শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬

সৌরভ মজুমদার



সৌরভ মজুমদার

না পারার কথা

সময় এর নির্যাসে অনায়াস কলকাকলি,
এখনোও অধরা তবু,
না পারার কথা যত, ভরা সভাগার এ !

মানসতীরে কত ঢেউ,
অজানা উজানস্রোত এ ভিজে শব্দেরা ফিরে যায়,
'জনই বা তা জানে !

বৃষ্টিরাতে আলোর ঝিলিক থেমে গেলে, দীর্ঘ
কালো ছায়াপথের অন্দরে,
অসফল কথাদের হারিয়ে যাওয়া একটু একটু ক'রে । 

সারারাত জেগে জেগে
সাজিয়ে নেওয়া ছিল তবু,
আমার না পারার কথাগুল ভোরবেলাতে,
ভাষাহীন হাত রাখে তোমার দরজায় ।। 
-----------------------------------------------------------------------------------                           





ইচ্ছে
ইচ্ছে ডানায় ভর করে
এক ইচ্ছে নদীর পাড়ে,
পৌঁছে গেলাম ইচ্ছে ভেসে
কতই গল্প শুনব বলে ।

নদীর গল্প, জল এর গল্প
স্রোতের গল্প যত,
ইচ্ছে হলেই ইচ্ছে মত
কেবল শুনতে থেকো ।

ইচ্ছে যদি না পায় ভাষা
ইচ্ছে স্মৃতির পাতায়,
ইচ্ছে যদি সচল থাকে
আমার লেখার খাতায় ।

ইচ্ছে হতেই, ইচ্ছেকন্যা -
ইচ্ছেপুরুষ বলে,
হাট এর মাঝে একলা হব
তোমায় সঙ্গে নিয়ে ।।
---------------------------------------------------------------------------------------------------
         




মাটির কথা
কথাটা তোমাকে নিয়েই অথবা কথাটা মাটির সাথে,
ছোট এক হলুদ পাতার, দমকা হাওয়ায় ভেসে ঝরে পরা
মাটিরই বুকে, কাঠবিড়ালের সাথে খেলার শেষে ।

মাটি তো শুধু নরম চাষজমি বা রুক্ষ টাড় ভূমি নয় 
এটুকু বলতেই, বুকের ভেতর দামামা, চোখে ইতিহাস 
মাটি হল যুদ্ধসন্ধি, ঝড়বৃষ্টি, জলকাদা পাড়ে এক আরাম আশ্রয়

মাটির খোঁজে কেটেছে বছর, মাস, দিনরাত্রি, প্রতি পরিযানে,
সারাটা সময়, জীবনের জল ছেঁচে এনে ঘড়ির কাঁটায়,
পরম আগ্রহে, অস্থিরতায়, কথকতায় কিম্বা নিতান্ত অবহেলায় ।

অবহেলা বললেই জমাট কুয়াশাযাপন, রৌদ্রস্নান দ্বিপ্রাহরিক
রাজপথে, আদিম বন্যতার খর অনুভব পাক দিযে ওঠা
মনেরই অলিন্দে, নিজেকে একশো প্রশ্ন, ভাল আছি কি !

ভাল নেই, তবু জানি তুমি আছ তো; রক্তরাতে, মাটি হয়ে
ভোরের আলোয়, মেঘভাঙ্গা রোদ্দুর আমার বাদলবেলায় ।।
---------------------------------------------------------------------------------------------





সপ্নপুঁজি
আমার কি আর আছে ?
সযত্নে আড়াল করার,
তোমার দাবীর কাছে ।

একটা দুটো কষ্ট ফানুস
যন্ত্রণা ক্ষন, দীর্ণ মানুষ
ছবির মতো খোঁজেই যদি,
তোমার চোখের আড়াল খানি,
সাড়া না দেয় ডাকে ।

আনন্দ তো ভাগ করেছি,
ব্যর্থতা আর কান্না টুকু,
গভীর ঘুমে সঙ্গোপনে
মনের অতল খাদের ভিতর, থাকেই যদি
আর যদি না জাগে ।

সপ্নপুঁজি যত,
অকাতরে বিলিয়ে ছিলাম
তোমার মনের মতো,
অন্তরালেই ব্যথাপুঞ্জ,
দুঃসপ্ন কত ।।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------






তোকে
তোকে বলারই ছিল -
কবিতার ভিতর দিয়ে জীবনের কথার শুরু
এই অফুরন্ত অবেলায়, অবকাশ অশেষ, নির্জনে । 

যা তোর অজানা, বা আমিই জানতে দিইনি কারন
অভাব, জানতে চাওয়া মানুষের খুব, আজ পৃথিবীতে
সময় কোথায় এতটা সবার, ধৈর্যই বা কোথায় !

আমিকেই হতে হয় কথকঠাকুর, নিজের বোধের কাছে
রাতের সব তারারা আর থাকে না
এখন দিনের আলোর গভীরে ।

তারা খোসে যায় অবিরত, নিজেকে
নিঃশেষ করে করে, একটা দুটো
এই ছায়াপথেরই একদম ওপারে

কিম্বা সহস্র আলোকবর্ষ দূরে -

সেই কালোয় সেই আলোয় সেই নিরালায়
যত কথা তোর সাথে, এবং আমার
সমস্ত ভাবনায়, তোকে জড়াবারই ছিল 

কবিতার ভিতর দিয়ে  ।।

----------------------------------------------------------------------------------------------





চতুর্দশপদী ০০১
--------------------------------------------
মনে আছে তোর
মনে আছে তোর, সেদিনের কথা ভালো 
খেলার বেলায় তুই যে বালিকা বৃষ্টি,
জল ধারাপাতে অক্ষর লিখি কপোলে 
ও মেয়ে, তুই মেঘ হয়ে গেলি কেমনে - 
বাষ্পশয্যা পাতা হবে বুঝি আজিকেই !
খোলা আকাশের আঙিনায় সাজসজ্জা,
কবোষ্ণ তুই, আগুনই ধরতে চাস
গলে যেতে যেতে শরীরবিন্দু ধারায় । 
শাখা প্রশাখায়, অলিতে গলিতে জল 
ওই মেয়ে তোর চোখ কেন ছলছল  
ওই মেয়ে, তুই আমার আকাশ হবি । 
নিংড়ে আনবো দাবানল এই ভোরে
নিজের কোটরে ধরবি প্রথম সূর্য 
সাগর হাসবে ভ্রূণক্লান্তির ওপারে ।।

-------------------------------------------------------------------------------------------
সৌরভ / ২০১৬                                                   
-------------------------------------------------------------------------------------------