প্রেম প্রত্যাবর্তন
ঐশী দত্ত
আরো একবার
হামাগুড়ি দিয়ে
গোপন গঙ্গা
অস্তমান
আলোয় স্মৃতির রাসলীলা
যেখানে
সংগোপন ছিল পথের দাবি
ভোরের
শ্বাসমূল
ভূ-তলে পড়ে
থাকা যে শুভ্রতা
বিকেলের
ঢেউগুলোকে জড়িয়ে
উড়িয়ে
দিয়েছে ঝরাপাতা
দুপুর রোদের
হু হু ক্রন্দন
ছলছল দৃষ্টি
কাশফুল সময়;
এইসব মনে
রাখার একেকটা গোপন খুলে পড়ে
যদি
ভেসে যায়
আপাদমস্তক,
হাওয়ার বুকে
শব্দ ভিজে ওঠে
যদি
বলে এইসব
সময়ের সাহায্য প্রার্থনা,
প্রেম প্রস্থান;
হে প্রিয়তম
বৃক্ষ,
তোমার
ডালপালার ভেতর দিয়ে
তবে কি আবার প্রেম প্রত্যাবর্তন, আদুরে
শীতকাল?
চলতে চলতে
বাঁচা?
মৃত্যুর চোখ
পেরিয়ে দূরে দেখা আমাদের জন্মসকাল।
পিপাসা
ঐশী দত্ত
দীর্ঘশ্বাসের
সমুদ্রে পিপাসা এত ঘন যেন,
মাঝরাতের
অন্ধকারে খুঁজছি এক আলোকবর্ষ
এক
প্রভাতকন্যার ভুয়ো সন্ধ্যায়
পরিপাটি
এক
আদি
দিগন্ত
অচেনা ধুলোর
হামাগুড়ি চেনা ঘ্রাণ
এক
ময়মনসিংহের ছেলের চোখে ভরপুর ব্রহ্মপুত্র জল
শালিকডাকা
দুপুর, বিদায়
জবাকাহিনী
আদরভরা
শেকড়ের ছাদ;
যেন তোমার
উচ্চারণের জ্বলজ্বল শব্দ
তলপেট বিকেল
সবুজ ঘাসফুল
নরম দ্বিধায়
ঘাসের আঙুল
লাজুক
স্টেশন সন্ধ্যা ছয়টা-
আশাবাদী
তিস্তা এক্সপ্রেস
এইসব
শুনে-শুনেই বেড়ে ওঠছে শাদা আগুন
এক বাবার হাহাকার
জানলার
কাঁচে এক শুকনো মুখ
বিমুগ্ধ
প্রেমে
এক
অন্তর
পিপাসায়, কেউ নির্জন
নয় নিঃসঙ্গ।
বাল্যপ্রেমিক
ঐশী দত্ত
উপেক্ষা
করার আগেই
কে জানে
কীভাবে তুমি লিপিবদ্ধ করেছ
ভাঙনের সুর
!
জীবন থেকে
যা কিছু সম্ভব
যা কিছু
গা-ঘেষা
সমস্ত কিছু
ফুরিয়ে আসছে...
ফুরিয়ে আসছে
আগামীকাল..
ফুরিয়ে আসছে
সামলে রাখা
বুকের মধ্যে
বুক
হাতের সঙ্গ
পায়ের সঙ্গ
পবিত্র
অভিমান
একটা
সৌন্দর্য
স্বস্তির
ভেতর আদান প্রদান।
হে বাল্য
প্রেমিক,
তুমিই আমার
ব্যর্থ অনুসন্ধান !
খোদাইশিল্প
ঐশী দত্ত
ছুঁয়ে যায়
ছোঁড়া ফুলমালা
শাদা কালো
সংসারী শাড়ি
নারীর
সৌন্দর্য কী গভীর উচ্চারণ !
বিবর্ণ
নীরবতায়
চৈত্রের শেষ
রোদ্দর
বৈশাখী আলোয়
প্রথম ঝড়
মুচকি হাসির
টলটলে পিপাসায়
যেন গ্লাসের
জলে রাত,
চুমুকে
চুমুকে ভোর
ভিতরে ভিতরে
নিরগল
বাহিরে
বাহিরে নির্মল;
শাদায় শাদায়
সজনে ফুলে
যেন ভেসে
যাওয়া অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাত।
এইসব উচ্চতর
অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার আগে,
বেঁকে যাওয়া
মানুষের
স্নায়ু
ছুঁয়ে,
জোব্বার
গায়ে জড়িয়ে রাখ ধুতি
মঙ্গলময়
পৃথিবীর মৃদু সুরে
মন্দিরের
গায়ে খোদাই করো মসজিদ;
দু'চোখ ভরে
দেখুক তা
অলক রায়
তোমার
খোদাইশিল্প ঈশ্বরকে কাঁদায় না হাসায় ।
ভাবনায় খোঁজে
ঐশী দত্ত
সেখানেই তো
আছো তুমি
তোমার সঙ্গে
পরিমেয় আলো
ধূলিম্লান
হাওয়া গাছের ছায়া
আর সেইসব
স্বাধীন যুবতী
যারা এ-ওর
কাঁধ ছেড়ে ছেড়ে
ভোরের বুকে
হাসে তপ্ত রৌদ্রের মতন।
যে ঘাস
নিয়মিত জন্মায়
ভুদৃশ্যের
মাঝ দিয়ে যে আলো
জন্মের
উদ্দেশ্যে যে পথ হেঁটে যায়
যে জীবন চোখ
মেলে,
আত্মসচেতন
বুকের শঙ্খ বাজিয়ে
সদ্যজাত যে
প্রেম;
এদিক-সেদিক
জাগাতে জাগাতে
আঘাতে দেয়
সুরসুরি
সেখানেই তো
আছো তুমি ।
শুধু
রোদ্রদ্বিধায় প্রেম
ক্ষুধার
মাঝে বিচ্ছিন্নতাবোধ,
স্বস্তির
যন্ত্রণায় সঙ্গমের প্রতি ধাপে
বিচ্ছেদের
অপেক্ষমান বৃদ্ধি;
মুমূর্ষু
স্পন্দনে জল ভেসে যায়
ভেসে যায়
ঝিল মাঠ ধানক্ষেত
আমার জীবনও
তাই।
সেখানেও কি
আছো তুমি?
শুধু পর্দার
সৌজন্যে কিছু না বলা
ঘোমটা টেনে, না রাখা
চুম্বন,
দ্বিতীয়
বিবাহে ভোরের নৈঃশব্দ
সুন্দরের যত
অসুখ
যে কথা বাবা
বলতো
যে সত্য
বড্ডো উদাসীন
"আলোর আগে
তুমি বড় হও"।
এখন আমি বড়
হচ্ছি
এখন আমি
আগুন পরছি
এখন আমি
জীবন লিখছি
সেখানেই তো
আছো তুমি
যেখানে আমি
বারবার উধাও।
বিচ্ছিন্নতাবোধ
ঐশী দত্ত
একসঙ্গে
হাঁটতে হাঁটতে
পিপাসায়
দীর্ঘ হয় পথ
আড়াল থেকে
বেড়ে ওঠে সুখী মুখ।
এমন নেশায়
যে সমস্ত দিন পেরিয়ে এসেছি,
তার মধ্যে
জীবন
নিঃশ্বাস নিচ্ছে
এখনো ।
তোমাদের
দেওয়ালের বাধা ছাড়িয়ে,
তোমাদের
হাতের ভিড় ঠেলে
আঙুল ফসকে
ফসকে,
তোমাদের
দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একেকটা দিন আলাদা আলাদা
করে;
একদিন যখন
কমলাপুর স্টেশনে রাত বারটার পর
ঘরহীন
মানুষগুলোর ঘুমন্ত ছবি দেখে,
সূর্যকে
বলেছিলাম
"একটা দিন
একটু দেরি করে এসো"
ওরা ঘুমাক
আরো একটু সময়
আরো একটু
শান্তিতে
ভাগাভাগি
করুক সুখের জানলা।
ঠিক ঐদিন
ঐ সময়েই যাঃ
ধরা পড়ে গেলাম।
তখন তোমাদের
চোখে কেলেঙ্কারি দিন !
আর আমাদের
ফুল ফোটা শেষ!
সত্যি বলছি
তারপর আর
কোন অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটাইনি!
এখন শুধু
ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে আছে আমাদের বিচ্ছিন্নতাবোধ ।.