শাকিলা তুবা
অকিঞ্চন
প্রতি বর্ষায় এই শহরে ভিড় জমে
রক্ত-কাদা-জল আর ট্রাফিক সার্জেন্টের হুইসেল
আবারো ফিরিয়ে আনে রজঃস্বলা মাকে,
মায়ের যৌবন
স্পষ্ট শুনি ছমছম নূপুরের শিহরণ
ঝুম বৃষ্টি নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কলকল
ছোট বড় সব রাস্তা ছুঁয়ে, বাড়ীটির পাশে।
জটিল আঁধারেও মুখ ছিল তার শরদিন্দু মোহর
দুধের নধর বাটি সারা গায়ে
কত যে চিরকুট বুকের এই ভাঁজ ওই ভাঁজে
অথচ মেঘজোড়া এই দিন ছিঁড়ে নিতে চায় সব
উদ্ভিন্না মেয়ে কেমন ভিজছে একা
দোলনাচাঁপা ঝাড়ের তলে।
প্রথমে কেউ জানতে চাইল, ‘প্রকৃতি কি অন্ধ?’
কে না জানে? কে না জানে? সবাই জানে
পৃথিবীই পানাসক্তি দেয় দারুনভাবে
মায়ের দুধে, ধানে ধানে;
রক্তঝরা দেখে প্রলোভিত কিংবা আশ্বস্ত
যৌবনবতী মা জানু পেতে বসে, বারান্দায়
দুরন্ত মা মুচকি হাসে, কোমরসমান চুল।
ট্রাফিক আইন ভেঙ্গে গড়ায় প্রবল জল
বিরহের তাপে একবার কেঁদে উঠি মা, মা বলে
আমার চোখের পাশে ডুমো মাছির লাইন
শহর বেয়ে ঝরে দুঃখি জল,
ওই জলে ভেসে যায় মায়ের যুবতী ফোটো
এই প্রতিরোধহীন বৃষ্টি, এবারের বরষা আমার
জন্যে নয়।
জলবাষ্প
যদিও জানি অবহেলা ফুলকেও করে জড়
জীবনকে দেয় দুইমুখ সাপের আদল
কিছু ঋণ রয়ে গেছে, কিছু দায় যদিও
মনমেঘ সরালে চাদর তোমার কাছেই যাব।
যে পথ দিয়েছিলাম ফেলে সে যেন গিয়ে মিশেছিল
তোমার নীরবতার পারে, কিছু ভুল এখনো
পড়ে আছে ঐখানে অবাক জোনাকীর ভিড়ে
তুমি ছিলে জানি তবে এখন বাঁশী বেজেছে এইখানে।
তোমার কাছে যাব বৃষ্টি এলে বা না এলেও।
অ্যাগোরাফোবিয়া
দুঃখকষ্ট নিয়ে নিজের- হাসতে এমন কেউ শেখেনি
এ যেন জল সিনানের দিন, হাসিখেলা
লাফ দিয়ে ডিগবাজি খাবে এগার’শ ফোয়ারা।
পাজামা তার সূতলি গেঁরো ফেলে তবু বেরিয়ে আসে—
বেরিয়ে আসে ধবল প্রবোধ, ইচ্ছেরা সব আর অত
অহমিকা,
সাপুড়ের ফ্রেমে লটকে যাওয়া সর্পবিষ।
শুকনো এমন মরশুমে তা’ও মরুভূমি জোটেনা
শিশুরা কেবল ফায়ার, ফায়ার খেলে আর
মিছেমিছি
ব্রাশফায়ার চিরে দিতে থাকে বুক, পেট,
নাভী।
দুই পায়ে ঝুঁকে থাকা সুখ হেসে ওঠে বুঝি
কানে কানে সঞ্চারিত হতে থাকে এপাড়ার
জোয়ান-বুড়ো-শিশুরা সাথে রূপবতী সোশ্যাল ফোবিয়া।
পুনঃপ্রচার জেনেও মানুষেরা ঢল নামায় প্রেক্ষাগৃহে, প্রতি সোমে।
ঘুমবন্দি
যখন তখন ঘুম ভেঙ্গে গেলে
আমাদের চীৎকারগুলো
সহসা ছায়াময় হয়ে ওঠে
ছলাৎ শব্দে দু’একটা পাড়
গড়ে ওঠে বসতির তরী ঘেঁষে—
এই তো গাঙচিল এক,
সেদিনের হাসির রেশ বয়ে উড়ছে বেশ
সিল্কের ডানায় তার রামধনু চিকচিক—
এখনো ভোর তবু অনেকটাই উদাস
রাতের চন্দ্রমা সোহাগ এই বুঝি সব
ফিরে গেল, ফিরে গেল সূর্য্যির অন্তরালে।
যক্ষের পুনঃপৌণিক কাজলটানে মিটে যাবে
নজরের বান আর বাঁকা হাসির ঋণ।
তারপর, আবারো স্বপ্নময় ঘুমের তোড়জোড়।
চক্ষু আয়ুষ্মাণ
কে যেন ক্রমশঃ নেমে আসে বিস্মিত আকাশের দিকে
কেউ বললো, ওগুলো উড়ে যাওয়া ধানের ক্ষেত
কারো মতে, ব্রেইল অক্ষর; লিপির আকরিক,
দৃষ্টি থাকা সত্ত্বেও অবুঝ শব্দের কারিগরী
কতক তার তুমি বোঝো অথবা
কেউ কিচ্ছুটি বোঝে না।
শরীর থেকে স্ফীত মেঘে, মাতাল ঘড়ির যৌবন
স্বাক্ষরে
অফুরান সময় নীরব শ্লেষে ঘুমপাড়ানী নির্জনকোণ
মুছে ফেলে যুগের ভ্রমণকাব্য, কথামালার ক্ষত
তবু সভ্য এক বিকেল হাত ধরাধরি ঠিকই
এগিয়ে যেতে থাকে আরেক বিকেলে
সুখপাঠ্য কোনো বইয়ের কাছে।
মেলে ধরলে এক সকালের হ্রদ, ভেঙ্গে যাবে
অন্ধচোখ
যেন আসলে যা দেখছি তা না দেখাই ভাল
যেন সময় আসলে খেলা শুধু, বাকীটুকু
চোখের বাইরে ‘লাগ ভেলকি লাগ’
বিষ্মিত অন্তরীক্ষও জানতে চায়
দেখি বলেই কি দেখি না!
‘ডাল ভাঙ্গ পুষ্প তুল কে তুমি নাগর’
এই তো এখানে, মুখ রাখো সোনামানিক...প্রেমফুল গন্ধের কাছে খোলস খুলে
আরেকটু বিস্তৃত হও। দানবেরা ঘুমোতে গেছে লোবান বাগানে। তারপরও দেখো তো কে এল এমন
অসময়ে?
আরেকটু থাকো, যেও না এখনই। প্রেমের মানে আজো বুঝিনি। যা বুঝি তার সবেতেই আঙুরের রস, কোমল-মধু একটু যেন স্বচ্ছ কাঁচের এপার ওপার। যার ভেতরে
নিরপরাধ মানুষবোধ দড়ি লাফায়...কই যাও? ওহে খেলারাম, খেলে তো
যাও.........
কখনো কি ভেবেছিলে সকল সাধিত শব্দই
সম্পত্তি তোমার? নাকি ষষ্ঠের ঘর নিয়ে বিভক্তি গড়িয়ে
গেছে উরুর বিষাদ ছেড়ে, যতটা গিয়েছিল
খাপখোলা ঘোরের কিলবিলে গুহার গহীনে? এই তো চেয়েছিলে শুধু তবু কেন অনুযোগ এত! উড়ে কেন যাও পরের খাঁচার কাছে খুঁটে
খেতে জীবনের দানাপানি!
এখানে আসো, চোখ রাখো যাদুপাখি আরো গভীরে। বাছুরের সরলতা নয়, বাঘের হিংস্রতায়ও নয়। যেমন করে মহাপুরুষ আরো পাপী হয়, যোগবলে আরো খনন করে ধুম্রজাল কলকির নেশা তাকে তুমি
মৃত্যুকূপ না বলে বলো জয়ানন্দের তীর্থযাম। প্রেমের মানে রয়ে গেছে অপ্রেমেতেই।
টমেটো অথবা কমলায়...ওয়ার্মআপ বয় শুধু
একটা নীটশট, বিকেল অথবা সন্ধ্যায়, হয় স্ক্রু ড্রাইভার নয় স্পাইসি ব্লাডিমেরি......