রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

মুস্তাফা কামরুল আখতার



খুলে যায় দরোজা
---------------------------
মুস্তফা কামরুল আখতার

সেই থেকে
এক গল্প হয়ে গেলে, নীল অনামিকা
গল্পটা কেমন?
দু'চার-দশটা কাহিনির মতোই সাদামাটা ?

হতে পারে,
কিন্তু একটি পৃষ্ঠায় একটি বিন্দু এঁকে দিলে --
সেই সব দিন ও রাতের
আড়িপাতা শুরু হয়ে গেল যে !

খুলে যায় দরোজা,
রূপবতী পেলব হাত
রাত্তিরের দুর্ধর্ষ মুহূর্তগুলোর
প্রণয়োপাখ্যানে তুলে দেয় মিষ্টি লিফলেট
দিনের নিকেলরঙা আলোয় অনিন্দ্য-হাসিতে
চোখের কালো মণিতে এঁকেছ ভবিষ্যৎ

অনামিকা, ধরে নিয়ো, কী-ই বা আসে যায়
মুছে গেলে, দুটো রেখার যে-কোনো একটি




অবাক অন্ধকার চিরে
--------------------------------
মুস্তফা কামরুল আখতার

দূর-পথ, এক অচেনা আঁধারনগর তখন, পৃথিবীটা ফুঁপিয়ে
কেঁদে ফেলবে ভাবিনি, ভাবিনি আমার গা বেয়ে উঠবে
কারো সহানুভুতির রোদ

তেমনটি নই তোমরা যেমন ভেবেছ, একবারও চাইনি
তোমাদের স্বল্প-দীর্ঘশ্বাস আর করুণ এপিসোড জুড়ে আমি,
একটিবার হাত ছোঁবে তুমি, কিংবা
প্রাগ-ইতিহাসের প্রত্নতত্ত্ব-ঘ্রাণ ঝেড়ে মুছে দেবে
যেন শতাব্দী পেরোনো মানুষ আমি, বারবার জন্ম নিই
তারপর আরও ক'টা দশক
হাটবাজারে দাঁড়িয়ে থাকা রক্তাক্ত দাস যেন
টেনেহিচড়ে আনা রক্তময় ক্ষুধার্ত ক্রীতদাস,
তুমি এলে,
জোড়াচোখ-আশ্বাস কোমলহাত দাঁড়িয়ে তুমি,
হৃদপিণ্ড জুড়ে একটি কোমল পেন্ডুলাম,
জলজ মন
ছুঁয়ে দিলে হাত

হাতটি ইতিহাস হলো, হঠাৎ পর্দা-নেমে আসা
তারপর, --
পেরিয়ে-যাওয়া সময় চিরে কতো উচ্চ-নিম্নবর্গীয়
চুপ-চুপ-ফিসফিস-কথারা রচে সভ্যতার দাগ
বুক জুড়ে আমার

খুঁজে ফিরি একাল-সেকাল, চিরজীবী বুক-আলোড়ন
এরপর রাষ্ট্র হয়, শাসক হয়, কতো জল যমুনায়
অকস্মাৎ দেখি,
দেখে বুঝে ফেলি, আমার অগ্রন্থিত চিঠিগুলো একটিও
পাঠানো হয়নি, বলা হয়নি
জাতিস্মর আমি, জন্মের পর জন্ম হেঁটে বেড়িয়েছি
সঞ্চিত অক্ষরগুলো মুদ্রিত হয়েছে আসলে তোমারই
ভীষণ নিরাপদসুন্দর পৃষ্ঠার বুক জুড়ে





তবুও ভালোবাসি
--------------------------
মুস্তফা কামরুল আখতার

'ছায়াসঙ্গী' -- অস্ফুট-উচ্চারণ বাতাসে ভাসে
ঘাড় ফেরায় ভবিষ্যত মানুষেরা
অথচ হালকা আলোয় ছায়াও মুছে গেল

'তবুও ভালোবাসি' বলে স্থির দাড়িয়ে থাকে
অতি সাদাসিধে দিন-রাত্তিরের গল্প ...





মৃন্ময়ী, তুমিও
---------------------
মুস্তফা কামরুল আখতার

একটা ছোট্ট বৃক্ষ খুঁজে পেয়েছি, নাম দিই মৃন্ময়ী
ওর কোটরে গল্পগুলো জমা রাখি, দীর্ঘশ্বাসগুলোও
রোদ, বৃষ্টি ও আগুন নিয়ে তৈরি গল্প, বলতে পারি
কিছু মৃত্যুযন্ত্রণার প্রহরও আছে

কিন্তু কী আশ্চর্য, মৃন্ময়ী, তুমিও !

বৃক্ষেরা ছায়া দেয় না এখন, আমাদের কাহিনিগুলো
মুছে দিই, অদৃশ্য-চুলোয় পুড়তে থাকা
এ-সব গল্পকে
জিজ্ঞেস করব, --
'কপালে মৃত্যুর ছায়া নিয়ে জন্মালে কেন?'






আততায়ী
---------------
মুস্তফা কামরুল আখতার

আততায়ী অতর্কিতে আসবে, কোনদিক থেকে, কীভাবে
জানা না থাকলেও বোঝা যায়, ফাঁকফোকর ছাড়াও
সদর-দরজাও সে ব্যবহার করে ফেলতে পারে।
আমরা
উন্মুক্ত হাওয়া আসতে দিই,
পাখির গান,
হর্ন ও চাকার শব্দ,
সাহায্যপ্রার্থীর ক্রন্দন, সবই --
কিন্তু আচমকা খুনির আগমণ বুঝতে পারিনি
তাকে আপ্যায়ণ করেছি এবং নিহত হয়েছি
প্রচারিত সংবাদসমূহে আমাদের নির্বুদ্ধিতা ও
অসতর্কতার কথা বলা হচ্ছে

খুনি হাসে, অলৌকিকভাবে দেখি, ক্রুর হাসিমুখ
শুনতে পাই, 'হতাহতদের ভাগ্য এমনই হয়।'

আমি ও আমরা উল্লাসধ্বনি শুনতে-শুনতে
একটা ভূ-গোলকে একপাশে বিজয়ীদের স্থলভাগ,
অন্যপাশে
বিজিতদের নোনাজল দিয়ে সমুদ্র বানাই

____________________________________
সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান
সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম

বাংলাদেশ।