মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬

তোফায়েল তফাজ্জল




ছেঁড়া ছায়া
তোফায়েল তফাজ্জল
ছেঁড়া ছায়া বন, বিহঙ্গ মুখে কি তাই
অনিরাপত্তার স্ফুলিঙ্গ ঝরানো কলি ?

এরা কেমন রক্ষক   যারা সবুজের
বয়ঃসন্ধি তুলে দেয় খদ্দেরের হাতে ?
কালের কাছে কি এরা নয়
জন্মান্ধ দালাল ?

বাঘের থাবায় রক্তাক্ত হরিনী দিন,
হংসী বাচ্চা ভেবে ছোঁ মেরে উঠিয়ে নিতে উপক্রম
বন বুনো নিরাপত্তা
অথচ শৈবাল পিছলা চেতনা টেবিল,
ডিমে তা দেয়ার মুরগি মানসিকতায়
উর্ধ্বতন দৃষ্টিভঙ্গি !

নাড়ি জুড়ে কেনো নেই সামুদ্রিক ঢেউ ?
কুড়াল, করাত কেনো নয়
এখনো আসামী ?





বৃষ্টি-নর্তকীর দল
তোফায়েল তফাজ্জল
আসর মাতানো এই টান টান বাজনা সেই মেঘালয় থেকে
সিঁড়ি বেয়ে নামে ছন্দ সুষমা মেনেই

সময়ের ব্যবধানে সব ধরনের তাল, লয়, আঙ্গিকের ব্যবহার
এর মাঝে স্বয়ংক্রীয়; জলেস্থলে সম্মোহনী তালে।
ফোঁটারা বোঝায়, বাদ্যযন্ত্রে নিজ হাত কতো পাকা!

শিঞ্জনের অনুকূল সাড়া পড়ছে সব প্রাণীকানে  –  ওম শান্তি।

এরা অগ্নিগর্ভে শীতল সৌহার্দ ঢেলে সযত্নে জাগিয়ে তোলে
অন্যজাত উত্তেজনা, স্পর্শে  জমিজমা শ্যামল ঘাগড়ায় কমনীয় কায়ে –
এ স্বাক্ষর যতো দ্রুত স্পষ্ট ততো দ্রুত
কৃষকের চিন্তার উঠোন থেকে ক্ষিদে পথ মাপে
মুরগি চোর বুনো পায়ে
গলাটা বাড়িয়ে দেয় নতুন উদ্যোগে।

বৃষ্টি এলেই কোত্থেকে নামে এই নর্তকীর দল?
এরা কি মেঘের পঙ্খীরাজে চেপে স্বাধীন স্বাধীন ?

এদের ফিতার পাকা সাত রঙ- কি মেলে ধরে পুবাকাশ ?





গতদিন
তোফায়েল তফাজ্জল
থেকে কেবল ঘেঁটে তুলে নাও দু'চার চামচ
অচটুল কথাগুলো চাহিদা হিসেবে;
যতো জোরেই টানুক আর ফিরেও দেখবে না
বাঁ-হাত সরিয়ে সামনের চুলের শোভা, বাঁকিয়ে হরিণী গ্রীবা।
দেখবে, সব নীরবে সরবে নর্দমায় পড়ে ভেসে যাওয়া ছেঁড়া কাঁথা
জলে ডুবে থেকে লেখা মুছে যাওয়া খাতা
সায়াহ্নের বিজ্ঞপ্তির হলুদ ইঙ্গিতে
কিংবা ঝড়ের তান্ডবে ছিঁড়ে যাওয়া পাতা,
ক্ষুদে পিঁপড়ে বা উইয়ের কবলে চালুনি
হয়ে যাওয়া ছাতা;
বাকুল্লায় পেয়ে বসা ধুনুরির পেঁজা পেঁজা তুলো;
অসাবধানতায় এক ফোঁটা গো-চনা আক্রান্ত দুধ।
জানবে, ওটা হা-মুখে এগিয়ে আসতে থাকা জলহস্তি,
হাঙ্গরের অধীনস্ত এলাকায় গা এলিয়ে পড়ে
কাঁটা বনের গভীর গর্তে পা দিয়ে হাতড়ানো ;
বাঘের গুহায় বেড়াতে যাওয়ার মতো চিন্তার বিকার। 





সম্পর্ক
তোফায়েল তফাজ্জল
কিন্তু বাজারী পণ্য নয় কোনো, গ্রাহক পেলেই
বেচবে বা তুলবে নিলামে,
বরং দু'য়ের জানা অজানা সায়ে বা উপাদানে বিনির্মিত এর ভিত।
 
একে অভঙ্গুর রাখতে হলে নিরবিধি
ত্রুটি-বিচ্যুতির ব্যাখ্যা আদায়ের বেহায়া অভ্যাসে
মারতে হবে নীরব মুছুনি।
দ্বন্দ্বে বা শাখের করাতে না ঠেলে থাকবে সম্পূরক, পরস্পরে। 

এবড়ো থেবড়ো বিষয়াদি যতোই এড়িয়ে বা মাড়িয়ে
জোড়া লাগবে ততোই গভীরে, আগামীর পথ হবে নিষ্কন্টক।

আরো দু'দাগ ওপর গিয়ে বলি, সঙ্গীর আবেগ
সময়ে লাগিয়ে ছুঁড়ে ফেলবে না তা তার পা গর্তে পড়ার দিনে,
ন্যাকড়া জ্ঞানে; পরিষ্কারে কাজে লাগে সেই ভাঙ্গা কুলা।

অধিক রগরালে লেবুরস চিরতায়
মাত্রা অকবুল টাইটে নাট-বল্টুও ছিঁড়ে বা খন্ডিত হয়ে

তাই, মাটির চরিত্রে থাকা চাই, একে একে দুই  





কথা
তোফায়েল তফাজ্জল

মুখ নিঃসৃত সকল ধ্বনিই কি
এদিক সেদিক হাতড়িয়ে হাওয়ার হাওলা ?

এরা বাইরে বের হয়ে শৈশব মাতিয়ে তোলা লাটিম ঘূর্ণনে
চাকতি রূপে, মার্বেল  আকারে  গড়াতে গড়াতে
ক্লান্ত হয়ে পড়ে বিশ্রামাগারের সুবিধা নেয় না;
বরং দৌড়ের ঘোড়ায় চক্করে ব্যস্ত সারাক্ষণ।

কথা বলতে রাজস্ব লাগে না,
না কোনো মাপকাঠি দিয়ে এর সমকোণ নির্ধারিত –  
যার ঠোঁটে ব্যাপারে হিসেব নিকেশ বিরাজিত
তার ওজনে স্বচ্ছতা আছে

মনে রেখো, ঠোঁটের এলাকা পার হয়ে পড়া কথা
প্রকাশ্যে বেরিয়ে পড়া ঠিক দু'টি গজদন্ত   চাইলেও পারে না
ঢুকিয়ে গুছিয়ে রাখতে সমানে সমান।

তাই বলি, বেরিয়ে পড়ার উপক্রম

হওয়ার আগেই এর মাপ ওজন প্রয়োজন।