বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়





কবিতাউৎসব: বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ অনেকটাই লম্বা পথ পারি দিয়ে আজ এই অন্তর্জাল সাহিত্যপত্রের দরিয়ায় এসে মিশেছে। বিগত ছয় সাত দশক খুব কাছে থেকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের স্বাধীনতাত্তোর ক্রমবিকাশকে দেখার সুযোগ হয়েছে আপনার। সেই প্রেক্ষিতে বর্তমানের অন্তর্জাল ভূবনের দিগন্তে বাংলা সাহিত্যের এই নতুন উদ্ভাসনকে কিভাবে পর্যবেক্ষণ করেন আপনি?

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়: অন্তর্জাল সাহিত্য বলে আলাদা কিছু তো হয় না তবে প্রকাশমাধ্যম হিসাবে অন্তর্জাল আজ অপ্রতিরোধ্য যায়গায় চলে এসেছে সাহিত্য আর তার থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবে কি করে ? অন্তর্জালের কল্যানে নিশ্চিতভাবেই বাংলা সাহিত্যের পরিমানগত বৃদ্ধি বিপুল বিপণন এখন অনেক বেশি সহজসাধ্যঅজস্র বাংলা ওয়েব পত্রিকার সাহিত্যপ্রয়াস দ্রুত পৌছে যাচ্ছে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বিপুলসংখ্যক পাঠকের ঠিকানায় লেখক তাঁর সৃষ্টির পাঠপ্রতিক্রিয়াও জানতে পারছেন চটজলদি সেই বিপুল সাহিতসৃষ্টির গুণগত মান কেমন সে অবশ্য অন্য প্রসঙ্গ তবে আমি দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করি অন্তর্জাল এখনও মুদ্রিত বইএর বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি। কোনদিন পারবে কি না আমার সংশয় আছে ছাপা বইএর গন্ধ কি কম্পিউটারের কি বোর্ড বাহিত অক্ষরে পাওয়া যায় ? মলাটবদ্ধ বই কেনা বা আলমারি থেকে বেরকরে বইপড়া, সংগ্রহে রাখা আর বারবার পড়ার তৃপ্তি কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোনের পর্দা দিতে পারে না, পারবে না কোন দিনই আমার কাছে অন্তর্জাল এখনও সাহিত্যপাঠের একটা চটজলদি বন্দোবস্ত।

হ্যাঁ, স্বাধীনতা-উত্তর কাল থেকে আজকের অন্তর্জাল সাহিত্য আঙ্গিনা পর্যন্ত পথচলা – অনেকটা পথ, সাতটি দশককে ফেলে আসা সে পথে অনেক ভাঙা-গড়া, অনেক বাঁকঅনেক উথাল-পাথালেরও সাক্ষি সে পথ আমার মত যারা স্বাধীনতার কয়েকবছর আগে জন্মেছেন, তারা স্বাধীনতা-উত্তরকালে সাহিত্যের কাছে আসা প্রথম প্রজন্মের মানুষ তো সেই প্রথম প্রজন্মের আমরা বাংলা সাহিত্যের যে উত্তরাধিকার পেলাম তার সূত্রপাত আরো অন্তত দুটি দশক আগে। শেষ পর্বের রবীন্দ্রনাথও তখন বদলাচ্ছেন বাংলা সাহিত্যের রবীন্দ্রপ্রভাব বলয়ের চৌকাঠ পেরনো শুরু হয়েছল তিরিশের দশকে ‘কল্লোল,‘কালিকলম, ‘পরিচয়পত্রিকার হাত ধরে আধুনিক নগর জীবনের সংশয়, ক্লান্তি, বিতৃষ্ণা, মূল্যবোধের বিপর্যয়, নিঃসঙ্গতা বোধ ও বিশ্বাসের সংকট এইসব ছিল সেই সাহিত্যধারার উপকরণ ১৯৩০এ জার্মানীতে হিটলারের উথ্বান,ফ্যাসিবাদর মানবতা বিরোধী আগ্রাসন, ২য় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠা ১৯৩৬এ রবীন্দ্রনাথের পৌরহিত্যে  কলকাতায় প্রগতি লেখক সঙ্ঘের প্রথম সম্মেলন। এ দেশে তখন এক তোলপাড় করা সময়। বিয়াল্লিশের আগস্ট বিপ্লব, তেতাল্লিশে মানুষের তৈরি করা মন্বন্তরে কলকাতার রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল, গণনাট্য সঙ্ঘের প্রবল আবির্ভাব, ডাক ও তার ধর্মঘট, ছেচল্লিশের নৌ বিদ্রোহ, দাঙ্গা, সাতচল্লিশে দেশভাগ ও ছিন্নমূল উদ্বাস্তু স্রোত। এই উত্তাল সময়ের আবহে বাংলা সাহিত্য আর শুধু কলা কৈবল্যবাদীথাকে কি করে? থাকলো না, বিষয় ভাবনায় এলো আমূল পরিবর্তন। এই সাহিত্যধারার মূল কথা ছিল এই যে, সে শোনাবে সময়ের শব্দ, তার শরীরে থাকবে গণ মানুষের জীবন। সাহিত্যে থাকবে সহজ আবেদন, সমাজ বাস্তবতা ও সদর্থক আশাবাদের চিত্রকল্প, তার দায় নতুনতর এক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখানো।

পঞ্চাশ পরবর্তী সময়কালে সত্তর দশক পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে জীবনবাদী আশা-আকাঙ্খ্যা আরো বিচিত্র বিন্যাসে সমৃদ্ধ হল। এবং তারপর। তারপর মধ্যআশি থেকে বিশ্বায়ন নামক একটা শব্দ বদলে দিতে শুরু করলো আমাদের যাপনচিত্র,আমাদের সমাজের বাঁধন আর মূল্যবোধগুলি। আমাদের সমাজটাও যেন হয়ে গেল স্থির বদ্ধ জলাশয়ের মত। উথাল-পাথাল তো দূরের কথা সামান্য ঢেউও ওঠে না। ভাঙছে কিন্তু গড়ছে না। সমাজ যেমন তার সাহিত্যও তেমন। আমাদের সাহিত্যও অতয়েব হয়ে উঠলো নিজের জন্য বাঁচা আর একা একা বাঁচার আত্মযুদ্ধের ক্লান্তিকর ছবি। অন্তর্জালে তাই আপাতত বিশ্বায়ন ও পণ্যায়ন জাত সাহিত্যেরই চাষ-আবাদ। ব্যতিক্রম সামান্যই। আমার পর্যবেক্ষন এমনই।



কবিতাউৎসব: অনেকেই বলে থাকেন বাংলাসাহিত্যের আতুঁড় ঘর হলো লিটলম্যাগাজিন। আপনার সুদীর্ঘ কর্মজীবনে এই লিটিল ম্যাগ আন্দোলনের সাথেও খুব নিকট যোগ আপনার। সেই লিটিল ম্যাগ আন্দোলন অন্তর্জালে সাহিত্যচর্চার বিপুল উন্মাদনায় কতটা প্রাসঙ্গিক থাকবে বলে আপনার ধারণা।

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়: লিটল ম্যাগাজিনধারণাটার শুরু হয়েছিল মধ্যপঞ্চাশ থেকেপ্রয়াত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় ১৯৫৩তে ‘কৃত্তিবাস’এর প্রকাশ থেকেই লিটল ম্যাগাজিনের পথচলার শুরু তারপর শহরে, গ্রামে-গঞ্জে অসংখ্য পত্র-পত্রিকার প্রকাশ অ-ব্যবসায়িক এই সব ছোট পত্রপত্রিকাগুলি হয়ে উঠলো বাংলা সাহিত্যের গর্ভগৃহ এখনও তাইই এটা মনে করা খুবই ভ্রান্ত বলে আমি মনে করি যে, অন্তর্জালএর সামাজিক পরিসরে সাহিত্য চর্চার বিপুল উন্মাদনায় মুদ্রিত ছোট পত্রিকাগুলির প্রাসঙ্গিকতা শেষ হয়ে গেছে বা তা বিপন্ন হয়েছে  আমি একথাও বিশ্বাস করি যে অন্তর্জাল পত্রিকা কখনোই মুদ্রিত পত্রিকার বিকল্প হতে পারেনা  ওয়েব পত্রিকায় একটা চটজলদি ব্যাপার আছে  পাঠকের একটা গল্প বা কবিতা পড়ার তৃপ্তি অনেকটাই তাৎক্ষণিক, ওয়েব পত্রিকায় তারা একটা ভাল গল্প বা কবিতা কদাচই বারবার পড়েন পাঠকের ইচ্ছা হল আলমারী থেকে পত্রিকা বের করে তার ভালো লাগা কবিতা আবৃত্তি করলেন বা গল্পটা আবার পড়লেন,  কিন্তু ওয়েব পত্রিকার ক্ষেত্রে এমনটি হবার নয়

হ্যাঁ, একথা ঠিকই যে একুশ শতকের শুরুতেই দশ/বারো বছরের মধ্যে ‘ব্লগ-বিপ্লব’ ঘটে গেছে ই-জিন, ওয়েবজিন, ব্লগজিন ইত্যাকার নানান অভিধায় অজস্র ওয়েব পত্রিকায় কবিতা, গল্প, মননশীল প্রবন্ধ, ভ্রমণ-লেখ প্রভৃতি সাহিত্যের সবকটি শাখারই বৈচিত্রপূর্ণ সমাবেশ আমরা দেখছি সংশয় নেই, এই বিপুল সাহিত্য-সমারোহের একটা প্রধান কেন্দ্র অন্তর্জালের অনন্য সামাজিক পরিসর ‘ফেসবুক’ তর্কের কোন যায়গা নেই যে এখন বাঙালির সামাজিক জীবনে তার সৃজনশীল মননে ‘ফেসবুক’এর প্রভাব অপ্রতিরোধ্য ও সর্বগ্রাসী। আমি এর সৃজনশীল দিকটিই দেখতে চাই। মানুষের সঙ্গে ভাবনা বিনিময়ের দিগন্তবিস্তারী পরিসর আর কবেই বা এমন উন্মুক্ত হয়েছে ! ফেসবুককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কত সাহিত্যগোষ্ঠী, প্রকাশিত হচ্ছে কত ওয়েব ভিত্তিক সাহিত্য পত্রিকা, ফেসবুক ব্যবহারকারীরাই যার টার্গেট পাঠক এমনকি বেশ কয়েকটি পুস্তক প্রকাশনা সংস্থাও গড়ে উঠেছে অনেক ‘ফেসবুক গ্রুপ’ ও  ওয়েব পত্রিকার মুদ্রিত সংখ্যাও প্রকাশিত হচ্ছে যার লেখকরা উঠে আসছেন ফেসবুক থেকেই ফেসবুক হয়ে উঠেছে অনেক ছোট মুদ্রিত পত্রিকার সাপ্লাই লাইনএতদসত্তেও থেকে আমি অন্তত মনে করি না অন্তর্জাল সাহিত্য-চর্চার বিপুল উন্মাদনা লিটল ম্যাগাজিন  আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতাকে বিপন্ন করতে পারে আমি দেখতে চাই ওয়েব মাধ্যম মুদ্রিত মাধ্যমের পরিপুরক হয়ে উঠুক অনেক ‘ফেসবুক গ্রুপ’ যেমন মুদ্রিত পত্রিকা প্রকাশ করছে, অনেক মুদ্রিত ছোট পত্রিকাও অন্তর্জালের সামাজিক পরিসরে তার উপস্থিতি জাহির করছে ‘ফেসবুক গ্রুপ’ বা ‘পৃষ্ঠা’ বানিয়ে আমার বিশ্বাস অদূর ভবিষ্যতে হয়তো অনেক ছোট মুদ্রিত পত্রিকা বা লিটল ম্যাগাজিনের অন্তর্জাল সংস্করণও দেখতে পাবো



কবিতাউৎসব: সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র সাহিত্যচর্চায় যে শৌখিন মজদূরী সম্বন্ধে আমাদের সচকিত করে দিয়েছিলেন, আজকের অন্তর্জাল সাহিত্যের হাটে সে কথা যেন আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে বলে মনে করেন অনেকেই। বাড়িতে আনলিমিটেড নেট, হাতে স্মার্টফোন বা কোলে ল্যাপটপ, হঠাৎ অবসর, ধরা যাক দু একটি শব্দ এবার। এই যদি সাহিত্যচর্চার সমকালীন প্রকরণ হয়ে দাঁড়ায় তবে তো সত্যই চিন্তার বিষয়। আপনার অভিমত।

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়: অন্তর্জালের সামাজিক পরিসরে প্রচুর লেখা হচ্ছে এবং তারমধ্যে প্রচুর আজেবাজে লেখা হচ্ছে সত্য এক্ষেত্রে সম্ভবত ফেসবুক নামক সামাজিক পরিসরে কবিতার প্রাচুর্যের কথাই বলতে চেয়েছো অন্তর্জালের সামাজিক পরিসরগুলি লেখককুলের শ্রেণী বৈষম্য মিটিয়ে দিয়েছে এখানে ‘আকবর বাদশার সঙ্গে হরিপদ কেরাণীর কোন ভেদ নেই’  সেটাই একমাত্র চিন্তার বিষয় এমন আমি মনে করি না চিন্তার বিষয় বাংলা সাহিত্যের সামগ্রিক অধোগামিতা তার সমাজ ও সময় বিচ্ছিন্নতা এবং সর্বোপরি তার ভাষার সঙ্গে অনাত্মীয়তাই চিন্তার বিষয় সাহিত্য তো সবটাই ভাষানির্ভরআমাদের দৈনন্দিন জীবনে সেই বাংলা ভাষাটার ব্যবহারিক প্রয়োগ এখন কতটা চিন্তাজনক সে সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল বিশ্বায়ন ও পণ্যায়ন আমাদের দিয়েছে অনেক, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও সযত্নে লালিত সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের শিকড়টাকেই আলগা করে দিয়েছে তাই যদি কেউ মনে করেন অন্তর্জাল সাহিত্যপ্রাচুর্যের মধ্যে শিকড়হীন সাহিত্যেরও যথেষ্ট চাষ-আবাদ হচ্ছে সেটাই বা মিথ্যা বলি কি করে ? সে সাহিত্যে এলোমেলো বিষয়ভাবনায় থাকছে না ভাষার সৌকর্য, ব্যকরণের অনুশাসন ও ভাবনার সমৃদ্ধি একেই বোধয় বলা যায় ‘সাহিত্যক্ষেত্রের নিরক্ষরতা’ভাষা ও সাহিত্যকে বিন্দুমাত্র জানার চেষ্টা না করা, পূর্বসুরিদের লেখা না পড়া এবং সমকালীন সমাজ ও সময়কে না জানাকেই আমি বলবো ‘সাহিত্যে ক্ষেত্রে নিরক্ষরতা’ কিংবা বলতে পারি জীবনানন্দ দাশের পংক্তি উদ্ধার করে

“ মানুষের ভাষা তবু অনুভূতি দেশ থেকে আলো
না পেলে নিছক ক্রিয়া, বিশেষণ;
এলোমেলো নিরাশ্রয়
শব্দের কঙ্কাল”

তবে সবটাই ‘না-সাহিত্য’ বা কিছুই হচ্ছে না বলে হতাশা প্রকাশে রাজি নই অভিজ্ঞতা বলছে ওয়েব পত্রিকাগুলি থেকে যে বিপুল সংখ্যক কবি, গল্পকার উঠে আসছেন তার গুরুত্ব তো অসীম আর ফেসবুকে কবিতার উৎপাদন ? সেক্ষত্রে বলি রবীন্দ্রনাথের সেই অমোঘ পংক্তি -

“... তোমার টানাটানি টিঁকবে না ভাই,
রবার যেটা সেটাই রবে”



কবিতাউৎসব: এই প্রসঙ্গে জানতে চাইবো জীবন ও জগৎ সম্বন্ধে যে প্রগাঢ় সমবেদনা সাহিত্যের সূত্রপাতের মূল উৎস, বর্তমানের ভোগবাদী দুনিয়ার এই উর্দ্ধশ্বাস ইঁদুর দৌড়ে সেই অনুভব আর কি আমাদের মধ্যে জায়মান আছে? আমাদের সাহিত্যবোধও কি অনেকটাই মোড়ক সর্বস্ব বস্তুবাদী হয়ে ওঠেনি? অনেকটাই বাজারদর ভিত্তিক? কি মনে হয় আপনার?

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়: সমাজ যেমন, তার সাহিত্যও তেমন আমাদের মূল স্রোতের সাহিত্য এখন আর জীবন ও জগৎ সম্পর্কে প্রগাঢ় সমবেদনার শব্দ শোনায় না, মানুষের বেদনার কেন্দ্রে হাত রাখে না, নতুনতর জীবনবোধের স্বপ্ন দেখায় না শোনায় শুধুই সুখী সুখী মানুষের নিজের জন্য, আজকের জন্য বাঁচার কথা শুধু সাহিত্যই বা কেন ? আমাদের চলচ্চিত্র, সংগীত, নাটক সবগুলি ক্ষেত্রেই তো পণ্যায়নজাত ভোগবাদী ভাবনার অনিবার্য জয়ধ্বনি ‘রক্তকরবী’ নাটকে অধ্যাপক ও নন্দিনীর কথোপকথনের অংশ মনে পড়েঅধ্যাপক নন্দিনীকে বলছেন “ আমরা যে মরা ধনের শবসাধনা করিতার প্রেতকে বশ করতে চাই সোনার তালের তাল-বেতালকে বাঁধতে পারলে পৃথিবীকে পাব মুঠোর মধ্যে” এখন পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় পেয়েছিএখন প্রেম, ভালোবাসা, সমবেদনা আর বিশ্বাস – সবই বিকোচ্ছে, আর ‘বাজার’ বন্দী আমাদের সৃজনভূমির সর্ব-অঙ্গ আমরা জানি না এই দম বন্ধ করা অবস্থাই আমাদের আগত অনন্তকালের ভবিতব্য কি না !

যদিও তেমন সংকেত নেই এখনও, তবু আশাবাদী হতে ইচ্ছে হয় যে বিশ্বাসের একটা ভিত্তিভূমির নির্মাণ হবে, যেখানে দাঁড়িয়ে সমাজ ও জীবনের প্রতি প্রগাঢ় সমবেদনার প্রতিভাষ দেখতে পাবো আমাদের সৃজনভূমির সর্ব অঙ্গে আর একবার অনুভব করবো ‘সহিত থেকেই সাহিত্য’



কবিতাউৎসব: আমাদের নাগরিক জীবনের অন্তঃসার শূন্যতা এবং দেশজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের সাথে শিকড়হীন সম্পর্ক বর্তমানের এই অন্তর্জাল সাহিত্যজগতে কতটা ও কিরকম প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন আপনি।

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়: এই প্রসঙ্গটি প্রথম ও তৃতীয় প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করেছি বিস্তারিতভোগবাদের তাত্বিক ভিত্তিভূমিই হল আজকের জন্য বাঁচা আর নিজের জন্য বাঁচার মন্ত্র পাঠ করানো কোন রাখঢাক না রেখেই বিশ্বায়ন ও পন্যায়নের আড়কাঠিরা বাংলার দেশজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ভাষা ও সামাজিক বাঁধনকে এলোমেলো করে দিতে সফল হয়েছে এই প্রজন্ম আর তারাশঙ্কর, মানিক, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়দের নিয়ে  গর্ব বোধ করে না অন্তর্জাল সাহিত্যে এই শিকড়হীনতা প্রভাব ফেলবে তাতে আর আশ্চর্য কি ? এই শতাব্দীর একদম শুরুতে পন্যায়ন ও বাজার সংস্কৃতির প্রবল প্রচারক ‘দেশ’ পত্রিকা তার ৮ই জানুয়ারি ২০০০ সংখ্যার প্রচ্ছদ নিবন্ধ ছিল ‘২০৫০এ বাঙালির কোষ্ঠীতে কী আছে’ আর সম্পাদকীয়র শিরোনাম ছিল ‘পঞ্চাশের প্রতারণার সে আর বন্দী থাকবে না’ ১৯৫০ পরবর্তী যে সাহিত্য-সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে আমাদের গর্বের উপাদান বলে মনে করছি পন্যায়নের প্রবল প্রচারক পত্রিকাটি তাকেইঅর্ধশতাব্দীর প্রতারণাবলে চিহ্নিত করেছিলএকটা জাতির ঐতিহ্যের সঙ্গে, তার ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির শিকড়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটানোই ভোগবাদী দর্শনের ভিত্তিভূমিফল কি হয়েছে তা আমাদের অভিজ্ঞতা বলে দেয়



কবিতাউৎসব: অন্তর্জাল বিপ্লব বাংলা সাহিত্যের গণ্ডীটিকে হঠাৎই যেন অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। কাকদ্বীপ থেকে কানাডা বা সিলেট থেকে সিয়াটোল, যেখানেই হোক না কেন আজকের সাহিত্য আলোর গতিতে দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে। এর সবচেয়ে জরুরী সুফলটি আমরা দেখতে পাই, দ্বিখণ্ডীত বাংলার উভয় পারের সাহিত্যচর্চার মধ্যে পারস্পরিক সাহচর্য ও আদানপ্রদানের পরিসরটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে দিনেদিনে ও দ্রুতগতিতে। যেটি আগে প্রায় অসম্ভবই ছিল। এই পরিসরটিকে আরও ফলপ্রসূ ও শক্তিশালী করে তোলার বিষয়ে কোন কোন বিষয়গুলির উপর জোর দিতে চান আপনি? কি কি বিষয়ে আমাদের আরও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ বলে মনে হয় আপনার?

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়: অন্তর্জাল বা অন্তর্জাল সাহিত্যের কোন ভৌগোলিক সীমানা হয় না তবে একথা মানতেই হবে ওপার বাংলায় ব্লগ চর্চা অনেক বেশি ওপারের তরুণরা ব্লগ বা ওয়েব ভিত্তিক সাহিত্য পত্রিকাও প্রকাশ করেন অনেক বেশি এপারের লেখকরা যেমন লিখছেন সেই সব ব্লগে ওপারের সাহিত্যকর্মীরাও এপারের ওয়েব পত্রিকাগুলিকে সমৃদ্ধ করছেন আর এটা তো অস্বীকার করার কোন যায়গা নেই যে বাংলা ভাষার প্রতি ওপারের আবেগ কয়েকগুণ বেশি এপারের চেয়েসাহিত্যের এই আদানপ্রদান নিশ্চিতভাবেই অন্তর্জালের অবদান ইতিহাসের করুণ কিন্তু অনিবার্যি পরিণতি – একই জাতিসত্বার, একই ভাষাভাষী মানুষের পৃথক ভৌগোলিক পরিচিতি দুই পারের মানুষ তো একই সাহিত্যসম্পদের অংশীদার  মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বয়স মাত্র চল্লিশ বছর ১৯৪৭ পরবর্তী সময়কালে এপারের বাংলা সাহিত্য যেভাবে সমৃদ্ধ হবার সুযোগ পেয়েছে, ওপারের সাহিত্য তা পায়নি কারণ দেশ বিভাগের প্রথম দিন থেকেই তাকে লড়াই করতে হয়েছে ভাষাগত সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধেনিজ মাতৃভাষার মর্যাদার দাবীতে অর্থাৎ সাহিত্যের পূণর্গঠনের যে কাজ এপার করতে পেরেছে ওপারের পক্ষে তা সম্ভব ছিলনা সৃষ্টির ক্ষেত্রে দুটি দশক তো বড় কম নয় ! আর একটা বিষয় উল্লেখ করবো সমাজতান্ত্রিক চেতনা বাংলা সাহিত্যকে যতটা সমৃদ্ধ করেছে ঐতিহাসিক কারণেই ওপারের সাহিত্যে তা হয়নি ১৯৫০ পরবর্তী সময়কালে এপার বাংলায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের তরঙ্গ তীব্রতর হয়েছিল যার অনিবার্য প্রভাব পড়েছিল সাহিত্যে ৪৭ থেকে একাত্তর পর্যন্ত পূর্ববঙ্গ বা ৭১ পরবর্তী বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা হয়নি সুতরাং পার্থক্য যদি কিছু থাকে তা এই ঐতিহাসিক পৃষ্ঠভূমির কারণে সংশয় নেই যে অন্তর্জালের দিগন্তপ্রসারী ব্যাপ্তি মানুষের মধ্যে সমাজ ও সাহিত্য ভাবনার বিনিময়ের পরিসরটিকে সহজ ও ব্যাপকতর করেছে দুই বাংলার লোকায়ত এবং জীবনবোধে উজ্বল গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্যভাবনার আদান-প্রদানই এই পরিসরটিকে অর্থবহ করে তুলতে পারে বলেই আমার বিশ্বাস



কবিতাউৎসব: অন্তর্জাল সাহিত্যচর্চা যেন অনেকটাই চিত্ররূপময় কবি জীবনানন্দের সেই অমোঘ বাণীটিরই প্রতিস্পর্ধী! অন্তর্জাল যুগে সকলেই যেন কবি। কেউ কেউ কবি নয়! মাত্র একটি ইমেল পরিচিতি তৈরী করে নিতে পারলেই সোশ্যালসাইটের দিগন্তে পা রাখতে না রাখতে যে কেউ নিজেকে কবি বানিয়ে নিতে পারে এখন। যার যত বড়ো বন্ধুবৃত্ত, তার কবিখ্যাতি তত বেশি। যে কোন ভাষার সাহিত্যের পক্ষেই এ যে বড়ো সুখের সময় নয়- সেকথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু অন্তর্জাল সাহিত্য দিগন্তের এইটাই কি স্বাভাবিক পরিণতি নয়? কি ভাবে তৈরী হতে পারে প্রকৃত সাহিত্যের রক্ষাকবচ?

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়: এগুলো নিতান্তই প্রাথমিক সমস্যা কতই বা বয়স অন্তর্জাল সাহিত্যের ? একথা ঠিক যে অনলাইন প্রকাশে প্রকাশকের ও লেখকের অনেক স্বাধীনতা আছে কিন্তু একমাত্র এটাই সাহিত্যের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে এমনটা আমি মনে করিনামুদ্রিত ছোট পত্রিকার একটা ব্রত থাকে পত্রিকাটিকে রুচিসম্মত ও সাহিত্যগুনান্বিত করার। সেই একই ব্রত ওয়েব পত্রিকার ক্ষেত্রেও থাকা উচিৎ ফেসবুক বা ফেসবুক কেন্দ্রীক ওয়েব পত্রিকাগুলিতে প্রকাশিত কবিতা বা না-কবিতার প্রচুর্যের কথা বলতে চাইছো, অনুমান করি ওয়েব পত্রিকাতে ছাঁকনির ব্যবস্থা আছে প্রকাশক বা সম্পাদক লেখা গ্রহণ-বর্জন করতে পারেন, কিন্তু ফেসবুক গ্রুপে তো কবি নিজেই সম্পাদক তবে এই উন্মাদনা স্থায়ী হবে বলে আমি মনে করিনা আর এটাও তো ঠিক যে ফেসবুক গ্রুপ বা ফেসবুক কেন্দ্রীক ওয়েব পত্রিকাগুলি থেকে নবীন প্রজন্মের অনেক কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক উঠে আসছেন, প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন লিটল ম্যাগাজিন যে কাজটি করে আসছে ওয়েব পত্রিকাও তো সেই একই কাজ করছে আর ফেসবুক গ্রুপগুলি আছে বলেই কিন্তু এতো ওয়েব পত্রিকা প্রকাশ হচ্ছে



কবিতাউৎসব: আমরা দেখেছি সোশ্যাল সাইটগুলিতে সবাইকে নিজের কবিতা গল্প পড়াতে আমাদের যে তৎপরতা তার সিকিভাগও অন্যের লেখা পড়ার বেলায় নেই। পড়লেও সে কেবল বন্ধুকৃত্য সম্পাদনার্থেই মূলত। এবং পাঠ করা সেই সাহিত্যের বা লেখার ভালো মন্দ, সম্ভাবনা ও ব্যর্থতা নিয়ে কোন গঠন মূলক আলোচনা সমালোচনা করার পরিসরও প্রায় অনুপস্থিত অন্তর্জালের এই মায়াবী দিগন্তে। এই বিষয়টি কতটা কষ্ট দেয় আপনাকে? কিভাবে বদল আনা যেতে পারে এই দমবন্ধ পরিবেশে?

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়: অন্যের লেখা আমরা পড়ি কম নিজের লেখা অন্যরা পড়ুক এটা চাই বেশি করে এই চাওয়ার মধ্যে দোষ নেই কিন্তু এটাও ঠিক যে কোন সুলেখকই তাঁর লেখা কত মানুষ পড়বেন তার আগাম আন্দাজ করে কলম ধরেন না আমাদের সামাজিক আচরণে ‘ব্যাবহার করো এবং ছুঁড়ে ফেলো’ বা ‘ইউস এন্ড থ্রো’ নীতিটা রপ্ত করে নিয়েছি অন্তর্জালের সামাজিক পরিসরের সাহিত্যও তেমনই এমন অবস্থার কোন আশু পরিবর্তনের সংকেত আমি অন্তত দেখি না আসলে আমাদের মধ্যবিত্ত সামাজিক জীবনে, মননে, সৃজনে ও সাহিত্যে আলোড়িত হবার মত উপাদান তো নেই বললেই হয়গতানুগতিকতাকেই বরণ করেছি, করে চলেছি সুতরাং অন্তর্জালের সামাজিক পরিসরের সাহিত্য অন্যরকম হবে কি করে ? তবে এর মধ্য থেকেই জীবনবাদী ধারাটি আবার শক্তি সঞ্চয় করবে এ বিশ্বাস আমি রাখি ফেসবুকে কবিতার প্রাচুর্য ও পারস্পরিক পিঠ চাপড়ানি কারো কারো বিরক্তির কারণ হতে পারে, কটাক্ষ, বিদ্রুপ ও হচ্ছে অনেক কিন্তু এরও তো একটা ভালো দিক আছে তা হ’ল নবীন যারা লিখছেন তারা সরাসরি কিছু পাঠপ্রতিক্রিয়া তো পাচ্ছেন, পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে, যা তাকে পরিণত মননে উত্তরণ ঘটাতে উৎসাহিত করে হোক না এই পিঠচাপড়ানি বাহবার কিছুটা ফাঁপা



কবিতাউৎসব: শুধু নিজের ভাষার সাহিত্যচর্চাই নয়, অন্তর্জালের সাহিত্য দিগন্তে বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যচর্চার মধ্যে একটা সহজ আদান প্রদানের পথ খোলা কতটা জরুরী বলে মনে হয় আপনার? এবং সেই বিষয়ে আপনার নির্দিষ্ট কিছু পরামর্শ যদি থাকে।

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়: বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যভাবনার মধ্যে সহজ আদান-প্রদান উভয় ভাষার সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে পারে ঠিকই এবং জরুরিও বটে সেক্ষেত্রে ভাষান্তর বা অনুবাদের মাধ্যম ভিন্ন আর কোন পথ আছে বলে তো আমার জানা নেই ‘সংসপ্তক’ নামে একটা দ্বিভাষিক (বাংলা ও ইংরাজি) ওয়েব পত্রিকা বছরখানের ধরে প্রকাশিত হচ্ছে, জানি আমরা না হয় ইংরাজিটা পড়ে নেবো, কিন্তু আমার বাংলা ভাষার লেখা্টি তো অপঠিত থেকে যাবে বাংলা না জানা অন্যের কাছে ! তাহলে উপায় ? খুবই কঠিন কর্ম, কিন্তু উপায় একটাই,  যদি এমন পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ কেউ নেন যেখানে অন্যভাষার সাহিত্য থাকবে আর তার সঙ্গে বাংলা সাহিত্যেরও অনুবাদ থাকবে 



কবিতাউৎসব: কবিতাউৎসবের পক্ষথেকে আপনাকে আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা জানিয়ে পরিশেষে জানতে চাইবো সাহিত্যের এই অন্তর্জাল দিগন্তের ভুবন আপনাকে কতটুকু তৃপ্তি দিয়েছে। বিশেষ করে আপনার হাতে গড়ে তোলা বিখ্যাত অন্তর্জাল সাহিত্যপত্র অন্যনিষাদের অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলেন।

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়: দিয়েছে বৈকি ! অপার তৃপ্তি দিয়েছে, দিয়ে চলেছে সেই তরুণ বয়স থেকেই অনেকের মত আমারও পত্রিকা করার নেশা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াতো দুহাজার দুইএ চাকুরী থেকে অবসর নেওয়ার আগে পর্যন্ত নানা সময়ে অন্তত ১৫/২০টি পত্র-পত্রিকার সংগঠন, সম্পাদনা, প্রকাশনা, সাংবাদিকতা, প্রতিবেদক - এইসব নানাভাবে যুক্ত থেকেছি মাসিক, সাপ্তাহিক, সাহিত্য পত্রিকা, সংবাদ সাময়িকি, নাট্যপত্র, ট্যাবলয়েড সব চাকুরী থেকে অবসর নেওয়ার পরে রেলের প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চে বসে পেনশন আর মাগগিভাতার হিসাব করে সময় কাটানো পরিহার করে ঢুকে গেলাম অন্তর্জালের আশ্চর্য জগতে, চেষ্টা করলাম তাকে জানতে এদিকে পত্রিকা করার নেশাটা ছাড়তে চায়না কিছুতেই গুগল ঘাঁটাঘাঁটি করে ব্লগ বানানোর কায়দাটা শিখে নিলাম আর সত্তরছোঁয়া বয়সে প্রকাশ করে ফেললাম দুটি ওয়েব পত্রিকা সাপ্তাহিক ‘অন্যনিষাদ’ ও পাক্ষিক ‘গল্পগুচ্ছ’।

অন্তর্জালের বিশাল ভুবনের অতি সামান্যই মাত্র স্পর্শ করতে পেরেছি, তাতেই পেয়েছি এক বিস্ময়কর তৃপ্তি, সৃজনের আনন্দ সে আনন্দ প্রকাশের কোন ভাষা হয় না অন্তর্জাল প্রযুক্তির জন্যই অসংখ্য মানুষের সঙ্গে আলাপ হছে হয়েছে ভাবনার বিনিময় পড়ছি কত বিচিত্র সব লেখা এ কি আগে কোনদিন ভাবতে পেরেছি অন্তর্জালের অতলান্ত সৃজনভান্ডারে আমারও অতি ক্ষুদ্র অংশ রয়েছে, জীবনের উপান্তে পৌছে এ আমার বড় প্রাপ্তি, অসীম তৃপ্তির সঞ্চয় প্রায় শূন্য প্রযুক্তি জ্ঞান নিয়ে, শূন্য থেকে শুরু করে দুটো ওয়েব পত্রিকায় এই পাঁচ বছরে সাড়ে পাঁচশো কবির পাঁচহাজার  কবিতা আর সাড়ে আটশো গল্প অন্তর্জালে ছড়িয়ে দিতে পেরেছি আর পত্রিকাদুটির পৃষ্ঠাদর্শন আড়াই লক্ষ ছুঁতে চলেছে বিশ্বের যে প্রান্তেই বাঙালি সেখানেই ‘অন্যনিষাদ’ ও ‘গল্পগুচ্ছ’ একটা আদরের যায়গা নিতে পেরেছে নবীন কবি আর গল্পকাররা নিজস্ব ভুবন হিসাবেই দেখতে চাইছেন পত্রিকা দুটিকে, এটা কি কম পাওয়া ? কম তৃপ্তিকর ? ‘অন্যনিষাদ’এ প্রকাশিত সব কবিতাই উত্তীর্ণ হতে পারছে এমন কথা কেউ বলবেন না, আমিও না অনেক তরুণ লেখক যারা সবেমাত্র কবিতার জন্য কলম ধরেছেন, প্রতিষ্ঠিত কবিদের লেখার সঙ্গে তাদের তুলনামূলকভাবে অপটু লেখাও প্রকাশ করি আমি তাদের উজ্বল মুখ দেখতে পাই এটা আমাকে তৃপ্তি দেয়