জৈষ্ঠের
কাব্যজাল।।
নুরুন্নাহার
শিরীন।।
*************
এক।।
ওগো ও জীবনভাই দাও দেখিতে
জীবন -
ওপারের দোলাচলে এপারে কেমন
উচাটন মন।
দেখিতে-দেখিতে বেলা গড়িয়ে
খাদের কাছে ....
তখনই বুঝি হয়তো হৃতমৃতদেরও
প্রাণ আছে।
প্রাণের ভিতর কিছু গান কিছু
গ্রীষ্মকাল -
ছবির অধিক গানের অধিক
আদ্যপান্ত লাল।
ওদের জাগিয়ে দিলে ওদের চারিয়ে
দিলে -
লতাপাতার মতোন এপারের ওপারের
নীলে ...
হয়তো কবিতা হবে ... হয়তো
সোনালুবনে
দাহময় উড়োদিনে কবিতা পড়বে
মনে।
না পড়ে যদিও হৃদি বৃষ্টিদিনে
ঝুঁকে পড়ে
কবিতা কাঁদিয়ে লিখতেও পারে 'জল পড়ে'
সে জল পাতায় ঝরে সে জল লেখায়
ঝরে ...
বর্ষাবিধুর কবির দশাঙ্গুল
দেখে জল পড়ে -
দেখেই কবিতা আসে ...
শতবর্ষ পরেও হৃদয়পাশে।
দুই।।
হৃদয় এমন কানা ...
মেঘকাব্য চাঁদপানা।
জখমিত মেঘেরও কোথাও হারাতে
নেই মানা।
চারপাশে নাছোড় অখাদ্য কাব্য
হতশ্রী চাঁদের আদেখলাপনা।
তাও মানা যেতো যদি শব্দের
সশব্দে পতনের ভার -
হৃদি না শুনতো আর অতিক্রান্ত
দিনান্ত মানতো হার।
কত যে কুহক হুহু অমা
ছড়িয়ে-জড়িয়ে রাত যায় ...
যাওয়াগুলি ফেরে না জীবিতের
দিনরাত তালকানা ধায়।
কে যেন বাজায় দূরে 'ধায় যেন মোর
সকল ভালোবাসা' ....
শুনেই প্রভুর পায়ে হত্যে দিয়ে
হা-পিত্যেশের বাতাসা।
মসজিদ মন্দির না গির্জা
যেখানেই মানুষের মন ...
কেন সে দিবে না - কেন চুরি
যায় সর্বস্ব সম্ভ্রম ধন?
কে দেয় জবাব তার লা জবাব কেন
প্রভু বা ঈশ্বর?
সে কি রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি
করেছিলো হা ঈশ্বর?
তিন।।
তেমন গাধাও নই।
তেমন হাঁদাও নই।
তোমাদের চালাকির ফাঁদপাতা
বুঝবো না।
তোমাদের ধড়িবাজ রাজনীতি বুঝবো
না।
আমাদের চারদিকে ধুন্ধুমার
বিশ্ব ওড়ে।
আমাদের চারপাশে নিন্দুকের
ঢিঁঢিঁ পড়ে।
আমরা কি চোখ থাকিতে থাকিবো
অন্ধ?
আমরা কি চোখ থাকিতে থাকিবো
অন্ধ?
দেখিতে-দেখিতে আহ সন্ধেবাতির
সময় হলো ...
আলো না জ্বালিয়ে ঠায় বসে থাকা
যায় ...
বলো?
আলাদীনের চেরাগ সেতো
রূপকথাতেই।
বাস্তবের দুনিয়াতে আলাদীনের
চেরাগ নেই।
দেখিতে-দেখিতে আহ সন্ধেবাতির
সময় হলো ...
আলো না জ্বালিয়ে ঠায় বসে থাকা
যায় ... বলো?
তোমরা না দিলে বুঝি আমাদের
জ্বলবে না আলো?
তোমরা না দিলে বুঝি আমাদের
জ্বলবে না আলো?
চার।।
সময় বহিয়া যায় ...
সময় বহিয়া যায় ...
বসিয়া আছি তো আছি।
বয়সেরও গাছপাত্থর নাই
শুনিয়াছি।
শুনিয়াছি বস্তাপচা বিস্তর
বাহুল্যবাণী ...
তাহাই লইয়া জ্ঞানীগুণীর
গোলটেবিল - কানাকানি।
চ্যানেল ধরিতে গিয়া বেকুব
বনিয়া যাই -
কে কত চতুরঙ্গ যে জানে কি আর
কহিব ভাই।
দেখিয়া শুনিয়া চুপ হইতে-হইতে
তাই
মানব জাতি যে অই হনুমানের
বংশধর উহাই বুঝিয়া যাই।
অবশেষে আমি ভাই কবিতা ভুলিয়া
সাধুভাষা চাই।
সাধুভাষাটা দারুণ ক্ষোভ
ফুটাইয়া তুলিতে উহার জুড়ি নাই।
সেইসঙ্গে দ্রোহবিদ্ধতার
কথাটাই
বলিয়া ফেলিয়া আমি ঘুমাইয়া
তলাইয়া যাই।
কাল ভোরে জাগিবো কি? কে জানে যদি
না জাগি আর?
কালঘুমে ধরিলো কি? কে জানে যদি
না দেখি ভোর আর?
দিনকাল ভালো না বলিয়া যা থাকে
কপালে দেখা যাক ...
ভাবিয়া দিলাম তালা সাঁটিয়া
ভাবের ঘরে সে আটক থাক।
কবিই ধরিয়াছেন ভাবের ভাষাটা
ঠিকঠাক -
'দূরের বাদ্য লাভ কি শুনে মাঝখানে যে
বেজায় ফাঁক'!
পাঁচ।।
সকালে জাগিয়া শুনি কাকের
কা-কা-কা-
কাক কি বলিতে চাহে 'খা-খা-খা
বখখিলারে খা'!
ভাবিতে-ভাবিতে দেখি আমারই জানলায়
কাকচক্ষু জলেভাসা কবিতা
ভাসিয়া যায়!
অন্যদিকে কি কব কাহার কথা
...
ডানবামের ডনবৈঠকে কাহার কি
কথা?
কবিতার কি কথা উহার সনে?
সে কেন উহার পানে চাহিয়া
হাসিয়া মরে মনেমনে?
সে কি জানে ডান ভালো নাকি বাম
ভালো?
সে কি জানে কাক না কবিতা ভালো?
এদেশে প্রবাদ আছে 'সব ভালো তার
শেষ ভালো যার'
শেষটুকুই তাহলে হউক
তোমার-আমার ...
শেষটুকুই তাহলে হউক না কবিতার
....
ভালোয়-ভালোয় দিন যাক এদেশে
সবার।