নদী
রহমান হেনরী
নদী
সে তো দূর থেকে নদী
কাছে গিয়ে
ভেতরে নামার পর
ছা-পোষা কেরানি মনে হয়
মনে হয়, জীবিকাসম্বল
শুধু জল
অফিসের বড়বাবুটির মত
ত্রস্তব্যস্ত
চরকিঘোরা, জল
ভাতঘুমের রূপকথা
রহমান হেনরী
অবিন্যস্ত পাথরের নিচ দিয়ে, ওপর দিয়ে,
পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে গ্রীষ্মকালীন জল
পেছনে কোথাও লোকালয়, সামনে
গাঙশালিখের আর্তনাদ—
বেতসলতায় আঁটকে থাকা শৈশব
তোমাকে দেখছে, হে মর্মান্তিক, নির্জনতম সুন্দর!
এইসব স্বর্গীয় স্থিতাবস্থার নেপথ্যে
বেজে উঠছে গুলির শব্দ—
তোমার প্রত্যূষ ঘোষিত হচ্ছে অগ্নিসীসায়
রাত্রি ঘোষিত হচ্ছে বারুদে
দুপুর ঘোষিত হচ্ছে নিহত মানুষের পাশে
বন্ধনীচিহ্নে উৎকীর্ণ সংখ্যায়
ধরা যাক, বয়স তার ছত্রিশ বা ছেচল্লিশ
জঙ্গলাকীর্ণ দুপুর চিরে ছত্রখান হয়ে পড়ছে
বিদায়োন্মুখ ঘুঘুদম্পতির বুনোগন্ধ;
এবং ক্রমশ
তোমার ভাতঘুমের রূপকথা
খ্যাতিমান হয়ে উঠছে এশিয়ায়
মনীষাকে
রহমান হেনরী
সমস্যা রয়েছে, তার সমাধানও আছে;
তাৎক্ষণিকে, সমাধান দিতে পারা
তেমন মেধাবীকর্ম নয়—
মীমাংসা থেকে তুমি প্রশ্ন বানাও
ও মনীষা,
জগতের যাবতীয় সমাধান ছেনে
প্রশ্ন তৈরি করো! তোমার জিজ্ঞাসাগুণে
নত হবো, শ্রদ্ধা ও বিনয় জানাবো
খেয়ানৌকার মাঝি
রহমান হেনরী
জীবনের শেষ নদীর কিনারে একা
আছি তো তোমার খেয়ানৌকার মাঝি!
এ পথেই যাওয়া— এ পথেই শেষ দেখা;
এক জীবনের সামান্য এই বাজি।
তুমি থাকো আর নাইবা থাকো রাজি
লগ্ন গুণছে পঞ্জিকা— ওই শোনো!
পৃথিবীর শেষ খেয়াঘাটে নেই মাঝি
যাত্রিও নেই—
তুমি ছাড়া আর কোনও;
তোমাকে আমার বক্ষে বসিয়ে, তরি—
উত্তাল ঢেউ পাড়ি দেবো ভেবে ছুটে
ওইপাড়ে যাবো হয়তোবা তড়িঘড়ি;
অথবা সলিলে পড়বো দু’জনা লুটে
আমি এই দেশে দক্ষ সাঁতারু, নেয়ে—
তুমি কি কখনও সাঁতার শিখেছো, মেয়ে?
নির্জন উপত্যকায় গান
রহমান হেনরী
নির্জন উপত্যকায় বয়ে যাচ্ছে হু হু গান— বাতাসের; আর সারি সারি মৃতদেহ। বড়ই অনুচিত এই মৃত্যু, তবু নিহত হলাম আমরা— আত্মার তলদেশে। কিন্তু গান মৃত্যুঞ্জয়ী এবং সেইসব সুর ও বাণী আমাদেরই। এখন প্রবাহিত হচ্ছে শরীরের ওপর দিয়ে আর গেঁথে যাচ্ছে আত্মায়। অচেনা বৃক্ষের মতো সারি সারি দণ্ডায়মান জীবিত মানুষের দল কিছুই শুনতে পায় না। আদিগন্ত উঁচু-নিচু ল্যান্ডস্কেপে— তারা কেবলই দেখতে পায় থরে-বিথরে শুয়ে থাকা অগুনতি ঝরাপাতা আর তাদের আরামপ্রিয় সুখি কানে বেজে ওঠে বাতাসের শনশন;
কোমল রৌদ্রের দিনে নিজেদের মৃতদেহগুলো জাপটে ধরে নিজেরাই কেঁদে যাচ্ছি মর্মন্তুদ সাংগীতিক মহিমায়; যেন ক্রন্দন এক আন্তর্জাতিক কোরাস! আর আমাদের এইসব গান মৃত্যুর মতই অফুরন্ত, বহমান এবং জীবনের দিকে বাঁক নিয়ে হঠাৎ ফুঁসে-ওঠা জেদের তীর্যক ভঙ্গিমা—