অস্তিত্বের সংকট
আলো বসু
--------------------------
প্রথম দর্শনে বাধা ছিলো না
মনের আরাম , আত্মার শান্তি
হীরের কুচি দ্যুতি অক্ষি গোলক ছড়িয়ে
ঠিক যেমনটা জাপানী গৃহসজ্জার ব্যাপারে
একটি দেয়ালে একটিই ছবি
ফুলদানিতে একটি মাত্র ফুল
কোলাহল বিবর্জিত ঘর জুড়ে একের খেলা
এবং তুমিই খেলছিলে সেদিন সমগ্রে আমার
প্রতিটি দর্শনে এক দুই তিন --- দৃশ্যের পর দৃশ্য
তোমার মধ্যে থেকে লাফিয়ে পড়তে লাগলো
আমার মনে , মণিকোঠায় নানা রকম তুমি
আর সে কী সংঘাত !
সেই সুযোগে প্রথম আলোটি রেখায় রেখায়
দিকশূন্যে ----
এবং যেটা বলছিলাম আমার সম্বন্ধেও আজকাল এমনই
কানাকানি
তবে কী .......
তবে কী এখানে এই ঘরের ভেতরেও
নানা 'আমি'র
অস্তিত্বের সংগ্রাম ?
যাপনায়ন
আলো বসু
--------------
আমাদের হয়ে ওঠার গল্পে বড় বেশি শব্দ ।
কথা হয় , কথা চলে , কথা এগোয় ,
কথা জায়গা বদল করে ।
কথা কথার কথা হয় ।
কথার মতো কথা হবার আগেই
সম্পাদকের বেঁধে দেওয়া শব্দসীমা
পেরিয়ে গেলে
রচনাটি গড়িয়ে যায় আগামী সংখ্যায় ।
আসা যাওয়ার কাব্য কথা
আলো বসু
------------------------------------
সান্ধ্যবাসরে একতোড়া ফুলে ছিলো
স্বাগতম হাসি ----
সকালের আলোয় দেহে তার বিদায়ের
বাদামী রঙ ।
ক্ষণজীবী গল্প থেকে দ্রুত উঠে আসে চোখ ,
অনিত্যের দৃশ্য সইতে না পারা চোখ ,
একদিন
দপ করে জ্বলে উঠে একেবারে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে এই চোখ
-----
কথার প্রজাপতিগুলো বাগানজুড়ে উড়ে উড়ে ক্লান্ত হলে
একদিন শেষবারের মতো ঠোট ছুঁয়ে উড়ে যাবে
ফিরবে না আর ।
রক্তের চলাচল হৃদয়ের দামামায় শেষ বলে যাবে --"একবার
শেষ শ্বাস নাও ।"
আমাকে দুহাতে গ্রহণ করেছিলো এই মাটি , এই জল, বায়ু
---তাদেরও কান্না আছে মৃত মানুষের জন্য ।
হে আগামী , কান পেতে তুমি শুনো, পৃথিবীর কান্না শিশিরপতনে শুনো ঘাসের শরীরে ।
একমুঠো ধুলোর আশিস্ নির্মল প্রতীক্ষায়
আমি আসি, বারে বারে তাই আসি ---
সব নদী ভরে ওঠে , সব পাখি গায় ,
সব শীত ঘুম থেকে বসন্ত জাগায় ।
অমৃতকলস ফুরিয়ে ফুরিয়ে যায়
ভরে ভরে ওঠার খেলায় ।
দিন বদলের গল্প
আলো বসু
------------------------
পার্কের বেঞ্চিতে বসে দেখছিলাম ছোট ছেলেটিকে
মায়ের সঙ্গে সেও বসে আছে
বসে আছে বলা ভুল হোলো হাতে পায়ে ছটফটানি
যেমনটা স্বাভাবিক এই বয়েসে
এদিক ওদিক দৌড়োতে দৌড়োতে হঠাৎ ধরাশায়ী হয়েই উঠে পড়ে 'মা' বলে ছুট্টে
এলো মুখচাপা দিয়ে
গলগল রক্ত দেখে
অসহায় মা রুমাল বার করে মুখের সামনে ধরলেন
রক্তের সঙ্গে দুধের দাঁত একটি বেরিয়ে এলো
কিংকর্তব্যবিমুঢ় আমি মাকে সান্ত্বনা দিয়ে 'দাঁড়ান' বলে ছুটে
গিয়ে পার্কের বাইরে বসে থাকা
আইসক্রিমওয়ালার কাছ থেকে রঙিন বরফের কাঠি আইসক্রিম একটা এনে দিলাম
সেইটি চুষতে চুষতে কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্ত বন্ধ হোল
এত কাণ্ডের মধ্যে ছেলেটি কাঁদলো তো না'ই
একেবারে নিশ্চুপ
ভাবলাম আকস্মিক রক্তক্ষরণের ঘটনায় বুঝি ভয় পেয়েছে
পরিস্থিতি হালকা করার জন্য বললাম ----
.."কিগো
,ভয়
পেলে নাকি বীরপুরুষ ?
আমার এবং মাতার হাসির খোরাক জুগিয়ে বিজ্ঞের মত ঘাড় নাচিয়ে
বলে উঠলো ----
" রক্ত
দেখে আমি মোটেই ভয় পাই না
টিভিতে তো রোজ দিন কত রক্ত দেখি
আমি বলে ভাবছি ইঁদুর গর্ত কোথায় পাই !
ঠাকুমা যে বলেছে দুধের দাঁত পড়ে গেলে ইঁদুরের গর্তে দিতে
হয়" .....এই বলে পকেট থেকে দাঁতটি বার করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলো
হাসলাম ব্যক্তিগত সম্পত্তি সংগ্রহে রাখতে ভোলেনি এত কাণ্ডের
মধ্যেও
কী কাল পড়লো ! বলিহারি যাই ! দুধের দাঁতের সদগতির জন্য
ইঁদুরগর্ত খোঁজা ছেলে রক্তপাতের ভয় ইতিমধ্যেই জয় করে বসে আছে
বুঝলাম দিন বদলের গল্পটা তাহলে সত্যি
আঁধার রাতের কাজকর্মগুলো ইদানীং দিনের আলোতেও স্পষ্ট দেখতে
পাচ্ছে বাচ্চা বুড়ো সকলেই ।
উচ্ছলিত
আলো বসু
--------------
এক একটা দিন অন্যরকম
পুনরুক্তির নয়
সম্ভাবনাময়
অট্ট হাসির কাঁপন লাগায়
ইট পাথরের গায়ে
অমিত অপচয়
চিঠির খবর আনছে বাতাস
সোনার আখর দেহে
হিরণ্ময় আলো
কুঞ্জ বনের পুঞ্জ বিষাদ
শুকনো পাতার খেলা
হুতাশনের রথে
আগুন ধরাই ,উড়িয়ে দিই আর
পুড়িয়ে দিই সব ছাই
স্মরণিকার পথে
জাগরণ আর ঘুমের মাঝে
ঝিমধরা ঘর বাড়ি
চরৈবেতির গানে
পাখপাখালির কথার ভেতর
স্বরবর্ণের খোঁজ
স্বরলিপির টানে
সীমার আঁচড় টবের জাতক
অসীমার সৌরভে
স্বর্গ অবনত
ভোগের পাত্র পূর্ণ কুম্ভ
রম্যের উপহারে
উৎসব সম্ভূত
আকাশ মণিতে উথাল পাথাল
কনে দেখানোর আলো
সানাই সুরে সুরে
রূপ রচনার
প্রগলভরূপ
উজান দিনের কথা
নাম না জানা বিভা
মায়ার হরিণ মোহজাল ঘেরা
পলকের সংসার
নিত্য পূজার বেদী
চোখের জলের সজল দীঘির
পদ্ম পলাশ বুকে
অজানিতের সুখে
শতেক নামের জপন যাপন
জপমালাটির ঘরে
গর্ভ অভিমুখে
গভীর গোপন রোপণ চিহ্ন
সংগোপনের ভাষা
রটিয়ে দিলো কে ও ?
তোমার আসার শুভ সংবাদ
সমস্ত আজ লেখে
অনির্বচনীয় ।