওইটুকুই ...
পিছিয়ে যাও ফ্লাশব্যাকে
একশটে নিতে হবে
সব রঙ ধূসর
জমিয়ে রাখা সব আপশোষ মান অভিমান ...
কাট্ কাট্ কাট্ !
এতদিন ধরে ওখানেই জমিয়ে রেখেছিলাম
তোমায়
- কবিতা ।