কাকলি ভট্টাচার্য
হৈমবতি - কথা
(১)
________________
নিশীথ রাতে নক্ষত্র সমাবেশে--
অস্ফুট আলোর গুঞ্জন,
শিল্পী চক্ষুদান করলেন-- প্রতিমা পূর্ণোপমা ।
হৈমবতী কে একদৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করছিল --
শীর্ণকায়া
এক ফুটপাত বাসিনি-
নিদ্রাহারা -- রূপের পূজারিণী /
রাত প্রায় শেষ --
ভোর ভোর আধো অন্ধকারে --
শিল্পী পিছন ফিরে একবার দেখলেন।
তারপর বলে উঠলেন----
মা গো এসেছিস
!!
_______________________
(২)
দুপুরের নির্জনতা খান খান --
ঘুঘুর মন কেমন করা ডাক--
হেমন্তের দুপুরে কাদের বাড়িতে যেন
রেডিও তে ভীমপলশ্রী রাগে বাঁশি -
পূজোর রেশ কাটতে না কাটতে ই
হোস্টেলে ফিরে যাবার তাড়া --
অষ্টমীতে পুজো প্যান্ডেল এ অঞ্জলি দেবার ছলে-
যে চোখে খুশির ঝলক--
গাড়ির ধোঁয়া
হোস্টেল এর দিকে চলে গেলে--
দুই বিনুনির চোখে জল ।
ও মা সে আজকের কথা !!!!
মাইকে গান বাজে -- পৌষের কাছাকাছি রোদ মাখা সেই
দিন
ফিরে আর আসবে কি কখনো ---?
___________________________
(৩)
সেবার যখন শৈলেশের গৃহ ছেড়ে,
হৈমবতি পতিগৃহে যাত্রা করল --
সেই বছরই আমাদের কলেজের অস্মিতাকে
তার স্বামী মেরে কালশিটে ফেলে
বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয় ।
হৈমন্তিক ধান কাটা শেষ হলে--
অপরাহ্নে কনে দেখা আলোয় --
ছাদের এক কোনে জড়সড় মেয়েটি
শক্তি সঞ্চয়ে মশগুল --
মা ছাদে উঠে গেলেন---দেখলেন --
তার ঘরে ও আজ হৈমবতী ।
____________________________________
(৪)
হেমন্তের সন্ধ্যে নেমে এলে --
ছাতিমের গন্ধ ধীরে ধীরে ম্লান,
তোমার চলে যাওয়ার গুজরিপঞ্ছমের ছন্দ --
স্মৃতিতে অমলিন ।
বছর ঘুরে আবার--
ছেঁড়া ছেঁড়া ভোরের ঘুমে--
তোমার স্পর্শ ।
ঢাকের শব্দে আমার তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে বেজে ওঠে
--
মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে--
__________________________-
(৫)
তিল তিল করে তিলোত্তমা
সম্মুখ সমরে কে ও?
অসুর দলনীর পরাজয় --
হাহাকারে দীর্ণ তুমি, ছিন্ন বিচ্ছিন্ন-- শরীর--
রক্তস্রোত ভেসে যায় দিগন্ত পেরিয়ে-
জেগে ওঠো হৈমবতী--
ত্রিশুলধারিণী মা গো-
কুরুক্ষেত্রের শেষে মৃতদেহ ছিঁড়ে খেয়েছিল
শকুনের দল ---
তেমনি নৃশংস দিন আজ সমাগত
তোমার প্রতিক্ষায় হে হৈমবতী ।