মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬

কাকলি ভট্টাচার্য




আমার হিরেকুচি
কাকলি ভট্টাচার্য

স্বপ্নের নদী থেকে স্নান করে উঠে,
নিয়ে এসেছিলাম --
এক কুচি হীরে --
পরম যত্নে হৃদয়ের কৌটোয় ভরে রেখে দিলাম--
আমার ছায়ায় ।
দেখতে দেখতে সেই হীরেকুচি আকারে বড়,
দেখতে দেখতে তাঁর শরীরের উজ্জলতায় --
অন্য সব কিছু ম্লান ।
তারপর অনেকদিন --------------
একদিন আলমারিতে পোশাকের ভাঁজে রাখা কউত খুলে দেখি--
অবহেলায় অযত্নে --
বড় অভিমান হয়েছে হিরেকুচির ,
ফিসফিস করে বলল--
"কতদিন হাতে নাও নি,
নিজের হাতে ঝারনি , মোছনি
বড় হয়ে গিয়েছি ভেবে রেখে দিয়েছ একা একা--
ভালো লাগে এমন ?"
সেই থেকে হীরে টাকে সব সময় সঙ্গে রাখি
তাঁর নাম দিয়েছি---
ইমন ---







খবর পাইনি
কাকলি ভট্টাচার্য

সত্যি বলছি--
ন্যূনতম আভাষ টুকুই  যথেষ্ট ছিল
সেটুকুও সময়মত এল না
এলেও বন্ধ দরজায় করা নেড়ে ফিরে গেছে।
এখন যেমন সব কিছুই আপেক্ষিক
তেমনি সব সম্পর্কের গাঢ়ত্ব বা তরলতা
অনেক সময় ইচ্ছে না থাকলেও ।
তাই নিজের মতই অথচ অন্যরকম
হুবুহু একটা পরদা টেনে দি --
 টেনে দ্যায় ।
তবুও এইভাবে থিতোতে থিতোতে
এক একসময় যখন ভিতরের তলানিটা
নাড়া খেয়ে ওঠে --, সবকিছু ওলট পালট
হয়ে যায় --
আবার ইচ্ছে করে ভীষণ ভালো একটা কিছু করতে--
নিজের মত হতে ।
সত্যি বলছি
আমি সেইদিনই আসতাম ।
আমি খবর পাইনি








চাঁদের রূপকথা
কাকলি ভট্টাচার্য

নিঝুম রাতশেষে
পরিদের নদীর জলে স্নান, চাঁদের আলোয়।
সোনার কাঠি - রুপোর কাঠি
অদল বদল------
রাজকন্যের জাগরন--
তখনও জ্যোৎস্না ।
চারিদিক আলোয় আলো --
চাঁদের ক্লান্ত লাগে, এত রূপের ছটা , কলঙ্ক মুছে যায়
নাগকন্যা উলুপির পাতালঘরে দৃশ্যমান
নয় চাঁদের আলো ।
মহালয়া তে মাইকে গান বাজে--
সে যেন আসে না আমার ঘরে
তারে বলে দিও








একটি ছোট্ট লামার প্রতি
মেঘ-কিশোরের ছড়া
কাকলি ভট্টাচার্য

মেঘের দেশে কিশোর শ্রমণ
ধ্যান গম্ভীর ইচ্ছে প্রবল,
জীবন বয়েছে তিস্তা খাতে-
তিয়াসা চোখে হৃদয় ব্যাকুল।
কিশোর তুমি হয়ত শ্রমণ,
ভিক্ষু আজি স্বার্থহারা-
তবুও আকাশে ঐ গুরু মেঘ,
নামবে এখনি বৃষ্টিধারা--
অন্য দেশের অন্য মানুষ--
কত আসে যায় মেঘের দেশে,
ভিক্ষু চোখে উদাস হওয়া--
জানে না কি আছে জীবন শেষে।
সমতলে শহর উচ্চকিত,
কিন্তু পাহাড়ে জমে মৌনতা।
মৌন কিশোর ভিক্ষু সাজে --
দুচোখে জমে শুধু শূন্যতা ।







পরশপাথর
কাকলি ভট্টাচার্য

কবিকে যে মেয়েটি নিয়ে
গিয়েছিল
মেঘের দেশে--
সংকোচে তাকে ফিরিয়ে দিয়ে --
কবি এখন বাউল বেশে--

আলের পথে, নদীর ধারে,
পৃথিবী আকাশ সাক্ষী যখন-
শুকতারা নামে কবির পাশে
কবির জগত রঙিন তখন।

ও কবি তুমি খুঁজছ কাকে?
খুঁজতে খুঁজতে ব্যাথায় নিথর--
আলোকবর্ষ দূরে চলে গেছে--

মনের মানুষ -- পরশপাথর।