রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

সমর কুমার সরকার



এক দিন সব পাখী ফিরে যায় আপন কুলায়
*****************************
সমর কুমার সরকার
এক দিন সব পাখী ফিরে যায় আপন কুলায়,
সহসা কি আহ্বানে-“ফিরে আয়,আয় ফিরে আয়
অমোঘ আহ্বান,সাধ্য কি বা পাখী করে মানা,
ক্লান্ত,জরাজীর্ণ দেহ,বন্ধ করে চিরতরে ডানা।
তখনো অপূর্ণ সাধ,মোহঘোরে মুদিত নয়ন,
জৈবিক ভোগ সুখ ছেড়ে যেতে নাহি চায় মন।
তবু চলে যেতে হয়,নামহীন অজানা কাননে,
“এসেছো তো যেতে হবে”-এই বুঝি জীবনের মানে ?
 
এক দিন সব নদী সাগরেতে মিশে হয় লীন,
মহাসিন্ধুর ডাকে ধেয়ে চলে তাই প্রতি দিন।
গতি পথে পড়ে রয় কত বাঁক,কত বালুচর,
কত বন,গিরিপথ,জনপদ,শহর,নগর।
এক সভ্যতা ভাঙ্গে,গড়ে ওঠে নব সভ্যতা,
নদীই কেবলি জানে,সাগরের গূঢ় মাদকতা

গতি জীবনের সার,গতি জীবনের জয়গান,
ক্ষুদ্র বৃহতে মিশে আত্মত্যাগে হয় মহাপ্রাণ।


এক দিন জাগরিত সুশোভিত সুবাসিত দলে
বিকশিত সব ফুল ম্লানমুখে ঝরে ধরাতলে।
ক্ষণিকের আগমন,তবু মেলে দল মনোহর
পরাগ মিলন সুখে, মধুপানে তৃপ্ত মধুকর।

এক ফুল রেখে যায় আশ্বাস বিদায় বেলায়-
শত ফুল বিকশিত হয় শত বিটপী শাখায়

ফুল ঝরে যায় তবু নিতি ফুল হয় বিকশিত,
আসে প্রাণ,যায় প্রাণ-এই ধারা যেন চিরাগত।


এক দিন সব দীপ আলো দানে হয় নিঃশেষ,
তিমির বিদারী দীপ,তিমিরেই নয় তার শেষ।
দীপ নিভে যায় তবু,রয়ে যায় দীপ,দীপাধার।
অগ্নি পরশে পুনঃ প্রাণ ফিরে পায় বার বার।
প্রাণের বিনাশ নাই,শুধু ক্ষণিকের অবসর,
নব রূপে,নব তেজে,ফিরে পায় নব কলেবর।
চাই তেজঃ,মহাতেজঃ,জীবনের মহা সঞ্চয়,
তেজঃহীন মৃত যদি,তেজীয়ান চির অক্ষয়।


এক দিন সব তারা অলখিতে খসে মহাকাশে।
কে বা রাখে খোঁজ তার কোটি তারা যদি বা প্রকাশে ?
কত তারা জেগে রয়,কত তারা রয় নিদ্রিত,
নীহারিকা,ছায়াপথে,কত তারা ভ্রমে অবিরত

এক দিন সব গীত থেমে যায় কোন ইঙ্গিতে ?
মায়াময় ছায়া সম সুর ভাসে শুধু চারি ভিতে।
গীত বিস্মৃত যদি,নব সুরে গাই নব গীত।
সুর,তাল লয়ে বাঁধা শাশ্বত সব সঙ্গীত


কোন পাখী কোন গান গেয়েছিল,কে বা মনে রাখে ?
ধারাহীন নদীখাত মৃত্তিকা বালুকাতে ঢাকে।

ঝরা ফুল ধূলি পরে অনাদরে রয় অবহেলে,
দেবহীন দেবালয়ে কে বা আর সন্ধ্যাদীপ জ্বালে।
তেজঃ নিঃশেষে তারা মহাকাশে পুড়ে হয় ছাই,
গীত রয়ে যায় তার গীতিকার অচিরে হারাই।
এই মহাবিশ্বের প্রতি পদে মহা বিস্ময়!
সৃষ্টির সাধনার পশ্চাতে সৃষ্টির লয়।

এক দিন অজানিতে মৃত্যু এসে দেয় হাতছানি,
“ফিরে আয়,ফিরে আয়,ছেড়ে মায়া পিঞ্জর খানি।”
এই পৃথিবীর আলো,এই পৃথিবীর জল,বায়ু,
স্নেহ,মায়া,ভালবাসা,বন্ধনে ভরা পরমায়ুঃ,
সব ছেড়ে যেতে হবে,কোন লোকে,কোন মায়া পুরে?
আর কি আসিব ফিরে ? তবে কি বিদায় চিরতরে ?
কবিতার খাতা খানি রেখে যাবো কালি ভরা দাগে,
অক্ষরে অক্ষরে ভালবাসা অস্ত রবি রাগে।

********************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি






মানুষ জাগে যদি
***********
সমর কুমার সরকার
নির্বাচনের দামামা যেই বাজছে গুরু গুরু,
রঙ বদলের,ভোল বদলের খেল-তামাশা শুরু।
ক্ষমতা,পদ,টাকার মোহে যতেক বহুরূপী,
আম জনতার দরবারে হাজির চুপিচুপি।
গায়ক,বাদক,শিল্পী,লেখক,উকিল,যাদুকর,
শিল্পপতি,রাজনীতিবিদ,সকলে তৎপর।
অভিনেতা,ব্যবসায়ী,উকিল,চিকিৎসক
সবার দাবী দেশের সেবায় রয়েছে তার হক।

নির্বাচনে জিতে সবাই করবে দেশের সেবা,
এমন মজার কথা কখন শুনেছে আর কে বা?
জনগণের সেবা করার আর কি উপায় নাই ?
নির্বাচনে জিতেই কেবল গদির দখল চাই ?
হাজির যত নেত্রী,নেতা,কিংবা তাদের চেলা,
সকাল-বিকাল মিথ্যা প্রচার,মন ভুলানোর খেলা।
জনগণের দুঃখে সবার ঝরছে চোখের জল,
আসল কথা- লাগাচ্ছে গাছ,পেলেই খাবে ফল।

উন্নয়নের নামে কতই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি,
কে না জানে নির্বাচনের পরেই এসব ইতি!
ভিত্তি স্থাপন,ফলক লিখন,মিথ্যা ভাষণ সার,
পাঁচটি বছর টিকির নাগাল কেউ পাবে না আর !
জনগণের উন্মাদনা দেখলে জাগে ভয়,
এত ঠকেও এদের বুঝি শিক্ষা হবার নয়!
জনগণের ভোটে জিতে জনগণের হেলা,
কত দিন আর চলবে এমন ভয়ঙ্কর এ খেলা ?

বাঁচতে হলে চাই সকলের সমান অধিকার,
চাই জীবিকা উপার্জনের পালতে পরিবার।
ঘরে ঘরে জ্ঞানের আলো,অবাধ স্বাধীনতা,
সবার উপযুক্ত আবাস,ন্যায় বিচারের ছাতা।
কিছু দিনের জন্য কিছু লোক ঠকানো যায়,
সারা জীবন সব লোকেরে ঠকানোটাই দায়।
ভাবছো যারা লোক ঠকিয়ে করবে হাসিল গদি,
সে গুড়েতে পড়বে বালি মানুষ জাগে যদি।
**************************
সমর কুমার সরকার শিলিগুড়ি






নিশাচর
*******
সমর কুমার সরকার

শীতের কুয়াশা মাখা বটের ঝুরিতে জমে হিম-
আঁধারেতে ঊর্ধ্বপাদ স্তন্যপায়ী নাড়ে কালো ডানা,
অতীন্দ্রিয় শব্দের কম্পনে ধুকপুক শ্বাস
ধরা দেয় চামড়ার ঝালরেতে,লোলুপ রসনা,
তাজা মাংসের বাস,জেগে ওঠে জৈবিক ভুখ-
শিশিরের স্নেহমাখা ঘাসের জমিতে মৃত প্রাণ,
উল্লাসে চাটে ঠোঁট,নখে দাঁতে ক্রূরতা ঝিলিক,
নিত্য নিশাচর লীলা কলুষিত জীবনের গান।

ঠুলিপরা আলো নিয়ে ল্যাম্পপোষ্ট জেগে রয় দূরে,
ঘুম ভেঙ্গে কেঁদে ওঠে শীতে কাঁপা পথের কুকুর-
আঁধারেতে ফিস্ ফিস্,কটু স্রাব মাংসের ঘ্রাণ,
জান্তব প্রেরণায় লালা ঝরা পশু কামাতুর।
বিছানায় নীল আলো,ঘিনঘিনে মৃত শুক্রাণু
চাদরের ভাঁজে ভাঁজে প্রতি রাতে স্থান বদলায়-
দেহ থেকে লীন তাপ শুষে নেয় কামাতুর দেহ,
নখে দাঁতে ঝলকানি,নিশাচর ডানা ঝাপটায়।

বটমূলে ঘাস ঝোপ,নীল বাতি বস্তির ঘর-
শিকারের উল্লাসে দেয় হানা যত নিশাচর।

*******************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি






ছন্দ ভেলা
*******
সমর কুমার সরকার

নিদ্রা মগন স্বপ্ন বিভোর মধুর লগন,
'এমন ক্ষণে' মুক্তি দিলাম তোমারে 'মন'
দিলাম অবাধ স্বাধীনতা তোমায় আরো,
যেথায় খুশী সেথায় তুমি যেতে পারো।
সওয়ার হয়ে কল্পনার ওই হালকা রথে,
বেড়িয়ে এসো স্বপ্নলোকের অচিন পথে।
দিলাম তোমায় মনের ভাষা,বর্ণমালা,
পূর্ণ করো নিঃস্ব মনের রিক্ত ডালা।

মুক্ত তুমি, যাও না - "যেথায় মেঘের ভেলা,
নীল আকাশের স্বপ্ন মাখা তারার মালা।
নীহারিকার ছায়াপথে নবীন তারা,
কাজল মেঘের বাদল সোহাগ,বৃষ্টিধারা।
সাতরঙা ওই ইন্দ্রধনুর খিলান তলে,
ঢেউয়ের নাচন পান্না-সবুজ সাগর জলে।
চাঁদনী রাতে রূপালী চাঁদ স্বপ্নমায়া,
পাহাড়-চূড়ে বনভূমির স্নিগ্ধ ছায়া।

কিংবা,ধরো মাটির বড় কাছাকাছি,
যাদের মায়ায় বদ্ধ হয়ে বেঁচে আছি।
চষা মাঠের আল বেয়ে যাও তেপান্তরে,
সবুজ ফসল হাওয়ায় যেথায় নৃত্য করে।
পুষ্প বনে  ভ্রমর মাতাল মধু পানে ,
বনভূমি মুখর পাখীর কলতানে।
গ্রাম্য বধূ তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বালে,
ঘোর আঁধারে,বাঁশের ঝাড়ে জোনাক জ্বলে।"

এ কি ! হঠাৎ স্বপ্ন কেন গেল টুটে?
বিরক্তিকর চিহ্ন মুখে উঠলো ফুটে?
ঠিক বুঝেছি,মন যে আমার এলো ফিরে,
চির চেনা আঁধার কুঠি,আপন ঘরে।
কেন রে মন মুক্ত জগত ছেড়ে এলি,
আমার মাঝে কি বা এমন খুঁজে পেলি?
মন হেসে কয়, "সারা জীবন তোমার ই দাস,
মিছে কেন আমায় নিয়ে এই পরিহাস?

সাধন বলে না হও যদি মুক্ত মানুষ,
কি লাভ তবে উড়িয়ে খুশীর রঙ্গীন ফানুস?
সুন্দরী এই পৃথিবী কে জানতে হলে,
রাখতে হবে মনের সকল দুয়ার খুলে।
মন যেন হয় নীল আকাশের মুক্ত পাখী,
বাঁধন হারা হয়ে সবায় বাঁধো দেখি !
সবারে জয় করলে পাবে বিজয় মালা,
ছন্দময় এ জীবন হবে ছন্দ ভেলা।"

*********************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি
***************************************    






সবার ভাল নয় তো সহজ
*********************
সমর কুমার সরকার

সবার ভাল ক'রবে বলে মারছ তুড়িলাফ,
সেটাই তোমার 'গোড়ায় গলদ' দিচ্ছি বলে সাফ।
সবাই কে কি একসাথেতে খুশী করা যায় ?
একের খুশী হ'তে পারে অন্য লোকের দায়।
সাধ্যমত কাজ করে যাও মন্দ ভাল বুঝে,
কে হয় খুশী কে অখুশী, লাভ কি বা তা খুঁজে ?
এই জগতে খুশী করা নয় তো সহজ কাজ,
অল্প পেলে হয় না খুশী সকল মানুষ আজ।

যে যত পায় সে তত চায়, ক্রমেই বাড়ে লোভ,
চাওয়া পাওয়ার ফারাক হলেই প্রকাশ করে ক্ষোভ।
অপাত্রে দান করলে পরে হয় সুবিধাবাদী,
'সাগর' হবার সাধ জাগে তার, যে জন ছোট নদী।
মাঙ্গনা পেতে চায় না যারা জানবে তারাই সেরা,
আপন মতে,আপন পথে, জীবন তাদের গড়া।
পারলে তাদের দিতে শেখো কিছুটা সন্মান,
বিনিময়ে সমাজ পাবে অধিক প্রতিদান।।


**************************************
সমর কুমার সরকার / শিলিগুড়ি

***************************************