সৌরভ মজুমদার
না পারার কথা 
সময় এর নির্যাসে অনায়াস কলকাকলি,
এখনোও অধরা তবু,
না পারার কথা যত, ভরা সভাগার এ !
মানসতীরে কত ঢেউ, 
অজানা উজানস্রোত এ ভিজে শব্দেরা ফিরে যায়,
ক'জনই বা তা জানে !
বৃষ্টিরাতে আলোর ঝিলিক থেমে গেলে, দীর্ঘ 
কালো ছায়াপথের অন্দরে, 
অসফল কথাদের হারিয়ে যাওয়া একটু একটু ক'রে ।  
সারারাত জেগে জেগে 
সাজিয়ে নেওয়া ছিল তবু,
আমার না পারার কথাগুল ভোরবেলাতে,
ভাষাহীন হাত রাখে তোমার দরজায় ।।  
-----------------------------------------------------------------------------------                           
ইচ্ছে 
ইচ্ছে ডানায় ভর করে 
এক ইচ্ছে নদীর পাড়ে, 
পৌঁছে গেলাম ইচ্ছে ভেসে
কতই গল্প শুনব বলে । 
নদীর গল্প, জল এর গল্প 
স্রোতের গল্প যত,
ইচ্ছে হলেই ইচ্ছে মত 
কেবল শুনতে থেকো । 
ইচ্ছে যদি না পায় ভাষা 
ইচ্ছে স্মৃতির পাতায়, 
ইচ্ছে যদি সচল থাকে 
আমার লেখার খাতায় । 
ইচ্ছে হতেই, ইচ্ছেকন্যা -
ইচ্ছেপুরুষ বলে,
হাট এর মাঝে একলা হব 
তোমায় সঙ্গে নিয়ে ।। 
---------------------------------------------------------------------------------------------------
মাটির কথা 
কথাটা তোমাকে নিয়েই অথবা কথাটা মাটির সাথে, 
ছোট এক হলুদ পাতার, দমকা হাওয়ায়
ভেসে ঝরে পরা 
মাটিরই বুকে, কাঠবিড়ালের সাথে
খেলার শেষে । 
মাটি তো শুধু নরম চাষজমি বা রুক্ষ টাড় ভূমি নয়  
এটুকু বলতেই, বুকের ভেতর
দামামা, চোখে ইতিহাস  
মাটি হল যুদ্ধসন্ধি, ঝড়বৃষ্টি, জলকাদা পাড়ে এক আরাম আশ্রয় ।
মাটির খোঁজে কেটেছে বছর, মাস, দিনরাত্রি, প্রতি পরিযানে,
সারাটা সময়, জীবনের জল ছেঁচে
এনে ঘড়ির কাঁটায়,
পরম আগ্রহে, অস্থিরতায়, কথকতায় কিম্বা নিতান্ত অবহেলায় । 
অবহেলা বললেই জমাট কুয়াশাযাপন, রৌদ্রস্নান দ্বিপ্রাহরিক 
রাজপথে, আদিম বন্যতার খর
অনুভব পাক দিযে ওঠা 
মনেরই অলিন্দে, নিজেকে একশো
প্রশ্ন, ভাল আছি কি ! 
ভাল নেই, তবু জানি তুমি
আছ তো; রক্তরাতে, মাটি হয়ে 
ভোরের আলোয়, মেঘভাঙ্গা
রোদ্দুর আমার বাদলবেলায় ।। 
---------------------------------------------------------------------------------------------
সপ্নপুঁজি 
আমার কি আর আছে ?
সযত্নে আড়াল করার,
তোমার দাবীর কাছে । 
একটা দুটো কষ্ট ফানুস
যন্ত্রণা ক্ষন, দীর্ণ মানুষ
ছবির মতো খোঁজেই যদি, 
তোমার চোখের আড়াল খানি,
সাড়া না দেয় ডাকে । 
আনন্দ তো ভাগ করেছি, 
ব্যর্থতা আর কান্না টুকু, 
গভীর ঘুমে সঙ্গোপনে 
মনের অতল খাদের ভিতর, থাকেই যদি
আর যদি না জাগে । 
সপ্নপুঁজি যত,
অকাতরে বিলিয়ে ছিলাম
তোমার মনের মতো,
অন্তরালেই ব্যথাপুঞ্জ,
দুঃসপ্ন কত ।। 
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
তোকে 
তোকে বলারই ছিল - 
কবিতার ভিতর দিয়ে জীবনের কথার শুরু
এই অফুরন্ত অবেলায়, অবকাশ অশেষ, নির্জনে ।  
যা তোর অজানা, বা আমিই জানতে
দিইনি কারন 
অভাব, জানতে চাওয়া মানুষের খুব, আজ পৃথিবীতে
সময় কোথায় এতটা সবার, ধৈর্যই বা কোথায়
! 
আমিকেই হতে হয় কথকঠাকুর, নিজের বোধের কাছে 
রাতের সব তারারা আর থাকে না 
এখন দিনের আলোর গভীরে । 
তারা খোসে যায় অবিরত, নিজেকে
নিঃশেষ ক’রে ক’রে, একটা দুটো,  
এই ছায়াপথেরই একদম ওপারে 
কিম্বা সহস্র আলোকবর্ষ দূরে - 
সেই কালোয় সেই আলোয় সেই নিরালায়
যত কথা তোর সাথে, এবং আমার
সমস্ত ভাবনায়, তোকে জড়াবারই
ছিল  
কবিতার ভিতর দিয়ে  ।। 
----------------------------------------------------------------------------------------------
চতুর্দশপদী ০০১ 
--------------------------------------------
মনে আছে তোর 
মনে আছে তোর, সেদিনের কথা
ভালো  
খেলার বেলায় তুই যে বালিকা বৃষ্টি, 
জল ধারাপাতে অক্ষর লিখি কপোলে  
ও মেয়ে, তুই মেঘ হয়ে
গেলি কেমনে -  
বাষ্পশয্যা পাতা হবে বুঝি আজিকেই ! 
খোলা আকাশের আঙিনায় সাজসজ্জা, 
কবোষ্ণ তুই, আগুনই ধরতে চাস 
গলে যেতে যেতে শরীরবিন্দু ধারায় ।  
শাখা প্রশাখায়, অলিতে গলিতে
জল  
ওই মেয়ে তোর চোখ কেন ছলছল   
ওই মেয়ে, তুই আমার আকাশ
হবি ।  
নিংড়ে আনবো দাবানল এই ভোরে, 
নিজের কোটরে ধরবি প্রথম সূর্য  
সাগর হাসবে ভ্রূণক্লান্তির ওপারে ।। 
-------------------------------------------------------------------------------------------
সৌরভ / ২০১৬                                                   
-------------------------------------------------------------------------------------------
