তৈমুর খান 
ধ্বংসযুগ 
ধ্বংস ডেকেছে আমাকে 
ইতিহাসের ছায়া পড়া বিপ্লবের মাঠে 
দু একটা মোরগ শুধু ধর্মনিরপেক্ষ বার্তা দেয় 
কোথাও কি ধর্ম আছে তবে   ? 
তবু দেখি জ্যোৎস্নায় ধর্মের ষাঁড়েরা ঘোরে 
চোখ রাঙায় , শিং বের করে
তেড়ে আসে 
ধ্বংসযুগের হাওয়ায় কাকের চিৎকার শুধু 
আমরা জেগে থাকি 
মৃত্যুর অন্ধকারে পথ ঢেকে যায় 
মানুষ বাঁচে না কেউ , মানবেরও
নিরুত্তর কাহিনি 
রূপকথার পেঁচারা এসে শিকার করে নেয়   ।
সুবচন
   
গ্রীষ্মের কাছে হাওয়া প্রার্থনা 
রোদের কাছে ছায়া প্রার্থনা 
এতদূর হেঁটে আসা পর 
আর একটু কি দাঁড়ানো যেত না  ? 
তোমার বিকল্প খুঁজিনি 
রাত্রি ও অন্ধকারের তফাত বুঝিনি 
ডাকতে ডাকতে নিঃশেষে 
নিজের কিছুই গোপন করিনি 
নিজের বাগানে ফোটেনি গোলাপ বলে 
মনের গোলাপ বাঁচিয়েছি চোখের জলে 
কল্পনার ভ্রমরগুলি ঝাঁকে ঝাঁকে এসে 
শব্দে শব্দে গুঞ্জন গেছে তুলে 
তুমি এক আঁজলা কিরণ 
চৈতন্যের ফাঁকে ফাঁকে শিহরন 
আমার নষ্ট বেড়া খসে গেছে 
লতায় পাতায় তারই বিনম্র গান ! 
বেশ বেশ সান্নিধ্য 
সান্নিধ্য ছড়িয়ে আছে 
কুড়িয়ে নিচ্ছে পাখিরা ঠোঁটে ঠোঁটে 
আর কথা জমছে পাখিদের 
ঘর গেরস্থালি ভরে যাচ্ছে স্বপ্নের ইংগিতে 
লাল নীল পোশাকের ছায়ায় রাস্তা খুঁজতে এসে 
আমার সব বিভ্রম বাড়ছে 
সব খোলা দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধতা 
মুগ্ধতার দুধ গড়ে যাচ্ছে বিপন্ন রাস্তায় 
আমি সাইকেলের বেল্ বাজাতে বাজাতে 
বোকার মতো রসিক হয়ে যাচ্ছি 
আর পানের পিক ফেলে 
আগামীর অন্যকোনও সম্ভাবনার দিকে চলে যাচ্ছি 
সূর্য বাড়ি ফিরতে ফিরতে হাসছে 
দু একটা ঢিল ছুঁড়ে দিচ্ছে চেতনার সমুদ্রে 
এই বৃহন্নলা শহর 
 দু একটা মশকরা
বেশ হাসতে হাসতে যাচ্ছে 
তাদের নিপতিত ছায়ায় প্রজাপতি উড়ানের মায়া 
রঙ্ ফলছে সকাল সকাল 
         বিস্ময় চিহ্নের কাছে এসে
দাঁড়ালাম 
        ঘোর লাগে উদ্বেগের ধাক্কায় 
           দম আটকে যাবার উপক্রম 
          কিছুটা আলোর কেশর ঘোড়ার
উদ্ধত স্ফুলিঙ্গ 
          মৈথুনের জাবর কেটে ফেরে 
            পোশাকের ছবিতে আকাশ নামে 
              আকাশে চাঁদের প্রসন্ন
লীলা 
            দেখতে দেখতে সময় সংবাদ 
           সময়ের মজানে এই বৃহন্নলা
শহর 
         যানবাহনের চোখে ধাতব
প্রাজ্ঞতা লেপে দেয় 
        করুণ সংঘাতে সূর্য এলোমেলো 
       রোদের ভাষায় ডেকে ডেকে যায় 
        গর্জন কুড়িয়ে ঘরে ফিরি 
       বোধের দেওয়ালে বেজে ওঠে তালি 
      জেগে ওঠে বৃহন্নলা ভোর 
বিচ্ছিন্ন মানুষ 
এত শোকের ঝরনা 
আমি জল পান করতে পারিনি 
     সারারাত নগ্ন রাত্রি কেঁদে গেল 
     গুহায় গুহায় হিংস্র গর্জন উঠল 
    মানব সভ্যতার কোনও রাস্তা চোখের
সামনে দেখা গেল না 
   দূর পাহাড়ের সীমানায় কাদের রংধনু
শাড়ি উড়ল ? 
   ফালা ফালা হৃদয়ের প্রতিধ্বনি শোনা
গেল 
  আর রক্তাক্ত মুচকুন্দ ফুলের বাঁশি 
   জোনাকির সখ্যতায় জ্বলে উঠল 
   দেখলাম 
  কোনও বাজনার কাছে যেতে পারলাম না 
  কোনও আহ্বানের কাছে আসতে পারলাম না 
  এক অসত্য ভঙ্গুর ধ্বসের তীরভূমিতে
দাঁড়িয়ে থাকলাম 
   মেঘমন্ত্রহীন প্রচ্ছায়ার অন্তরালে
বিচ্ছিন্ন মানুষ... 
