রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

রঞ্জনা রায়


প্রথম আলো
রঞ্জনা রায়

অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে
পাকদণ্ডীর বাঁকে ...
আমি চেয়েছিলাম বিশ্বস্ত হতে
তোমার আমার নিজস্ব অর্কিডের
বেগুনী আভায়

আকাশের কাছাকাছি থেকেও
মাটির সবুজ মখমলি চাদরে
রোদের ছোঁয়ায় গুপ্তধন খোঁজে
মেঘময় ঋদ্ধ মনন

উৎসেই জাগে সত্যের প্রথম আলো ...[কলেজ স্ট্রীট পত্রিকা ]






জীবন
রঞ্জনা রায়

অনেক কিছুই সাজিয়ে রেখেছি দেয়ালে , তাকে , কাঁচের আলমারির ভেতরে ,

অনেক কিছুই জমিয়ে রেখেছি ওয়াড্রোবে,সিন্দুকে , লকারে ।

জমাচ্ছি , সাজাচ্ছি এক অজানা শর্তকে সামনে রেখে ,

এক অলিখিত নিয়মে।

ছোট ছোট স্তূপ , মস্ত পাহাড় হয়ে ওঠার আশায়

ভবিষ্যৎ স্বপ্ন বোনে ।


জমাতে , জমতে ধস নামে পাহাড়ে

হারায় সবুজ পাইন বন , প্রাচীন গুম্ফা ;

ভেঙে পড়ে সাজানো বাড়ি ।

সাজানো হারানোর খেলায় ,

জীবন কি অমূল্য কিছু পায় ?

[ট্রিগারে ঠেকানো এক নির্দয় আঙুল] (প্রতিভাস)






ওরা দুজনে
রঞ্জনা রায়

সব অন্ধকার রাতের পেছনেই
কিছু নাটুকে সন্ধ্যা খেলা করে ।
সেই সব লাল পরী সন্ধ্যায় ,
অনেক পাকানো সুতো জড়ো হয় ।
তাসের পর তাস জোড়ে ,
তাসের খেলাঘরে সাজায় বনসাই ।
সন্ধ্যার ঢালু প্রান্ত দিয়ে
তাসের খেলাঘরে নেমে আসে রাত ,
নেভে আলো ।


তখনই বসন্তের হঠাৎ উঁকিঝুঁকি ওদের খেলাঘরে !

লেপের ফাঁক দিয়ে দেখে নেয় ,
দুরত্বের এককে কত কাছাকাছি
দুজনে ওরা এই খাটের কোটরে ।
ওরা ঘুমায় শুধু ওদের অনুভূতি গুলো ,

ছবি এঁকে যায় ঐ সাদা ক্যানভাসে ,
কখনো রঙিন কখনো বা তৃষ্ণার্ত ফ্যাকাসে ।

(কবিতা সীমান্ত)






সেই তীর
রঞ্জনা রায়

এক নির্জন পাইন বনের সীমান্তে  বসে আছি  একা
স্বর্গীয় রাত্রির মোহনায় ভেসে এলো , চাঁদেপূর্ণ ভেলা ।

দূরে জ্বলে বিন্দু বিন্দু আলো , ঘরের স্বপ্নে বিভোর মন
চন্দ্রডিঙায় একলা ।

বাঁশিতে বাজলো বাগেশ্রী বিস্তার , সাতনরী এক জ্যোৎস্না হার !
শ্যাম্পেনে ভরপুর পৃথিবীর প্রতিটি চুমুক

তুমি আর আমি
মাঝে অনেক বিকল্প নদী বয়ে যায় ।
এক মোহনীয় রতি  থেকে যায় অজানায় ।

[ট্রিগারে ঠেকানো এক নির্দয় আঙুল] (প্রতিভাস)






লাল শার্ট
রঞ্জনা রায়

ধূলোমাখা , কিছুটা ছেঁড়া , একটা রক্তমাখা লাল শার্ট ;
জুঁই ঢাকা বিছানায় রাখা আছে
এটা কিনেছিলাম প্যান্টালুনসের সেলে
গত আগস্টে , অনেক বেছে ।
ব্যঙ্গ হাসিতে তোমার চওড়া চোয়াল
গিয়েছিল কুঁচকে , মজারু আমেজে ।
এক উতপ্ত দুপুরে , তোমার উন্মুক্ত বুকের উপর ;
রেখেছিলে সেই লাল শার্ট
বলেছিলে , প্লিজ একটু হেল্প কর ,
বোতাম গুলো খোল চটপট ।
তোমার উতপ্ত শরীর ঘিরে সেই
লাল লাজুকতা আমি দেখেছিলাম দু চোখ ভরে ।
লতা দোল খায় ছায়াময় গাছের আদরে ।

সাত দিন আগে জঙ্গী হানায় ,ছিন্ন ভিন্ন মুম্বাই মেল ।
মানুষের রক্ত তৃষ্ণায় প্রতিনিয়ত মানুষই উদ্বেল ।
আজ সকালে এসেছে তোমার কফিন ঢাকা নিথর বরফ দেহ ।
পার্সেলে এলো একটা লাল শার্ট হয়তো সেটাই  ,
নিরর্থক সন্দেহ ......

আজকে শরত পূর্ণিমায় আকাশে চাঁদ বড়ই উচ্ছ্বল !
আমার কোল জুড়ে সেই লাল শার্ট
এক নিরক্ত নিসিদ্ধ ফল ।

[ট্রিগারে ঠেকানো এক নির্দয় আঙুল] (প্রতিভাস)