বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬

অদিতি চক্রবর্তী




অদিতি চক্রবর্তী

ডাকনাম

ভিড়ের মানুষ হয়েছি সেদিন থেকে
বেয়াক্কেলে কর্পোরেট খেলায়
ধুত্তেরিকা আমার কুহু মাতন
একলা থাকার নিষিদ্ধ বারবেলায়।
কান শুনে যায় বেলোয়ারি রিনঠিন
দুই-বাই-তিন টেবিলে হাতের ওম
লালদীঘিতে উপচানো জল নেই
দরবেশে হাঁটি বুগিয়ালে দু'কদম।
প্রেত হয়ে যাই লিথোগ্রাফিক প্লেটে
কবিতাবতীর মণিটারে সিকিভাগ
পরেরটুকু বড্ড বেপরোয়া
হোকাস-ফোকাস-লাগ-ভেল্কি-লাগ।
কথা ও কাহিনী এখনো যেটুকু জেগে
জেব্রা ক্রসিং-এ বদ্ধ বিহঙ্গমে
মৃত শিশিরের বোঝাপড়া আরো আরো
রোদ চুমুকে চলকে তেহাই সমে।
ভিড়ের মানুষ মালুম সেদিন থেকে
কবেই চুরি তোর দেওয়া ডাকনাম
বুজগুড়ি সুখ উঠল হঠাৎ জেগে
টুকাই ডাকলি তুই, আমি তাকালাম।







আনি মানি জানিনা   
****************
ঝিলের শালুকে রণপা-এ হাঁটে প্রেম
প্রেম শীতের সকালে নরম হলুদ চায়
চাওয়ার পানসি উল্লাসে কাম গেলে
গিলে উগরায় কমলা ঠোঁটের খোসায়।
খোসা তাপ বাঁধে বীজের রুক্ষ বুকে
বুকে জড়ো হয় যত্নে কিছুটা 'তা'
তা' -এ ক্রমাগত রসের ঘণিয়ে ওঠা
ওঠে ইকিরমিকিরে হাটখোলা কথকতা।
কথকতা খেলে কাছ থেকে আরো দূরে
দূর মানে তো অশ্রুফোঁটা ঘর
ঘর হেঁটে যায় চৈতী গাছের ডাল
ডালে চাঁদ উঁকি দগ্ধ বুকের ওপর।
ওপর পাতা টি নেহর জমায় রাতে
রাত বাড়তেই অভ্যাসে কাছাকাছি
কাছাকাছি ক্ষণ আনি মানি জানি না
না এর পসারে ইদানিং বেঁচে আছি।






ছন্দপতন
**********
রান্নার পর সমস্ত কলঙ্কচিহ্ন নিয়ে আগলে বসে আছে গ্যাস ওভেন টা।
হঠাৎ শিরশিরে হাওয়া দিল।
ফ.. র.. ফ.. র .. লেখার পাতার পিছু ছুটলাম,
এঁটো কুটো কাটা মেখে কী আনন্দ!
আমার তো এইমতো ভঙ্গীর সাথেই সহবাস
ভবিতব্য তুমি গড়ো অন্য কিছু চাপিয়ে দিয়ে
বস্তাপচা মূল্য নিয়ে আমার গড়ন বিচার করো
আমি যে আমার পেছনে ছুটি...
তাতে কার কিবা যায় আসে?
আমি কি তোমার ছন্দপতন তোমার বিচার সর্বনাশে?
কসরতেই থাকব যদি, আজ তবে আর সমঝোতা নয়
তুমি আমার ছন্দপতন
আমার বাঁচার স্বর বিনাশে
ওগো তোমরা আমার ছন্দপতন
আমার বিচার স্বর বিন্যাসে।







আগমনি   
**************
সোহাগ এসেছে বলে সুরভিত রাত
বেহিসাবি ভুলে লেগে আছে মধুময়
পরিযায়ী রাতে নামা চেনা অজুহাত
আধফোঁটা ছুঁয়ে থাকে বিগত সময় ।
ভাবনা চোঁয়ায় কড়িকাঠে ভুঁইফোঁড়
খরস্রোতা নদীজল উপচায় বাঁধ
আলাপী আঙুলে রাতজাগে নেশাখোর
খেয়ালি সময়চাকা অভূত প্রবাদ ।
মননে বিষুবরেখা মরশুমি হাসে
ভিজে যায় অকথিত যত ভাঙচুর
ঝাপসা জানালা কাঁচে ফ্যাকাসে ইজেল
নাবাল ভূমিতে বাজে আগমনি সুর ।
পাপোশে -তে পড়ে প্রেম নিভৃত যাপন
মাঝ বিছানায় দেখি অবেলা শ্রাবণ।







ভোলামন.
*****************
ভুল বীজে ভুল চারাতে ফুটেছে ভুল
ভুল লগি দিয়ে ভুল ফুলে মারি টান
ভুলের অসুখে বেভুল সুখের রোজ
ভুল সুরে গাই ভুল ভাঙানিয়া গান।
ভুল করে তোর ডাকনাম ভুলে থাকি
ভুল ঠিকানায় ভুল রঙে উড়ো খাম
ভুল বুঝে তুই ভুলপথে যেই দিন
সেদিন থেকেই শেষদিন চিনলাম।
ভুলেও তো তবু ভুলতে পারিনি তোকে
চোখ ভুলে যায় চোখমেলা দিনকাল
কতটুকু ভুল মাসুলে নগদ দিলি?
কি ছিল সে ভুল, যে ভুলে আমি নাকাল !
ভুল, ভুল নয়, ঠিক যা নেহাৎ ভুল
ওরে ভোলামন ভুল শুধু ভাঙে কুল।






কড়িখেলা  
************
ইচ্ছেফুলে লেপ্টে থাকা ইচ্ছারেণু মাখব বলে
যেইনা গাঁথা খোঁপার চুলে
ওমনি এলোকেশী !
এমন সময় একী--
তুমিও কেমন দু'আঙুলে চিবুক তুলে
বাড়িয়ে দিলে অধর
ধরা পড়বি তো পর বাবার চোখেই ?
লাল চোখ সেই দারোগাবাবু
পাঁচটি আঙুল রগড়ে দিতেই
হাত পাঁকড়ে ধাঁ নিমেষেই
কিন্তু আমার কপাল ভালো
বাইরে সেদিন তারার আলো
তারার ঘরের পলেস্তারায় চূণ খসে না
যদিও নোনা ...!
রং-বাহারী টেবিল কোণে উল্টানো গ্লাস
চারদিকেতে দুধসাদা ফ্রীল পর্দা ওড়ে
ঘর থেকে ঘর অনেক দূরে
আসছি বলেই হাত দু'খানি ছাড়িয়ে নিলে
চোখ চেয়ে সেই অবাক চাওয়া পর্দা পানে ।
প্রহর প্রহর ওষ্ঠ আসে অধর হাসে
বালিশ তখন ডুব শ্রাবণের পলাশ মাসে
ইচ্ছেফুলে লম্বা বেণী সাজিয়ে রাখি
লালঠোঁটে আর চুমকি টিপে কালবোশেখি
আঁচলের গান চন্দ্রবোড়া সাপের ফণা
শাপান্ত দি ত্রিফলা প্রেমের কী যন্ত্রণা !
লজ্জাকুঁড়ি ভেঙে যে প্রেম ফুল ফোটাল
সে প্রেম কিনা টোটেম হতেই বিধান দিলো
আজ দেখেছি মেলার মাঠে মাইক হাতে
হোককলরব জনস্রোতে
লম্বা মালায় গর্বিত মুখ, সিঁদুর টিকা
মাগো, আমার পাল্টে দিবি ললাট লেখা ?
জয়মা বলে কসাই হবো
এক কোপে তার ঘাড় খসাবো
তারপরে ওই ইচ্ছেফুলে রাঙিয়ে নেবো
জখম কথার রাগ-রাগিনী
নাকের পাটায় দানাপানি
জুগিয়ে যাবে প্রেমিক সর্বনাম
জানো, আমার নিপাত যাবার শখটির নাম

কড়িখেলা রাখলাম।