মেসায়া
সোনালি পুপু
কত শিশুখুলি ফেটে ঘিলু ছিটকে গেলে
তবে তুমি আসো?
কত কংস হিরণ্যকশিপু কেটে পিশে চিরে গেল
বন্দী বাবা মার সামনে কোমল আত্মজ
এখনো এলে না?
কারো কান্না পৌঁছয়নি তোমার আসনে
চিরে দেওয়া অপাপ কিশোরী
অসম্মানে দীর্ণ বধু মাতা
হে মানুষ হে জাগ্রত মন
আরো কত ঝিমোবে গুহায়
কত বলি চায় যুগ
কিসে বল ভর্তি হয় থালি
শব সাধনের অর্ঘ্য নানাবিধ নীতিজ্ঞ হেয়ালি
আহা ষাট কুম্ভীরাশ্রু ঘরে গিয়ে লম্বা সিগারেট
কাল সভা আজ রাতে দুটো মেয়ে ওই রুমে ভেট
খুব লেখালিখি হবে উত্তেজিত মস্ত আলোচনা
ছুতোর বা গয়লার ছেলে একটাও এখনো এলো না
ডাক কবি হাহাকারে চিরে ফেল ভাংগা কণ্ঠ নালি
যদি জাগে অভ্যুত্থান খেটে খাওয়া মানুষের ঘর থেকে
দেওয়াল ফাটিয়ে আসে নরসিংহ যিশু বনমালী।
বরষা
সোনালি পুপু
বৃষ্টি, তুমি বৃষ্টি চাও
আমি তো চাই বরষা ঘোর
আমি তো তবু ডুবতে চাই
চোখের জল জলের তোড়
তরী ডোবাস ভেসেছি ডুব
আদর সুর রংবেরং
কেজো দিনের ধুলো উড়ুক
ঝড় উঠুক আজ বরং
বেরং দিন প্রখর পল
নরম হোক রেশম চুপ
বুকের মাঝ মেঘের শ্বাস
দেশ রাগের আলাপ টুপ।
বরষা মেঘ সেই মেঘের দূত চল
তিন টে ডুব জল পাঁচ টা ছুঁই
দুয়ারে বরষাতি শিকের ফাঁকে ছবি
জানালা ভিজে গিয়ে একশা হই
আষাঢ়ে গল্পরা সুরের জাল মাখে
মায়ায় ঘিরে থাকে দুটো খাতা
খাটের পাশে জ্বলে আরাম ল্যাম্প শেড
তোমার ও পিঠে থাক ভেজা মাথা।
গন্ধ মিঠে খুস বেলির সাদা রং
জুঁই য়ের বড়লোকি দেমাক ঘোর
কদম ফোটে তবু ভাংগা এ ফুটপাথে
বকুল ফোটে লেকে সারা বছর
বৃষ্টি আয় ভাই ভিজে এ রাস্তায়
হাঁটুতে জল ঢেউ ভিজেছে নাক
হি হি হাসির মাঝে খিচুড়ি মোমো খাই
বরষা থাক প্লিজ সংগে থাক।
অমৃত
সোনালি পুপু
অনেক অনেক দিন দিনগত
পাপ ক্ষয় শব্দগত ঋণ
প্রাণ খুঁজে প্রতি
শ্বাসে গোধূলিতে ঘরেপরে ক্লান্তিহীন দিন
ক্লান্তির কি ক্ষমা
আছে
টেনে চলা শুধু জ্বলা
চলাচল পথ
পথিক হাঁটতে থাকো
পায়েচলা বুড়ো শ্বাস
নেই অন্য রথ
দিনকর কর গোনে
আ্যালবাম ছুঁয়ে থাকে
বিষাদ হরিষ
আমিও প্রানকে খুঁজি
অমৃত চুমুক দিয়ে
গিলে ফেলি বিষ।
বেহুলা
সোনালি পুপু
চম্পক নগর
রোজ ভাবি গদ্য লিখব
জীবনের ওঠা নামা পড়া
কেউ বা মান্দাসে ভাসে
কারো গায়ে পাটের পাছড়া
বেহুলা নাচানো স্বর্গ
বাড়ে কমে জলের গরজ
গলে যাওয়া ভালবাসা
কোলে নিয়ে দিন যাপি রোজ
কুমীর বাঘের ভয় সাপ
তুমি দেখেছো হেঁতাল
লোভী মানুষের চোখ
সোনা ঘেরা কুঠুরি পাতাল
সব সয় নাচুনিয়া
অগ্নি জ্বলা বেহুলা সুন্দরী
কাল সাপে দংশে যারে
সে তো রোজ সর্পে ভাবে দড়ি
চলো ভাসি মহাকাল
তুমি মোর প্রানের দোসর
সেই কালী পূজা রাতে
ডংকা বেজেছিল ঘন ঘোর
চলে নৌকা জীবনের
পাশে বসে নিশ্চুপে মরণ
রোজ বলে,"হেরে
যাবি?
কি বেহুলা জানিস ত্বরণ? "
শত্রুতায় প্রাণ বাজি
একমাত্র সাথী সর্প ঝাঁপি
একা খরস্রোতা প্রাণ
হাত ধরে কাল রাত্রি যাপি।
মশাল
সোনালি পুপু
রাস্তারা চলেছে হেঁটে—
দশ, কুড়ি, কখনও চল্লিশ ।
জল,বাস্প
উড়ে গিয়ে
শিকড়ে পাহারা অহর্নিশ
।
দুহাতে আঁকড়ে রাখো
কচি প্রাণ ,ক্যাকটাস ফুল ।
পাখিমা আতঙ্কে কাঁপে
তবু বুকে আগলায় মুকুল
।
মায়েরা, মেয়েরা ,চোখে
জল জ্বেলে মশাল বানায়
।
কামদুনি ,বারাসাত ,
কোনে কোনে খড়গ শানায়
।
লড়াই সম্মানের জন্যে
সম্মানের দাম কত
টাকা?
সিঁদুরের মেকি রং
আজ যেন বড় বেশি ফাঁকা।
চালচিত্র পিছে থাক।
শিব , আহা, উঠুন ছাদেতে ।
বাচ্চার পোশাক ,বই
মায়ের মনের আহ্লাদেতে
কেনা হোক ইচ্ছাসুখে।
শুধু খাদ্য পানীয়েই
সুখ
?
কলেজে ওঠার পয়সা? ছবি আঁকা?
সমাজ বিমুখ।
আমরা চালাই দেশ।
চলে রাজ্য আমাদের
হাতে।
তবে কেন অপমানে
মা’র
চোখে জল প্রতি রাতে?
বাল্যেতে পিতার বশ
।
যৌবনে স্বামীর ,শেষে ছেলে।
কেন স্কুলে ঠেলো
রোজ
---
সুশিক্ষিত জোঁক হব
বলে?
চটি, জুতো ,ক্লিপ, কাঁটা
ফুচকা দিয়ে কিনবেন
স্বামী ।
কোন পায়ে দাঁড়ায়
মেয়ে
?
পা কেটেছে রঙিন গোলামি
।
মালিক তো দেবেনই
খোঁটা ।
কাটে গরু খোঁটায়
জাবর ।
মর্জি সুখে হাত বোলান
বে-মর্জিতে
গালেতে থাপ্পড়।
অর্থশাস্ত্র শেখো
মেয়ে ।
ভাত খাও ঘামে ভেজা
পাতে।
মগজে শানাও তীর ।
কুর্ণিশ ছিনিয়ে নাও
হাতে।
কাব্য
সোনালি পুপু
একটা ভিড় বাসের পাদানি তে আমার কবিতাকে দেখতে পেলাম।
কন্ঠার হাড় ফুটে উঠেছে ঘোর কৃষ্ণ চামড়ার নীচে থেকে
কোথাও চামড়া আর চওড়া হাড় ছাড়া বাড়তি কিছু দেখা যায়না।
উস্কোখুস্কো চুলগুলো শস্তার ক্লিপ দিয়ে তুলে কায়দার খোঁপা করার চেস্টাটা কার্যকরী
হয়নি।
এলো মেলো চুলগুলো ঘাড়ে ঝুলছে।
কাঁখে ততোধিক রোগা কংকাল সার ঘুমন্ত মেয়েটা আঁকড়ে রয়েছে মাকে
আর মা খিমচে ধরে রয়েছে
সামনে দাঁড়ানো পুরুষ টির নোংরা স্যান্ডো গেঞ্জি
লোকটি অবাংগালি।কালিঝুলি মাখা এক গাল দাড়ি।
মাঝবয়সের ক্লান্তি সারা গায়ে।
মেয়েটির পরনে অজস্র শস্তার জরি মাখামাখি টকটকে লাল একটা শাড়ি।
অমন শাড়ি দেখলে আমরা হ্যাক থু বলি
কিন্তু বাস থেকে তাকে নামাচ্ছে তার আদমি যেন সে আর ওই হাড় জিরজিরে বাচ্ছাটা
কোহিনুর হিরে মানিক
কি নির্ভরতা সংসারের সব রং মাখিয়ে দিয়েছে ধারালো কাল মুখ খানায়।
আমি অবাক হয়ে দেখলাম বিশ্বসংসারএর সব চেয়ে উজ্জ্বল রোমান্স তেরো নম্বর বাসের সিঁড়ি
দিয়ে নিচে নেমে গেলো।