জলের চাঁদ বিষন্ন আকাশ
সৈয়দ মাকসুদ
একটি প্রহেলিকা বারংবার শুধিয়ে পরাণ
ক্রমশ আকাশ অন্ধকার করে গল্প শুনতে ডাকে জীবনের
জলের চাঁদের মত সেই গল্পের অক্ষরগুলো সত্য নয়, মিথ্যাও নয়
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের হাওয়ার উপর এসে পড়া
এ আরেক লাল-নীল বল, জ্যান্ত
খরগোস
অথবা দুঃখের বলিরেখা মুখে নিয়ে খুট করে খুলে যাওয়া
এক গুচ্ছ কাগজের ফুল। যা কেউ একজন জানতো, কিন্তু
বলেনি।
নানান নামের অনেক দামের জল থাকে চোখে
বলে যাওয়া গল্পের কান্নার ঘোরে বুঝতে পেরেছি কাল!
এও বুঝে গেছি সাবলিল, গল্পগুলো বলা হয়নি আর কোথাও,
তাই ছাই হয়ে উড়তে উড়তে তারা আজ
বন্ধ জানালার পাশে এনে দাঁড় করিয়ে দেয় এক সমুদ্র আকাশ।
আমার কোনো ব্যক্তিগত অলৌকিক সখা ছিলো না কোনদিন
বিবর্তনে বিষন্ন শাড়ীর তাই বাড়েনি আয়তন,
মুমূর্ষ অন্ধকারের পাশে ঘুম থেকে নির্ঘুম
জীবনের মতো, আলোর মতো, নিঃশ্বাসের
মতোন
আমি চুপচাপ করে যাই পুষ্পপাপ
এই যে আমার বুকের উপর বিরাট পাথর
নিঃশ্বাসেরা দূরের মানুষ খুব অচেনা
চারদিকে আজ কেমন যেন গুমোট ভীষণ
এই যে আমার কিচ্ছুটি আর আজ ভাল্লাগেনা।
ইচ্ছে করে
সৈয়দ মাকসুদ
ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দেখি আলোর পাখী
ইচ্ছে করে হতে আমার মেঘের সাথী
ইচ্ছে করে ফিরে তাকাই আমার ঘরের আলোছায়ায়
ইচ্ছে করে ডুব দিয়ে যাই সেই রমনীর নিবিড় মায়ায়
ইচ্ছে করে, তার কোলে এই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি
ইচ্ছে করে, তার সাথে সব না বলা সেই গল্প করি
ইচ্ছে করে বেড়ে উঠি নগর পূঁজোর সুঠাম দেহে
ইচ্ছে করে যাই নিয়ে যাই ফেলে আসা স্মৃতির বেশে
ইচ্ছে করে ধরি আমি সেই হাত আর সুনীল আকাশ
ইচ্ছে করে তার পরাণে দেই ছড়িয়ে প্রেমের বাতাস
ইচ্ছে করে তার জন্যেই ভাসাই সুখের নৌকা তরী
ইচ্ছে করে আদর করে ডাকি তারে আমার পরী
ইচ্ছে করে লাল নীল আর টুকরো টুকরো কথার ভীড়ে
ইচ্ছে করে তার অভিমান ভেঙে যাবে আসবো ফিরে
ইচ্ছে করে শুনবো আমি ডাকছে প্রিয়া মধূর শিষে
ইচ্ছে করে ইচ্ছেগুলো আর দেবোনা করে মিছে।
এমন কেন মানুষগুলো
সৈয়দ মাকসুদ
আমরা মানুষগুলো এমন কেন!
গোলাপ পেলে কামড়ে ধরি
বনের পাখি পেছন থেকে জাপটে মারি
জন্মান্ধ বধির আস্ত একটা পিশাচ যেন।
আমরা মানুষগুলো এমন কেন!
নদীর জলে ঠোঁট ডুবিয়ে রক্ত খুঁজি
জন্তুবিশেষ সারা বুকে হাত বাড়িয়ে হৃদয় দেখি
হিং¯্র
পথের আগ বাড়ানো ডাইনি যেন।
আমরা মানুষগুলো এমন কেন!
চাঁদ না দেখেই সূর্য দেখে দৌড়ে পালাই
রক্তলোলুপ দৃষ্টি এঁকে দাগের খোঁজে আকাশ মাতাই
রাতকানা আর অভিশাপের বামন যেন।
আমরা মানুষগুলো এমন কেন!
উচু নিচুর ভেদ বিচারে সময় কাটাই
উচ্চাশার শিখর মিশিয়ে হিংসা মিশাই
যাত্রাপালার নর্তকী রঙ ফানুস যেন।
আমরা মানুষগুলো এমন কেন!
পরের ঘরের আগুন দিয়ে নিজে পুড়ে আলু খাই
কষ্ট দিয়ে দু:খ এনে সে কেমন যে আনন্দ পাই
আমরা এখন নামেই কেবল মানুষ যেন।
দখিনায়ন
সৈয়দ মাকসুদ
সূর্যাস্তের সাথে তুমি বড্ড বেশী বেমানান
তাইতো আমার ভাঙা আয়নায় ধরে রাখি তোমার মুখ
তোমার অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে থাকি
এক ঝাঁক আকাশপাখি হয়ে
স্বপ্নময় শব্দ আর শব্দময় স্বপ্নের ফেরি করে
টুকটুকে লাল মরিচ রঙা নেইলপলিশে লিখি
হাজার চিঠি... অনেক কবিতা;
জোনাকির ডানায় জবাকুসুমের গন্ধে
বর্ণালি কাঁচের চুড়িগুলো রাখি কৃতজ্ঞতার খামে
আত্ম মুক্তির টানে তোমার ঠিকানাতেই রেখে দেই
আশ্বিনের পোড়ারোদ... আমার স্বপ্নের দরিয়া।
মৃত্যুর প্রেয়সীও ঘুম হয়
সৈয়দ মাকসুদ
ইতিহাস বিবর্ণ হৃদয় হলে
পৃথিবীর মানুষের চোখ থেকে ঘুম ভেঙে যায়!
মানুষের সব সম্ভ্রমের ভাষা, ভাঙাগড়া, ভালোবাসা
অন্ধ পরিণতির মতন অন্য এক আকাশের মতো
চোখ নিয়ে হাসে অবিরাম।
কোথাও দিৎসা নেই-
জেনে তবু রাত্রিকরোজ্জ্বল সমুদ্রের পাখি।
হৃদয়ের কুসুম কোমলে এলে দুস্থ সময়
পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
স্মৃতি ক্ষয়ে গেলে মানুষ বেদনাহত হয়
স্পন্দন থেকে প্রেম ধীরে মুছে যায়,
নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়,
পৃথিবীতে আমাদের ক্ষয় হয়,
ক্ষয় হয় পাথর, ক্ষয় হয় পর্বত।
মেঘমালার ক্ষয় হয় বৃষ্টিতে,
চোখের ক্ষয় হয় অশ্রুতে।
ভালোবাসার কিংবা অনুভূতিরও বুঝি হয় ক্ষয়
অন্তর্যামী যাত্রী জীবনে ব্যাহত চেতনার ব্যথায়
নগরীর- পৃথিবীর মানুষের চোখ থেকে
ঘুম কেবলি ভেঙে যায়।
পড়ে থাকে অবিরাম একটি নিষ্প্রাণ দেহ
সুতীব্র বৈচিত্রের ভরপুর ক্ষয়ের ক্ষত;
কোনো কোনো ঘুম হয়ে যায় তখন
নিঃসাড় মৃত্যুর প্রেয়সীর মতন।