বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬

পৃথা রায় চৌধুরী



পৃথা রায় চৌধুরী

বপন
গতবছর ঠিক জুলাইয়ের মাঝামাঝি পোঁতা এলেবেলে গাছ
নাম ছিল বুঝি, এসেছ যখন থাকো।
এতো হাতছানি, এতো ডাকাডাকি, শুনেও না শোনার ভান
জালের শাখাপ্রশাখা, শেকড় হোক অশক্ত।


এখন সারিবদ্ধ উন্মাদেরা মেঘ দেখে তলিয়ে যায় আকাশে
কিছুই না বোঝা পাবলিক প্রেম ফেলে দেয়
তুলি শানিয়ে রঙের সওদাগর চক্ষুবিশারদ পলকে ছুটে যায়
সাগর ছেড়ে অক্লেশে মৃত্যুমুখী মরীচিকায়।


তবু সেই চরম জড়িয়ে থাকা চেটেপুটে জমানোই পরম হয়ে থাকে
একজোড়া জীবন্ত আয়নায় শুধুই প্রতিফলিত হৃদয়গন্ধী স্বেদ,
সমগ্র মহাকাশ জুড়ে একা অপরাজিতা বিতর্কের মঞ্চে;
রাধাকৃষ্ণ জপের পরেও রাই, কপালে তোমার মাধব নামের লাল নেই...


ঋতুবদলে চারা পরিপূর্ণা যুবতী, অথবা... পূর্ণ যুবক।






মঞ্চস্থ
আলবিদা বলার হাতে জড়তা সঁপে দিয়ে
ফিরে আসা যায় মহীয়সী রূপ উঠোনে,
অনাদায়ী আপেল গাছ ফলসম্ভবা হয়ে
ধার্য করে দেয় তুমিআমি শাখায়
বিশ্রামরত কিচ্‌মিচ্‌দের দিন বাসাবদলের।


মেঘলা দিগন্ত থেকে ওই হলুদ পাতার কার্নিশে
লেখা থাকে প্রেমিকের ঝোড়ো ছাপ অকপট
নদীর বহতা কেবল ধরা পড়ে না সদ্য স্নানে,
আনন্দ থেকে কুয়াশা কাচ হয়ে ক্যানভাস জন্ম নিলে
বুনো হাঁসেরা বেরোয় প্যাচপ্যাচেহীন পাড় সন্ধানে।


দিন কুঁচকে আসে, সমুদ্রের মাঝে বসবাস...
আইলাইনার কোনোদিন ব্যবহার করিনি জেনে
খুশিয়াল বলেছ, কাজল পুকুরের উদ্বোধনে চাই
ধমনী আক্রান্ত প্রদীপের জ্বলে ওঠা নির্নিমেষ।







নেই ছবি
তেলরঙ হাসি অনেক এঁকেছ,
দেখো আকাশের বিনবিনে ঘাম
গড়াতে গড়াতে কখন দরজায় সমুদ্র।
থেমে গেছে সব কুচকাওয়াজ
একা নেমে যেতে যেতে খাদে
অজুহাতে কেটেছি ভাগ্যরেখা,
পিছু ডাকো নি
তবু দেখেছ জেনেই আনন্দ।


কিছু এলোমেলো চুল
এপাশ ওপাশের মনোযোগ কাড়তেই
চুবড়ি ভেজা, ছাতা নেই,
ছাউনির অভাব...তুমি কই?
সম্পর্কের স্বরভঙ্গে বোঝা যায়
শ্মশানযাত্রিরা প্রজাপতির ডানায়
তবু শেষ নিঃশ্বাসে চাপা,
যুদ্ধক্ষেত্রে একা ছেড়ো না... দোহাই।







প্রীতি-পক্ষ
মেঘেদের ঘরবাড়ি, এমনকি দেওয়াল পর্যন্ত অনায়াস
সেখানে চোরকাঁটা পিষে হেঁটে যায় শূন্য দৃষ্টি
শুধু লন্ঠন হাতে সামনের অপরিসর জলাভূমি
তর্জনী নির্দেশে এঁকে দেয় তোমার চোখ নামের মরীচিকা।


সেখানেই, ঠিক সেইখানেই নির্লিপ্ত দেখেছ মুর্খামির অসুস্থতা
নাম না জানা সাপেরা ঠেলাঠেলি রাস্তায় গেয়ে গেছে বিরহ গান,
প্রতি গমকে জহরিলা করে গেছে অভাব অভাব গরাদ পর্দা জানালাময়;
তারা খসা দেখে তড়িঘড়ি ছন্দ ফেরত চেয়ে ঘুরে তাকাতেই
একবুক রোদকান্নায় সূর্য আসমান জমিন করেছে একাকার।


বিশেষ রিংটোন জানান দেয় ঝাপসা হয়েছে ছায়াপথ
তবু, মৃত্যুগর্ভে সমস্ত নক্ষত্রের ঢোকার অনুমতি মেলেনি
রাত্রিদীপ্ত মরু, উপহার পেয়েছে আঁধার নহবৎ।







জিয়নকাঠির মৃত্যু
একই দেওয়ালের দুটো পিঠ আলাদা করে, ভেবেছ মিটিয়ে দিলে কথার পাহাড়
মেটে দিকে জলের ঝাপটায় গলে গেছে হাড় পাঁজরাও
ভেতরের নরম আলোয় ডিজিটাল টাইলস বসানো পিঠে
আলতো হাত রেখে ভেবেছ, সমস্ত প্রাণ এখনো ধুকপুক করছে
ওই সর্বংসহা কাঠামোয়... কেন ভাবলে এমন বলো তো?


চোখের তলায় যেই ঢেউগুলো জাঁকিয়ে বসেছিলো,
হেসে কেঁদে এখন ঠিকানা পালটে পাগলাগারদে। উঁহু, পাগল না, পাগল না
হৃদরোগী মনোরোগীর মাঝামাঝি নাম ভাবো তো দেখি...
অবশ্য ভেবে না পেলেও দিকচক্রবালকে কেউ চিনে নিতে ভুল করে না;
সুতরাং, তুমি পাশ, পাশ, কেবল পাশ।


বন্ধ দরজার এপারে ঢোকার জন্য ঝড়ের আকুল হুতাশ
রাত্রি দিন নির্বিশেষে বিষ ঢেলেছে হঠাৎ শুন্য হাতে
প্রার্থিত বন্যায় তোমার দুঃখঝুলি ভাসিয়ে দিয়েছ...
এখন পাড় ভাঙ্গার গান কানে নিয়ে দেখো, শববাহী কাচের ঘেরাটোপে
সাইরেন বাজিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে সুন্দর ধ্বংসাবশেষ।


গ্যালারির প্রথম সারিতে বসে
বিষণ্ণতায় মোড়া আসন্ন শরৎ দেখে ঠিক বুঝে নেবে,
তোমায় সঞ্জীবনী দিয়েছিলাম।