গুহাপ্রেমিক
আজম মাহমুদ
অন্ধকার
গুহামুখ থেকে উৎসারিত আলোয় আলোকিত পৃথিবীর ভালো-মন্দ যাচাই করতে গিয়ে এজন্মবর্ষ বৃথা
যেতে দিতে পারি না। বরং সেগুহায় মুখ দিয়ে আবিস্কার করতে চাই অনিত্য জীবনের তরল-কাঁচা-সোনা। আমার ভালো-মন্দ
লিপিবদ্ধকারীদের ছুটি দিয়ে নিজেই দাঁড়াবো জোড়হাতে তাঁর সমুখে- জানি তিনি আমায় তিরস্কার করতে পারবেন
না। কারণ আমিই ছিলাম গুহামুখের প্রকৃত পালক। গুহা থেকে জন্মের পর আমিই একমাত্র গুহাপ্রেমিক। মহাকাশের
স্রষ্টার প্রতি কোন কৃতজ্ঞতা নেই আমার- বরং নতমুখি
সর্বদা গুহাস্রষ্টার প্রতি।
কবিতা- ২৭
আজম মাহমুদ
আমার চারু
যেদিন থেকে চারুবালা হয়ে গেছে, সেদিন থেকে হলুদ ফুলগুলো চারু হয়ে যাচ্ছে, প্রিয় নদী
আজ চারু, জানলার
ওপারে প্রতিদিন কোচিং ফেরৎ মেয়েটিও আজ চারু, মোড়ের দোকানে রং চা খেয়ে, আগুন
জ্বালাতে গেলেই যে মেয়ের মুখ আড়চোখে দেখে নিই, সেও। ক্ষয়ে যাওয়া বিকেলে একলা পথের
শেষ প্রান্তে শরীরে বিরহের অন্ধকার মেখে যে নারী দাঁড়িয়ে থাকে তার প্রিয় মানুষের
অপেক্ষায়, সেও।
অথচ আমি আর
কাউকে চারুবালা হতে দিতে চাই না- দু’চোখ বন্ধ করে শুধু তোমার মুখ কল্পনা
করি- যেন পৃথিবীর
আর কোন নারী চারুবালার তালিকায় চলে না যায়...
আমার অপরাধগুলো
আজম মাহমুদ
কবি হওয়ার
দায়ে আমাকে বেশ কিছু অপরাধে অপরাধী হতে হয়। হুইস্কির চুমুকে মেপে দেখতে হয় জীবনের
ভারগুলো মানুষ সন্ধ্যার পর কতোটা হালকা করে তুলোর মতো উড়িয়ে দিতে চায় অন্ধকার
আকাশের গায়। অথবা পতিতাপল্লীর মেয়েগুলোর চোখের জল সত্যিই কতোটা উষ্ণ। সে জল আঙুলে
নিয়ে পৃথকীকরণ করে দেখতে ইচ্ছে করে সেখানে দুঃখ-সুখ-ব্যথার
উপকরণগুলোর পরিমান কিরকম। জিহ্বায় নিয়ে দেখি আর দশটা স্বাভাবিক সুখি মেয়ের মতোই
নোনতা কিনা সে জলের স্বাদ। এগুলো আমার খুব বেশি অপরাধ নয়। বরং নিজের কাছে অপরাধের
সীমালঙ্ঘন করে ফেলি যখন মানবতার প্রথম সিঁড়িতে পা দিয়েই ফিরে আসি লোকলজ্জার ভয়ে- চক্ষুলজ্জার
অজুহাতে।
উল্লেখ
করবার মতো এরচেয়ে বেশি কোন অপরাধ আমার নেই।
আমাকে যেতেই হবে
আজম মাহমুদ
কোথায়
যাচ্ছি জানিনা, শুধু
জানি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি
তুমি-আমিময় যুগলবন্দি সময়ের কাছ
থেকে দূরে যাচ্ছি
ক্রমশ সরে
যাচ্ছি রূপালী রঙের ভালোবাসার শৈশব থেকে
জরাজীর্ণ
বৃদ্ধাশ্রমের দিকে
আমাকে যেতেই
হবে- পুনর্জন্ম
অপেক্ষা করে আছে
অমোঘ মৃত্যু
হাতে নিয়ে...
রিয়েলফ্যাক্ট
আজম মাহমুদ
প্রতিদিন
হৃৎপিন্ডে আগুন লাগাই তবু মৃত্যু আসে না। কেবল ধোঁয়ার সাথে মৃত্যুও দেখি
উর্দ্ধমুখী। আর কতোটা সহ্য করা যায়। তোমার ইমারজেন্সি পিল খাওয়ার টাইম-টেবল আর কতোদিন সন্যাসীর মতো
বলে যাবো! কতোদিন এই কারণ মূল্য পাবে যে, তোমার নাগর নাকি চিকিৎসাবিজ্ঞানে খুব কাঁচা। তোমার
মিসকলগুলো কতোদিন কলে পরিণত করবো- যদিও জানি তোমার কলসেটআপগুলো অন্য ফোনে কাঁপন তুলে। এরপরও আমি কেবল কবি, কেবল
প্রেমিক। দেখতে দেখতে যাই,
মুঠো মুঠো প্রেমের ছাই। আর তুমি স্বগর্বে শরীর দিয়ে ধরো এক একটা জ্যান্ত জিওল
মাছ!