রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

নুরুন্নাহার শিরীন



পঞ্চ কবিতাজাল 
 
নুরুন্নাহার শিরীন
   ************* 
 
 “এক 

    এত যে অমল পাঠ  এত যে গীতল ...
   এতটা জ্বলন্ত  এতটা  শীতল ...  
   নাম তার  হতে  পারে প্রেম  হতে  পারে দেশ।  
  অথবা সে ছবিময়  অধরা  অশেষ। 
  ছমছমে  সঙ্গ  তার  ঝমঝমে  গাঁ  উদাস - 
  ছুঁয়েছেনে ঘুম  আসে না সে পঞ্চতপা  শ্বাস। 
  সূর্যজাগা  সৃষ্টিধুম  বৃষ্টিধোয়া  রঙ - 
  দৃষ্টিকাঁপা  হৃদ্যতার  পাঠশালা  ঢং ঢং। 
  
  সে আলোজলের ভেসে  আসা সবুজের গান -
সে আমার উড্ডীন স্বদেশ ছেলেবেলা আনচান।
সে যে ছবি কথা বলে ভাসায় সাম্পান - 
সে আমার স্তব্ধতায়  বাজায়  মুক্তির  গান।
ও আমার গান, যাও যেখানে  হৃদয়  নত ...  
  শোনো মুগ্ধতায়  রক্তের  বাজনা - অন্তর্গত। 
  ও আমার গান, যাও  পাতায়  থাকো ...  
মনভাঙা সব চাপেও হৃদয়জয়ী  গন্ধে  ডাকো।





দুই 

  তখনও হয়তো কোথাও আমার মতোন আমি -
কাছেদূরে ভেসে আবছা ঝাপসা সন্ত অন্তর্যামী। 
ছিন্ন শত শুকনোপাতার মতো জখমিত - 
মেঘরোদ ভাসা জগতবাড়ি সামলে বেড়ায় কত।
  তখন  মাঠের  পারে আচমকা কে বলেগো - 
এখানে কবিতা বেচাকেনার তিলঠাঁইও নেইগো।
চলে যাও খালি নেই চিলতে আসমানতল - 
পেতে বসতে দেওয়া যাবেনাগো মৃত আলোজল
হয়তো তখন ঝরা পাতার তরণী হতে - 
দারুণ দিনান্ত গন্ধে ঘুমোই কোনওমতে - 
প্রিয় কে কবিতাময় হাত বাড়িয়ে বসায় নায়ে - 
কে বলেগো আমি নেই প্রিয় গাঁয়ে?





তিন

  ও ঈর্ষা, বিদ্বেষবিষ জ্বালাতে পারো কি? 
না পারা তোমার কালো লুকাতে পারো কি? 
লুকাতে না পারা ঈর্ষাকাব্য তোমারই মতো - 
আসছে যে ধেয়ে চর্বিত বিবমিষার মতো - 
এইখানে অইখানে এইদেশে ভিনদেশে - 
সংক্রামক ব্যাধিগ্রস্ত শুধু আসে ভেসে - 
সেসব হটাবো ভেবে আমিও প্রেমের বেশে ...
এদেশ বিদেশ ঘুরি প্রেমী কবিতারে ভালোবেসে।

বলি যে তোমারে ঈর্ষা, তোমারে চাই না মোটে। 
জেনেও বেহায়া লোভীর মতোন আছো বটে। 
জানি না কি করে আমি অস্ত্রহীন ঈর্ষাহীন ...
হটাতে চাইছি তবু তোমারই থাবা রাত্রিদিন। 
হৃদয়ের শিখা অনির্বাণ হবে কি শিকড়হীন? 
হবো কি আমরা হৃতকাব্যে জ্বলেপুড়ে ঈর্ষাহীন?





চার 

  তাহলে এবার চলো আমাদের অইসব
  রাজ্যের জঞ্জালভার মাথা হতে ঝাড়ি সব। 
  ওসব  মেটেও  নয় - 
  আমাদের  প্রেমের  বিষয়।
বিষয়-আশয়  দিয়ে  আদতে  কবিতা  হয়? 
  অথবা  আশার  প্রিয়  ছোট্ট  চারাগাছ  হয়? 
  কবিতা-গানের আর  ছবিদের  চাই - 
বিস্তীর্ণ সাগরসেচা-পাঁজরছোঁয়া আকাশটাই। 

  তাহলেই  দেখো  তার আর  পর  নাই ...  
  দেখে নিও তার  আর  পর  নাই। 
  বিশাল বাংলামাঠ ...  
  সেইখানে  হাতে  হাত ...  
  সেইখানে  হৃতকাল ...  
  তুমুল সবুজমাখা সূর্যচ্ছটায়  আশ্চর্য  লাল।





পাঁচ  

   অতঃপর আটকুঠুরি নয় দরোজাভাঙা আমি। 
  অচিনপুরে দোজখ না কি বেহেশতে আমি? 
  শুনেছি  পাপীতাপীর  শাস্তি  কঠিন  বিষম। 
জ্বলেপুড়ে খাক তবু একবিন্দু  নাই  উপশম। 
যত ভাবি থাক আর ভাববো না ওসব অচিন ...
অমনি আবার সেই ঝাঁজালো কঠিন দিন। 
কেমনে কি দিয়ে তারে ঝেঁটিয়ে বিদায় করি - 
ঘাড়েই পা বঁটি পেলে কেটে কুচিকুচি  করি।
আমি কি  তাহার কেনা? বান্দীও নই।
যে প্রভু বানান - দুজনেই  তাঁর  হই। 
প্রভুর খেয়ালে প্রাণী কিই না করতে জানে - 
ঘাড়ের  পাহারাদার  জানে? 
আমার পায়ের জোর কমলে তোমার বাড়ে বাড়?
আমি কার বাড়াভাতে ছাই দিই পাহারাদার? 
আমি তোমারই অই  প্রভুর  সৃজন  এক। 
আমি তুমি দুজনেই  প্রভুর খেয়াল  এক।



ফেব্রুয়ারী ২০১৬ সাল।

   ঢাকা বাংলাদেশ