রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

হিল্লোল রায়



সড়ক-সৌধ- কানাগলি
হিল্লোল রায়

ভরে দাও ভালবাসা শ্রান্ত এ কলমে -
ব্যথাশূলে দেহ তার ছেয়ে আছে মলমে !
লিখেছি মনের কথা, সৈকতে, সলিলে -
ছেঁড়া পাতা ওল্টাই, ফিরে যাই দলিলে !
হিসাব-নিকাশগুলো মেলে না যে কিছু -
স্মৃতিপটে স্বপ্নরা ধায় পিছু পিছু !
প্রথম প্রেমের আগুন আজও পড়ে মনে -
ইডেনএর হাওয়া, “ট্রিঙকসএ খাওয়া শেষে কার্জনবনে !
সাঁঝের ধোঁয়াশাভরা ঢাকুরিয়া লেকে -
নির্জন গাছের তলায় যেন কল্পনা ঠেকে !
নিয়ন আলোয় মাখা গৃহহীণ নর নারী -
তোলে চিন্তার ডালা মাথে, দাঁড়িয়ে সারি সারি !
ভাগ্যের রোষানলে তারা দূষণের বলি -
অভাবের তাড়না তাদের টানে কানাগলি !


আমি হাঁটি রাজপথে, জাতীয় সড়কে, দম্ভের ভারে -
কখনো পারি নি চিনতে তাদের রাস্তার ওপারে !
জীর্ণ নয়নে, ছিন্ন বসনে, ভিক্ষার ঝুলি হাতে -
খুঁজে ফেরে শুধু এক মুঠো ভাত, জোটে না তাদের পাতে !
রাজনীতি করে সৌধ তুলতে আমরা হয়েছি পটু -
সর্বহারার নয়নের জল আজ লাগে না দৃষ্টিকটু !
ক্লেদ পুঁতিময় মানবিকতার ক্যানভাসে আঁকা ছবি -
লাজেতে লুকায় রাতের আঁধারে, অস্ত গেলে রবি !!







থোড়-বড়ি-খাঁড়া
হিল্লোল রায়

ঝোল-ঝাল, ভাজা-ভুজি, ঘণ্ট ও ছেঁচকি -
দেশে গিয়ে খেতে বসে সে কি মোর হেঁচকি !
সেই সাথে দইবড়া, দরবেশ ও মিষ্টি -
আনে মনে দিনক্ষণ, বোশেখের বিষ্টি !
এলোকেশে তুমি এলে গেটটাকে খুলতে -
ক্লান্তিতে দেহ মোর থাকলোই ঢুলতে !
কত কথা বলেছিনু মেট্রো”-র নীচে -
তারপর কথা হয় ফ্লোরিডা-র বীচে !

সময়ের স্রোতে মোরা ভেসে চলি আজ -
করি শুধু বকবক, সেই সাথে কাজ !
রামধনু রঙে ভেসে মনে আসে কলি -
গুণগুণ সুরে তাই মন- কথা বলি !
প্রহর গোনার ফাঁকে তোমার ভুরুর ঢেউ -
এনে দিতো আকুলতা, জানতো না কেউ !
আঁচলের আড়ালে শুধু লুকানোর খেলা -
কোথা গেলো আজ তারা ? প্রবাসের বেলা ?

চামেলী-র ছন্দে পুলকিত মন -
যেন কথা উবে গেছে ? আর কাশ বন ?
তোমার চুড়ির কিঙ্কিনী আজও দেয় নাড়া -
চলেছে জীবন রসনার স্রোতে, যেন থোড় বড়ি -খাঁড়া !






একুশে ফেব্রুয়ারী
হিল্লোল রায়

বছর ঘুরে আবার এলো একুশে ফেব্রুয়ারী ,
প্রিয়জনদের বিয়োগ ব্যথা কি সহজে ভুলতে পারি ?
ফাঁসীর কাঠে প্রাণটা দিয়ে জীবন্ত হলো যাঁরা ,
তাঁরাই মোদের প্রতিনিধি, নয়কো বদ্ধ কারা ।
প্রতিরোধের আগুন জ্বেলে ছিঁড়লো যাঁরা জাল ,
জাগবে তাঁরা স্মৃতিপটে, রইবে চিরকাল ।
শত্রু জালে বদ্ধ হলেও দেয় নি নাকে খৎ ,
আমাদের ভাই সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত্ ।
কি যাদু জানতো তাঁরা ?
করলো মোদের পাগলপারা?
অগ্নিপানে ধেয়েছিনু সব ভস্ম করি শোষণ যন্ত্র ,
ছিনিয়ে এনু মাতৃভাষা, শুনি নাই গো কুমন্ত্র ।
অত্যাচারীর বাঁধটা ভেঙে মিটলো অভিলাষ ,
ফিরে পেলেম বাংলাভাষা ফেলি দীর্ঘশ্বাস ।
মাতৃভাষার স্বাধীনতা আজ লাগায় মনে দোলা ,
শহীদজনের রাঙা রক্ত থাকবে মাথায় তোলা ।
নিঃস্বজন ও সর্বহারার ভাঙলো পাঁজর যারা ,
প্রতিবাদের ঝঞ্ঝাবানে কোথায় গেলো তারা ?
রক্তশোষক ও পৃষ্ঠপোষক জনতার অবক্ষয় ?
চঞ্চল-হিল্লোলে-কল্লোলময়?
বজ্রানলে অত্যাচারীর অস্থি পেলো সাজা ,
আমরা লভি রাষ্ট্রভাষা, সদ্যজাত রাজা ।

ভাষার লাগি আজকে সঁপি লক্ষ-কোটি-মন ,
বাংলা মোদের রাষ্ট্রভাষা জ্বলবে অনুক্ষণ ।
দূর্বাদলে এগিয়ে চলি
সড়ক-সৌধ-কানাগলি ।
গৃহগোঠে মিলি আজ,
মুখ বুঁজে করি কাজ;
ভাষার তরে শপথ করি ,
নিপীড়িতের শংকা হরি ,
লড়বো মোরা মুক্ত মনে ,
যুঝবো শোষক সংগোপনে ;
শতশহীদের রক্তমালা ,
হোক না মোদের বরণডালা ,
কষ্টে পেনু মাতৃভাষা ,
বাংলা মোদের রাষ্ট্রভাষা, বাঁচবে চিরদিন ।
তোমরা শুধু মনে রেখো ,
সময় পেলে ভেবেও দেখো ,
পূব দিগন্তে রবির আলো
ফেলবে ধুয়ে মনের কালো ,
নির্য্যাতিতের রাঙা রক্ত হবে না কভু লীন ।
বছর ঘুরে আসবে আবার একুশে ফেব্রুয়ারী ,
রফিক, বরকত্ ও সালাম, জব্বার থাকবে শিরোপরি ।।
একুশে ফেব্রুয়ারী, ২০১৬






অনামিকা
হিল্লোল রায়

চুলেতে কলপ দিয়ে, যানজট ঠেঙিয়ে গিয়ে
অফিসের ঘরে দেখি অনামিকা নেই !
খুব ভোরে কাজে এসে, 'ম্যাশকারা' চোখে ঘষে,
গোপনেই মোরে যেন ডাকে সেই !!

অনামিকা নেই আজ, ফেলে রাখি সব কাজ,
আঁখি দুটো জলে যায় ভেসে !
'চার্লস' এসে ডেকে বলে, 'Let's go Cocktail
Go Go Girls দেবে ছোঁয়া মিটি মিটি হেসে !!

হলো মন পুলোকিত, রিপুগুলো বিকশিত,
ভুলে যাই অফিসের কাজ !
চার্লস-এর সাথে গিয়ে, লজ্জাকে বলি দিয়ে,
দেখে যাই Cocktail এ সাজ !!

মৃদু মৃদু আলো ছায়া, সাদা-কালো যতো কায়া,
গায়ে গায়ে করে ঢলাঢলি !
ঠোঁটে ঠোঁটে ছোঁয়া দিয়ে, দেয়ালের কোণে গিয়ে,
চলে শুধু ফিসফিস বলাবলি !!

সুরা পানে বুঁদ হয়ে, Cocktail ছেড়ে ভয়ে,
জনতার স্রোতে আমি নিজেকে হারাই !
কোত্থেকে ছুটে এসে, অনামিকা বলে হেসে,
তুমি কেনো এসেছিলে আমাকে ছাড়াই??”






ফন্দি গ্রামের নন্দীসাহেব
হিল্লোল রায়

ফন্দিগ্রামের ঘুঘু বাসিন্দা গদাই চরণ নন্দী -
গনহত্যা লেলিয়ে তিনি থাকেন নজর বন্দি !
লাল বাজার- এর পুলিশ সুপার ঘোটকেশ্বর বালা,
আর মহাকরণের ভদ্রেশ্বর তার নিজের আপন শালা !
কুছ পরোয়া ভয় নেই তার চলেন গদাই চালে -
মাসের শেষে দেনা মেটাতে পান না পানি হালে !
ভগ্নীপতির এই দুর্দশাতেই এগোন শ্যালকদ্বয় -
সংগে আনেন গুন্ডার দল, এবং তারাই কথা কয় !

কালোবাজারী ও জুয়াচুরিতে ধ্যানমগ্ন গদাই,
পাড়ি জমান দেশ বিদেশে, জাহাজ প্লেনে সদাই !
চোলাই মদ এর আড়ৎ ভরা গ্রামে-গঞ্জের বাড়ি -
হুইস্কি খেলে পয়সা লাগে, তাই তিনি খান তাড়ি !
সাঁকরেদ দল ও মন্ত্রী মহল করে তার গুণগান -
ঝোপ বুঝে কোপ মেরেই তারা করে যায় সুরাপান !
রাজনীতি আর টিপ্পনী পটু গদাই- এর জয় জয়কার -
ধুইয়ে দিয়েছে মহারথীদের ঘিলু ও মগজ সার!

রাজত্ব স্বাদে বলীয়ান শালা ভদ্রেশ্বর চোখ বুঁজে -
তাপ্পি লাগান আইন কানুনে, পাই না তাকে যে খুঁজে !
ঘোটকেশ্বর ঘোটকপৃষ্ঠে ঘুষ এর বস্তা নিয়ে -
সুইস ব্যাংকে টাকা জমা দেয় বছরের শেষে গিয়ে !
নামকা ওয়াস্তে আয়কর ভবন বড় সাহেবের ইংগিতে -
ইনকাম ট্যাক্স ক্লীয়ারেন্স দেয় মহাকরণের ডিংগীতে !
মসনদ সব দিল্লীতে আছে, করেন কা্রা যে কি ছাই -
সাধারণ লোক নিরুপায় হয়ে তুলে যান শুধু হাই !
গুলির আওয়াজ ও গুতানী ভয়েতে আম জনতার দল -
ফেলছে হারিয়ে কণ্ঠ তাদের, হরিনাম জপাই বল !
ফন্দিগ্রামের নন্দীসাহেব ও তার সাঁকরেদ হালচাল -
ধিক্কার দেয় মানবিকতায়, বেঁচে থাকাটাই কাল !
তাই গরজাই বসে প্রবাসের ভূয়ে, পাই না লাঠি বা ঝাঁটা -
মন বলে ওঠে, হ্যালো হে দিল্লী? দু-কানই তোমার কাঁটা ?
************************************************