জাফর পাঠান
বর্ষার সুখ-দুখ
নিসর্গ মেতে উঠে- জল জোয়ারের ঐ মাতনে
কি আকাশ-কি পাতাল ভুগে জলকেলির যাতনে,
কানায় কানায় ভরে যায়- খাল-বিল নদী-নালা
জুঁই,
পদ্ম, কদম, কামিনী, রজনীগন্ধার পালা।
দোলে হিল্লোলিত যৌবনে, বক-ময়ূর-বুলবুলি
রসে ভরা রসিকেরা তুলে নেয় হাতে রঙ তুলি,
কলকল কল্লোলে- কল্লোলিনীর সুরো কলতান
উদ্বেলিত চিত্তে, ময়ূর- বুলবুলিও ধরে গান।
গৃহলক্ষীর গৃহস্থালি কাজের- অনাহূত ভাটা
চাষ জমিতে পানির তান্ডবে আনন্দ পড়ে কাটা,
বর্ষার বন্যায় কখনো ভাসে- স্বপ্নিল ঘর-বাড়ি
কত স্বপ্নময় সংসার পানির তোড় নেয় কাড়ি।
ভাঙ্গা-গড়া, আনন্দ-বেদনায় ভরা- বর্ষার মুখ
সৃষ্টির হেলাফেলা-লীলাখেলার মৌল সুখ-দুখ।
ছুঁয়োনা আমায়
বিতৃষ্ণ হয়েছি-
ধরণীর প্রতি অতি
ধরার স্থুল দেহ কেড়েছে সুক্ষ্ম গতি,
ভাবিনা সঙ্গমের সুখকে-
প্রিয় অতি
সেই কবে থেকে চিন্তনে টেনেছি যতি।
জৈব সুখকামী ললনারা, কথা শুনো
চাইনা আমায় নিয়ে কোন-তৃপ্তি বুনো,
গুটিয়ে নিয়েছি তা-যা ছিলো তপ্ত বন্য
সেই আমাকে পাবেনা, যত হও হন্য।
আগন্তুক এসেছিলো অচিন বাহনে
পরশ ছোঁয়া মনে-
তৃপ্ত অবগাহনে,
সেই থেকে কামাগ্নি যখনি জাল বুনে
দ্বিগুণ তেজে জ্বলে হই নৃশংস খুনে।
যাহা চাই-
তাহা পাইনি আজো আমি
এথা ওথা খুঁজে খুঁজে ভাবকাব্যকামী
সুখহীন সুখ
নির্দয়ভাবে কেটে কেটে ক্ষতবিক্ষত করে
খেঁজুর গাছ নিংড়ানো রস নিবোনা ঘরে,
নিরাশ নীলিমা আকাশ-
দুহাত চেঁপে ধরে
বলে- সুখহীন সুখ কাটাবো কেমন করে।
মাতন ধরা গাছের-
ঐ ফুলগুলি না ছিঁড়ে
থাকবো শুধু-
সুবাসিত সুবাসটুকু ঘিরে,
কথা দিচ্ছি লোভাতুরে ভ্রমর হবোনা আমি
কলির নিবোনা মধু লোভহীন শান্তিকামী।
প্রজাপতির মত যথেচ্ছ ঘুরো দলে দলে
না পেলেও-
দলছুট করবোনা বাহুবলে,
ছিন্নতার ব্যথা সহেনা আমার এই দিলে
ছিনাতে পারিনা তাই নিষ্ঠুরতম কৌশলে।
ফুল-ফল-রসে-তারুণ্যে
থাকো জীবনভর
বৃক্ষ-তরু-লতার, চাইনা যে রুগ্ন প্রহর,
মনে বেঁধে মন বুঝেছি কে আপন কে পর
সুখহীন সুখে তাই-
নিজের গড়েছি ঘর।
ধূলির ধোঁয়াশা
ভালোবাসা সেতো দূর্গম গিরি-গিরিন্দ্র পাড়ি
দেয়া এক
সুশোভিত ফুলের বাগান,
ত্যাগ-প্রাপ্তী আর ধৈর্য সেতারের তাল বাজানো ঐকতান
মন-মননের জয়োগান।
ইচ্ছার গন্ডিহীন ভাবনার ন্যায়- যে প্রেম দেয় ধরা
তা হয় পিচ্ছিল পরম্পরা,
আঘাত ব্যদনায় হাত মিলিয়ে দুখের ঘরে যাওয়া
খাদমুক্ত সোনাকে পাওয়া।
আবেগ তাড়িত দেহগত যত ভাসা ভাসা ভালোবাসা
সেতো তাসের নশ্বর বাসা,
দৃষ্টি ও কায়িক ক্ষুধার খনিটি রত্ন দিয়ে শুধু ঠাসা
স্বর্ণ নয়, ধূলির ধোঁয়াশা।
ক্ষমো-প্রেমো
আমার প্রেম - যতই দিক আমায়
অপবাদ
করবোনা আমি তার-সামান্য কোনো প্রতিবাদ।
দিতে পারিনি-
কাউকেই কোনদিন কোনকিছু
যদিও এখনো লেগে আছে-
আমার পিছু পিছু।
প্রেম দিয়ে ঝুড়িকে ভরে-বাড়িয়েছে কত হাত
অপেক্ষায় থেকে কাটিয়েছে; কত প্রহর রাত।
শুকিয়েছে ফুল-ভেঙ্গে গেছে রেখে দেওয়া ঝুড়ি
দুখী তটিনী তটে, আমি হাতিয়েছি জড় নুড়ি।
দেখাবো কাকে আমার এই তাপিত হিয়া খুলে
যেখানে দুঃখ-ঘৃণা-দ্রোহ-প্রেম সবি
যায় গুলে।
যে দোলনায় দোলে-
ধর্ষিত মৃত শিশুর দেহ
চাইনি সেখানে হাতে হাত রেখে বসুক কেহ।
যত আছে ধর্ষক-
খুনি- মিথ্যুক- অবিচারক
প্রেম কেড়ে আমায় করেছে অঙ্গারের ধারক।
হে প্রেম পিয়াসী অভিলাষী, করো আমায় ক্ষমো
পারিনি রাখতে হাতে হাত, পারিনি দিতে
প্রেমো।