সড়ক-সৌধ- কানাগলি
হিল্লোল রায়
ভরে দাও
ভালবাসা শ্রান্ত এ কলমে -
ব্যথাশূলে
দেহ তার ছেয়ে আছে মলমে !
লিখেছি মনের
কথা, সৈকতে, সলিলে -
ছেঁড়া পাতা
ওল্টাই, ফিরে
যাই দলিলে !
হিসাব-নিকাশগুলো
মেলে না যে কিছু -
স্মৃতিপটে
স্বপ্নরা ধায় পিছু পিছু !
প্রথম
প্রেমের আগুন আজও পড়ে মনে -
“ইডেন” এর হাওয়া, “ট্রিঙকস”এ খাওয়া
শেষে “কার্জন” বনে !
সাঁঝের
ধোঁয়াশাভরা ঢাকুরিয়া লেকে -
নির্জন
গাছের তলায় যেন কল্পনা ঠেকে !
নিয়ন আলোয়
মাখা গৃহহীণ নর নারী -
তোলে
চিন্তার ডালা মাথে, দাঁড়িয়ে
সারি সারি !
ভাগ্যের
রোষানলে তারা দূষণের বলি -
অভাবের তাড়না
তাদের টানে কানাগলি !
আমি হাঁটি
রাজপথে, জাতীয়
সড়কে, দম্ভের
ভারে -
কখনো পারি
নি চিনতে তাদের রাস্তার ওপারে !
জীর্ণ নয়নে, ছিন্ন বসনে, ভিক্ষার
ঝুলি হাতে -
খুঁজে ফেরে
শুধু এক মুঠো ভাত, জোটে
না তাদের পাতে !
রাজনীতি করে
সৌধ তুলতে আমরা হয়েছি পটু -
সর্বহারার
নয়নের জল আজ লাগে না দৃষ্টিকটু !
ক্লেদ
পুঁতিময় মানবিকতার ক্যানভাসে আঁকা ছবি -
লাজেতে
লুকায় রাতের আঁধারে,
অস্ত গেলে রবি !!
থোড়-বড়ি-খাঁড়া
হিল্লোল রায়
ঝোল-ঝাল, ভাজা-ভুজি, ঘণ্ট ও
ছেঁচকি -
দেশে গিয়ে
খেতে বসে সে কি মোর হেঁচকি !
সেই সাথে
দইবড়া, দরবেশ
ও মিষ্টি -
আনে মনে
দিনক্ষণ, বোশেখের
বিষ্টি !
এলোকেশে
তুমি এলে গেটটাকে খুলতে -
ক্লান্তিতে
দেহ মোর থাকলোই ঢুলতে !
কত কথা
বলেছিনু “মেট্রো”-র নীচে -
তারপর কথা
হয় ফ্লোরিডা-র বীচে !
সময়ের
স্রোতে মোরা ভেসে চলি আজ -
করি শুধু
বকবক, সেই
সাথে কাজ !
রামধনু রঙে
ভেসে মনে আসে কলি -
গুণগুণ সুরে
তাই মন- কথা বলি !
প্রহর গোনার
ফাঁকে তোমার ভুরুর ঢেউ -
এনে দিতো
আকুলতা, জানতো
না কেউ !
আঁচলের
আড়ালে শুধু লুকানোর খেলা -
কোথা গেলো
আজ তারা ? প্রবাসের
বেলা ?
চামেলী-র
ছন্দে পুলকিত মন -
যেন কথা উবে
গেছে ? আর
কাশ বন ?
তোমার চুড়ির
কিঙ্কিনী আজও দেয় নাড়া -
চলেছে জীবন
রসনার স্রোতে, যেন
থোড় – বড়ি
-খাঁড়া !
একুশে ফেব্রুয়ারী
হিল্লোল রায়
বছর ঘুরে
আবার এলো একুশে ফেব্রুয়ারী ,
প্রিয়জনদের
বিয়োগ ব্যথা কি সহজে ভুলতে পারি ?
ফাঁসীর কাঠে
প্রাণটা দিয়ে জীবন্ত হলো যাঁরা ,
তাঁরাই
মোদের প্রতিনিধি, নয়কো
বদ্ধ কারা ।
প্রতিরোধের
আগুন জ্বেলে ছিঁড়লো যাঁরা জাল ,
জাগবে তাঁরা
স্মৃতিপটে, রইবে
চিরকাল ।
শত্রু জালে
বদ্ধ হলেও দেয় নি নাকে খৎ ,
আমাদের ভাই
সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত্ ।
কি যাদু
জানতো তাঁরা ?
করলো মোদের
পাগলপারা?
অগ্নিপানে
ধেয়েছিনু সব ভস্ম করি শোষণ যন্ত্র ,
ছিনিয়ে এনু
মাতৃভাষা, শুনি
নাই গো কুমন্ত্র ।
অত্যাচারীর
বাঁধটা ভেঙে মিটলো অভিলাষ ,
ফিরে পেলেম
বাংলাভাষা ফেলি দীর্ঘশ্বাস ।
মাতৃভাষার
স্বাধীনতা আজ লাগায় মনে দোলা ,
শহীদজনের
রাঙা রক্ত থাকবে মাথায় তোলা ।
নিঃস্বজন ও
সর্বহারার ভাঙলো পাঁজর যারা ,
প্রতিবাদের
ঝঞ্ঝাবানে কোথায় গেলো তারা ?
রক্তশোষক ও
পৃষ্ঠপোষক জনতার অবক্ষয় ?
চঞ্চল-হিল্লোলে-কল্লোলময়?
বজ্রানলে
অত্যাচারীর অস্থি পেলো সাজা ,
আমরা লভি
রাষ্ট্রভাষা, সদ্যজাত
রাজা ।
ভাষার লাগি
আজকে সঁপি লক্ষ-কোটি-মন ,
বাংলা মোদের
রাষ্ট্রভাষা জ্বলবে অনুক্ষণ ।
দূর্বাদলে
এগিয়ে চলি
সড়ক-সৌধ-কানাগলি
।
গৃহগোঠে
মিলি আজ,
মুখ বুঁজে
করি কাজ;
ভাষার তরে
শপথ করি ,
নিপীড়িতের
শংকা হরি ,
লড়বো মোরা
মুক্ত মনে ,
যুঝবো শোষক
সংগোপনে ;
শতশহীদের
রক্তমালা ,
হোক না
মোদের বরণডালা ,
কষ্টে পেনু
মাতৃভাষা ,
বাংলা মোদের
রাষ্ট্রভাষা, বাঁচবে
চিরদিন ।
তোমরা শুধু
মনে রেখো ,
সময় পেলে
ভেবেও দেখো ,
পূব দিগন্তে
রবির আলো
ফেলবে ধুয়ে
মনের কালো ,
নির্য্যাতিতের
রাঙা রক্ত হবে না কভু লীন ।
বছর ঘুরে
আসবে আবার একুশে ফেব্রুয়ারী ,
রফিক, বরকত্ ও
সালাম, জব্বার
থাকবে শিরোপরি ।।
একুশে
ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
অনামিকা
হিল্লোল রায়
চুলেতে কলপ
দিয়ে, যানজট
ঠেঙিয়ে গিয়ে
অফিসের ঘরে
দেখি অনামিকা নেই !
খুব ভোরে
কাজে এসে, 'ম্যাশকারা' চোখে ঘষে,
গোপনেই মোরে
যেন ডাকে সেই !!
অনামিকা নেই
আজ, ফেলে
রাখি সব কাজ,
আঁখি দুটো
জলে যায় ভেসে !
'চার্লস' এসে ডেকে
বলে, 'Let's go
Cocktail এ
Go Go Girls দেবে
ছোঁয়া মিটি মিটি হেসে !!
হলো মন
পুলোকিত, রিপুগুলো
বিকশিত,
ভুলে যাই
অফিসের কাজ !
চার্লস-এর
সাথে গিয়ে, লজ্জাকে
বলি দিয়ে,
দেখে যাই Cocktail এ সাজ !!
মৃদু মৃদু
আলো ছায়া, সাদা-কালো
যতো কায়া,
গায়ে গায়ে
করে ঢলাঢলি !
ঠোঁটে ঠোঁটে
ছোঁয়া দিয়ে, দেয়ালের
কোণে গিয়ে,
চলে শুধু
ফিসফিস বলাবলি !!
সুরা পানে
বুঁদ হয়ে, Cocktail ছেড়ে
ভয়ে,
জনতার
স্রোতে আমি নিজেকে হারাই !
কোত্থেকে
ছুটে এসে, অনামিকা
বলে হেসে,
“তুমি কেনো
এসেছিলে আমাকে ছাড়াই??”
ফন্দি গ্রামের নন্দীসাহেব
হিল্লোল রায়
ফন্দিগ্রামের
ঘুঘু বাসিন্দা গদাই চরণ নন্দী -
গনহত্যা
লেলিয়ে তিনি থাকেন নজর বন্দি !
লাল বাজার-
এর পুলিশ সুপার ঘোটকেশ্বর বালা,
আর মহাকরণের
ভদ্রেশ্বর তার নিজের আপন শালা !
কুছ পরোয়া
ভয় নেই তার চলেন গদাই চালে -
মাসের শেষে
দেনা মেটাতে পান না পানি হালে !
ভগ্নীপতির
এই দুর্দশাতেই এগোন শ্যালকদ্বয় -
সংগে আনেন
গুন্ডার দল, এবং
তারাই কথা কয় !
কালোবাজারী
ও জুয়াচুরিতে ধ্যানমগ্ন গদাই,
পাড়ি জমান
দেশ বিদেশে, জাহাজ
প্লেনে সদাই !
চোলাই মদ এর
আড়ৎ ভরা গ্রামে-গঞ্জের বাড়ি -
হুইস্কি
খেলে পয়সা লাগে, তাই
তিনি খান তাড়ি !
সাঁকরেদ দল
ও মন্ত্রী মহল করে তার গুণগান -
ঝোপ বুঝে
কোপ মেরেই তারা করে যায় সুরাপান !
রাজনীতি আর
টিপ্পনী পটু গদাই- এর জয় জয়কার -
ধুইয়ে
দিয়েছে মহারথীদের ঘিলু ও মগজ সার!
রাজত্ব
স্বাদে বলীয়ান শালা ভদ্রেশ্বর চোখ বুঁজে -
তাপ্পি
লাগান আইন কানুনে, পাই
না তাকে যে খুঁজে !
ঘোটকেশ্বর
ঘোটকপৃষ্ঠে ঘুষ এর বস্তা নিয়ে -
সুইস
ব্যাংকে টাকা জমা দেয় বছরের শেষে গিয়ে !
নামকা
ওয়াস্তে আয়কর ভবন বড় সাহেবের ইংগিতে -
ইনকাম
ট্যাক্স ক্লীয়ারেন্স দেয় মহাকরণের ডিংগীতে !
মসনদ সব
দিল্লীতে আছে, করেন
কা্রা যে কি ছাই -
সাধারণ লোক
নিরুপায় হয়ে তুলে যান শুধু হাই !
গুলির আওয়াজ
ও গুতানী ভয়েতে আম জনতার দল -
ফেলছে
হারিয়ে কণ্ঠ তাদের, হরিনাম
জপাই বল !
ফন্দিগ্রামের
নন্দীসাহেব ও তার সাঁকরেদ হালচাল -
ধিক্কার দেয়
মানবিকতায়, বেঁচে
থাকাটাই কাল !
তাই গরজাই
বসে প্রবাসের ভূয়ে, পাই
না লাঠি বা ঝাঁটা -
মন বলে ওঠে, হ্যালো হে
দিল্লী? দু-কানই
তোমার কাঁটা ?
************************************************