মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬

শমীক জয় সেনগুপ্ত



ট্রামকার্ড
শমীক জয় সেনগুপ্ত

ট্রেস্পাস করা ভাবনাকে দেখাইনি ট্রামকার্ড।
এখন যে অলস বিকেল-
মেঘলা দুপুরকেও কাছে টেনে এনে
সহসাই আবক্ষ প্রেমে ঘ্রাণ নেয় দীঘল সন্ধ্যার,
 সেই জানে ঘুম কত প্রিয়।
সেই জানে রাস্তাটা কতটা পিছল হবে আর..
দোটানাতে রাস্তারা কোন দিকে অবশেষে যাবে।


তারাতলা মোড় থেকে বাঁকে ফেরে মিনিবাস - অটো;
কিছুটা আলোর সাথে অন্ধকারেতে
একাধিক সন্ধ্যেকে পাঠিয়েছে ডাক
সন্দেহ ভীড় জমে যে কথারা পায় অবরোধ
তাদের সে ঘুম নিয়ে তারা ভালো থাক।
ভাবনারা ভুল পথে অযথাই ঘোরাফেরা করে।

ঘুম থেকে উঠলেই ধোঁয়া ওঠা চায়ের বিকেলে
বুক চেপে ধরে তার আলগোছে কাগজী সময়-
কতটা জলেতে ভিজে ট্রেনলাইন পার হয়ে যাবে ?
মাথাপিছু ভীড় খোঁজে তামসের নিবিড়াশ্রয়!
ওদেরকে দেখাইনি কি কি জানি
কি কি ঢেকে রাখি।
তুরুপের তাস ছিল এই দুটি চোখ -
ভুল পথে গিয়ে তারা খুঁজে নেয় সঠিকের দিশা;
দুপুরকে সাথে নিয়ে জানলায় একাকী বিকেল
একটা সন্ধ্যা বুকে ডাক দেয় ফিরে আসবার।

------------------------------------------------------------------------






রূপকথা
শমীক জয় সেনগুপ্ত

    
নষ্ট হয়েছে যে চাঁদ,
তাকে তুমি দিও না অজুহাত-
সেও জানে আপোষের মানে।
    
জানলা ভেঙে জ্যোৎস্নারা সব থিকথিক করে,
কিছুটা বিছানাতে
আর বাকিটা আঁধারে।
   
অভিকর্ষণ আর প্রলম্বিত লয়ে-
যে সুর একাকী ভাসে;
তারা জানে রূপকথা কতটা বাস্তব।

   
যে শরীরে ফাগুন আসেনা
সে শরীরে শরৎ-বর্ষা- শীত,
সব কিছু রুদ্ধ সঙ্গীত।

   
আমার রূপকথা জানে নিজে-
কতটা শব্দে ছিল,
কতটা ঘামে ছিল ভিজে।

   
সৌদামিনী মুখ রেখেছি তোমার মুখে,
সুখ খুঁজবার ছলে-
নষ্ট চাঁদ, নষ্ট আমায় বলে। 

--






হারামজাদা
শমীক জয় সেনগুপ্ত

তুমি যদি হারামজাদা হবে,
তবে তোমার দাঁতেতে ঈশ্বর-
বিঁধে নিও একটা গোলকভূমি
ভাসিয়ে দিয়ে প্রেমের চরাচর

আমার শরীর ফাগুনে বর্ষায়
টুকরো কাগজ চোর-পুলিশী খেলা;
তোমার খেলায় আঁশ মিটলে পরে-
তুলে রেখো ঠুনকো অবহেলা।

অনেক হল হ্যানো-ত্যানোর গপ্পো;
এবার এসে একটু ধরো হাত-
আমার দেহে কাটাকুটির মেলা...
ত্রাণ করোগো, বিঁধিয়ে তোমার দাঁত।








চুল্লীটা নিভু পড়ে থাকে
শমীক জয় সেনগুপ্ত
যে আগুনে দেহ সেঁকে ওম                  
যে আগুনে মন পুড়ে খাঁক
সে আগুনে জ্বলেনি উনুন
সে আগুনে ফোটে না তো ভাত।

যে বুকে মুখ ঘসি রোজ-
যে বুকেতে সুখেতে ঝাঁপাই
সেই বুকে এই মুখ কই?
জল চোখে দু চোখ ভাসাই

যে কথারা শুধুমুধু কথা
যে কথা দেওয়া তো যাবে না...
সে কথারা শাশ্বত হক
বেড়ে যাক কথা আনাগোনা।

যে বা যারা আসে চুপচাপ
যে বা যারা মনেতেই থাকে
সেই তারা কাঁদিয়ে পালায়
চুল্লীটা নিভু পড়ে থাকে।







শব্দ যখন প্রেমিক ছিল
শমীক জয় সেনগুপ্ত

শব্দ যখন প্রেমিক ছিল -
বৃষ্টি ভেজা জলের মত;
সে আমাকে সঙ্গে নিয়ে
ভিজে আসতো একটা শ্রাবণ।
শব্দ তখন প্রেমিক আমার -
গোপন মনে ইচ্ছেপোষণ    শব্দ নিয়েই।

এখন সে তো ভীষণ দূরে,
প্রেমিক অতীত, ঈশ্বর সে।
তাকে ছুঁতে ভিড় ঠেলেছি
মনের কোণে জট পাকিয়ে
হারিয়ে যাচ্ছে সে রূপকথায়।
শব্দ এখন ব্রক্ষ্ম হলো
কে যে ছোঁবে, নাগাল কে পায় ?

তবু ভাবি শব্দ কেমন-
কেমন করে একলা ঘরে;
পিদিম জ্বালা বুকের  মাঝে..
ধূপ ধুনোকে সহ্য করে!
ভুলে থাকে বৃষ্টি ভেজা
শ্রাবণরাতের ইতিবাসর।
ভাবতে ভাবতে কখন দেখি
প্রেমিক আমার শব্দবিভোর
আমার জন্য এক এক মুঠোয়      রাখছে বেঁধে চুপকথাদের।








সুইসাইড নোট
শমীক জয় সেনগুপ্ত

শরীরে শরীরে আর পদ্ম ফুটিয়ো না
পাঁক ভিড়ে সমাধি আমার।
আমারই অতল থেকে অন্য সে কেউ
আমার স্থায়িত্বকে করে ছারখার।

তিলেতিলে বিষ জমে অভিমানী চোখ
বলুক এ মৃত্যুও জীবনের হক।
মন মরে গেলেও ক্রসিঙেতে বেজে ওঠে
রবীন্দ্রসঙ্গীত।

যে শরীরে বিষ জমে বিসমুখে
ফুটে ওঠে প্রণয়-কমল
সে শরীর রাষ্ট্রের, সে শরীর
সেই মনে আমার আজ নেই অধিকার।

ভালোবাসা আজ অন্যায়।