আমার রবি
সোনালি
পুপু
আমার আকাশ আলোয়ে ভরা
আমার মেঘে সোনা ।
মেঘের কালো ঘোমটা টানা
বৃষ্টি ফোঁটার কণা ;
ছোট্ট পুপুর জানলায়ে মুখ
পিছনে সুর বাজে –
হাওয়ায়ে ওড়ে গানের পাতা
“মন লাগেনা কাজে”
রঙ্গিন শাড়ি ,কাজল চোখে
রূপকথা যায় ছোঁয়া।
স্বপ্নগুলো সত্যি হয় যে
ষ্টেজের আলোয় ধোয়া।
সেই সখাটি- ই হাত ধরেছে,
হাত রেখেছে হাতে।
দুখের দিনকে পেরিয়ে এলাম তারি
সাথে সাথে।
একা একা
সোনালি
পুপু
কেউ কেউ একা থাকার জন্যেই
জন্মায়ে।
তাদের একা থাকাটা ঠেকানো যায়ে
না কোনও ভাবেই।
তাতে দুঃখটাই বা কোথায়ে?
এটাই বোঝাতে পারলাম না বড়দের।
ছোটবেলা থেকে কেবল ভয় পাচ্ছে,
“মেয়েটা একা একা কি করবে?
মেয়েটা একা একা কি করবে?...”
আরে, একা থাকার
চেয়ে দোকা হওয়া যে অনেক বেশি কষ্টের
এটা কি বড়রা জানেনা?
কি জানি বাবা!
আমার ছোট্ট রঙ্গিন কাঁচের arch দেওয়া লম্বা
ফ্রেঞ্চ জানলাওয়ালা মিষ্টি সীমা স্বর্গ,
তার খুদে রাজকন্যা,
তার তাক ভর্তি বই,
তার খাট ভর্তি গান,
তাকে দোকা করতে গিয়ে একেবারে
যাবজ্জীবন জেল ,
সশ্রম কারা দণ্ড ।
আচ্ছা, মানলাম
সূর্যদেবের বরে ,
গায়েব – গায়েবী
পেল----
নেড়ে চেড়ে বেলা যায়।
কাজও বাড়ে কত?
তারা বড় হয়, ভালো হয়—
সূর্যের আলোয়ে ঝলমল ;
মা ক্লান্ত হয় , একা হয়,
সীমা স্বর্গের স্বপ্ন দেখে বসে ।
তাই বলে ,
একারা দোকা হয় না।
আর একা থাকা কিছু খারাপ থাকাও
নয়।
এইতো দিব্বি রোদের উত্তাপ আর
ঠাণ্ডার শিরশিরানি মেখে
আদরের স্মৃতির আঁচল
গায়ের চার পাশেতে
টেনে নিয়ে ;
ওম মেখে থাকা।
সখ্য
সোনালি
পুপু
যে রাতে হসন্ত এলো--
সে রাতে ছিল না কোন পাখি।
প্যাঁচা , বাজ, কোনও পাখা
পালক,ঝিঁঝির
ডাকাডাকি
কিছুই যায়নি শোনা।
কেবল শত্রুতা ছিল
ধার।
বাঁকা বাঁকা কথা,ঝাঁজ,
চোরাগোপ্তা ভোজালির মার,
এই সব সখ্যতার চিহ্ণ।
বুদ্ধিমত্তা, আন্তরিক
দ্বেষ ,
নির্ভেজাল কপটতা ,
প্রেমের মুখোস পড়া শ্লেষ
শ্মশানের দীর্ণ আঙ্গিনায়ে ,
যে হেতু জ্বলন্ত আমি।
বর্শা ধারী বীর বীরাঙ্গনা
উল্লাসে উৎফুল্ল ছিল;
এই বারে ঘুঘু --আনমনা
কিছুতে পাবে না পার
ধান খেয়ে যেতে ।
তবু দেখ গঙ্গা যায়
গঙ্গা জল স্রোতে।
সেই সিঁড়িগুলো চেনা।
ছল ছল জল।
ঘাটে অস্থি
হাতে আমি।
ফলা বেঁধা গায়ে
শর শয্যা গয়না পড়ে থাকি।
হাতে বাবা - মার ছাই
ক্রমে মুছে দেয় ব্যথা ।
সুখ দুঃখ ফাঁকি-
সব জ্বালা নিভে আসে।
গেরুয়া জাহ্নবি
নরম আলোর ভোর
পাড় ছুঁয়ে
যায়
ও পাড়ে বেলুড় আর তোমার
ঐ ঘরের দরজায়ে
ঠাণ্ডা হাওয়া বলে
"নমো-"
ভিজে হাত পিঠে রাখে,
বেঁধা তীরগুলো পড়ে ঝরে।
আমার সকল ব্যথা
নীলকণ্ঠ নিজে পান করে।
আধুনিক
সোনালি
পুপু
পৃথিবীটা গোল? নাকি চেপটা
তা জানি তো ?
সারা গায়ে জাল
ইন্টারনেট ।
কাপড়ের ফালি , নাকি তিন
কোনা
স্টাইলিশ ?
নাকি শুধু আস্বচ্ছ
কালো নেট?
•
গুহায়ে থাকত যারা
টুকরো চামড়া
ঢাকা
এক কানে হাড়
"কুল“ উল্কি ---
তারাই সবার চেয়ে
ফ্যাশান চোস্ত ছিল,
আবছা আগুনে
রং ফুলকি ।
খদ্দর , তাঁতে ঢাকা
মা আমার, আপিসে
নেহাত গাইঁয়া
তার ঘর, বর।
শরীর যায় না দেখা,
ঘোমটায়ে মাথা ঢাকা
টুকটুকে লাল টিপে
বর্বর ।
লম্বা পা ঢাকা প্যান্ট ,
কব্জি ও শার্টে ঢাকা ,
পুরুষ সভ্য হয়
দুনিয়ায়ে।
উদোম না হলে
নেই কন্যার স্বাধীনতা?
শিগগির ককটেল
নিয়ে আয়।
ব্লু টুথে কানের পাশে
ফিসফিসে চেরা জিভ
বলে ,"খোলো
বোল্ডলি
তলপেট --
সব কিছু না বেচলে
স্বাধীন হবে না , সোনা।
"
টার্গেট খোঁজে
"চিক -ম্যাগ্নেট ।
এই সময়
সোনালি
পুপু
না। কিছুই ভাল লাগছে না যখন,তখন অকারণ
হাসি মুখে বসে থাকা কেনও?
সবাইকে নরমাল মুখ দেখাতে হবে বলে? বোকা বোকা।
না হয় লোকে খারাপই বললও, তাতে কি
যায় আসে? হুঁ
?
কেনই বা দৌড়োতে হবে, খামখাই?
আমি বাইরে যদি না খুঁজি আর?
যদি ডুব দিতে যাই একা;
যদি স্থির হয়ে সেই ফাতনা
ভাসানো লোকটার মত ছিপ হাতে বসে থাকি?
সবাই কি বলবে? নিয়ম নেই ,নিয়ম
নেই...।
আর সেই আমার মুণ্ডু নাড়া
পুতুলটার মত মাথা নাড়াবে কেবল?
নো ডাউট ;ওই জন্যেই
প্রথম দিনই এক টানে মুণ্ডু পাত করে ফেলেছিলাম ওটার- --
ও আর কখনও মাথা নাড়েনই।
আমিও আর কার তালে তাল দিতে
পারব না।
ইশকুল, অফিস, ধোপা, মুদি,কাজের লোক ,সবাই, সব্বাই
যে যেমন খুশি পড়ে থাক, চরে
খাক------
আমি শুধু জানালা গলিয়ে
আকাশকে ছুঁতে চললাম।
নারকেল পাতাদের গায়ে লেগে
থাকা রোদকে আঙ্গুল বুলিয়ে,
পাশের গাছে চিরিকদাস
কাঠবেরালিকে হ্যালো বলে ,
পিছনের পুকুরের ঘাস মাড়িয়ে ;
ছেলেবেলাকে ছুঁতে দৌড়,দৌড়, দৌড়।।...
ঋজু