বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬

সুমনা পাল ভট্টাচার্য্য



সুমনা পাল ভট্টাচার্য্য
*******************
একলা আকাশ
-------------
'আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়েছিলে..'
মেঘের কানে.. নীল বিকেলে,
ফিসফিসে গান, পাখনা মেলে-

ভিজেই যখন গেছি, সব গন্ডী ঠেলে-
দোহাই, তোমায় বৃষ্টি, আর নাই বা গেলে..

এবার হব 'একলা আকাশ' -
                      আদর-ঘরে তোমায় পেলে-
                                                  ~সুমনা~







এক বুক বৃষ্টি
************
চায়ের দোকান থেকে চৌরাস্তার মোড়
সাইকেলে ক্রিং,ক্রিং--হিম হিম ভোর
তরঙ্গ বুক জুড়ে গোলাপি ওড়না ওড়ে
চুম্বক দৃষ্টি - টানছে ভীষণ জোরে।

পাশাপাশি দুটি মন-অস্থির- তরল
সভ্যতা ছাপিয়ে আদিম গরল
শাড়ির আঁচল থেকে পায়ের নূপুর
ঘুমহীন তন্দ্রায় মৌন দুপুর।

চমকিত মন যেন কিশোরী রাধা
আবেগের স্বরলিপি প্রাণেতে সাধা
টোল পড়া হাসি - চাহনি উদাসী
চোখ থেকে ঠোঁটে  শুধু ভালবাসাবাসি-

আঙুলের ভাষা চেনে হৃদয়ের গল্প
সুখি সুখি বোজা চোখ, সময় যে স্বল্প
গলছে গলার তিল বুকের খাঁজে
চ্যাপটা গোলাপ আছে পাতার ভাঁজে

বুকেতে ঝাপট লাগে, কাঁপে নি:শ্বাস
তুই এসে বলে গেলি, আছে 'বিশ্বাস'
সবটুকু দিয়ে গেলি, নিলি আমাকে
'ডাকাত' বলেছি আমি সাধে কি তাকে!

ফিনফিনে পালক আর রাঙতা রূপালি
তুই আমি মুখোমুখি, প্রেম-পদাবলি
ধোঁয়া ধোঁয়া আদরেতে মেঘ মেঘ দৃষ্টি
অপেক্ষা এখন শুধু 'এক বুক বৃষ্টি'--
************************************






দু-এক ফোঁটা
-----------
বিস্তৃত আকাশের নীচে দু-হাত মেলে দাঁড়ালাম-
নিজেকে সঁপে দিয়ে বললাম,'ভিজিয়ে দাও'..
শরীরের সমস্ত ম্যাপ এ-ফোঁড় ও-ফোঁড় করে নকশা বোনা-
আর নোনা মন জ্বলন্ত ধোঁয়া-
তুমি বৃষ্টির ক'ফোঁটা দিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে-
কোনোটা ছুঁলো কপাল, কোনোটা পায়ের নখ-
আমি চিৎকার করে বললাম,' আমি ভিজতে চাই'-
তুমি আবার দিলে,'ফোঁটা ভিক্ষা-স্পর্শ-
আগুনের গায়ে বাষ্প হয়ে মিলিয়ে গেল শূন্যে-
আমি গন্ডুষ ভরে চাইলাম,' বৃষ্টি দাও,বৃষ্টি দাও'-
" আমি ভিজতে চাই".....
নতজানু হয়ে দন্ডি কাটলো আমার চিৎকার-
তুমি জমাট মেঘ হয়ে রইলে, আর দৃঢ হয়ে বললে-
" অকাল-বৃষ্টি এমনই হয় ; দু- এক ফোঁটা"-
আমার ভেজা হল না..জলের দাগ রইলো ফ্যাকাসে চোখের কোলে...
খটখটে শুকনো ফাটলধরা দিগন্ত-জোড়া মন
আজ জানে, "অকাল-বৃষ্টি এমনই হয় ; দু-এক ফোঁটা"....
----------------------------------






আশ্বাস
*******

চোখের কাজল ধোঁয়া ধরা
রাতের চাদর স্তব্ধ-
তোমার আদর তুলছে ফণা
জীবন বড় আবদ্ধ।

শরীরের এপার ওপার
ইতিহাসের নখ-আঁচড়-
রঙচটা মনের দেওয়াল
ঝরঝরে হাড়- পাঁজর।

ক্ষুধার্ত দিন, উত্তাপহীন
চারিদিক ফ্যাকাসে-
তোমার চোখ ভাসতে দেখি
ধূলোময় আকাশে।

বিবর্ণ মুখ, বিচ্ছেদ দুখ
মুখোশের খোঁজ করে-
গোটানো কোণে কুঁকড়ে বাঁচে
প্রেম আজ 'একঘরে'..

সহবাস সুখ, এখন অসুখ
নিয়মের কারাবাস-
বৃষ্টি আবার আসবে ফিরে
এটুকুই 'আশ্বাস'।।






বৃষ্টি আনবে কেউ
*****************

কখন যে ঠিক এসেছিলে, রাখিনি তার
হিসেব-
যাওয়ার পদচিহ্ন গুলো আছে বুকের পরে-
চোখের জলে ধুয়ে গেছে অঙ্গীকারের বাণী-
অতীত আদর ছায়াছবি, যায় শুধু সরে সরে..

মুখ মুখোশের লড়াই এ আজ নিরপেক্ষ আমি-
নিজের হাতের রেখাপথ ধরে অভিমানের ঋণ-
সহজ কথা এখন তোমার চৌকাঠে মাথা ঠোকে-
ভালবাসা আজ মান-অপমান, মৃত, অধিকারহীন।

তোমাতেই বাঁচি, জেনেছো বলেই করেছো মূল্যহীন-
বন্ধ দ্বারে আমার কান্না আছড়ে পড়া ঢেউ-
পাথর ভাঙে অপেক্ষা-ঘর ; শুষ্ক কঠিন ক্ষরা-
হৃদয় তবু বাঁচে ভরসায়, 'বৃষ্টি আনবে কেউ'.......
************************************






করবে ভরসা??
**************

বেড়া দেওয়া মন
ঘেরাটোপে বাস-
সবুজ চেনেনি
ডাকেনি আকাশ।

আপনায় খুশী
বোঝেনি অভাব-
ভেজেনি জানালা
গোটানো স্বভাব।

অন্ধ ঘর
অভ্যেসে দাস
চেনেনি আলো
আসেনি বাতাস।

হঠাৎ সেদিন
তুমুল ঝড়-
ভাঙলো দরজা
ভিজলো ঘর।

বন্ধ জানালা
হাওয়ায় মাতাল
ফুলের গন্ধে
সবুজ চাতাল।

এখন তো রোজ
বৃষ্টি প্রবল-
বেড়া গেছে সরে
মেঘের ছোবল।

চুপচুপে স্নান
চুল থেকে পা
লজ্জা উধাও
মন বলে, " যা "...

মন উধাও
আকাশের রঙ
ভাল বাসাবাসি
আদরের ঢঙ।

'দিন ধরে
উথাল হাওয়া
বর্ষা শেষে
কাশের ছাওয়া।

ঘরের দরজা
ভেজে না আর
বৃষ্টি নেশা
অপেক্ষা তার।

ক্লান্ত শরীর
শ্রান্ত মন
গনগনে তাপ
শূন্য কোণ।

সয় না বেড়া
ঘেরাটোপ বিষ
মন শুধু চায়
টুপটাপ শিস্।

নিষ্ঠুর মেঘ
অভাবী ঘরে
এলো না ফিরে
দামাল ঝড়ে।

এখন আবার
বন্ধ দ্বার
কিন্তু বুকে
বিষম ভার।

আবার যদি
আসে বর্ষা
ভিজবে কি মন
'করবে ভরসা??'
          ~সুমনা~

***************