শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬

শর্মিষ্ঠা ঘোষ



শর্মিষ্ঠা ঘোষ

খুল্লমখুল্লা
খামখা উঁকিঝুঁকি মেরে চোখ খারাপ করছেন, মশাই
এই তো খুল্লমখুল্লা আপনার গুষ্টির তুষ্টি করছি
সবার নাকের ডগায় তাই তাই করে বেড়াচ্ছি
আপনার স্বাত্তিক মন রামো রামো বলে আঁতকে উঠবে
ধর্ষকামী আনন্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে আপনার চোরের মত আচরণে
তারচেয়ে প্রকাশ্যে চার্জ করে দেখুন, কতবার তোতলাই
চোখ পাকিয়ে বলুন, কার কার সাথে ফষ্টিনস্টি করে বেড়াই
কলার ধরে জানতে চান, আপনার পাকা ধানে কহাত মই দিলাম
তা না চুহাবিল্লি খেলে ক্রমাগত রগড় উৎপাদন করছেন
আপনার আভিজাত্যে ছিট ছিট তুচ্ছতা ববিপ্রিন্ট হয়ে যাচ্ছে
আমার মত মিসক্যারেজকে হ্যান্ডেল করতে সুগার বাড়িয়ে ফেলছেন
প্রেশার ছিটকে বেরচ্ছে সবার সাথে অভব্য আচরণে
দেখুন, আমি কিন্তু আপনাকে তাও করুণাই করছি
আপনার শরীর মনের যথাবিহিত মঙ্গল কামনা করছি
ঘোমটা খুলে উঠোনে নামুন, কয়েক পাক খেমটা নাচুন
আমার সাথে, কাবাডি খেলুন কিম্বা দান কয়েক লুডো
দেখবেন, আমি ব্যাপারটা একেবারে জলবৎ তরলং
এটা আসলে একটা মামুলী ভাব-ভালোবাসার গল্প
একটা পাকাপোক্ত ম্যানিফেস্টো যাতে বলা আছে
আপনি না চাইলেও এসবই ঘটবে আপনাকে ঘিরে
আপনি বলতে বাধ্য হবেন,মরুক গে, গোল্লায় যাক। 


অপশন
বরং নীরব হওয়া যাক আমাদের অনন্ত সংকট সম্পর্কে
বরং কিছু খেলনাপাতি সাজাই এবং ইচ্ছে হলে ভাঙি
বরং কিছু গুরুত্বহীন দাঁত কেলানো রপ্ত করে ফেলি অপূর্ব উত্সাহে
আশ্রয় খুঁজে নেওয়া যাক তাৎক্ষণিক ভার্চুয়াল ছেনালিতে 

চুপ থাকার ফিরিস্তি রোজ জমা হয়, ইতিহাস একটি চলন্ত কচ্ছপ


তুই
তুই নাকি নদীর চেয়েও সোজা
তুই নাকি পলাশ শিমুল প্রেমিক
যদি তুই চিনতি আমায় তখন
জানি ঠিক মুখ ফিরিয়েই যেতি
নিছকই সাদায় কালোয় ছিলাম
সে আমার নোলক পরা বিষাদ
তোর যত বিরাগ কাছে ঘেঁষার
আমাকেই পর্ণমোচী ভেবে
তো আমার জলুস যতটুকুই
সেতো তোদের ঠিকরে পড়া
ও আলোর প্রিজমখানি ছুঁয়ে
আমি সামনে দাঁড়াই তোদের


আফসোস
কাজ থেকে কাজে ঝাঁপ দিতে পারলে এত ডানদিক বাঁদিক থাকে না তখন এক নাকবরাবর কলে ঝুলন্ত কর্মের জিলিপি প্যাচ তার সাথে সম্পৃক্ত স্বীকৃতি নামক রস জবজবে জিভেগজা আপনি টের পাবেন না কিভাবে কিভাবে আপনি অ্যাডিক্টেড হয়ে পড়ছেন আপনি খুব সরল এবং ন্যাকা সেজে থাকতে থাকতে টের পাবেন একটি ঘূর্ণিপাকের কেন্দ্রে বসে আছেন চোখ বুজে ধ্যান করছেন না ঘুমচ্ছেন বুঝে ওঠার আগেই পাইরেট শিপ আপনাকে আকাশে তুলে দিয়ে আবার লুফে নেবে আপনি এনজয় করছেন ভয়  নিজের এবং অন্যের প্রাণপণে গুছিয়ে থাকতে চাইছেন না, পারবেন না, একদম পারবেন না আপনাকে দেখে যে প্রতিবেশীর ঘুম উধাও হয়েছে আপনি তার জন্যও দুঃখ পাবেন আপনি মূলত সদাচারী ক্ষণিক পতনের ধারা বিবরণী লিখতে গিয়ে অজান্তেই আপনার জন্য একটি চুক চুক  আফসোস লিখে ফেলবে কলম আপনি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক যাবতীয় উত্থান পতনের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে আপনি স্বাধীন থাকেন জীবনে এবং চেতনায় চালিয়ে যান নিজের কাছে নিজে ধরা খাবার আগ পর্যন্ত তারপর অন্য আরেকটি অধীনতামূলক মিত্রতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন না হয় এটাই হয়ে আসছে লজ্জার কিছু নেই আফসোস, হিরোগিরির বাতিক আপনার এখনো যায় নি এই অভ্যেসটির কাছে আপনি নিতান্তই পরাধীন রয়ে গেলেন


রেল
চোখ একটি ন্যাকাবোকা অরগ্যান ভাবতাম এককালে একদিকে বয়ঃসন্ধি ভাঙচুর আরেকদিকে ময়ূরকন্ঠী রংবদল ঘিরে ধরছে পুরোনো ভালোলাগায়, খুনসুটিগুলো আদতে প্রেম হয়ে উঠছে, চোখ সবার আগে গদ্দারি করছে আমার সাথে এ বাবা, একে না সেদিনই আগুনঝরা চোখে নস্যাৎ করেছি, আজ তাকে দেখেই নতমুখী আদুরে বেড়ালটি হয়ে উঠেছি নিজেকে লজ্জা দিয়ে তারপর দেখি কালক্রমে দুই চোখের মাঝখান দিয়ে স্বপ্নের ন্যারোগেজ লাইনে চলছে স্কুলবেলার রেলকম ঝমাঝম তার এক কামরায় ফিজিক্স বইএর মলাটে লুকোনো রুশদেশী রূপকথা ভেস্টিবিউল দিয়ে যাতায়াত করছে শতাব্দীর সেরা প্রেমের কবিতা রোম্যান্স নিয়ে হা ডু ডু করতে করতে পথে সাইকেল আটকে দাঁড়ানো অপরিচিত যুবকটি খোঁজ করে উঁচু ক্লাসের দিদির দিদির বাবা পুলিশ অফিসার ভয়ে বদলে ফেলি রুট আফসোস করি, হায়, এখনো তেমন ডাগর হইনি, যতটা হলে হ্যাপি প্রিন্স হাঁটু মুড়ে প্রোপোজ করে এখন সিঁথিতে বিকেল বেলার ব্রডগেজ
গাদা ভুলের মালগাড়ি দুলকি চালে কু ঝিকঝিক সিগন্যালে পতাকা নাড়ছে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা ঝাড়ি মারছি একবার আপ একবার ডাউন লাইনে পেরোবো কি পেরোবোনা করতে করতে লাল হয়ে গেল বাতি অগত্যা রেল লাইনে গলা দিচ্ছি, মাথা দিচ্ছি না