নাসির ওয়াদেন
লালমাটিতে
আকাশ ফাটা লাল আগুনে পুড়ছে মাটি
জ্বলছে বাড়ি ঘর আর আমাদের ছেঁড়া তাবু
তাবুর ভেতর শেকল ছেঁড়ার সংলাপ -
ঠোঁটের উষ্ণতা বিষিত হচ্ছে ভাঙা জানালায়
বিবর্ণ শরীরে দেখি বিশোষিত অমাবস্যার শোক সন্তাপ --
রঙিন ধুলোর পিঠে বাজছে বাউলের একতারা
কুয়াশায় ছেঁড়া-ফাটা রোদের মলিন কবোষ্ণ কিরণ
পায়ের গোলাপি ছাপে মেদিনীর কলংকিত কংকাল চিহ্ন
নিষিদ্ধ ঘুমের মাঝে জাগে পক্ষিরমনীর অনুভুতি ছোঁয়া
এ পথের মাঝে রক্তবীজ বোনে
পাহাড় ফলায়
জেগে আছে লাল মাটি প্রকৃতির বিঘত প্রান্তিকে।।
আমাদের বাড়ি
--------------
দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে সৌর বিন্দুর মধ্য কেন্দ্রে
সময়ও হেঁটে যাচ্ছে রেলগাড়ির আগে আগেই
চাকার অক্ষকোণ দ্যুতি যন্ত্রণার অনুভূতি মেখে
ঠেকে ঠেকে পেয়েছে রৌরব নরক সুখ-শান্তি।
আমাদের বাড়ি ওড়ে যাচ্ছে পরিযায়ী সুখের সন্ধানে
দুটো ঘর,একটি শোবার
অন্যটিতে মাল মজুত-
উঠোনে বসেই আমাদের রান্না আর খাওয়া দাওয়া
এমন কি বাহ্য বর্জনও করতে হচ্ছে উন্মুক্ত উঠোনে --
আমাদের বাড়ির নীচে লাগানো আছে দু'জোড়া চাকা
নিউটনের প্রতিক্রিয়া শক্তি ক্রিয়ার প্রতীপগমনে ছুটছে।
দামামা বেজে চলেছে প্রতিক্ষণ আমাদের বাড়িতে
পৃথিবীর যাবতীয় অনুভূতি ভাগ হচ্ছে বাড়ির কেন্দ্র থেকেই।
জলছবি
স্নিগ্ধ সকাল -জলছবি এঁকে
ভোর হতেই শব্দের পাখিগুলো
ডানায় শীত লেগে এসে বসে
ভগ্ন স্তূপের ওপর ----
কথার বন্যা ঘোলাটে নদীর বুক ছুঁয়ে
বহে চলে দিবারাত্রি এ ঘাট সে ঘাটে।
শব্দ হাঁটে অরণ্যে পাতা খস্ খস্ --
শীতল ফিনফিনে বাতাস পাখিদের
কানে কানে শিস দেয় •••
সন্ধ্যা নামলে নিঃশ্বাসের জলবিন্দু
নদীর ঢেউ-জোয়ার হয়ে আছড়ে পড়ে
জীবন-গালিচার ছোট আঙিনায়--
আলোয়-আঁধারে কাটে সময় অন্ধকার শীতে
শব্দেরা বেঁচে ওঠে
কথায় ঘাতে-প্রতিঘাতে।।
ঠিকানা
ঠিকানা খুঁজতে খুঁজতে
পৌঁছে গেলাম আদিম অরণ্যে
মনে পড়ে গেল
সিংহ শাবকের সাথে খেলার কথা,
বাঘশিশুরা হাতছানি --
আমরা রাজার সঙ্গে
থাকতে অভ্যস্ত।
পিপাসার তৃষা নিবারণে
পৌঁছলাম নদীর কাছে
দেখলাম একপাল লোমশ ভেড়া
আর গুটি কয়েক কুকুর
পাহারাদার হবে।
তৃষ্ণার অতৃপ্তি নিয়ে আজও ছুটে চলেছি •••••
নাকের লোনা জলে পেলাম স্বাদ
মশলা মাসাল্লা দিয়ে চিকেন বানালাম।
বাবার ফলিত হাত ক্রমশঃ নিস্তেজ হলে
একদিন চলে গেল অন্ধকারে
মা শিয়রে বসে জাগে
একদিন ভোরে দেখি মা
সদর দরজা দিয়ে চলে যাচ্ছে
আমাদের হারানো ঠিকানার সন্ধানে।।
মৃত-বৃক্ষ
ডানাকাটা বৃক্ষের বুকের ভেতর
কচি পর্ণের বিলোভন বিস্ফোরণ ঘটে
পরাবর্তিত সমাজ অন্ধ মৃত্যু-বৃক্ষের মতন
ধীরে ধীরে সায়ন্তন বিছানায়
লুটিয়ে পড়ে স্পর্ধিত সৌর কিরণে
সমুদ্রের সকাতর সফেদ সলিল প্রেম
ঋদ্ধ মুখের বলিরেখায় ফুটে ওঠে
বেদনা বিচল পুষ্প বিতানে নুয়ে ও--
মৃত-বৃক্ষরাও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে
কপালের ডানদিকে H2O, বুকের উপর
AB2+BC2+CA2=0 লিখে দাও -
আর লিখে দিতে হবে ₹
> $ পায়ের তলায়
দেখবে তারাও দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করছে
ধর্ষণ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে গণ-আদালতে ।
----------------------------------