রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

শর্মিষ্ঠা ঘোষ



এবং শীতকাল  
শর্মিষ্ঠা ঘোষ

কমলা মানে কি ? ঠোঁট নাকি পৃথিবী ?

শীতকাল আসছে টের পেয়ে তুমি কমলা খেতে চাইলে
ইডেনের অনুষঙ্গ একটিমাত্র ফলেই সম্পৃক্ত ভাবনাটা বোকামি
এসব গাঁজাখুরি ধারণার পর থেকে আর আমাদের দ্যাখাশোনা মুখোমুখি রইল না
আসা যাওয়ার পথে ওয়াচ করি
অন্য হাওয়া বাতাসের গন্ধ নিশ্চয় আক্রান্ত রেখেছে শীতের রুক্ষতা
খানিক মুষড়ে পড়ি এসব ভেবে কিন্তু যথেষ্ট লজ্জা পাইনা
তোমার জানালার রঙ বদল হলে শীতঋতু চলে যায়
কিছুতেই কিছু যায় আসে না আমার জানিয়ে দিচ্ছে সিক্সথ সেন্স

আঙুর তো আমি এমনি এমনি খাইঃ

কণকণে শীতেও কেউ কেউ আঙুর বাগানের খোঁজ ন্যায়
কেউ পাহাড় চুড়োয় বসে লাল আঙুর রসে ঠোঁট ভেজায়
কেউ ওয়াইনের সাঁতারে প্রবাল দ্বীপ হাতড়ায় লণ্ডভণ্ড
কখনো কোন দেয়ালের থেকে অসভ্য চাপে ছিঁড়ে আসে আঙুরছাপ ওয়াল পেপার
তবুও কেউ কখনো যথেষ্ট বলে নি শীতনদীতে গা পা ভেজালেই অসুখ বিসুখ
প্রোফাইলে ব্যাপক ছালবাকল দ্যাখালেও শীত এলেই কিছু গাছ পাতা খসায়
হিমেল কফি রঙের আদর ভালোবাসে নগ্ন পরিযায়ী পালক
চোখ পালটালেও স্টেজ আর নাটকের আদিঅন্ত এক

আপেল জ্ঞানের অসভ্য দিকঃ

তাও তো শীতকালে আপেল বেশ মহার্ঘ
রোজ দুটো আপেল খেলে ডাক্তারবাবু টা টা বাই বাই
জিম ইন্সট্রাক্টরের মতে আপেল ভালো অ্যান্টিঅক্সিড্যানট
কিডনি বিগড়োলে অবশ্য আপেল ভক্ষণ বেশ চাপের
আপেল তবু সেই বস্তাপচা রদ্দি অমৃতফলের গল্প
নিউটনের টানে আদম ইভের জন্মান্তরের পতন
খুব তপ্ত হলে অ্যাডামস অ্যাপেলে বুলিয়ে দি উৎসুক স্বাদ কোরক
ফাটিয়ে বৃষ্টি নামলে লাল টুকটুকে মসৃণ ত্বক জড়িয়ে নি গায়ের শীতে
ফলের ত্বকেই যত ক্রিমিকীটের বাসা , বলে , হাইজিন পড়া মেয়ে
আমি জ্বর থর থর মনে মনে ছাড়িয়ে ফেলতে থাকি আপেলের ত্বক

মুড়ি মিছরি এক দরঃ

সব ফলই বাজারি এবং চাকতি ছুঁড়লেই সহজলভ্য
ঝুলিতে ম্যাও লুকিয়ে কুলকাল অবজারভ করি ফলের বিপণি
রঙবেরঙের প্রলোভনে হাবুডুবু খেতে খেতে মনে পড়ে কচি বেলার অ্যাডালট উপন্যাস
ফড়ফড় পাতা উল্টে খোঁজা মদন আর রতির শোবার ঘরে আসল ফলের ঝুড়ি থাকে নাকি ছবির ফল
কমলা কলা আপেল আঙুর কাজু কিশমিশ দিয়ে ফ্রুট স্যালাড আর চাটনি বেশ লোভনীয়
রেসিপি লিখে রেখেছেন বেলা দে , ‘রান্নাবান্না
কোনদিন কিনে পড়ি নি , মুখে মুখে শুনি আর বই মেলার স্টলে দাঁড়িয়ে ফ্রি তে মুখস্ত করেছি
পরীক্ষা প্রার্থনীয় ...






বিকল্প
শর্মিষ্ঠা ঘোষ

ছড়িয়ে আছিস যত আমি তত বিদ্ধ হই
যত কঠিন লাগে তত জড়াই সমাধানের নেশায়
এদিকে ফুরিয়ে ফেলতে চাই সমাধানে, এমন ও নয়
তোকে গোটাগুটি পড়ে পাত্তাড়ি গোটাব , চাই না
শেষ না করেও যদি গল্পটা দাঁড়িয়ে যায় আমাদের
ক্লাইম্যাক্স ছাড়াই যদি সমান্তরাল থাকতে পারি
যাচ্ছি , যাবো সেই নেশায় নেশায়
এরই অন্য ভার্সন মৃতসঞ্জীবনী

কখনো খুব চুম্বক হয়ে উঠছিস কখনো রুবিক্স কিউব
কখনো গানের পারে সাঁতরে আসছিস স্বেছায়
আমার বাড়ানো হাতে বৃষ্টি নেমে আসছিস
সন্দিহান হয়ে উঠছে চারপাশ নেকনজর পড়ছে দেবতার
নিবেদন টাটে ফুল চন্দন অগ্রু আর স্নানস্নিগ্ধ তনু এই
কপোলে চন্দনের চুমু গ্রীবালগ্ন প্রেম তোর
কাম ছেড়ে নিছক স্নেহ হয়ে যাই তখন আমি
নির্বাণে উত্তুঙ্গ শরীর নিয়ে বসে থাকি

বাড়াবাড়ি মনে হলে দান ছেড়ে দি , তবে আয়
বড় স্পর্শকাতর অহংকার আর সমর্পণ
জটিল প্রশ্নের সামনে নিরুত্তর হতে হতে ভাবি
একবারই তো যাওয়া হবে এসব উঠোনে
প্রস্তাব আছে তিনজনা মুখোমুখি বসবো
প্রস্তাব আছে প্রকাশ্যে কেউ কাছে যাবো না
তখনো এক নিশি পাওয়া কুলকুল সুড়ঙ্গে
তোকে একার করেই গোপনে ভেবে যাই

ছাড়িয়ে এনেছিলি মোহ মায়া থেকে
ছাড়িয়েছিস অনেক পুরনো অভ্যেস
পেয়ে বসেছে এখন অন্যরকম মানে
পেয়ে বসেছিস এখন বিকল্প মানেই তুই ...







ঘেউ
শর্মিষ্ঠা ঘোষ

কাঠপুতলির কান পড়লো কাটা

ডানহাতে কবচকুণ্ডল দিলেন তিনি বেঁধে

কাঠপুতলির চোখ পড়লো বাঁধা

বামহস্তের নৈবিদ্যি টাট শেকলে ঝনঝন

কাঠপুতলির নাক বললেই খত

অম্নি তাকে সিংহাসনে চাপিয়ে দিল কেউ

কাঠপুতলির তুলোয় মোড়া কান

আহাম্মকে চ্যাঁচাক যত পারে

কাঠপুতলি খাইয়ে দিলে খায়

হরলিক্স আর গুলগাপ্পার মিক্স

কাঠপুতলির সঙের বাড়া ঢং

মার্কসিটে তার নম্বর চড়চড়

কাঠপুতলি সেয়ানা রুস্তম

আর্মাডিলোর খোলের নীচে ল্যাগবেগে স্পাইনাল

কাঠপুতলি হাঁসজারুটির বাপ

ল্যাজের আগায় রংবেরঙের ছাপ

কাঠপুতলির নামাবলির তল

জপের মালায় অষ্টপ্রহর গুষ্টিকিলায় পাপ

কাঠপুতলি সবার মাঝে তিনি

থ্রি ডি ভিশান চশমা ছাড়াও চিনি

যেই রেখেছেন উজবুকিতে জনারণ্যে ছাপ

সুযোগ পেয়ে ঘেউবলেছি আসলে সব এক







ইয়ার্কি ?
শর্মিষ্ঠা ঘোষ

বলুন তো একটি আবাদ্কালীন জমি মাঝপথে ছেড়ে গ্যালে
ফসল ফলবে কিনা ? ভাবছেন তো ইয়ার্কি মারছি ?
এবার ধরুন , আপনি সদ্য কামড় বসিয়েছেন অমৃত বৃন্তে
শিশুর মত হাঁটি হাঁটি পা পা এক উপোসী উপত্যকায়
মুগ্ধবোধে নট খুলছেন জুতোর এবং টাইয়ের
ক্রমশ সেজে উঠছেন বিচ পোষাকে
একটু একটু করে ব্লার হয়ে যাচ্ছে পটভূমি
আপনি ই তখন বেতাজ বাদশা এক দখলদারীর
বেলাভূমিতে অনিবার্য ডুবে যাচ্ছে আপনার প্রতিরোধী বিবেক
অথচ তখনি যেন সমুদ্র বেমালুম ভুলেগেল আপনাকে
ভুলে গেল আপনি কেবল ঢেউ গুনতেই গ্যাছেন
ভুলে গেল আপনি এক সফেন সামুদ্রিক অশ্ব

কি সহজ বলুন তো প্রশ্নটা ! যার উত্তর সব্বার ঠোঁটস্থ !







সর্বজনীন
শর্মিষ্ঠা ঘোষ

যুগলবন্দি থেকে ছিটকে যাবার পর কানামাছি বেশ চিত্তাকর্ষক বলে নিজের ওপর একটু  করুণা একটু ঘেন্না একটু সহানুভুতি একটু বিতৃষ্ণা এটসেটরা এটসেটরা বামাল সামাল করতে করতে ইধার উধার ছত্রখান মন মর্জি মান হুশ কাছা কোঁচা মেরে বেশ শান্ত শিষ্ট ভালমানুষ ভাবমূর্তিতে ফুল বেলপাতা ওঁ নম ওঁ নম করে আবার বেধড়ক আদর পেলে  নিকটতম অভীষ্ট জ্ঞানে আঁকড়ে ধরে আর একখানা ঝক্কাস ভুলের সমাধি রচনা করে বেশ নমকিন জলের এপিটাফে এঁকে রাখি ঘামতেলের মুখ ...

কেটে কেটে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নিকেশ মিলিয়ে হাতে থাকলো কানাকড়ি এই মাগ্যিগণ্ডার হাটে নাজেহাল হতে হতে দোষ চালাচালি পিরীত ঢলাঢলি দেখতে দেখতে এপারের পানসি বোঝাই তো হল এবার তলা ফুটো কিনা খুঁজতে গিয়ে নখদর্পণে ক্ষুধার রাজ্যপাট মনদর্পণে তিলোত্তমা বুদবুদ হাতের চেটোয় ঝুটো মুক্তোর প্রেমবাতিক পায়ের পাতায় স্বেচ্ছা নিরুদ্দেশ ডেকে হেঁকে ক্ষণে ক্ষণে জানান দ্যায় ওরে এই আমি সেই আমি নই আমি নই যাকে কেউ চেনে কেউ চিনেছিল কোনকালে...

যখন কারো কাছে যাবার তাড়া থাকে না আনসান বকি সময় নষ্ট করে আর ভান করতে থাকি শেয়ার করছি গুমনাম চরিত্র যেন মকবুলরা এই জন্যই পায়রা ওড়ায় , ঘুড়িও ... লাটটু ছেড়ে লেত্তি যেমন ভারহীন সেই লিফট ওপরে ওঠার ব্যাখ্যা দিতে দিতে সিঁড়ি নামক ব্যাপারটির গা ঘেঁষে জমা যতরাজ্যের নিরালম্ব ইনডিফারেন্স এক নিঃশ্বাসে জানান দিতে দিতে বড় হয়ে যায় আমাদের সব্বার ছোটবেলা দূর দেশে বিয়ে হয়ে যায় পুতুলের মা মাসির যেন ফ্রি ফ্লোইং এক্সট্রা আয়োডিন যুক্ত ...

দুরন্ত অথচ রিজেকট হতে হতে কিছু ইচ্ছে নিজের নামে চালাই না আর বদলে নিরুত্তাপ মুখোশে হ্যাপি হ্যালোউইন ডিয়ার বলে এক জোড়াতালি মুখে তাকাই ছায়া ভাঙতে থাকে স্পষ্ট খসে পড়ে হ্যাপি গো লাকি পলেস্তারা আবিষ্কার হয়ে যাই সত্যি সত্যি অনেসট দূরদর্শিতায় বোতাম হারানো প্রিয় জামার পকেটে খুঁজে পাই পোস্তদানার ফল রেশমের গুটি লাকি ছক্কা বদ্রি পাখির নরম পালক কুড়নো ফুরনো সিগারেট গোল্লা মার্কশিট অচল পয়সা এক জীবন আমার নাকি সর্বজনীন ...