মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬

ঊষসী ভট্টাচার্য



অন্য ঘর
ঊষসী ভট্টাচার্য

ঝিম ধরেছেন সেরেস্তারা
ফেরেন তারা, ঘরের খোঁজে
ঘরের আলোয় চাঁদ বিছানা
ঘরের মানে চাঁদই বোঝে।

বোঝাবুঝির হিসেবনিকেশ
শোনান তারা আয়েস করে,
মুখটি টিপে, আলোক বলয়
লুকিয়ে কাঁদেন সে অন্তরে ।






অ্যালকোহলিক প্রেম
ঊষসী ভট্টাচার্য

রুদ্রর মাতাল স্মৃতিচারণ
আমার রোদ্দুরও ছাই করছে পুড়িয়ে,
নিতান্ত বাক্স বদল খেলা-
তাই এ যাত্রা রক্ষে পেল লোহিত কণিকা ।
নয়ত কবেই বিছানা ভাসিয়ে নদী ছুটত ধমনীতে ,
রাত দশটার কোলকাতা জানে
টলতে টলতে মাতাল প্রেমিক কীভাবে
 চুমু ছুঁড়েছিল প্রেমিকা শাড়িতে ,
আর জানে সেই ল্যাম্পপোস্ট
গণিকালয়ের বাইরে আজও
কোন অপেক্ষায়
ঘরের বউ চোখের জল মোছে ...

তবু, রুদ্রর মাতাল পা
টলতে টলতে ফিরে আসে দরজায়;

শরীর আর শরীর
স্তন- ঠোঁট- চোখ ই কেবল
বদলে যায় পরতে পরতে
আগুন চিঠিতে জ্বলন্ত দাবানল হয়ে পরে থাকে,
চিরন্তন প্রেমিকা হৃদয় ,
যে চিঠির উত্তর আসেনা,
প্রশ্ন পত্র লেখা হয় জন্ম থেকে
প্রতি মুহূর্তের  মৃত্যুতে ...







আঁচর
ঊষসী ভট্টাচার্য
কবিতার খাতা,এলোমেলো অক্ষর !
নীল পেনের প্রুফ চেকে- রুদ্র।

খামোখা ছাপোষা শব্দগুলো উলঙ্গ হাত বাড়িয়ে ,
পোষ মানাচ্ছে ;
এক একটা বর্ণ ক্রমশই তার ডালপালা বিছিয়ে
শৃঙ্খলিত করছে আমার সমস্ত পরমায়ু ।

কখনো হয়তো উঠে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম,
কিন্তু তারা নিঃশেষ করলো -
গ্রাস করলো আমাকে।

আমি একটা সমগ্র উপন্যাস হয়ে যেতে পারতাম,
রুদ্রর পেনের আঁচর আমায় -
মৃত্যুহীন কবিতায় পরিণত করলো।





এই প্রেম- সেই প্রেম
ঊষসী ভট্টাচার্য
হাত ছোঁয়াতেই ভালোবাসা !
ইচ্ছে ভাষা-স্বপ্নে আসা ; তুই
নেশার রাতে; বিদেশ শরীর ,
ন্যাংটো ঠোঁট ছুঁই!

প্রেমিকা তার মায়ের মত
প্রেমিক মানেই বাবা ,
ভার্চুয়ালি প্রেম করেছে
রাত বিছানায় থাবা!

এই গলিটা সেই গলি না
ওই গলিটা ভালো!
রাস্তা চেনার, রাস্তা পথের ;
রাস্তা দুপারকালো!





নবনীতার ডায়েরি থেকেই
ঊষসী ভট্টাচার্য
আজ আর সময় নেই,
আমন্ত্রণে এসেছিলে!
দরজায় তালা দেখে,
ফিরে গেছ নিরুত্তাপ !
মুখ ফিরিয়েছ তাকাতে না তাকাতেই ..

মহড়া চলেছিল অন্ধকারেই,
টলতে টলতে শরীর তখন স্টেজের কোনায় কাত,
অপেক্ষার বারুদে ছাই হয়েছ, নির্নিমেষ ,
এসেই চলে গেছ তাই!
দরজায় ঝুলেছে চেনা ব্যানার
প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ
চেনা কাউন্টারের ছেলেটি বলেছে কারুণ্যে
খুব চাহিদা টিকিটের,
আসবেন আগের বার আরও আগে

সময় ফুরিয়ে রাস্তা হেঁটেছি!
আরও দ্রুত- আরও আরও দ্রুত ,
ঠিকানা মেলেনি গন্ত্যব্যের
উড়ে গেছ তুমি, পিওনের চিঠিতেই


আজ হয়তো সময় বলতে বিবর্ণ ইতিহাস,
আজ হয়তো তোমার সময় বলতে -
ফুরিয়ে যাওয়া সিগারেটের বাক্স,
আজ হয়তো অঢেল সময় কিংবা তুমি,

তবু, আজ এই সময়ে
তুমি নেই !



ঘর
ঊষসী ভট্টাচার্য

যে আলোটি জ্বালার কথা
রন্ধ্রে শিখা,ঝড়ের তুফান
সে দিনান্তে রাতের তারা
শেষ আলোতে বৃষ্টি ঝরান,

তোমার মতো দিনের ছায়ায়
ঘরের ভেতর লুটোপুটি
একটু সোজা, একটু বাঁকা
দাবার চালে দাবার গুটি।

সেই দিনে সেই গল্পটা কার ??
সেই যে চাঁদের বুড়ি ,
সেই যে সে এক তিন তলোয়ার
বাড়ির ছাদে ঘুড়ি

বাড়ির তো সেই ছাদ আর নেই,
বাড়ি মানেই বন -
বনের মধ্যে ঘর বেঁধেছেন
পাগলপারা মন;

মনের কথা , কথার পিঠে
শুক্তনি চচ্চড়ি
কথার ভাঁজে কথাই পোড়ে
কথার কাদম্বরী ,

কাদম্বরীর নামটা চেনা
আদব আঁটসাঁটো
শরীর জুড়ে শক্ত আঁচড়
মনের দেয়াল কাটো!

দেয়াল জুড়ে একটা শ্রমিক
হেঁটেই বেড়ান রোজ;
রোজের ঘরে সন্ধি পুজো
ঘরেই ঘরের খোঁজ  ।।





দেয়াল
ঊষসী ভট্টাচার্য
নিঃশ্বাসের  শব্দ এ ঘর থেকে ও ঘরে।
সকালের ব্রাশে জীবনের চুইঙ্গাম আটকে;
আঠালো আকর্ষণ,
চশমা হারিয়েছি সম্প্রতি
দৃষ্টি নেহাত ঝাপসা ঝাপসা।
এক প্রেয়সীর প্রেমিক আকাশ খুলেছে তার হাতের মুঠোয়,
চিঠিতে লিখেছে-
ডানা মেলে ওড়

আকাশ বলতে বেনামী প্রচ্ছদ
দৃশ্যত জলের পড়ন্ত ছায়া-
ডুবে থাকা আর ভেসে যাওয়া স্রোতে তাই
একে অন্যের নামান্তর।
এক কবিকে প্রত্যুতরে বলেছি,
হাঁটতে শিখেছি, চলতে পারিনা
ঝুঁকতে শিখেছি, উঠতে পারিনা

পাশের বাড়ির ছেলেটি উঠেছে ফাইভে,
রাতের পণ্য মেয়েটির থেঁতলে যাওয়া রঙ মাখা শরীর
ক্লান্ত রাত কাটিয়ে উঠেছে সকালে।
আমার ওঠা , অগ্নি সহবাস সংযোগে ..
জরায়ুর গতি থেমে থেকেছে
রোজের মাতলামো আবদ্ধে।

প্রেমিক কে তার প্রেয়সী লিখেছে চিঠিতে-
আমায় নিয়ে ভেবোনা
অস্ত উদয় নিয়েই জীবন
সূর্যের আলো টুকু নাও,
দহন হাতড়াতে গেলে -
পুড়ে ছাই হবে একেবারে

আমায় নিয়ে ভেবনা
দাবানল নিয়ে বাঁচো





বনমানুষ
ঊষসী ভট্টাচার্য
বনপলাশীর বন্য চিবুক
অন্য কি কেউ ধরতে পারে
বন্য মানেই আদিম পোকা
গুমরে আছে খাদের ধারে

খাদ মানে সেই জলাশয়ের
বিকেল বিকেল নদীর কথা
ভর দুপুরে ভাঁটার টানে
জোয়ার আনে উচ্ছলতা ...






নিরুত্তরের খাম
ঊষসী ভট্টাচার্য
রাত বারোটার মরা কান্নার স্বরে,
টেলিফোনের তার গেছে কেটে।

চেনা হুঙ্কারে ছুটে এসেছে ডাকপিয়ন -
ঘড়িটা টিকটিক করতে করতে
থেমে গেছে একেবারে।

ফ্রিজের লোডশেডিঙে শহর জুড়ে
শীতল কুয়াশা,আর
ঘুম ঘুম গন্ধ প্রেম কার্নিশে।

একটা পূর্ণচ্ছেদেই যখন সমস্ত নীরবতা
ছড়িয়ে যায় প্রান্তর
তখন চেনা পিয়ন ভুলে যায় চেনা পথ,

তাই আজ আর কোন চিঠি আসেনা !