শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬

মোকসেদুল ইসলাম


মোকসেদুল ইসলাম


মৃত্যুপথ
................
রাতঘুম হারাম করে সব জলজ মাছেরা হাঁটছে শহরের পথে
নাগরিক ক্লান্তিতে ঝিম মেরে বসে সবগুলি ইরামত
শহুরে বৃক্ষের মতই বিষন্ন মানুষের মিছিলে রক্তের বুদ্বুদ
ঝুলন্ত বাদুরের মত পেটে ক্ষুধা নিয়ে পার হয় অজস্র মৃত্যুর পথ।

কোথায় যাবো?
অরণ্যের আঁধার এসে ঢেকে ফেলছে সবটুকু পথ।
মহুয়া মাটির কোলে আমিও ভাতঘুম দেবো বলে
বহুগমনের বীজের ভেতর থেকে নেচে উঠি বিচ্ছেদী সুরে।

কি হবে? গেয়ে উঠলে পাঁজর ভাঙ্গার গান।
খুব বেশি হলে মৃত্যু!
ঐ পথে আমি তো নিত্য হেঁটে যাই বাঁধাহীন।




মৃত্যুসুখ
.......................
এখানে মুখ খুবড়ে পড়ে থাকে জন্মান্ধ রাত
মৃতরা আলিঙ্গন ভালোবাসে বলেই আঁধারকে করে সঙ্গী
নারীর অধরে দেয়া প্রথম চুম্বনের কথা ভুলে কেউ কেউ
স্বেচ্ছায় বেছে নেয় দীর্ঘতম মৃত্যুযন্ত্রণার স্বাদ।

শূন্যতা যখন গ্রাস করে সন্ধ্যামন্দিরের মঙ্গল প্রদীপ
নিষিদ্ধ হতে হতেই তখন বেদনারা দুবোন দুহাত
প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যায় আকাশের ঠিকানায়,
ঝুলে যাওয়া দুপুর বারান্দায় বসে রিলিজ স্লিপে
লিখে রাখে সচিত্র মৃত্যুর ইতিহাস।

এখানে মুখ খুবড়ে পড়ে থাকে জন্মান্ধ রাত
রংবাহারির দুঃসময়ে রৌদ্রলোকে দুচোখ খোঁজে গুপ্ত ক্ষত
আমরা মানবিক মানুষ নই, ফাল্গুন রাতে
দুর্বিষহ আগুনে পুড়িয়ে দিই মলাটবন্দি সুখ।




মৃত্যু নিয়ে লিখি
.......................
মৃত্যু ভাবনা হয় বলেই আমিও নিজের মৃত্যু নিয়ে লিখি
জীবনের সেই সন্ধিক্ষণ, ভাল লাগার দু-চার বছর
আদিম রাত, ভয়ংকর একা, আত্মহত্যা মৃত্যুরমত।

কখনও কি কেউ নিয়েছে প্রকৃত যৌবনের নির্যাস?
আক্রোশে নয় দগ্ধ রাতের ক্ষত নিয়ে বেঁচে থাকে ঈশ্বর
সভ্য শহরের মোড়ে!হাত বাড়ালেই মেলে বাঁচার রসদ।

বড়ই বেপরোয়া সময়ে বুঝে উঠতে পারিনি জীবনের প্রয়োজন
মৈনাক মেঘের ছায়ায় বসে বাড়িয়ে নিচ্ছি আয়ুষ্কাল,
যতটুকু সঞ্চয় ছিল আলোর কাছে তারচেয়েও বেশি
ঋণী আমি আজ মৃত্যুর কাছে।




মৃত্যুর ডাক কিংবা ভুলে যাওয়া স্মৃতি
.......................................................
প্রতি পদক্ষেপে মৃত্যুর ডাক।
ঘুম আর ঘোরের মিথষ্ক্রিয়ায় জন্ম নিয়েছে যে সময়
সেতো বড় অভিমানী। আগুনে পুড়ে খাঁটি হতে চায়।
কাদা মাটির গন্ধ ভুলে গেলে প্রজন্মের গর্ভে কমে যায় যৌথ উৎপাদন
পরিহাস বলতে যা বুঝায় সেও তোমাদের কালচার, সভ্যতার বাহন।

নদীরা জেগে থাকে কারণ তাদের সঙ্গীর অভাব নেই
দুখানি পংক্তি মাত্র। সেটাও আবার খেয়ে সাবাড় করতে চায় শাদামাছ
ও তো জানে, অভিশাপ করার আগে যদি উড়ে যাওয়া যায়
তবে ধরার সাধ্য নেই কারো।





মৃত্যুসূত্র
..................
গোপন সূত্রগুলো জেনে গেছি মাত্র
নিখূঁত ময়ুর পেখম খুলে নিয়ে গেয়ে যাও প্রণয় গীতি
স্বর্ধর্মের বাতি জ্বলে উঠলে মানুষ ছুটে আসে মানুষের পিছু।

দূরসূত্রও জানা আছে আমার
বিপরীত মেরু মিথের জন্ম দিয়েছিল যারা
আধিপত্যবাদের সূত্রে পড়ে তারা ভুলে গেছে নৈকট্যের ভালোবাসা।

মৃতরা কেন দৌড়ে চলে আসে লাশকাটা ঘরে?
এই প্রশ্ন করেছিল যে বালক সে বিপন্ন বিস্ময়ে চেয়ে দেখে
মৃত্যু শেষে কারো নির্বাণ লাভ হয় না কখনো।