মাকড়ের
মৃত্যু
অদিতি
চক্রবর্তী
রাজি আছো? বলেছিলো ও
বাড়ির বাবু
বলেছিল, ডুব দেবে
জলে
দুধসাদা বিছানায় পুঁতির মালায়
ঠায় বসে থাকা ছিল বালিস বগলে।
একজোড়া মাকড়ি, সেই কবেকার
সাধ
তাই দেবে বলেছিল হাসকুটে
বজ্জাত।
শেষ ট্রেন চলে গেল ঝমঝম বেজে
গুটিকয় কাপ-ডিশে টেবিল সেজে
কতনা হাজারবার মুখোমুখি
খাবারের স্মৃতি
অবাক ঠাণ্ডা পোষা বাবুদের
মনে!
একজোড়া মাকড়ি, সেই কবেকার
সাধ
তাই পেতে অগোছাল বাড়ন্ত রাত।
কৌশলী কেরামতি একে একে গুণে
নিল ঢেউ
কাজল ধেবড়ে দিয়ে,ভেঙে নীল
চুড়ি
বাবু,চা'য়ে চিনি
ঠিকমতো হয়েছে তো?
জানতে চেয়েছি যেই, তলপেটে আমূল
বিঁধেগেল ছুরি।
একজোড়া মাকড়িতে আমি, সেই কবেকার
সাধ
সকালের দৈনিকে "মাকড়ের
মৃত্যু" শিরোনামি সংবাদ।
তুমি
জানতেনা
অদিতি
চক্রবর্তী
পৃথিবীতে কেউ একজন
তোমাকে সত্যি ভালোবেসেছিলো।
তুমি হাসবে বলে কতইনা চাতুরী
রপ্তকরে
ছলাকলায় প্রথম সারি।
যদি চোখ মেলে তাকাতে
বৃষ্টিদানার গোটা গোটা ফোঁটা
থেকে
নজর কাড়ত আধফোঁটা হয়ে ওঠা
তুমি জানলে শুধুই হিসাব
কিভাবে এক আর এক জুড়ে
তিন করা যায়
তারপর... খুলে ফেললে
আরো এক হিসেবের খাতা
নাঃ তুমি সেখানেও নাক বাঁচিয়ে
জিভকে অলঙ্কৃত করতে মশগুল -
ফলে সম্ভাব্য যবনিকাপাত।
হামেশা হটকে কিছু ভাবার
তুমিটাকে
তবুও কেউ একজন প্রেম দিয়েছিলো,
অস্ফুটে বলেছিলো, "চোখ তোলো, হে আমার
ঈশ্বর"
শয়তান সেইমাত্র একদানা করে
ঈশ্বর হতো যদি জানতে পারতো
কেউ একজনের নাক, চোখ,কান,বুকের গন্ধ।
পৃথিবীতে কেউ একজন তোমাকে
সত্যি ভালোবেসেছিলো...
সাদা
কালোএপিটাফ
অদিতি চক্রবর্তী
তরাস জাঁকিয়ে বসেছে
মাংসমাটিতে
শিকড় সাহচর্যে আঁধিয়ার বিকার
দানায় জমেছে ছদ্মবেশের পরত
বসতের দায় বেহেশত আবদার ।
দমকা হাওয়ায় নরম সুখ ঢেউ
পাওয়া অথবা পাওনা সকল গন্ধ
সময় খাঁচার শিকল ভেঙেই ছুট
বিভাজনে মেশে গতানুগতিক ছন্দ
দুটি মিথোজীবী প্রাণের
প্রেম-অপ্রেম
রাখালিয়া চরে কুহেলিকা অছিলায়
ভাঙা আয়নায় কুদরতি রাহাজানি
জীবন লুকিয়ে বিধ্বস্ত
বলিরেখায় ।
অভ্যস্ত দাবীর পরখটাই আশ্লেষ
সাদা কালো এপিটাফের এক নিমেষ
।
চন্দ্রকলা
অদিতি
চক্রবর্তী
গোধূলীতে উড়ে গেল একঝাঁক
পাটকিলে ঘুঘু
সরে গেলো খসখস এক চারপেয়ে
জন্মজড়ুল নিয়ে চাঁদ এসে বলে
গেলো
সেও আজ চলে যাবে না বলে কয়ে।
উপেক্ষা কিছু তো ছিলোই,বাঁকানো
গোপন,
পইপই বলা বা শোনার উপায়
থাকেনা সবসময়
শব্দ ফুরিয়ে আসে, সীমানা খসায়
ছায়া বেড়ে ঘন হলে ফোটোনের
নিশ্চিত ক্ষয়।
সাবলীল মনে করে অজস্র খোঁদল
কাটাকুটি খেলে কাঁপা হাতে
করেছি মিটমাট
প্রতিটি খিটিমিটি রেখেছি খিল
তুলে
কখনো কি দুজনার ভালোবাসা
একইসাথে অবিরোধে মেলে?
ফুলগাছ জোরে নাড়া দিলে
ফুল ঝরে সাথে নিয়ে হলুদ পাতা
শাখাগুলি কাঁদে কিছু ইনিয়ে
বিনিয়ে
একা হতে চাওয়া সেই নাম
দু'ফোঁটা নোনা
জলে জানলো বিদায়
তারপর আরো বেশী বৃষ্টি পার
হয়ে
কোণ তল পাল্টালো চাঁদ তার
চন্দ্রকলায়।
প্রপঞ্চ
অদিতি
চক্রবর্তী
আমাকে খুব লুকিয়ে দেখার মতো
একা হতে হয়নি কখনো
কানায়কানায় সুর বাজেনি ছলাৎছল
যে তুমি তাতে ঢেলে দেবে
শ্রাবনের ধারাজল।
ফুল ফুটেছে যখন, গাঢ় রং
এতোটুকু নেই
গন্ধবেদনা ডেকেছিল হু হু
শুকনো বাতাস
সেখানেও পরিত্যক্ত বিষধরের
আবাস
প্রজাপতি, মৌমাছি,জল ফড়িংয়ের
দল
স্বপ্নের খেয়াঘাটে ভিড়েছে
কেবল!
পাখি হয়ে উড়ান কালীন
ঘাসফুল ফুটে যেত প্রতিদিন
কতখানি দূরপথ বলো ?
আকাশ যেইনা দিগন্তে নরম মাটি
ছুঁলো
দেখি এক খর্বুটে পাতাঝরা গাছ
লুফে নিয়ে নিমেষে উধাও
কত তাকে বললাম, --মুঠি ভরে
দাও
এইভাবে নদী,ফুল,পাখি,হতে হতে
মুক্তি পেলাম কোনোমতে
একদিন বাদশাহি মুক্তো হলাম
ঝিনুকের কোল থেকে বেরিয়ে এলাম
ভালবাসা আঘ্রাণে অনার্য আঙুলে
জোৎস্নার ঢল
কান পেতে শুনি সোনালি বালুর
দানা
বলে চলে অহরহ--
আমি বড়ো বেমানান,মৃতবৎসল।