কাজী এনামুল হক
অন্তরে প্রথম রেখা
নোয়াই’র ছোট মেয়েটা মুচকি মুচকি হাসত
দু’জনকে একসাথে দেখলে। হয়ত বুঝে ফেলেছিল আকারে
ঈঙ্গিতে
যখন কথা হতো, চোখে-চোখে বা হাত ইশারায়। বলেনি
কখন
কিছু। কি যেন একটা ব্যামো ছিল মেয়েটোর।
সবাই বলতো মৃগীরোগী; পানি আর আগুনে
নাকি খুব টানে। স্পষ্ট চোখের সামনে ভাসছে তার নিথর শব
বাড়ীর সামনেই ছোট ডোবাটার কাঁদার মধ্যে পড়েছিল সকালে।
‘বিলকিচ’ ফুফু নেই কেউ বিশ্বাস করেনি।
এমনি হারিয়ে যায় স্মৃতি মানুষের মন থেকে,
বাল্যশিক্ষার মাটির শ্লেটে থুতু দিয়ে খড়িমাটির লেখা
মুছে ফেলার
মত মুছে যায়; নি:শ্বেষ হয়ে যায় ঘাসের ডগায়
শিশিরের মতো
জীবনের মধ্যাহ্ন বা পড়ন্ত বেলায় একে একে।
আমাদের কিছুই যায় নি মুছে; এখনও নিরালায় একা থাকলে ঠিক,
‘রোজী’ এসে হাসিমুখে দাঁড়ায় সামনে; ওইতো অন্তরে
প্রথম রেখা।
================ =====================
১১ জুলাই
২০১৬, সোমবার, সকাল: ০৯:৪৮ মিনিট, (+৩)
মানুষ হবো না পরজন্মে
পুনর্জন্মে মানুষ হতে চাই না,
না কারো দয়ামায়া অনাবশ্যক। তোমাদের থলেভরা ভালবাসা
ইদুরে কাটুক, কৃপণের সঞ্চিত ধন উইযের পেটে যাক
কি হবে!
অন্যকিছু হয়ে জন্মাবো আবার।
আশেপাশেই থাকবো, দেখবো
কেমন করে অলস সময় কাটাও। অফ হোয়াইট দেওয়ালের গায়ে
টিকটিকি বা মাকড়শা হযে তোমার গোপনীয়তা চুরমার করবো।
না, আরশুলা হবো না কখন।
বড় জোর নদীর জল কিম্বা
বৃষ্টি ছিটেফোটা হতে পারি অনায়াসে তোমাকে ছুঁয়ে দিবার
জন্য,
বুকভরা যে প্রতারনার আঘাত, দেখ জল হয়েই ভিজারে একদিন।
অন্তত মানুষ হবো না পরজন্মে।
মানুষ নামে জন্মে নামধারী অমানুষের ভীড়ে শ্বাসরুদ্ধকর
এ জীবন,
প্রয়োজন নেই। বরং অন্যকিছু হয়ে দেখব অমানুষের
সুনিশ্চিত ধ্বংস।
================ ===================
১১ জুলাই
২০১৬, সোমবার, সকাল: ১১:১২ মিনিট, (+৩)
পথেই পা মিলাব
জমে থাকা জলগুলো নিস্কাশন প্রয়োজন
বেশীদিন হলে-
ভয়াবহ হতে পারে পঁচা দূর্গন্ধময় পরিবেশ
ওসব অনাকাঙ্খিত।
চারিপাশে ঝোপঝাড় লতাপাতা ছাঁটতে চাই
মায়া আর মমতা
দিয়ে অন্ধ হলে বন্ধুর পথে ঠোকর খেতে হয়
ও আর চাই না।
বুকের অলিগলি শুনসান সাফ করে নিতে চাই
যাত্রা শুরুর আগে,
ভুলে যেতে চাই অনাবশ্যক সন্ধ্যার ঝাড়বাতি
পেয়ালার ঠুনঠান।
দ্বিমুখী পথ তোমার নির্বাচন; পড়ে আছি একা
একা!
বাস্তভিটা ফেলে এবার পথেই পা মিলাব নিরুদ্দেশে।
================== ===========
১১ জুলাই
২০১৬, সোমবার, সকাল: ১১:২০ মিনিট, (+৩)
বুকের মধ্যে ঈশ্বরের হাঁটাহাঁটি
বুকের মধ্যে ঈশ্বরের হাঁটাহাঁটি
কি জানি কেন এমন পায়চারি সকাল সন্ধ্যা গভীর রাত অবধি!
ইশ্বর হেঁটে গেলে শয়তানের কি
বিকট হাসি। দখল করে বসে পথ ঘাট অলিগলি চিন্তা চেতনার।
তখন ভিতরের মানুষটা যেন
সত্যি সত্যি হয়ে যায় এক অমানুষ; রুপোলী
চাঁদের থাল ভেঙ্গে
গড়িয়ে পড়ে হলুদ অভিশাপ,
কুমারীর বুকে পেরেকবিদ্ধ যন্ত্রনা! অকস্মাৎ বিবেকের
কুপোকাত।
কামদুনি, মেট্রোরেল, বাসট্রাম
নিরাপত্তা কোথাও নেই বকুল ডালে কোকিল ডাকে না, বাঁদর নাচে
বেদেনীর কোমরে নাগিনীফণার
দোল; ঢেউ তোলে নেশা নেশা সুড়সুড়ি জারজ উঠোনে
পুরুষতন্ত্র।
ঈশ্বর তবু হেঁটে যায় বুকের মধ্যে ধুলি উড়িয়ে কণে দেখা
বেলায়,
সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে যেন হাহাকার করে উঠে বেহায়া জীবন
যৌবন।
================== ===========
১১ জুলাই
২০১৬, সোমবার, সকাল: ১১:৩৯ মিনিট, (+৩)
আষাঢ়-শ্রাবন
আষাঢ়-শ্রাবন এলেই আমার বুকের মধ্যে ঝরঝর বৃষ্টি ঝরে,
বুঝতে পারি খুব নিরালায় আনমনা এই মন কেমন করে।
ভেঁক ডাকে আর ঝিঁঝিঁ ডাকে সন্ধ্যেবেলা পাতার ফাকে
ঘরে ফেরা শালিকগুলো কেমন করে আপনজনকে ডাকে।
আষাঢ়-শ্রাবন এলেই আমার চোখের পাতায় বর্ষা গড়ায়
মায়ের দেওয়া সুরমা-কাজল মুছে নিয়ে নষ্ট কষ্ট বাড়ায়।
গড়ায় ছড়ায় সারা মুখে, বুকের নদী উথলে উঠে ঢেউ,
মা ছাড়া আর কেই বা বুঝে; অমন করে ডাকে না কেউ।
আষাঢ়-শ্রাবন এলেই আমার মনের বনে জোনাক জ্বলে,
কদম, কেয়া কাঁঠাল চাপা সুভাস ছড়ায় পাপড়ি মেলে।
একলা মেয়ে মালা গাঁথে খুব গোপনে মনের সুখে বসে,
দক্ষিন হাওয়া ওড়ায় আঁচল শরম ছুঁয়ে কতই ভালবাসে।
বৃষ্টি ভিজে ওড়না মাথায় সেই মেয়েটি একলা পথে চলে,
তারেই ডাকি মনের ঘরে সকাল-সন্ধ্যা বন্ধ দুয়ার খুলে।
================== ===========
১১ জুলাই
২০১৬, সোমবার, বিকাল: ০২:৫৫ মিনিট, (+৩)