রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

শাকিলা তুবা




জীবনস্বাতী
শাকিলা তুবা

আমি আর স্বাতী একই সাথে ঘুমাই, খাইদাই

একই জলে নাকচোখমুখঠোঁট ধুই

স্বাতীর টিপ আমার বুকপকেটে লেগে থাকে

ওর শাড়ি আর আমার পাঞ্জাবী একই দড়িতে শুকায়

স্বাতী আর আমি একসাথে জীবনের পথ চলছি।



খুব ছেলেবেলায় ওর পায়ের চোরাকাঁটা চুষে বের করেছি

বড় হতে হতে ওর ঠোঁটে ডুব দিয়ে মুক্তো খুঁজেছি

এ ওর শরীরের আনাচে কানাচে ঘুরে সুখ চিনেছি

এভাবেই লাল চেলী পরে স্বাতী আমার ঘরের দখল নিয়েছে

তারপর, দুই মাঝি টেনে যাচ্ছি এক নৌকা, একসাথে।



একদিন, ছয়তলা ছাদের কিনারায় দুজনের হাসাহাসি-গলাগলি

কে বেশী ভালবাসি, কে কম এসবের ফিরিস্তি

জ্যোৎস্নায় পা পিছলে কখন স্বাতী পড়ে যাচ্ছে দেয়ালের ও পাশে

আমার হাতে ওর হাত, স্বাতী ঝুলছে ছয়তলার ছাদে

কারা, কখন টেনে তুলেছে দুই ঝুলন্ত মানুষ, মনে নেই।



সেই থেকে আমি স্বাতীর চিরদিনের প্রেমিক

চারিদিকে গুঞ্জন আর ইর্ষার চোখ, ফিসফিস, গুজগুজ

কি করে একটা লোক তার বউকে এত ভালবাসে!

নিজের জীবন বাজী রেখে কজন পুরুষ বউয়ের প্রান বাঁচায়!

সত্যিকারের প্রেমিক বুঝি একেই বলে!



কেউ জানেনা, আসলে আমি নই, আমি ছেড়েই দিচ্ছিলাম প্রায়

পতনোন্মুখ স্বাতীই আমার হাতটা চেপে ধরে জ্যোৎস্নায় ঝুলছিল প্রানপণ।





জেগে আছি
শাকিলা তুবা

রাতভর ঘুমের ক্লান্তিতে জেগে আছি,

জেগে আছি দুই চোখ,

জেগে আছি চুল,

সূর্যবংশীয় রাজা মান্ধাতার কাল থেকেই

জেগে আছি; পরিব্যাপ্ত,

শত্রুকর্তৃক অধিকৃত।

জেগে আছি চিবুকের তিল---



নিতাইগঞ্জের চিত্রাক্ষী বুড়ীর একটি হাত

আকাশে ঠেকেছিল, অপরটি সমুদ্রে-

দুইয়ের মাঝে ভেসে ঘুমিয়েছিলাম একদা,

যেমন ঘুমোয় প্রভুভক্ত কুকুর আশ্লেষে।

এই ঘুমে নখের আঁচড়,

গাল ফূটো করা বাতাস,

ঘুমে অকাতর দুঃখ।



এখন রাতের ঘুমে দীর্ঘ রমন ক্লান্তি

রতি-অতৃপ্তির অবসাদ।

অতঃপর, জেগে আছি

ঘুম জাগরনে;

পেঁচার মত জেগে আছি।





আঁকিবুকি
শাকিলা তুবা

এরপর তুমি আঁকলে একটা গাছ, শুধুই গাছ

গাছের ছায়ায় উদাস দুপুর,

আর আঁকলে বাঁশী বাজানো রাখাল

যার পা ছুঁয়ে বয়ে গেছে শীর্ণ ধারার নদী।



আমি বললাম, গাছটা এমন ন্যাড়া কেন?

সবুজ বাড়াও, আরো পাতা জমে যাক

গাছের মাথায় তুমি এঁকে দিলে আঁকাবাঁকা গ্রাম

আর ময়ুরকণ্ঠী রঙের মমতা।



তোমার রঙ-তুলি, তারপিন তেল আর তুলোয়

আঙ্গুল ভেজালাম আমিও

এবার আমি এঁকে দিলাম গাছের উপর পাখীদের ঘরদোর,

দুটো পাখীর বসন্ত বাতাসে দোল খাওয়া।



তুমি বললে, উঁহু এখনো হয়নি

তুমি আঁকলে দুটো পাখির ছানা, পাশে কিছু সম্ভাবনাময় ডিম

আমি বললাম, তাহলে একটা সাপও আঁকো ডালে অথবা

মাথার উপর ছানা লোভী চিল, জীবন যেমন হয় আর কি!



তুমি বললে, গাছটাকে এভাবেই পরিপূর্ণ দেখাচ্ছে তাই না!

আমি বললাম, তাহলে এটা একটা সুখী গাছের ছবি, বলো!





অভিকর্ষহীনতা
শাকিলা তুবা

চার হাজার সনের এক সকাল।

তুবা নামের এক পুরনো, অখ্যাত কবির পুনর্জন্ম

জন্মেই সে পারফিউমের বোতল খোঁজে

বাতাসে যান্ত্রিক গন্ধ---

স্পেসশিপ ধাঁচের বাড়ীতে সে দেখেনি মাতা-পিতার কলহাস্য।



অনেক মানুষের শংকিত মুখ দেখতে দেখতে

সে চলে গেল ধাতুতে পরিনত হওয়া উচ্চচাপযুক্ত হাইড্রোজেন অঞ্চলে

সে ভাবছে নীল গাছগুলো কি কার্বন ডাই অক্সাইড ঝরায়?

ক্লোরোফিল কি লাল আর সবজেটে-বেগুনী অংশ করছে শোষন?

গাছ কেন এত নীল? নাকি এ সবই মানুষের আরেক ভুলের ফসল?



সে খোঁজে আবাদযোগ্য একখন্ড ভূমি,

সে খোঁজে কম উত্তাপের সূর্য আর নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল,

কবিতা লেখার একটা নির্ভরযোগ্য আকাশ

দেখে নেয় সম্পর্কহীন মানুষের নিস্পৃহ চোখ-মুখ

সে জানেনা এই পৃথিবী আগের চেয়েও বুনো না-কি সুসংহত।



দুই হাজার বারো সনের এক সকালে ঘুম ভাঙে তার

সে নিজস্ব আকাশের শ্লেটে আঁকিবুঁকি কাটে

আর দেখে চোখের কোনে জমে আছে বরফ কুঁচি

তুবা জানে চার হাজার সনের উত্তাপে আটকে গেছে চোখের জল

কবিতাবিহীন পৃথিবীতে জন্মাবে যে উত্তরপুরুষ তার জন্যে সে কবিতা জমায়।





কোথাও  বাজছে বিরাগে  রাগ মেঘরঞ্জনী
শাকিলা তুবা

গ্রীক দেবতাদের মতো কিছুটা মেয়েলী সৌন্দর্যে ভরা

যুবকটি জানালো, সেলাইকর্মে সে যথেষ্ট নিপুন।

একটু ঝুঁকে ফুলতোলা সালোয়ারের পাপড়িটি খুলে নিল সে

টুপ করে চাবিটা ঠিক তখুনি পড়ে গেল নীচে।



জানালাম, আমি জিগোলো চাইনি

চওড়া হাড়ের কব্জিওয়ালা

একজন প্রেমিক পুরুষ খুঁজেছি এতকাল

যার নামে হুলিয়া জারী করা আছে।


তিনতলার রঙচটা ক্যাম্বিসের ইজিচেয়ার ফুলে ফুলে উঠছে

ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেছে অন্তঃপুরের

মেঝে থেকে মোচড়ানো সালোয়ার তুলে নিতে নিতে দেখলাম

তাবৎ রমনীকুলের চোখে ধনুষ্টংকার ইর্ষা।



সবাইকে জানাতে ইচ্ছে করলো কিংবা সবাই জানলো

বুনোফুল পরিচর্যা ছাড়াও দারুন রূপ নিয়ে বাড়ে

চোর সদৃশ যে সুদর্শন পুরুষ এতক্ষন ঘরে লুকিয়ে ছিল

তাকে আমি ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের করে দরজা লাগিয়ে দিলাম।