মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬

অলোক বিশ্বাস




সামান্য স্থল
অলোক বিশ্বাস

এই কান্নাটুকু রাখলাম তুলে
চোখের ইজেলে।
ভেবেছি অনেক, এখন যদিও অন্ধকার
জেনেছো কতবার
কত কথা কী কী ভাবে লেখা হবে
আজ বিকেলে?

নিরিবিলি কাঁদতে দেখে
বললাম ডেকে ভালো থেকো ভালবাসা
বলো না পরাজয়...।

বললে না তো, এই যে কাঁদলে যত
ভাঙাচোরা মোছা জলে সেসব দু:খ কথা
বলছি, রেখো না ঢেকে।

ভেঙেচুরে গিয়েছি অনেক
কষ্টে ঢেকেছি ক্ষত সে সব লুকনো ঝড়
বার বার গেছে ভেঙে অনুভবে
রয়ে গেছে দাগ।

সবটাই কাছাকাছি তবু সে দ্বীপের মত
চারপাশে ভূখণ্ড, তারপরে জল আর জল।
অর্পিত নয় কিছু, তবু তুমি সম্বল।
এই পাপ, একঘর ঘামে পুড়ে যাক
কথায় তর্পণ হোক, উহ্য রেখ না কিছু
ভিতরে তো সবটাই জল, সামান্য স্থল;

পুনরায় অটুট অবিচল বিমূর্ত মগ্ন হলে
অশ্রু ঢেলে বলি যেটুকু সঞ্চয় সুরক্ষিত
ভালোবেসে রেখেছি আলিঙ্গনে
তোমার ও আমার এ যুগ্মজয় জানে ক’জনে!






সজনে ফুল
অলোক বিশ্বাস

একটু রোদ্দুর রেখে গেলাম পাতার আড়ালে
প্রবাহিত রক্তে প্রকাণ্ড ঢেউ টলমল টলমল
ভেঙে যাচ্ছে পাড়, মাছেদের চলাচল
শুয়ে আছে মাটি, চারপাশে জল আর জল।

ভাঙনের পাড়ে ব্যাকুলতা অসীম জেনে
লিখেছে কী সব যেন
আমার মাঠের নামে রোদ্দুরে রোদ্দুরে
বিস্ফোরণে স্ফটিক সমর্পণও!

এক পৃষ্ঠায় কত কাটাকুটি
কত রূপ দুলে দুলে স্বপ্ন ভেঙে দেয়
অরণ্যে শিকারি চোখ
গাছেরা অরণ্য পাহারায়;

এই দিনবেলা তোমাকে বলি
যে সঙ্গমে এই সুর ছুঁয়ে গেল ত্বক
দ্বান্দ্বিকতায় নান্দনিক শীতকথা
সজনে ফুল নবজন্ম পাক।






রাতের কবিতা
অলোক বিশ্বাস

প্রসন্ন হও তম্বীরাত, চুপি চুপি দীর্ঘ হও
আমাকে নিবিড় করো ঘনরাত্রির প্রেম
আজ স্নান অবিশ্রাম নির্মল প্রপাতে অন্তহীন
অন্ধকার শীতল মিশে থেকো গহণে
আকাশ ভাষা এনে দাও। ভালোবেসে তাকে করেছি
পাথর, ছুঁয়ো না, সফেদ কফিনে রেখেছি ক্লান্তি নির্বাধ!

তমস্বিনী, বেদনার কথা থাক
রয়েছো রাত্রিজুড়ে মোহে আমার স্নানে
দু’চোখ তোমার ভাষাহীন উদাসীন
এমনই থেকো আমার চোখে সর্বময় অমৃত বিষ।

কূটিল রাতের কাছে কিছু প্রশ্ন আছে
কত আছে জর্জরিত কালো, কতো ঘৃণা অবসাদ ?
নিজেকে গোপন করো মাটিতে মিশে
ঘাসে ঘাসে নবজন্ম হোক।

তারার মালায় রেখেছি ঘিরে
উন্মুখ হয়ো ধীরে ধীরে
আকাশ, আজ প্রসন্ন হও
হৃদয় রেখেছি, দীর্ঘ কালো চুলে
ধুসর বাতাসে কাঁপে দুরন্তর।

দু’চোখ চেয়েছো জেনে এত আলো দিয়েছে রাত
মুখোমুখি আজ শুধু প্রেম। পৃথিবীতে যত গাছ আছে
পাতায় পাতায় লেখা থাক আমাদের নাম।







তেভাগার ধান ঘেঁটুফুল
অলোক বিশ্বাস

তোমাকে যদি আসতে বলি এই নীলবেশে
দ্বারকা নদীর ঘাটে এই অভিমুখে এ বাংলাদেশে?

হলুদ গালিচা পেতে রেখেছে মাঠ
সর্ষে ফুলে সুখ
সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে নিখুঁত

বাকি পথে ধুলো ওড়ে
জড়সড় মাঘ ও পূর্ণিমা তোমাকে বেসেছে ভালো
এই আলোর দেশে এই ধানখেতে।

নেচে নেচে নেমে যাচ্ছে জল পাহাড়ের খাঁজে
যেখানে পুঁতেছি শস্যবীজ
গান হবে, প্রেম হবে বলে ঝরে যাচ্ছে পাতা
এসো পলাশের সাজে।

সব কিছু ঠিকঠাক যদি থাকে বুঝলে শ্রীমতী
উজাড় করেছ ঢের বাদল বাউল
আমাদের চারপাশে মাটির উৎসবে বিপন্ন আমি
কী গান গাইবো বলতো হে ইচ্ছে তোমার কলসে?

অনন্তকাল ভালবাসা লিখেছি তোমাকে
কতবার প্রিয় ঘেঁটুফুল
একনদী শ্রাবণে তোমার সাঁতার
মনসার গান, নীলকুঠী গ্রাম, তেভাগার ধান
রাত জেগে আমাকে নবান্ন দিয়েছে।





অজ্ঞাত বর্ণমালা
অলোক বিশ্বাস

থেকে যাও চৈতী বাতাস, অনুরাগ তুমিও
বসত গড়ো গানে গানে
হৃদয় সেতার আঁকো ক্যানভাস
বিশ্বাসে হাত রেখেছি এখানে।

যে বর্ণমালা ছুঁয়েছে হাতেখড়ি
রঙ বদলানো রোদ্দুরে সুন্দর
বর্ণে বর্ণে আমাকে দোলাও সুর
অঞ্জাতবাস ভেঙে দাঁড়াও অভিসার
ভালোবেসে তোমাকে চিনি।

সেই তো কবেকার রেখে দেওয়া কথাগুলো
আবার জেগেছে আমার হয়ে
যতটুকু জলে ভিজিয়েছি জোছনা রাত

পাতা উড়ে যাওয়া গল্প ফিরে আসা বৃষ্টিতে
চিঠি করে পাঠাবো তোমায় সন্ধ্যামণি

কতদিন পরে তোমার সিন্ধুক খুলে দেখলাম আজ
কিশোরীবেলায় দেওয়া আমার সকাল
কতগুলো দিন একসাথে মেদুর গান
কত রঙ মেখেছো পালক !