ইন্দ্রাণী সরকার
বাতিঘর
কিছু শুকনো পাতা
ছড়িয়ে দিলাম
তোমার চলার পথে
পথে
চলে এস, পায়ের নূপুর খুল না |
পাতার খসখসানি
আওয়াজে তোমার
নূপুরের শব্দ মধুর
লাগে
বহু দূর থেকে শোনা
যায় তার ছন্দ|
বাইরে ঝড়ের শব্দ
চারিদিক আঁধার
চিলের ডানায় ঢেকে
যায়
বিকেলের আবছায়া
ধুসর আকাশ |
হিরন্ময়
নৈঃশব্দ্যের মাঝে ভেসে আসা
তোমার নূপুরের
নিক্বণ
বাতিঘর হয়ে আলো
জ্বালিয়ে রাখে |
নবজাতকের প্রতিশ্রুতি
চন্দ্রাতপ রাতে
প্লাবিত জ্যোছনার
ঠোঁটে জেগে থাকে
একটি সদ্যজাত
ঘুমন্ত শিশুমুখ
শুচিস্মিত, অমলিন |
মুষ্টিবদ্ধ হাত দুটিতে
ক্ষয়িষ্ণু সমাজের
দুর্নীতির
বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ,
দুই চোখে ঢেউ
ছোঁয়া সমুদ্রের বীণ |
সেও হেঁটে যাবে
নিয়ে শান্তির বাণী
কলুষিত সমাজে
চেতনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে,
পায়ের চিহ্ন লেগে
থাকা পথে একদিন |
তার চলার পথ ভরাবে
রাশি রাশি ফুল
স্তবকে স্তবকে
রংধনুর শৈল্পিক মিছিল
সুদূর নভোনীলে
মুক্ত হৃদয় বেদনাবিহীন |
তোমায় পাওয়া
কোন্ নক্ষত্রবীথির
তারকা থেকে তুমি এলে
আমার এ জীবনে যেন
তুমি আমারি জন্য সৃষ্টি !
কখনো কখনো মনে হয়
ঐ যে দুটি চোখ
যেন কতযুগ ধরে
চেয়ে আছে সুকোমল দৃষ্টি |
তোমায় খুঁজে যাই
তোমার শ্বাসে প্রশ্বাসে
মেঘ মেদুর দিনে
যেন ঝরো এক পশলা বৃষ্টি,
ঐ হাত ঐ বুক তা যে
শুধু আমারই জন্য
শুনি যেন সেই সুর
সুমধুর মিষ্টি শুধু যে মিষ্টি |
মেঘে মেঘে কেটে
যায় বেলা কি করে জানি না
শিশিরে শিশিরে
ছড়ানো মনিমুক্তা রাশি রাশি |
তুলে তুলে মালা
গাঁথি পড়াব তোমার গলে
বেঁধে নেবো এই
হাতে তাই খালি কাছে আসি |
আঁজলা ভরে জল তুলে
নি দুই হাতে, দিতে
ঢেলে তোমার প্রিয়
ফুলে যে পড়ে আছে বাসি |
তুমি এলে মুছে
দিলে চোখে জল তাই দেখো
ফুটে আছে
রজনীগন্ধা অমলিন আমার হাসি ||
রাতের পরীরা
রাতের আকাশ থেকে
নেমে আসে
ঝাঁকে ঝাঁকে
সুন্দরী পরী ।
যাপিত পোশাক আর
ডানা খুলে
রাতভর তারা
জলকেলিতে
মুখরিত করে
শানবাঁধা ঘাট ।
জ্যোৎস্নায় ভেসে
যায় পৃথিবী ।
রাতজাগা পাখিরা
অবাক চোখে চায় ।
স্নান শেষে পোশাকে
অঙ্গ ঢেকে
ডানা বেঁধে নেয়, তারপর হাসিতে
উচ্ছ্বল পরীরা
ডানা মেলে স্বপ্নের
মত মিলেয়ে যায়, পিছে পড়ে থাকে
শানবাঁধা ঘাট, আলোকিত রাত
আর রাতজাগা ঘুমন্ত
পাখিরা ।
নদীমাতৃক
সঞ্জীবনী সুধায়
পালিত যে নদীমাতৃক দেশ
সেও আজ অচিন, সেও আজ তথাগত
শুধুমাত্র
আদমসুমারির রক্ষার্থে তার জনান্তিক পিন্ডদান
আসলে
রাষ্ট্রবিপ্লবের শুরু থেকেই গর্ভজাত এ প্রবচন
যেখানে শিমুল
ফুলের অভাব অথবা গোলাপের অভাব
সেখানে সূতপুত্র
অসহায়, সেখানে শ্রমিক পক্ষাঘাতে দুষ্ট
গোলার্ধ পরিভ্রমণে
শুধু একটাই পীঠ নথিভুক্ত
শকুনেরা যেখানে
হায়নার সাথে বসবাস করত
আর দেখতে দেখতে
মাছেরা কথা বলে ওঠে কোনো বিজাতীয় ভাষায়