আশরাফুল
মোসাদ্দেক
ঘুড়ি যা পারে না
ধীরে ধীরে আরো দূরে যাচ্ছো তুমি
ফানুস যেমন যায়
ঘুড়ি যা পারে না
ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা না থাকা
কৃত্রিম উপগ্রহের মতো
দূরে চলে যাচ্ছো তুমি
হয়তো বোঝবার মধ্যে আছে বিশাল ভুল
অথবা একগ্র্যামও মিথ্যে নয় অনুমান
তোমার এখন বহুমুখী চলাচল
উল্লাস-আনন্দের ফ্রাইয়ে মিনিচিলিসস
শূন্য ও এক নিয়ন্ত্রিত সময়ের চারুপথে
হৃদয় কিংবা মস্তিষ্ক বদলের শল্যচিকিৎসা
অথবা অন্তর্গত রহস্যময়তায়
উন্মোচিত হয়ে গেছে ননস্টপ সুখের জগত
কেউ জেনে গেছে জীবন বাজাতে
অন্যকেউ বেজে ওঠে হাওয়ায় ঝাউগাছ
চোখের সরোবরে খুশির ঢেউ অশ্রুর ফ্যাক্টরিতে লক-আউট
সকল দরোজায় দিয়েছো সুকঠিণ তালা
না তুমি থাকলে আজ এ আমার
না আমি থাকলাম অতএব তোমার
বারমুডা
ত্রিভুজে
হাওয়ার মহাসরোবরে শব্দ তরঙ্গগুলো বিবিধ আকারে ও প্রকারে সাঁতরাতে সাঁতরাতে
একসময় শ্রান্তির চাদরে শুয়ে অনস্তিত্বের দিকে যেতে থাকে। জালিকা শিরাবিন্যাসের মতো
ফ্লাইওভার-রাস্তাগুলোর ঘুপচিতে কুনোব্যাঙের মতো গেরিলা-অন্ধকার টপাটপ উদরপূর্তিতে
ব্যস্ত হয়ে ওঠে। বস্তুর নিত্যতা মেনে কিছুকিছু শব্দ সুশব্দে হয়ে ওঠে কলাবতী এবং
অবশিষ্টগুলো দুঃশব্দে ফেটে পড়ে পাকা অতসীফলের বীচির মতো এদিকসেদিক।
বর্ণ কিংবা বর্ণসমষ্টির এই কোলাহলের সাফারিপার্কে হৃৎপিণ্ডই সবচেয়ে স্পর্শকাতর, ঘুমে-জাগরণে আদিগন্ত এক টেনশনের চিলেকোঠায় শিশুমুরগির মতো
ভীতু হয়ে হাত-পা ভাঁজ করে ঝরে থাকে চুপিচাপি বক্ষপিঞ্জরে। একচামচ মধুর বিপরীতে
কয়চামচ চিরতাজল মানববন্ধনে এসে দাঁড়িয়ে পড়বে কিছুই যাবে না বলা। নাসিকারন্ধ্রের
সন্নিকটে এসে লালগোলাপের ভিতর থেকে সংগোপনে বেরিয়ে আসতে পারে দুর্দান্ত মিনিকীট।
বিশ্বাসের জলাশয়ে অবিশ্বাসী ফেনিল মহাসমুদ্র লুকিয়ে থাকে নেকাবের অন্তরালে। ২১
বছরের সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রা ৭ ফিলোপাতর এর মস্তিষ্কে ৫২ বছরের রোমান সেনাপতি
জুলিয়াস সিজার এর প্রতি প্রেম ছিলো কয়গ্র্যাম— তারচেয়ে বহুগুণ গভীর ছিলো
কনিষ্ট ভ্রাতা ফারাও তলেমি ১৪ এর কাছ থেকে তলেমি সাম্রাজ্যের অধিগ্রহণ। অন্যদিকে, সেনাপতি মার্ক এন্টোনি ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর গুজব বিশ্বাস
করে প্রেমাগুনে দিয়েছিলো আত্মাহুতি।
সৃষ্টির শুরু যদি এক্স হয় এবং শেষ যদি ওয়াই হয় তাহলে এ পৃথিবীতে অগুণতি এন
সংখ্যক বর্ণ কিংবা বর্ণসমষ্টি অস্তিত্বের হাইওয়ে ধরে অনস্তিত্ব গন্তব্যে অভিগমণে
হয়েছে সাওয়ার। এই মহাযাত্রাপথের একটি অনির্ধারিত বিন্দুতে একটি অর্বাচীন পিন একটি
হৃৎপিণ্ডকে ককশিটের বোর্ডে দিয়েছে সেঁটে— সে-কি প্রেমে? না-কি উদ্দেশ্য অর্জনের অভিলাষের অপ্রেমে? ক্লিওপেট্রা-সিজার-এন্টোনি ত্রিভুজ নিমজ্জিত হয়ে যায়
বারমুডা ত্রিভুজে।
শূন্য ও এক এর
টুর্নামেন্ট
ছন্দে-অছন্দে দু’টো পংক্তি ঠোঁটে বা জিহ্বায়
লিখে দিলেইতো হয়ে গেলো। গ্রহীতার মনের পুলকইতো মানদণ্ডের গুণ। কিছুটা চমকের সঙ্গে
কিছুটা ধমক গুলিয়ে তৈরি করতে পারলেই হলো কুড়মুড়ে চিপস। দেহলোভা পরিসংখ্যানও এনে
দিতে পারে অনন্য বৈশিষ্ট্য। মেধা ও মননের যুগ পেরিয়ে প্রাণিসম্পদ প্রবেশ করেছে
তথ্যপ্রযুক্তি চাষে।
বোতাম ও আঙুল চালনায় দক্ষতা ও পারদর্শিতার মাপকাঠিতে মূল্যবান হয়ে ওঠে
মানবসম্পদ। এই গড়িয়ে চলা সময়ে ম্যাজিকের কদর অনেকবেশি। স্যাটেলাইট চ্যানেলের
ঐক্ষিক আবেশে কুর্নিশের ভঙ্গিমায় নতজানু হয়ে আসে নমনীয় গ্রীবা। বুদ্ধিমানেরা জানে
এবং মানে যে এইরূপ সময় পাল্টানোর প্রক্রিয়াটিই হলো বিকাশের কড়ি-বর্গা।
চূড়ান্ত বলে কিছু নেই, মানদণ্ড বলে কিছু নেই
এইসময়ে অবশিষ্ট আর। অসির চিম্বুক থেকে মসির কে-টু পেরিয়ে শিল্পের ঐক্ষিক হিমালয়ে
ওরা পুঁতে দেয় আপন পতাকা। আকাশে এখনো চাঁদ সুপ্রাচীণ এবং এখনো সূর্য অবিকল সনাতন।
তথাপি এ সময়ে শূন্য ও এক এর টুর্নামেন্টে ছন্দে-অছন্দে অনর্গল পংক্তিতে প্লাবিত
হয়ে যায় ময়দান।
কিউপিড-ল্যাঞ্চেলট
সেই শীত একা একা শুয়ে থাকে
যেই শীতে মাঘমাস বলেছিলো চলে যাবে
অথচ যেতে পারেনি গোলাপের লঘুচাপে
তমিজের আঙুল থেকে পিছলে গেলে
বেতমিজ অঙ্গুরীয়— কয়েকফোঁটা জল ছলকে ওঠে
পুষ্পিত উল্লাসে জাগুয়ার লয়ে
বরফে খেলা করে শ্বেতভাল্লুকের শাবক জলে
সীলমাছের হৃৎপিণ্ড বিদীর্ণ করে দেয় ভীতি
তীরন্দাজ কিউপিড থাক গভীর অনুশীলনে
আধুনিক ল্যাঞ্চেলট সনাতন এক মোহে
হবে কি প্রতিকী ঐক্ষিক সন্নাসী
গুইনেভেরের হৃদয়ে কি প্রকোষ্ঠ পাঁচটি
সেই শীত একা একা শুয়ে থাক
লঘুচাপে পুষ্পিত কিছু উল্লাসে
কিউপিড-ল্যাঞ্চেলট থাক অমায়িকধামে
আজও যেনো কিছু
চাই
অক্ষরবৃত্ত থেকে বিমুক্ত হয়েছে অস্তিত্বের মাত্রায়
এর কোনো শুরু নেই— শেষ নেই
তবুও জীবনে তা পরম সত্য— সমুদ্রের চেয়েও গভীর
একটি অপরাহ্ন এ শূন্য পৃথিবীতে যোগ করেছিলো
সম্পূর্ণ এক অন্যরকম মানে
পূর্ণ করেছিলো হৃদপিণ্ডের প্রকোষ্ঠচতুষ্টয়
এক অপার্থিব সঙ্গীতে আত্মা পরিবর্তিত হয়েছিলো দুর্লভ বস্তুতে
অদৃশ্য কিছু ছায়া আর নরম কিছু স্পর্শ
বিলীন হয়ে আছে অনুভূতিতে অহর্নিশি
এটি অলিখিত এক নাতিদীর্ঘ পরিমাপযোগ্যহীন ছোটগল্প
প্রতিদিন ভস্মীভূত হয়ে গেলেও উল্কা এবং নক্ষত্র
এ শীতে গোধুলিতে আজও যেনো কিছু চাই