সভ্যতার
উলঙ্গ চেহারা
শীলা
বিশ্বাস
তুমি রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে
কাতরাচ্ছো
তোমার পাংশু মুখঘিরে কতো
অচেনা মুখের উল্লাস
তোমার কান্না আমি শুনতে চাই
না , উঠে
দাঁড়াও
তোমার শরীরে একটা সুতোও রাখেনি পাষণ্ডরা
সামাজ প্রশাসন কেউ আর তোমার দায়িত্ব নেয় না
তোমার জন্য রাখা ছিল কেবল
অত্যাচার
প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হলে আ্যসিড আছে
তুমি পাষণ্ডের নও তো কারো নও,
সামাজ বিচ্ছিন্না হয়েঘরে পচে মরো পোড়ামুখি
তোমার মন নেই , ইচ্ছা নেই
মাংসের দামে বিক্রিত দ্রব্য
হয়ে মরে বেঁচে থাকো
যৌন বিকারের শিকার হওনি বলে
তোমার তলপেট এফোঁড় ওফোঁড় করে
বের করে আনে নারীত্ব
বেরিয়ে পড়ে আধুনিক থেকে উত্তর আধুনিক হয়ে ওঠা
কালো কিম্ভুতকিমাকার সভ্যতার
উলঙ্গ চেহারা ।
মালা
শীলা
বিশ্বাস
দুর্বল ইচ্ছেগুলো ভৃত্যের মত
দুয়ারে দাঁড়িয়ে আদেশের
অপেক্ষায়
বলা মাত্র ইচ্ছা পূরণের চাবি
এনে দেয় আমার হাতে
ঘরগুলো খুলে দেখি সব ঘরেই
তুমি
তোমার গায়ের গন্ধ ঘর জুড়ে
দূরে থেকেও রয়েছ কাছটিতে যেমন
ছিলে আগে ।
তোমার নিঃস্বাসের গরম হাওয়া
দেয়াল থেকে দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ,
গম্ভীর গলার স্বর তোমার গানের
হারমোনিয়াম তানপুরা
সব বেজে উঠছে শিবরঞ্জনী
রাগে যা তোমার খুব প্রিয়
আরামকেদারায় রয়েছে মাথার
তেলের দাগ ।
জীবনটাকে যে চোখে দেখতে চেয়েছিলে
সেই কথা বলা চোখ দেয়ালে
টাঙ্গানো ছবি থেকে বেরিয়ে আসছে ।
তোমার ছবিতে আমি কোনদিন মালা
দিনই মোমবাতিও জ্বালাই নি ।
মালা তোমায় একবারই দিয়েছিলাম
।
আর কক্ষনো দিতে চাই না ।
স্যরি
অনির্বাণ
শীলা
বিশ্বাস
ঝুরঝুরে দুঃখগুলো ঝেড়ে উঠে
দাঁড়ালাম
নতুন উদ্যমে আবার শুরু করা
যাক
বৃষ্টির জলে গাছের সবুজ
পাতাগুলো আরও
সবুজ লাগছে । আমিও দেরাজ থেকে
সবুজ শাড়ী বের করে পরে ফেললাম
সবুজ ব্লাউজ, সবুজ টিপ, ব্যাগও সবুজ
অনির্বাণ দাঁড়িয়ে থাকবে ঠিক
সাড়ে পাঁচটায়
বাসে উঠে পিছনের দিকে
সীট পেয়ে গেলাম
পাশ থেকে আমার ভুলে যাওয়া
নাম ধরে কে যেন ডেকে উঠল
“লাবণ্য ভাল আছ ?”
আমার প্রথম প্রেমিক সুজয়
এক লহমায় সব ভুলে গেলাম
আমি কার জন্য বাড়ি থেকে
বেরিয়েছিলাম
হারিয়ে গেলাম কৈশোরের প্রথম
ভালবাসায়
প্রথম ছোঁয়ায় ,প্রথম গোপন
কথায় ......
সেদিন অনির্বাণ আমার জন্য
দাঁড়িয়ে থেকে থেকে ফিরে
গিয়েছিল
সত্যিটা অনির্বাণের আজও অজানা
স্যরি অনির্বাণ ।
জলের
নীচেও ঘুমায় অগ্নিগিরি
শীলা
বিশ্বাস
আগুণ চোখে ভষ্ম হোল
শ্রাবণধারার শরীর
আগুণ থেকেই ছিটকে বের হয়
ঊষ্ণ লাভার স্রোত
প্রবাহ কী থামতে জানে
নীচের দিকে বইতে জানে
আগুনে তো সব পুড়ল
দুঃখ টুকু বাদ
দুঃখ বিলাশ, দুঃখ বিলাপ
দুঃখে বানভাসি
চাল ছেড়েছি উষ্ণ জলে
ভাতের আশায়
পুড়ল শুধু হাত
অগ্নি বীনার ছড় টেনেছি
দীপক রাগের সুরে
বুক পুড়েছে ঝড় উঠেছে
কোথায় শান্তি দ্বীপ
আগুন পাখি উড়ে চলে
জলাধারের খোঁজে
জানে না সে জলের নীচেও
ঘুমায় অগ্নিগিরি ।
মাঝ
সমুদ্রের টান
শীলা
বিশ্বাস
ঝড় এসে আঁছড়ে পড়ছে নামবিহীন
মাছ ধরার নৌকা ফিরে আসে নি
জেলেবউ ঘরে প্রদীপ জ্বেলে অপেক্ষায়।
ফ্রেজারগঞ্জের ঘাটে ঘাটে
বরফের বস্তা
ইতিউতি পড়ে আছে মাছ ধরার জাল
ট্রলার বাঁধা ঘাটে ঘাটে।
সমুদ্রের দুঃখ রাগ অভিমান
তর্জন গর্জন
সবই তো বোঝে সে
মাঝ সমুদ্রের টান কি শুধুই মাছ ধরার ।