ব্যথিত
প্যারিসের সময়কাল
উদয় শংকর
দুর্জয়
একটি অধ্যায় শেষ না হতেই আছড়ে
পড়ে ব্যথিত ডানার ঝরা তুষার
তখন রাত দশটা, রূপার
অলংকার পরে নিয়েছে নিশুথি আকাশ
'ঈগলস অব ডেথ মেটাল’ এর যাদু
মুর্চছনায় উত্তাল বাতাল্কা
হঠাৎ অশুভ কালাশনিকভ গর্জে
ওঠে বারুদ আর আওয়াজে
মুঠো মুঠো বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস
ঝরে যায় রক্ত জবার দলে
ত্রস্থ দেয়াল সামনে দাঁড়ায়, বৃষ্টি
ঝরিয়ে যায় তার সবটুকু অহংকার
বিবর্ণ বাতাস কুড়িয়ে নেয় শত
শত পকেটে জমানো গোপন খবর
আর আমরা বাক্স বন্দী করি আহত
শিশিরের নিরুত্তাপ পংক্তিমালা
জমা রাখি এক একটি আর্তনাদের
ধ্রুব চিহ্ন একান্ত অতল গহ্বরে
যে রাষ্ট্র দায় স্বীকার করে না
উদয় শংকর দুর্জয়
রাষ্ট্রের জন্য মায়া জাগে।
ক্রোধ ছাড়িয়ে যায় সীমানা। একটি যথোচিত
ভোরের জন্য প্রার্থনায় লীন হয় রাতপ্রহর।
আর ক্রন্দিত সমাচার পড়তে পড়তে আকাশ লুকিয়ে রাখে মুখ। আশঙ্কা নিয়েই দাঁড়াই মুখোমুখি। কোন হিসেবের
খাতায় ভুলের ঘ্রাণ মাখা ফুল। কোন রমণী আজ
আবার ঠায় দাঁড়াবে অঙ্গনে আনত মস্তকে। যে শিশু সম্ভ্রমের সংজ্ঞা বুঝে উঠবার বহু
আগেই রক্তাক্ত মেঘ মেখে নেয় শরীরে। আর যে রাষ্ট্র
দায় স্বীকার করে না… ফেনীর সাড়ে তিন বছরের শিশু আর
কুমিল্লার সোহাগীর জন্য কার কাছে চাইব এক
খণ্ড সুবিচার। এ লজ্জার নিবারনের জন্য
আকাশ ভেঙে পড়ুক। এক প্রলয়ঙ্কর দানবীয় ঝড়ে সব পরাভব নিঃশেষিত হোক। অতঃপর একটি নতুন মানব সভ্যতা
জাগুক পাখিদের মত মন আর গাছেদের মত মায়াবী
হোক এই নব গ্রহ।
ম্লান
অরুণালোয় নক্ষত্রের স্বরলিপি
উদয় শংকর
দুর্জয়
রুপশালি ধানের ঘ্রাণ শুকে কোন
ধনেশ পাখি
গড়েছিল আবাস - তার জন্য
লিখেছিলে
নক্ষত্রের স্বরলিপি ম্লান
অরুণালোয়। আরও
একশ বছর তুমি লিখে যাচ্ছ
হেমন্তালয়ে
ঝরা পাতার নিরুপমা চিঠি।
লাবণ্যময়ী সন্ধ্যা
দাঁড়ালে উঠনে, মুছে ফেলে
রোদ্দুরের লয়
ভেজা মেঘ খুঁজে ন্যায়
ধানসিঁড়ির শ্যাওলা শরীর।
ধূসর গোধূলি থেমে গেল।
পারাবাত মেঘালয়
ছড়িয়ে দিয়ে গেল স্নাত
জ্যোৎস্নার ফুল।
শ্রাবস্তীর মায়া জড়িয়ে নিতেই
অবারিত ঝাউয়ের উদ্যান গাইল
সবুজ বেহালায় গৃহত্যাগীর গান।
অদ্ভুত আঁধারে
জমিয়ে অভিমান। নিঃশ্বাসের
তরঙ্গে ফেলে গেলে
দিক ভুলো ট্রামের ক্ষুধার্ত
কুয়াশা সমাচার।
হৃদভূমে
জন্ম নেবে কি ইচ্ছার বর্ণমালা
উদয় শংকর
দুর্জয়
কি মমতায় বেঁধে ফেলেছো।
তবে কি আবার মন পাখি খুঁজবে
আলো
আলোর শেষে।
একদিন রূপালী বর্ষা ধারা
নামবে তেপান্তরের বিলে, সে লিলুয়া
হাওয়ায়
কান্ত ছায়ায় রৌদ্র পোড়া গন্ধ
মুছে ফেলে
আবার বুকের টেনে নেবে। বলবে
নীল মাখ প্রিয় দু’হাতে।
বিশ্বস্ত চোখে
যে ঢেউ জেগে উঠতো গোপনে, সেখানে
গভীরে নামো আরো গভীরে।
রাতভোর গল্প হবে, আবার
বিষন্নতা কাটিয়ে
লেকের ধারে আবৃত্তির আয়োজন
জুড়ে
থাকবে নিরূপম প্রার্থনা।
আবার সুরের পাখি ঝরাবে পালক
আমি পড়ব ধারাপাত তুমি খুঁজবে
অরণ্য চোখে।
দু’হাতে কুড়াবো
রাশি রাশি শিউলি
ঘাস ফুলে ভরা আঁচল ছেড়ে
প্রিয় ঘ্রাণ মেখে নিও, আবার
শারদ সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বলবে
এই নিপবন এই গড়ের মঠকে স্বাী
মেনে।
কিন্তু মনকে চিনি ভালো করে
সে কোষে জাগবেকি স্পন্দ
দীপালী আলোয় হৃদভূমে জন্ম
নেবে কি
ইচ্ছার বর্ণমালা।
কখনও
জানা হবে না
উদয় শংকর
দুর্জয়
আজ জ্যাকসন হাইটের সব আলো
গুলো যেন
নিভে গ্যালো একসাথে! নীরবতার
একরাশ কালো ধোঁয়া
সাঁঝের বেলাটাকে গাঁঢ় থেকে
আরও গাঢ় করে তুলল!
আমি জীবন জীবিকায় নিয়ত ন’টা পাঁচটা
আফিস করে চলেছি, কান্তির
অভাবে অথবা
খুব অজান্তে, হয়তো
ব্যস্ততার নিয়ম-অনিয়মে
কোন শারদীয় পড়ন্ত বিকেলে
ক্যামন আছে সে আর জানা হ’ল না।
আর একটি বারের জন্যও জানা হবে
না; সুমিতা
তুমি ক্যামন আছো। আজ আমার
প্রতিটি কোষে
রক্ত কণিকায় মাতাল অনুভূতি, নিঃশব্দ পথে
অজানা পথিক।
আমার চেতনার বিছানা জুড়ে নেমে
আসে
আঁকা আঁকি আর কাদা মাটির
এলমেল গল্প গুলো।
সন্ধ্যা বাতি জ্বালতে যখন
দেশলাইয়ের জন্য
আমার বাড়ীর দরজায় দাঁড়াতে আমি
আবেগাপুত
অপলক নিস্তব্ধ বালক, ভালোবাসার
কী আকুতিই না ছিল!
রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপলব্ধিতে, অনুভূতির
ভ্যাজানো দুয়োর
খুলে যায়...।
তুমি যোজন দূরে, আর এই আমি
পড়ে আছি আটলান্টিকের
এপারে সংসার ব্যঞ্জনায়, নাট্য রচনায়
কাটে,
ছেঁড়া ছেঁড়া স্মৃতির অন্তরাতে
বেঁধে সুর বাঁধি তোমাকে,
তবু কখনও জানা হবে না সুমিতা
তুমি ক্যামন আছ!