সার্কাস
সৌমিত্র চক্রবর্তী
----------------------
একটা করে দিন সরু তারের ওপরে হেঁটে যায়
মাত্র একটা ব্যালান্সের খুঁটি আর বিকিনি সম্বল,
কর্পোরেট তাঁবুর তারা গ্রহ গ্রহানু উপগ্রহের
আলোছায়ার কারসাজি গায়ে মুখে মাথায়
সাপটে মেখে লাল কালো সবুজ মাথার
পৃথিবী পোকার দঙ্গল হৈ দিয়ে ওঠে নির্ভরতার
ছমকছল্লু পরম মায়ায়;
খেলা শেষ হলে, মাঝবয়সিনী রাত্রিকে জড়িয়ে
ক্যাম্পখাটে অঘোরে ঘুমায় রমণক্লান্ত
দো কড়িকা বিকিনি;
স্বপ্নের মধ্যে ভীড় করে আসে, জড়ায় আদরে
গত জন্মের স্বাদ ভুলে যাওয়া চুমু;
ডিমলাইটে কর্পোরেট তাঁবুর লাক্সারী প্রান্ত তখন
চকচকে চোখের তারায় স্ক্রীনশট নেয়
গন্ধ শোঁকে, নাড়ে চাড়ে, চাটে সরীসৃপ
চেরা জিভে বিনিময় নোটের বান্ডিল।
*****
আজাদী
সৌমিত্র চক্রবর্তী
----------------------
আজাদী চাইলেই ঝুড়িভর্তি আজাদী নিয়ে বসে নেই
কোনো চা দোকানি,
সব্জীওয়ালা, ভ্যাটদার কিম্বা বেশ্যাপাড়ার প্রাক্তন মাসী,
আজাদী কোনো ব্র্যান্ডেড মাল নয় যেটা বেকহ্যামের বউ পিঠে
কাঠবিড়ালির আদরের লোগো ছেপে
কোয়েস্ট মলে থার্টি পার্সেন্ট ডিসকাউন্টে ঝারবে;
আজাদী পেতে হলে যে যার নিজের বাড়ী সাফসুতরো
করে, নিজের গা থেকে পচা গন্ধগুলো
ঘষেমেজে তুলে নেমে এসে বলে ফেল তো বস -
ইয়েস অ্যাম অলসো আ সিটিজেন!
হামসে যো টকরায়েগা...
******
কপিক্যাট সময়ে
সৌমিত্র চক্রবর্তী
----------------------
রিলেশন হাঁটছে...
রিলেশন হাঁটছে...
টগবগে তড়বড়ে
তড়বড়ে দড়বড়ে
জিন পাক বিয়ারিংয়ে
সাদাকালো জলরঙে
ঋতুমতী চক্করে
হাঁটছে ... হাঁটছে ...
রিলেশন হাঁটছে...
রিলেশন হাঁটছে...
খ্যাতি চাই টাকা চাই
চাই সুখ স্বস্তি
ওলাক্যাব মস্তি
বাজেটের আগুনে
কাবাব ও লেগুনে
হাঁটছে ... হাঁটছে ...
রিলেশন হাঁটছে...
রিলেশন হাঁটছে...
এও থাক ওও থাক
চ্যাটিংয়ের টুকটাক
ঝকমক চকমক
একুশের পাশাপাশি
আংটি ও তাবিজে
হাঁটছে ... হাঁটছে ...
রিলেশন হাঁটছে...
রিলেশন হাঁটছে...
ইয়াংকি কালচারে
ন্যাটো ক্র্যাফট ভালচারে
শব্দ ও পিভিসির
মারনিক দূষণে
ফুটো মাথা ওজোনে
হাঁটছে ... হাঁটছে ...
রিলেশন হাঁটছে...
রিলেশন হাঁটছে...
ভ্যাগাবন্ড কবিতারা
ফ্রডুলেন্ট কবিতারা
একইসাথে হাত ধরে
বুকে ঢলে পড়ছে
সাততারা ফ্যাশনের প্যারেডে
হাঁটছে ... হাঁটছে ...
রিলেশন হাঁটছে...
রিলেশন হাঁটছে...
*****
এ পরবাসে
সৌমিত্র চক্রবর্তী
----------------------
ভাবছি এবার সংযত হব।
রক্ষকূলের স্বর্গসুলভ আবহাওয়ায় নিজেকে মানিয়ে নেব খাপে খাপে।
বাঁধনছাড়া ছোটনাগপুরিয়া উচ্ছ্বাস ভুলে যাব এবার,
ভুলে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করব বনকুল, পলাশরাগ, ছাতারে কোয়েলিয়া দুপুর।
ভালোবাসি শব্দটা এখানে বড় ক্লিশে,
ভালোবাসা এখানে শুধুই দেহসর্বস্ব কামদহন,
এই সুগন্ধী নন্দনকাননে ভালোবাসা শব্দের মানেই জানেনা
দেবদেবীরা।
ভাবছি এবার মিতবাক হব।
ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে রাখব সর্বজ্ঞ হাসির আভাস।
স্তাবক মোদক চেটেপুটে খাব দুহাতের তালুতে মেখে,
প্রশংসার কোঁচা দুলিয়ে ধন্য করে হেঁটে যাব সাজানো মঞ্চের
মাইক্রোফোনের দিকে।
প্রশংসা বিলাবো না আর অকৃপণ।
ভাবছি সমকক্ষ রাখব না আর।
রণের নীতির সমান্তরাল ট্র্যাকে হেঁটে যাব একাই
বিধিসম্মত কূটকৃতে নির্মূল করব অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের।
ভাবছি অনেকদিনই তো হলো,
এবার মানুষ থেকে ভদ্রলোক হব।
*****
প্রাকৃতিক
সৌমিত্র চক্রবর্তী
----------------------
চলো মুসাফির সময় হলো
গাঁঠরি তোলো ... গাঁঠরি তোলো ...
আজ কতোদিন পরে তোমার দিকে চোখ তুলে তাকালাম বলো তো! আর তাকিয়েই অবাক হয়ে
দেখলাম কি দুরন্ত রঙের খেলায় তুমি মেতে গেছ। হোলির থেকে কয়েক পা দূরে দাঁড়িয়ে তুমি
আশ্চর্য সব রঙ গুলে ছড়িয়েছ চারপাশে।
আমার বার্ষিক ক্যালেন্ডারের পাতায় মাত্রই হাতে গোনা
কয়েক মাস রঙধনুর গোলার্দ্ধের হৈ মিলানো পথে খেলতো রঙমিচোলি। তারপর ...
এখানে রাস্তা যন্ত্রনার হেয়ার পিন ব্যান্ড ...
এখানে রাস্তায় তারপর শিকারী কুকুরের আনাগোনা ...
ঠিক এক বছর আট মাস পরে তোমাকে দেখে ... গাছেরও এত রঙ হয়!
সেই কোন বিস্মরণের কিশোরবেলা থেকেই মুখস্থ করে এসেছি ক্লোরোফিল,
সবুজ, তারুণ্যের ইতিকথন। আর আজ! সব ধারণা উল্টে পাল্টে
ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে তুমি ইচ্ছেমত রঙ গুলেছ প্যাস্টেলে, কি বিশাল
ছোটনাগপুরিয়া উথাল পাতাল মালভূম ক্যানভাসে মূর্ত বিমূর্ত দুইই এঁকেছ দুহাতের উচ্ছ্বসিত
আঁচড়ে।
দোলের দিনগুলোর প্রাকমূহুর্তে তোমার খেয়ালে রাস্তা গৈরিক
সবুজ; নহবতখানায় পূর্বরাগের আসর শুরুর ভৈরোঁ রাগিনীতে উছলে পড়ছে লাল সূর্যোদয়। এখন চায়ের কাপেও তোমার শুদ্ধসত্ব নিবেদনের
ছায়া পিকাসোর অনন্য অয়েলপেন্টিং হয়ে গেছে।
সূক্ষ্ম সময়ের বিচলনে শার্সিতে ছায়া পড়ে। বন্ধ কাচের প্রতিচ্ছবিতে মাথা ঠোকে
সরল খেচর। প্রতারিত
হওয়ার শেষ প্রান্তে পৌঁছলে তোমার কোলেই পরম শান্তির শেষ আশ্রয় অকৃপণ। হোক সে অসমতল তবুও মুসাফিরকে ফিরতেই
হয় সেই মালভূম রাস্তায়।
নিজেও জানিনা কখন প্রেমিক হতে গিয়ে বেজন্মা হয়ে গেছি ...
চলো মুসাফির ইউটার্ন সামহালকে জিলেইবি রাস্তা খতরনাক!
******
জাগতে রহো
সৌমিত্র চক্রবর্তী
-------------
দুটো হাত দুপাশে সমান্তরাল
ঘাড়ের ওপরে শিরদাঁড়ায় মাথা
দুখানা আর্থাইটিস আক্রান্ত পা
অন্ত্যজ হাঁটে পেছনের দিকে।
শরীরের খাঁজেখাম্বাজে
সনাতন আর্যসভ্যতার চাবুকের
ক্ষতচিহ্ন জ্বলজ্বল করে,
ক্ষরিত রক্ত উধাও হয়ে
সেখানে এখন দগদগে সাদা ঘা;
সাদা সদা শান্তির প্রতীক
বলেছিল কোন শুয়োরের বাচ্চা!
কর্কশ পায়ের তালুতে অগুন্তি
রাস্তার কামড়ের দাগ
খিদের কামড়ের দাগ
অন্ধকারের কালো
নির্বীজ কামড়ের দাগ;
দুহাতের তালুর চামড়া উঠে যাওয়া
প্রান্তে আঙুলের নখ দু এক অক্ষত।
এ দেশ তোমার আমার!
নগ্নদৃশ্য দুচোখে অভ্যস্ত লালনে
মাটি কোপায়, শেষ রক্তবিন্দু
নোনা জল হয়ে গেলে
বাসি চামড়ার খান কয়েক
হাতেগড়া রুটি আর
সিন্থেটিক লবণ।
সার্থক জনম এইসব শুকরছানাদের
অন্ততঃ আরামের খাঁটি
জোগানদার তো বটেই!
*****
মেঘ মেয়ে কল্পকথা
সৌমিত্র চক্রবর্তী
--------------
এই মেয়েটা! মেঘ ধরবি?
সাদা কালো, বিদ্যুতের চিড়িক
আর সারাজীবনের সব জলসঞ্চয়!
মেঘের মধ্যে মেঘ গড়তেও
শুনেছি আকাশের পাঁজরগুলো
দিনে রাতে, অকাল সন্ধ্যেয়
সাত টুকরো হতে হতে,
হতে হতে ...
জানিস, আমিও একদিন
সূর্য না ওঠা ব্রাহ্মমূহুর্তে
মানুষ হতে চেয়েও
কিভাবে যেন মেঘ হয়েছিলাম:
মাথায় তখন সেই আরব্য রজনীর
ঝাঁ চকচকে তাজ
আর বুকের ধুকপুক যন্ত্রে
সাত সমুদ্র জল।
না রে মেয়ে, তুই চেয়ে নে
আকাশ পাতাল কিম্বা
মাঝের এই রুখুশুখু মাটির
যা কিচ্ছু সব ... সব,
শুধু মেঘ হতে চাস না রে মেয়ে!
তোকে মেঘ হতে দেব না।
*****